অপারেশন গ্রিন হান্ট ও সালয়া জুড়ুমঃ দেশের অভ্যন্তরীণ প্রধান বিপদ হিসাবে নকশালবাদকে চিহ্নিত করে জাতীয় কংগ্রেসের ইউ.পি.এ. সরকার মাওবাদীদের বিরূদ্ধে অভিযানকে ২০০৯ সালে শক্তিশালী করে দেশের মধ্য ও পূর্ব ভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ১১ টি রাজ্যের ২২৩ টি জেলায় যে ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ শুরু করেছিল সেটি সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে বিশাল দণ্ডকারণ্য অর্থাৎ ছত্তিসগড়, অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা ও মহারাষ্ট্র – র বিস্তীর্ণ গহন বনানী অঞ্চল (প্রায় ৯৩,০০০ বর্গ কিমি এবং পশ্চিমবঙ্গের আয়তনের চাইতে বেশ কিছুটা বড়) এবং সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে (ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ) এক ধারাবাহিক ভয়ঙ্কর সামরিক সংঘাত ও হিংসার জন্ম দেয় যাতে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার ভূমিপুত্র গোন্ড, মারিয়া, মুরিয়া, অবুঝমাড়িয়া, মাদিয়া, হালবা, ধুরিয়া, ভাতরা, কিরকু, মৌরজা, গান্ডা, সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, হো, ভুঁইয়া, ভূমিজ, পারদান, কোলাম, কয়া, কোন্দ, পারাজা, বোন্দা, মিরধা, বাগাটা, কোটিয়া, খারয়ার প্রমুখ জনজাতির দরিদ্র মানুষ। তারও আগে মাওবাদীদের দমন করতে ২০০৫ এ জনজাতি যুবকদের একাংশকে সশস্ত্র করে ‘সালয়া জুড়ুম’ গড়ে তোলা হয়। মাওবাদী – সালয়া জুড়ুম সংঘর্ষ ছাড়াও সালয়া জুড়ুম সাধারণ জনজাতি গ্রামবাসীদের উপর এত বীভৎস অত্যাচার চালায় যে বহু অভিযোগের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১১ তে সালয়া জুড়ুমকে নিষিদ্ধ করে দিতে হয়। ঐ সময় থেকে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে রাজ্যগুলির পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ বাহিনীগুলি, সালয়া জুড়ুম ছাড়াও ‘স্টেট আর্মড পুলিশ ফোর্স’ (এস.এ.পি.এফ.), ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স’ (সি.আর.পি.এফ.)এর ‘কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজলিউট অ্যাকশন’ (কোবরা), নাগাল্যান্ডের প্রাক্তন জঙ্গিদের নিয়ে গঠিত পাহাড়ি জঙ্গলে যুদ্ধে দক্ষ ‘ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন’ (আই.আর.বি), ‘ইন্দো – টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ’ (আই.টি.বি.পি.), আর্মি কমান্ডো বাহিনী বড় সংখ্যায় সমাবেশিত করে এবং বায়ু সেনার হেলিকপ্টার বাহিনী, এন.টি.আর.ও. এর মানববিহীন আকাশযান (ইউ.এ.ভি.), ইসরো – র কৃত্রিম উপগ্রহ প্রভৃতির সহায়তা নেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকার – মাওবাদী যুদ্ধে এই পর্বে দেড় হাজার নিরাপত্তা বাহিনি, আড়াই হাজার মাওবাদী এবং আড়াই হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়। প্রায় দশ হাজার মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেন এবং ১১ হাজার মাওবাদীকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। ২০১৮ এর মধ্যে অপারেশন গ্রিন হান্ট এর বৃত্ত ৯০ টি জেলার মধ্যে কমিয়ে আনা হয় এবং মাওবাদীদের সক্রিয়তা মূলত ছত্তিসগড় রাজ্যের দণ্ডকারণ্যর বস্তার ডিভিশন এবং ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভুম অরণ্য পাহাড়ময় জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
অপারেশন কাগার ও অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্টঃ ২০১৪ ও ২০২২ এ যথাক্রমে কেন্দ্রে ও ছত্তিসগড় রাজ্যে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি – র কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই অভিযানকে আরও সংগঠিত ও তীক্ষ্ণ করে মাওবাদীদের উপর লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করেন এবং মাওবাদীদের সক্রিয়তার কেন্দ্র কাঁকের, কোন্দাগাঁও, নারায়ণপুর, বস্তার, বিজাপুর, দান্তেওয়াড়া ও সুকমা – এই সাতটি জেলা নিয়ে সমগ্র বস্তার ডিভিশনের ৪০,০০০ বর্গ কিমি (কেরল রাজ্যের চেয়ে বড়) ঘন অরণ্যময় অঞ্চল থেকে সংকুচিত করে নিয়ে আসেন ইন্দ্রাবতী নদী অববাহিকার নারায়ণপুর, বিজাপুর ও দান্তেওয়াড়া – তিনটি জেলার সীমান্তে অবস্থিত অবুঝমাড়ের ৪,০০০ বর্গ কিমি (গোয়া রাজ্যের চেয়ে বড়) দুর্ভেদ্য পাহাড় জঙ্গলে। এরপর ২০২৬ এর মার্চের মধ্যে মাওবাদীদের নির্মূল করে আদিবাসীদের উৎখাত করে এই খনি সমৃদ্ধ অঞ্চলকে বৃহৎ পুঁজির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য শুরু হয় ‘অপারেশন কাগার’। এর অঙ্গ হিসাবে পরিকল্পনা করে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে এবং বিপুল সামরিক সমাবেশ ঘটিয়ে তিন সপ্তাহের যুদ্ধ ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ চালিয়ে সেখানকার খাঁড়াই স্ট্র্যাটেজিক পজিশনে অবস্থিত মাওবাদীদের অন্যতম ঘাঁটি কারেগুটটা কালো পাহাড় দখল করে নেন মাওবাদীদের থেকে। তারপর মাড় অঞ্চলে তাঁদের সামরিক কেন্দ্রে আঘাত হেনে ২১ মে হত্যা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের কমান্ডার ইন চিফ নাম্বালা কেশভ রাও ওরফে বাসবরাজু ওরফে গগন্না (১৯৫৫ – ২০২৫) এবং অন্যান্য পার্টি আধিকারিক, ক্যাডার ও ‘পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি’ (পি.এল.জি.এ.) এর যোদ্ধাদের। মনিপুর থেকে কাশ্মীর সর্বত্র ব্যর্থ মোদি সহযোগী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উচ্ছসিত হয়ে ওঠেন। সফল ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পর সফল ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ নরেন্দ্র মোদির মুকুটে আরেকটি পালক সংযোজিত হয়।
একটু আগে থেকেঃ সত্তর দশকের প্রথমে নকশাল আন্দোলন ধাক্কা খাওয়ার পর বিভিন্ন পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় তেলেঙ্গানা সংগ্রামে যুক্ত প্রাক্তন শিক্ষক অন্ধ্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতা কোন্ডাপল্লী সীতারামাইয়া (১৯১৪ – ২০০২), আপ্পাল্লাসুরি, সত্যমূর্তি প্রমুখের সঙ্গে সি.ও.সি. সি.পি.আই.এম.এল. গঠনের পর ১৯৮০ তে গঠন করেন সি.পি.আই.এম.এল. পিপলস ওয়ার। সশস্ত্র জনযুদ্ধ প্রাধান্য পেলেও বিভিন্ন গণ সংগঠন সক্রিয় ছিল এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ছাত্র, জনজাতি, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার কর্মী প্রভৃতিদের মধ্যে ভালো জনভিত্তি ছিল। ওয়ারাঙ্গাল ইঙ্গিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সময় বাসবরাজু ‘পিপলস ওয়ার গোষ্ঠী’র ছাত্র সংগঠন আর.এস.ইউ. এর সম্পাদক ছিলেন।
১৯৯১ তে সীতারামাইয়াকে অপসারিত করে প্রাক্তন শিক্ষক মুপাল্লা লক্ষণ রাও বা গণপতি (১৯৪৯ – )সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ‘পিপলস ওয়ার গ্রুপ’ এর ক্রমশঃ সম্প্রসারণ এবং সামরিকভাবে প্রবল শক্তিশালী হয়ে ওঠা। একসময় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র রাজ্যগুলিতে তাদের সশস্ত্র দলম গুলির দাপিয়ে বেড়ানো ছাড়াও অসম, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কর্ণাটক, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, মুম্বাই, দিল্লি প্রভৃতি রাজ্যে ও অঞ্চলে বিস্তার। একদা ‘আর.এ.ডব্লিউ.’ ও ‘মোসাদে’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ তামিল গেরিলা বাহিনী ‘এল.টি.টি.ই.’ এর কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পি.ডব্লিউ.জি. দলমগুলি অজেয় হয়ে ওঠে পাহাড় জঙ্গলে গেরিলা যুদ্ধে এবং ‘ইম্প্রভাইসড এক্সপ্লসিভ ডিভাইস’ (আই.ই.ডি.) ব্যাবহারে। ছত্তিশগড় এ ৭৬ জন সি.আর.পি.এফ. হত্যা, সালয়া জুড়ুম প্রধান মহেন্দ্র কর্মা সহ ছত্তিশগড় এর পুরো কংগ্রেস নেতৃত্বকে একটি অ্যামবুশে হত্যা, লাতেহার বিস্ফোরণে মৃত সি.আর.পি.এফে.র দেহে আই.ই.ডি. পুঁতে আরও বড় বিস্ফোরণ ঘটানো ইত্যাদি সাড়া জাগানো একের পর এক আর্মড অ্যাকশান তাঁর নেতৃত্বে এবং গগন্নার পরিচালনায়। দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর কয়েক মুহূর্তের জন্য প্রাণে বাঁচা।
মাঝে অন্ধ্রের জনপ্রিয় কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির কুশলী চালে অন্ধ্রে সংগঠন, বহু নেতা ও ক্যাডার এবং নাল্লামালা জঙ্গলের প্রধান ঘাঁটিটি হারালেও তেলেঙ্গানা – ছত্তিশগড় সীমান্তে আবুঝমাড় কে কেন্দ্র করে ঘাঁটি গেড়ে সমগ্র দণ্ডকারণ্য ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলে মাওবাদীদের ছড়িয়ে পড়া। ‘দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটি’ সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা। রাষ্ট্রের কার্যত অনুপস্থিতিতে জনবিরল দুর্গম পাহাড় জঙ্গলে শোষিত জনজাতিদের নিয়ে প্লাটুন, কোম্পানি, এমনকি কয়েক সহস্র নিয়মিত লালযোদ্ধাদের কয়েকটি ব্যাটেলিয়ান এবং উত্তর ও দক্ষিণ বস্তারে দুটি ডিভিশনাল কমান্ড গঠন করে ফেলা। জনজাতিদের মধ্যে থেকে অসংখ্য গেরিলা যোদ্ধা শুধু নয় মাদভি হিদমা, গণেশ উইকে প্রমুখের মত দুর্ধর্ষ কমান্ডার গড়ে তোলা। ইতিমধ্যে মধ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র ও পাঞ্জাবে সক্রিয় নারায়ণ সান্ন্যাল, ভবানী রায়চৌধুরী, আপ্পালাসুরি, প্রশান্ত বোস প্রমুখের নেতৃত্বাধীন ‘সি.ও.সি. সি.পি.আই. এম.এল. পার্টি ইউনিটি’ পিপলস ওয়ার গ্রুপ এর সঙ্গে ১৯৯৮ এ সংযুক্ত হয়। এর ফলে পিপলস ওয়ার গ্রুপ এর উত্তর ও পূর্ব ভারতে সম্প্রসারণ। এরপর পিপলস ওয়ার গ্রুপ ঝাড়খণ্ড, মধ্য বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় অমূল্য সেন ও কানাই চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং সুশীল রায়, সঞ্জয় দুশাদ, প্রমোদ মিশ্র প্রমুখের নেতৃত্বাধীন ‘মাওইস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার’ বা এম.সি.সি. – র সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০০৪ এ ‘সিপিআই (মাওইস্ট)’ গঠন করে ঝাড়খণ্ডেও প্রবল শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এরসঙ্গে সম চরিত্রের নেপাল, ফিলিপিন্স, পেরুর ও অন্যান্য মাওবাদী পার্টিগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। কোবাড গান্ধির মত তাত্বিক আন্তর্জাতিক সংযোগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় তিরুপতি থেকে পশুপতি (নেপাল) এক বিস্তৃত রেড করিডোর গড়ে ওঠে। এগুলি ১৯৯১ থেকে ২০১৭ অবধি ২৭ বছর প্রথমে পি.ডব্লিউ.জি. ও পরে ২০০৪ থেকে ২০১৭ অবধি সি.পি.আই. (মাওইস্ট) দলের সাধারণ সম্পাদক গণপতির এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রিয় কমিটি, পলিটব্যুরো এবং সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের অন্যতম কৃতিত্ব। এছাড়াও বেশ কিছু বুদ্ধিজীবীদের তিনি যুক্ত করেন। আবার তাঁর সময় থেকেই বড় বড় সাংগঠনিক ও সামরিক ধাক্কা খেতে খেতে সি.পি.আই. (মাওইস্ট) তাদের আগুয়ান অঞ্চলগুলি থেকে ক্রমশ পিছু হটতে থাকে এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও কর্মীকে হারায়। গণপতির মাথার দাম তিন কোটি টাকা হলেও ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী আজও তার হদিশ পায়নি। ইতিমধ্যে কাটাকাম সুদর্শন, প্রশান্ত বোস (কিষাণ), আক্কিরাজি হরগোপাল, দেওকুমার সিংহ (অরভিন্দ), সামসের সিংহ, নারায়ণ সান্ন্যাল (নবীন), সুশী্ল রায় (সোম), প্রমোদ মিশ্র (বনবিহারী), অমিতাভ বাগচি, বাচ্চা প্রসাদ সিংহ, অনুকূল নস্কর, অখিলেশ যাদব, আশুতোষ টুডু, কোবাড গান্ধী, কিশেনজী, আজাদ – ২০০৪ এর অক্টোবর এর পার্টির ঐক্য কংগ্রেসে নির্বাচিত বেশিরভাগ পলিটব্যুরো সদস্য হয় মৃত নয় ধৃত।
ব্যাটন পরিবর্তনঃ এইরকম পরিস্থিতিতে ২০১৭ তে (জানানো হয় ২০১৮ তে) গণপতির থেকে সি.পি.আই. (মাওইস্ট) দলের সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব নেন তারই সহযোগী, প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার এবং রাজ্যস্তরের ভলিবল ও কবাডি খেলোয়াড়, দলের সামরিক বাহিনী এবং সামরিক উৎপাদন ও গবেষণা শাখার প্রধান, পলিটব্যুরো সদস্য নিম্বলা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু ওরফে গগন্না ওরফে দারাপু নরসীমা রেড্ডি ওরফে কৃষ্ণ ওরফে প্রকাশ। বিভিন্ন অ্যাকশানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সবমিলিয়ে তার মাথার দাম হয়ে ওঠে ১০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে অন্ধ্রের গ্রে হাউন্ড, মহারাষ্ট্রের সি ৬০, ঝাড়খণ্ডের কোবরা, ছত্তিসগড়ের ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড, ওড়িশার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপস, পশ্চিমবঙ্গের স্ট্র্যকো, মধ্যপ্রদেশের হক ফোর্স প্রভৃতি আধা সামরিক উন্নত অস্ত্র সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা বাহিনীগুলির লাগাতর অপারেশনে মৃত্যু হয়েছে মিলিন্দ বাবুরাও তেলতুম্বলে, প্যাটেল সুধাকর রেড্ডি, রামচন্দ্র রেড্ডি (চলপতি) প্রমুখ গুরুত্বপুর্ণ নেতা ও ক্যাডার দের। চেরুকুরি রাজকুমার (আজাদ), মল্লাজুলা কোটেশ্বর রাও(কিশেন) প্রভৃতি নেতাদের আলোচনার জন্য ডেকে এনে হত্যা করা হয়। ম্যালেরিয়া, কোভিড প্রভৃতি রোগে মৃত্যু হয় অনুরাধা গান্ধী প্রমুখের। অনেকে ধরা পড়ে কারাবন্দী। অনেকে আত্মসমর্পণ করেন। সবমিলিয়ে মাওবাদীদের রক্তক্ষরণ চলছিলই। আগেই জনযুদ্ধের নামে শক্তিশালী গণআন্দোলনকে জলাঞ্জলি দিয়ে এতবড় এক শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং তার বিশাল ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্গম কিছু পাহাড় জঙ্গলে গেরিলা যুদ্ধকে প্রধান কর্মসূচি করায় প্রবল উদ্যোগ, শক্তিশালী সংগঠন ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মী – যোদ্ধারা থাকা সত্ত্বেও মাওবাদীরা কেবলমাত্র সশস্ত্র অ্যাকশনের কানাগলির মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন। এর উপর গণপতির সময়কার বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক উদ্যোগের বিপরীতে গগন্নার সময়ে সামরিক কার্যকলাপে কেন্দ্রিভুত হওয়া তাঁদের জনজীবন ও রাজনীতির মূলস্রোত থেকে আরও বিচ্ছিন্ন এবং রাষ্ট্রের খুবই সুবিধা করে দেয়। গত দেড় বছরে ৫০০ এর বেশি মাওবাদীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১৫০০ এর মত মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। পুরনো পলিটব্যুরো সদস্যদের মধ্যে কেবল জীবিত আছেন থিপ্পিরি তিরুপতি (দেব), মাল্লাজুলা ভেনুগোপাল রাও (অভয়) এবং মিশির বেসরা (সাগর)।তবে সমাজকর্মী সোনি সোরি, হিমাংশু কুমার, বেলা ভাটিয়া, শুভজিত বাগচি প্রমুখের মতে মাওবাদীদের নামে অনেক সাধারণ জনজাতি মানুষকে হত্যা এবং তাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে যাতে দেশি বিদেশি শিল্পপতিদের এই বিস্তীর্ণ খনি ও অরণ্য সমৃদ্ধ অঞ্চল তুলে দেওয়া যায়।
এছাড়াও অবিরত সন্ত্রাস, হিংসা, খুন ও রক্তপাত; প্রভাবসম্পন্ন এলাকায় কোন বিরুদ্ধ স্বর রাখতে না দেওয়া; ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের থেকে তোলাবাজি; কোন কোন ক্ষেত্রে আদিবাসীদের উপর জুলুম; তাঁদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার; উন্নয়নমূলক কাজ করতে না দেওয়া; কিছু কিছু নেতার নৈতিক পদস্খলন; অন্ধ্রে কংগ্রেস, ঝাড়খণ্ডে ঝাড়খন্ডি দলগুলি এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে সুবিধাবাদী আঁতাত প্রভৃতিও তাঁদের বিরুদ্ধে গেছে। ফলে তাঁদের নেতা ও কর্মীদের একের পর এক হত্যা এবং অপারেশন কাগার ও ব্ল্যাক ফরেস্ট এর রাষ্ট্রীয় নৃশংসতা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সেভাবে প্রতিবাদ শোনা যায় নি। সি.পি.আই.এম.এল. লিবারেশন, সি.পি.আই.এম., সি.পি.আই. – বাম দলগুলি এবং কিছু মানবাধিকার সংগঠন মাওবাদী এবং জনজাতিদের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং ভারত সরকারকে অবিলম্বে এই হত্যালীলা বন্ধ করে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। শোনা যায় গগন্না শেষদিকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অতীতে তাঁরাও যেমন ভুল বুঝিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে ফাঁদে ফেলে বোমা, আই.ই.ডি., গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিতেন, এক্ষেত্রে পুলিশও তাঁকে আলোচনা করতে ডেকে ঘিরে ফেলে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়। তার পরপরই সংলগ্ন ইন্দ্রাবতী অভয়ারণ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নরসিমা চলম (সুধাকর), মাইলারাপু আদেলু (ভাস্কর) সহ আরও বেশ কিছু মাওবাদী নেতা নিহত হন। এই প্রবল বর্ষার মধ্যেও নিরাপত্তা বাহিনীর অপারেশন জারি থাকে ঝাড়খণ্ডের লাতেহার, মধ্যপ্রদেশের বালাঘাট, মহারাষ্ট্রের গাদচিরলি প্রভৃতি মাওবাদী ‘উপদ্রুত’ এলাকায়। এছাড়াও লাতেহার এর আরেকটি মাওবাদী গোষ্ঠী ‘ঝাড়খণ্ড জন্ মুক্তি পরিষদ’ (জে.জে.এম.পি.)এর প্রধান ও দ্বিতীয় প্রধান পাপ্পু লোহারা ও প্রভাত গঞ্জুকে সহযোগীদের সঙ্গে এনকাউনটারে হত্যা করা হয়। সংগঠনে যাদব প্রাধান্যর আভিযোগে বেরিয়ে আসা ঝাড়খণ্ডের চাতরা, পালামৌ ও লাতেহার অঞ্চলে সক্রিয় ব্রজেশ গঞ্জুর নেতৃত্বাধীন আরেকটি মাওবাদী সংগঠন ‘তৃতীয় প্রস্তুতি কমিটি’ (টি.পি.সি.) সি.পি.আই.(মাওইস্ট) দের সঙ্গে নিরন্তর সংঘর্ষরত।
কেন এমনটা হল? এটি ঘটনা যে পিপলস ওয়ার গ্রুপ অন্ধ্রতে জাতপাত বিরোধিতা, ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের জমিবণ্টন, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ও মহিলাদের সম্মানে সামাজিক আন্দোলন, গণসংস্কৃতি আন্দোলন, সশস্ত্র স্কোয়াড বা দলম গঠন করে সামন্তপ্রভু ও মাফিয়াদের প্রতিরোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। পরে দণ্ডকারণ্যে ঠিকাদার, কেন্দু পাতা ব্যবসায়ী, খনি মাফিয়া প্রভৃতিদের নিষ্পেষণ থেকে স্থানীয় জনজাতিদের রক্ষা করেছেন। কিন্তু দেশ, রাজ্য ও জনজীবনের মূল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত থেকে দুর্গম জঙ্গল পাহাড়ের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে সামরিক দিক দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী এক আধুনিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে চিনে মাও জে দং অনুসৃত গ্রাম দিয়ে শহর ঘিরে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লাইন অতীতের মত আবার ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিককালে কাম্বোডিয়া, ফিলিপাইন্স, পেরু, নেপাল – মাওবাদীদের এই প্রচেষ্টা কোথাও সফল হয়নি। এছাড়া তাঁদের দিক দিয়ে অন্যান্য কারণ একটু আগেই আলোচনা করা হয়ে গেছে। অন্যদিকে সমাজের বিভিন্ন দিক থেকে বড় পরিবর্তন হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী নয়া- উদারনৈতিক বাজার অর্থনীতির অংশ হিসাবে সমাজে অর্থনীতিবাদ অর্থাৎ সবকিছুর আর্থিক মূল্যায়ন, বাজারদরের তারতম্য, মুদ্রাস্ফীতি – দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও একইসঙ্গে রোজগার ও মজুরি বৃদ্ধি, শ্রমের পরিব্রজন, ভোগ্যপণ্যের প্রাচুর্য, উপভোক্তাবাদ, আরও ভালভাবে থাকার উচ্চাকাঙ্খা ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতেও পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি বিগত একশো বছর ধরে আর.এস.এসে.র ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং ২০১৪ থেকে মোদীর নেতৃত্বে বি.জে.পি.র উত্থান ও ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দক্ষিণপন্থী জনপ্রিয় হিন্দু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছে।
তাই তীব্র সামরিক অভিযানে তত সাফল্য না পেয়ে সরকারের তরফ থেকে যখন সামরিক অভিযানের সঙ্গেসঙ্গে জনসংযোগ ঘটানো হয়েছে তখন থেকে সফলতা মিলেছে। গ্রামবাসীদের সাহায্য পাওয়া গেছে। তার উপর দাঁড়িয়ে ‘ট্যাকটিকাল কাউন্টার অফেন্সিভ ক্যাম্পেন’ (টি.ও.সি.) চালিয়ে একেকটা এলাকা ধরে ধরে মাওবাদী প্রভাবমুক্ত করে এবং পার্শ্ববর্তী জঙ্গলগুলিতে নিয়মিত তল্লাসি চালিয়ে গ্রামগুলিতে স্থায়ী সি.আর.পি.এফ. ক্যাম্প বসান হয়েছে। এখন অবধি ৫০০ এর মত ক্যাম্প বসেছে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে ভয় দূর করার পর যখন রেশনের ব্যবস্থা, টিউবওয়েল বসানো, বিজলির ব্যবস্থা, পাকা রাস্তা ও কালভারট তৈরি, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সহায়তা, কর্মসংস্থান, স্কুল নির্মাণ ও বন্ধ স্কুলগুলি চালু করা, সরকারি অফিস ও ব্যবস্থাগুলি চালু করা, মোবাইল টাওয়ার নির্মাণ, হেলথ ক্যাম্প সংগঠন, খেলাধুলার ব্যবস্থা ইত্যাদি করা হল তখন বিচ্ছিন্ন ও বঞ্চিত থাকা মানুষ এগুলি গ্রহণ করলেন। এরসঙ্গে চালু হল বস্তার অলিম্পিক, জনজাতি উৎসব, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। মাওবাদীদের বাধায় এতদিন করা যাচ্ছিল না, এখন পুলিশি পাহারায় ছত্তিশগড় – মহারাষ্ট্র জাতীয় সড়ক নির্মাণ শুরু করা গেছে। এতদিন ঋতু ভিত্তিক তেঁতুল, কন্দ, পুটু বা প্রাকৃতিক মাশরুম, মহুল ফুল, কেন্দু পাতা, জংলি আম ইত্যাদি সংগ্রহ করে অল্প দামে বিক্রি করে, সামান্য পশুপালন এবং বর্ষায় অল্প জমিতে ধান, ভুট্টা চাষ করে কায়ক্লেশে এবং সবসময় মাওবাদী ও পুলিশের নির্দেশ পালনের ভারসাম্য রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় প্রাণ হাতে করে যে জীবন চলছিল আপাতত তার থেকে তাঁদের এক সাময়িক হলেও অবকাশ মিলেছে। এর সঙ্গে মোবাইলের ব্যবহার এবং গঞ্জ ও শহরে যাতায়াতের সুযোগ জীবনকেও অনেকটা বদলে দিয়েছে।
মাওবাদীদের সবচাইতে বড় আঘাতটি দেওয়া হল স্থানীয় জনজাতির নির্বাচিত যুবক – যুবতী, প্রাক্তন সালয়া জুড়ুম সদস্য এবং আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী গেরিলা যোদ্ধাদের সংগঠিত ও আরও প্রশিক্ষিত করে এবং আধুনিক অস্ত্র দিয়ে ‘ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড’ (ডি.আর.জি.), ‘বস্তার ফাইটারস’ এবং ‘দান্তেশ্বরী লড়াকে’ (প্রমিলা কাউন্টার ইন্সারজেন্সি ইউনিট) বাহিনী গঠন করে। সরকারি মাওবাদ দমন সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেল চাকরি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং ভাল পরিমাণ অর্থের ব্যবস্থা করতে পারলে শুধু স্থানীয় গরীব জনজাতির যুবক যুবতীরাই নন কঠোর জঙ্গল বাসের অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবন ছেড়ে অনেক মাওবাদী ক্যাডার ও পি.এল.জি.এ. যোদ্ধাও মূলস্রোতে যোগ দেবেন। ডি.আর.জি. ২০০৮ থেকে থাকলেও ২০১৯ এ এর খোলনলচে পালটে দেওয়া হল। এদের প্রথমে রাজ্যের বাইরে আর্মি প্রশিক্ষণ শিবিরে উন্নত প্রশিক্ষণ, তারপর অন্ধ্রের গ্রে হাউন্ড প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জঙ্গল যুদ্ধের প্রশিক্ষণ এবং শেষে কাঁকের এর প্রশিক্ষণ শিবিরে কাউন্টার টেররিজম ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। পি.এল.জি.এ. যোদ্ধারা আগে থেকেও প্রশিক্ষিত ছিলেন। নিয়োগ করা হল ন্যুনতম কন্সটেবল পদে। এরসঙ্গে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা আর্থিক প্যাকেজ এবং শহরে কোয়ার্টার পেলেন। সবাই অবশ্য পাননি বলে অভিযোগ, আবার আগে থেকে অনেক নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া মাওবাদী প্যাকেজের আশায় আত্মসমর্পণ করেন।
তথ্য বলছে এত দিনকার এলিট কমান্ডো দিয়ে বস্তারের বিশেষ করে অবুঝমাড়ের দুর্গম টেরেনে মাওবাদীদের গেরিলা রণনীতির মোকাবিলা ঠিকমত করা যাচ্ছিল না এবং প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ও বেশ কিছু বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় ভাষা, পরিবেশ, পরিস্থিতি জানা; জঙ্গলের প্রতিটি শুঁড়ি পথ চেনা এবং মাওবাদীদের পদ্ধতি, লুকনোর জায়গা, কলাকৌশল সম্পর্কে অবহিত এদের সামনে রেখে নিরাপত্তা বাহিনী সফল হলেন। সাম্প্রতিক মাওবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁদের দুর্ভেদ্য ও সুরক্ষিত ঘাঁটি গুলিতে একটির পর একটি যে সফল অভিযান সংঘটিত হয়েছে তার কুশীলব এরাই।
তাহলে কি দণ্ডকারণ্যে শান্তি ফিরে এল? প্রথমতঃ, যতদিন অন্যায়, শোষণ, বঞ্চনা, অত্যাচার থাকবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নতুন নতুন রূপে উঠে আসবে। দ্বিতীয়তঃ, সরকার এই অঞ্চলে তিন দশক ঢুকতে না পেরে এখন কিছু ভাল উদ্যোগ নিচ্ছেন। কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালক দুর্নীতিগ্রস্ত সুযোগসন্ধানী রাজনীতিক ও আমলা এবং তাদের সহযোগী শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, মহাজন, সাউকার, মাফিয়াদের পদার্পণ ঘটলেই পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যাবে। এর উপর এখানে খনির কাজ শুরু হলে জনজাতিদের বহু গ্রাম উচ্চেদ হয়ে তাদের শহরের সস্তা শ্রমিক বা ভিখারিতে পরিণত করবে। কেউ কেউ হয়ত সামান্য শ্রমিকের কাজ পাবেন। পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন ও দূষণের সম্ভবনা। তৃতীয়তঃ, মাওবাদীরা গুরুতর ধাক্কা খেলেও নির্মূল হননি। তাঁরা বর্ষার ঘন জঙ্গলের গভীরে; পার্শ্ববর্তী ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্রের সীমানার দিকে এবং অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে লুকিয়ে আছেন বা মিশে গেছেন। অনুকূল পরিস্থিতিতে প্রত্যাঘাতের চেষ্টা করবেন।
গগন্নার মৃত্যু এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলির অবুঝমাড় দখল মাওবাদীদের উপর অবশ্যই বিরাট ধাক্কা। আগামীদিনে তাঁরা নিজেদের কিভাবে পুনর্গঠিত করে আন্দোলন পরিচালিত করবেন সেদিকে নিপীড়িত ও সচেতন মানুষের দৃষ্টি থাকবে। পাশাপাশি এটিও ভাবার যে তেলেঙ্গানার সংগ্রাম থেকে যে প্রবল উদ্যোগ, বহু আত্মত্যাগ সত্ত্বেও বিভিন্ন বামপন্থী উদ্যোগগুলি ব্যর্থ হয়ে চলেছে তাতে মূল্যবান প্রাণ, সময় ও শক্তির আহুতি শুধু নয় সাধারণ মানুষেরও প্রচণ্ড ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রতিকার কিংবা বিকল্প কি?