কী কী পেলাম এখন অব্দি!!
কুণাল ঘোষ যে ডক্টরড অডিও ক্লিপ শোনালেন, তাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়। প্রথমত, হুমায়ুন কবিরের কথার সুর টেনেই প্রচ্ছন্ন হুমকি… লোক আমরা ঢোকাবো, নাম দেব রাম্বামের। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য ভবনের চত্বরে সাধারণ মানুষের যে ঢল নামছে, সেটায় আইনি বাধা নিয়ে আসার প্রচেষ্টা।
সোজা আঙুলে ঘি ওঠেনি। সরকার আঙুল বাঁকাতে শুরু করছে, আরো করবে। এবং এই থ্রেট কালচারটাই রয়েছে সব কলেজে- যে ‘জনরোষের’ আড়ালে রাজরোষের নিদান দেওয়া হচ্ছে, এটাই এখন সর্বত্র দস্তুর। আর এই ধারা চললে আন্দোলন স্তিমিত হতে বাধ্য। আমরা কেউ দুঁদে আন্দোলনজীবী নই- হাজারো অন্যায় অবিচার সহ্য করেও আমাদের কাজ করে যেতে হয়। কারণটা মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন- আমরা এসেনশিয়াল ডিউটির সাথে জড়িত, আমাদের কাজের উপর মানুষের জীবন নির্ভর করে। তাই আমরা পথে নামিনা সহজে- সন্দীপ ঘোষ সিন্ডিকেট চালায়, যাকে খুশি পাশ-ফেল করায়, অভীক টেকো থ্রেট কালচার চালায়, তার সাগরেদরা মেয়েদের যৌন হেনস্তা করে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি; তাও আমরা আন্দোলন করিনা। কারণ মানুষের হয়রানি হলে দু’কান কাটা সরকার কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে, আমরা কাঁদি নীরবে।
আজ অভয়া খুন-ধর্ষণ হলেও আমরা এতদিন কর্মবিরতিতে থাকতাম না, যদি এটা স্টেট স্পন্সর্ড না হতো, যদি অপরাধীকে আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী নিজের আঁচলটা এগিয়ে না দিত…
কিন্তু এই সরকারের ক্ষমতা আছে সর্বোচ্চ আদালত থেকে এই আন্দোলন তুলিয়ে দেওয়ার নিদান নিয়ে আসার। সুতরাং কালেদিনে এই আন্দোলন থেকে জুনিয়র ডাক্তারেরা হয়তো সরে আসতে বাধ্য হবে- কারণ তাদেরও কিছু মূল্যবোধ আছে। সরকার, জুডিসিয়ারির মতো দু’কান কাটা তারা হতে পারবেনা শত চেষ্টা করলেও। এই যে কুমিরটার এত চোখের জল পড়ছে, সে তো বলতে পারতো হ্যাঁ জুনিয়র ডাক্তারগুলো এঁড়ে, আমি এখনই এমইএসের ফাঁকা পরে থাকা ৩৫% পদে নিয়োগ করে দিচ্ছি- স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাঙ্গা হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা সে করবে না, কারণ তার দুঃখ মৃত্যু নিয়ে নয়, তার মূলমন্ত্র হচ্ছে রাজনীতি।
আর আমাদের আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক সমর্থন নেই। অভিজিৎ গাঙ্গুলিও ঢুকতে পারেননি, অগ্নিমিত্রা পালও তাই। অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রহার হলে তা আমরা সামলাতে পারবোনা, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যদি কুণালবাহিনী আমাদের খেদিয়ে দেয়, তাহলেও আমরা অনেক কিছু পেয়ে আছি।
১. পূর্ববর্তী খুনগুলোর মতো অভয়ার ‘আত্মহত্যা’র প্লটটা এক্সপোজড হয়ে গেছে। আমাদের রক্ষক পুলিশ যে অবলীলায় মিথ্যা বলতে পারে এবং আমাদের কারো খুন হলে তারা যে তথ্যপ্রমাণ লোপাটে সিদ্ধহস্ত সেকথা আজ প্রমাণিত।
২. ১০ই আগস্ট আরজিকরে দাঁড়িয়ে যে সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের প্রস্তাব টুকু রাখা যায়নি, তার বাহিনী এসে ঘর বন্ধ করে মারামারির উপক্রম- সেই সন্দীপ ঘোষ এখন মশার কামড়ে সাথে ঝোলভাত খাচ্ছে।
৩. বিভিন্ন কলেজে থ্রেট কালচারের কোমর ভেঙে উল্টো ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন দালালগুলো ভাবছে, কবে তার কীর্তিগুলোও সামনে আসবে!
৪.আমাদের পিতৃ-মাতৃসম কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে মেরুদণ্ড বিকিয়ে সিন্ডিকেটের কথায় পাশ-ফেল করান, মস্তানদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদত যোগান, একথাও দিবালোকের মত পরিষ্কার।
৫. পুলিশকে চোখে আঙুল দিয়ে তার ব্যর্থতা ও দুর্নীতিপরায়ণতা দেখানো হয় গেছে। সাধারণ মানুষ জানতে পেরেছে কাদের হাতে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে একজন ডাক্তার খুন-ধর্ষণ হলে বাকি সমাজের নিরাপত্তার খতিয়ান মানুষ পেয়ে গেছে।
৬. স্বাস্থ্য ভবন যে সবচেয়ে অসুস্থ এবং তার তিন মাথা যে সিন্ডিকেটরাজ চালান রাজ্যজুড়ে, সেই বার্তাও মানুষ পেয়েছেন।
৭. দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানে, কর্মক্ষেত্রে খুন-ধর্ষণ হয়েছে। অপরাধী অভয়ারণ্যে বিচার করছে, পুলিশ তথ্যবিকৃতি করছে- সব জেনেও সে ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের কাজে যোগ দিতে
বলছে। বিচার না প্রহসন- এই প্রশ্নও উঠেছে।
৮. ১৩ বছরের মুখ্যমন্ত্রী, বাংলার অগ্নিকন্যা জননেত্রী- কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তারকে অন ক্যামেরা ফেস করতে ভয় পাচ্ছেন। পাপ, মিথ্যাচার মানুষকে কোথায় নামিয়ে দেয়!
৯. ডাক্তারি পড়ুয়াদের সব ভুলে এক মঞ্চে আসা- বিভিন্ন কলেজে রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন গড়ে ওঠা- আগামী দিনে সব কলেজ থেকেই দুর্নীতির পরিপন্থী হবে আশা করা যায়।
১০. সবশেষে কোনো রাজনৈতিক রং ছাড়া এত মানুষের একসঙ্গে রাজপথে নামা- নবান্নের চোদ্দ তলায় এই বার্তা নিশ্চয়ই যাবে। এই একতাবোধটা জারি থাকা দরকার। তবেই শাসক নিজের গণ্ডির মধ্যে থাকবে…