সিজারের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল কাসকা। ছুরির ঘা বসিয়ে দিল অতর্কিতে সিজারের বুকে । সিজার চেয়েছিলেন বাধা দিতে। কিন্তু নাহ। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। প্রায় তেত্রিশটা ছুরির ঘা এসে পড়ল ষড়যন্ত্রকারীদের থেকে। আহত সিজার , রক্তমাখা সিজার- খুঁড়িয়ে, কষ্ট চেপে ব্রুটাসের কাছে গেলেন বাঁচার আর্তি নিয়ে। কিন্তু ব্রুটাসের আঘাত নেমে এল সিজারের মৃত্যু হয়ে ! একি!মৃত্যু ? শেষ ?
কিশোরটির চোখে জল এসে গেল। এভাবে কেউ চলে যেতে পারে ? চিরতরে?
অনলাইন ক্লাস হচ্ছে লকডাউনে। ছেলেটির মন চলে গেছে কোন সুদূরে। সারা শরীরে বর্ম এঁটে তার বাবা , মা লড়ে চলেছে হাসপাতালে। মুখ ঢাকা মাস্কে। কোনওভাবে যেন ভাইরাস এসে কাবু না করতে পারে।
কতোদিন সে বাবার সঙ্গে গলিতে ক্রিকেট খেলেনি। দাবার বোর্ড খোলেনি। কতোদিন হয়ে গেল মায়ের গায়ের গন্ধ পায়নি ছেলেটা। মায়ের হাতের আলুপোস্ত খায়নি। আধোঘুমে কপালে হাত বোলায়নি একটা নরম হাত।
কিন্তু নাহ। মন খারাপ করলে চলবেনা। তার থেকেও তার বাবা মাকে এখন বেশি দরকার সমাজের। হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে বাবা মায়ের দিকে। কাতর দৃষ্টিতে। ওরা যে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছে সিজারের মতো।আর ছুরির পর ছুরি চালাচ্ছে ভাইরাসটা। ব্রুটাস!
গত বছর ‘মাদার্স ডে’র দিনে ছেলেটা একটা দোকানে ঢুকেছিল। স্কুলছুটির পর। কসমেটিক্সের দোকান। লিপস্টিক আর নেলপালিশ চাইতেই দোকানী অবাক হয়ে তাকিয়েছিল।
“কার জন্য নেবে? গার্লফ্রেন্ড?” ইতস্তত ভাবে প্রশ্নটা করেই ফেলেছিল দোকানি। তেরো বছরের কিশোরও আজকাল বান্ধবীর মন জোগাতে শপিং করে! কী দিনকাল এল!
“লাইট কালার নয়, আঙ্কল ঐ চেরি রেড লিপস্টিকটা দিন। আর ঐ গ্লসি নেলপালিশটা। মা একদম সাজগোজ করার সময় পায়না।”
মা কী খুশি যে হয়েছিল সেদিন। নিজেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চটপট মেখে নিয়েছিল লিপস্টিকটা।
অনেকদিন মা’কে দেখেনি ছেলেটা। পাছে সন্তানের কোভিড সংক্রমণ হয়, মা বাবা এখন অনেক দূরে। সে রয়েছে দাদু দিম্মার জিম্মায় । তালাবন্ধ প্রাণহীন শহর। সন্ধ্যা হতেই টিমটিমে আলো। আজকের দিনে মা’কে কিছু দেওয়া হল না।
কিন্তু ছেলেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, ফেস শিল্ড , মাস্কের মধ্যে মায়ের ঠোঁটে লেগে আছে দৃঢ়তার লিপস্টিক । গ্লাভসে ঢাকা আঙুলগুলো পরম যত্নে রোগীর হৃদয় আর ফুসফুস থেকে টেনে টেনে বার করছে এক একটা ছুরি ।
মায়ের নেলপালিশের রঙটা কী ছিল ? মনে পড়ছে না।
ভালোবাসার কী রঙ ?
চেরি রেড ?
Dolon you are gifted… তুই cardiologist না হয়েও হৃদয় ছুঁয়ে যাস, বার বার… May your cherry red lips keep spreading the smile, mile after mile
নভোনীল তার মা-বাবার এই সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আত্মত্যাগের সাক্ষী হয়ে রইল। সেও মা-বাবাকে অনুসরণ করে সুনাগরিক হয়ে উঠুক, এই আশা রাখি।
নভোনীল-চেরিরেড লিপস্টিক-নভোনীলের মা-বাবা-দাদু-দিম্মা আখ্যানটির চমৎকার চিত্রাঙ্কন আপনার কলমে। নভোনীল স্নেহচুম্বনের উৎসস্থলকে সদা সজীব রাখার দাওয়াই হিসেবে রঙের রাজা চেরিরেডকেই বেছে নিয়েছে। তার রঙ নির্বাচন প্রশংসনীয়।
সব যাত্রা নির্বিঘ্নে চলুক।
?দোলন,
তোমার লেখা,যত লোকে পড়বে,তত লোকের
মতামত এক হবেনা।তাই আমার মতে,তুমি
আরো অনেক,অনেক•••••লেখ।
অশীর্বাদ রইল।
দোলনদি,কী মারাত্মক সত্যি আর সৎ লেখা! নভোনীলকে আদর দিও গো। সিরিজটা চলতে থাকুক। নিজের খেয়াল রেখো।
খুব ভালো লাগলো।
ভালো থেকো।
সুস্থ থেকো।
Awesome
জীবন ও মৃত্যুর নিরন্তর লড়াই। মধ্যিখানে
Buffer.আশা ভরসা নির্ভরশীলতা।
সিজার জীবন ব্রুটাস মৃত্যু ।
Buffer. নভোনীল ভালোবাসা।
তাই ভালোবাসা রঙ লাল ।রেড চেরি।
বাচিয়ে রাখা ও ভালোবাসা নিয়ে বেচে থাকার লড়াইয়ের আশ্চর্য উপাখ্যান এই লেখা।
জীবন দর্শনের সুন্দর রঙমশাল। অভিনন্দন।
ছুয়ে গেল
মন ছোঁয়া সব পলগুলোকে একটা সুতোয় গেঁথেছেন। দারুন ভাবে।
Osadharon