হাতুড়ে একটা রাস্তার ধারে সেভেন স্টার ঝুপড়িতে ঢুকে বেশী করে ঝোল দিয়ে দু প্লেট ডিমের ঝোল আর দুটো থালা ভাত অর্ডার দিয়ে বসে পড়লেন। একটা টেবিল ফ্যান ঘটঘটিয়ে ঘুরছে। সম্ভবতঃ কিছুটা হাওয়াও হচ্ছে।
ওনার পেছনে পেছনে ডিগডিগে রোগা একমাথা ঝাঁকড়াচুলো একটা একটু গম্ভীর ধরনের কমবয়সী যুবক ঢুকলো। উভয়ের মুখের মিল আছে। ছেলেটার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। টি শার্ট ভেজা। বৃষ্টিহীন আষাঢ়ের ভরাদুপুর।
পাশের বেঞ্চিতে বসে দুজন হাসপাতাল ফেরত মানুষ নিরামিষ ভাত খেতে খেতে হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের ভয়ঙ্কর সব আমিষ গালাগাল দিয়ে সব্বাইকার মুন্ডুপাৎ কুপোকাৎ করছিলো। হাতুড়ে হাঁক দিলেন “আমাকে লঙ্কা পেঁয়াজ দিও গো ভাইপো”। যুবক অকারণেই ঘাড় নাড়লো।
পাশের বেঞ্চের লোকগুলোর খাওয়া হয়ে গেছিলো – ওরা জলের জগ থেকে জল ঢেলে হাত ধুলো, কুলকুচি করে দাঁত কিচকিচি করে মুখে যোয়ানের দানা ফেলে অতুলের জামাইকে চল্লিশ টাকা বুঝিয়ে গামছায় মুখ মুছতে মুছতে চলে গেলো। অতুলের জামাই একটু আলুকুমড়োর ঘ্যাঁট আর দু বাটি ডবল ডিমের ঝোল দিয়ে বললো “কাকা তোমার পেঁয়াজ আনছে …নঙ্কা বাটিতে…ঐ নুনের বাটিতে রাখা আছে নে ন্যাও … ভাই তোমারে একটু আলুকুমড়োর তরকারি দেইছি …. ভালো হয়েছে খাও…” হাতুড়ে আর ছেলেটা এখানে দুপুরে নিত্যখাদক খরিদ্দার।
“আচ্ছা তোমাদের সবাই এ্যাতো বদনাম করে কেন?” যুবক নিষ্পাপ প্রশ্ন করে।
বুড়ো একটা গোটা ডিম নিয়ে ভালো করে দুবার চেটে আবার থালায় রেখে দেন। শেষ পাতে খাবেন। “কে বদনাম করে? রোগীরা?”
সুধা মানে দোকানের মালকিন তিনটে কাণা উঁচু অ্যালুমিনিয়ামের থালায় ভাত বাড়তে বাড়তে বললো “ওগো চলো খেয়ে নেই।” ওদের বাসন ধোয়ার মাসি আঁচলে ভালো করে হাত মুছে একটা বেঞ্চিতে বসে হাপুস হুপুস ভাত খায়।
খেতে খেতে হাতুড়ে বলতে থাকেন “রোগীরা কেউই পুরোনো প্রেসক্রিপশন রিপোর্ট আনে না, গুছিয়ে ভুল তথ্য সাপ্লাই করে, মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে ..”
যুবক বাধা দেয় “আরেএএ এগুলো আমি জানি। তোমাদের তরফে কি কি ভুলত্রুটি আছে … কিছু তো আছেই … নইলে সবাই এ্যাতো কথা কেন বলবে? আমি সেটাই তোমার কাছে জানতে চাই”
হাতুড়ে পেঁয়াজে একটা কামড় বসিয়ে বলেন “পাদ্রীবাবার কাছে কনফেশন?”
“না না ওরকম নয় … প্রভূ আমি টাকা উপার্জন করেছি – ক্ষমা করো এরকম নয় – আরও বেশী …. ইয়ের মতো … মানে তোমার দেখা রোগীদের থেকে নিয়ে … তোমার দোষ থাকলে বলতে পারো বা জেনারেলাইজড ভাবে … যেটা খুশি..”
হাতুড়ে মনোযোগ দিয়ে ভাবতে থাকেন ঝোলমাখা ভাতে একটা ডিম মাখতে মাখতে। তারপর আঙ্গুলে লেগে থাকা কুসুমগুলি চেটে খান। বলেন “সুধা আর তো কাস্টোমার নেই?”
বিজয় মানে জামাই বলে “না আমাগো খাবারও শ্যাষ”
“তাহলে এখানে বসেই গল্প করা যাক …”
সুধা বলে “বসোনে রোদ পড়লে চা খেয়ে যাবা”
দুজনে পাল্লা দিয়ে থালা চেটে হাতটাত ধুয়ে একটা বেঞ্চি গাছের ছায়ায় টেনে বসে পড়েন। “তাহলে একটা করে রোগীর কথা মনে করতে করতে ঘটনাগুলো বলি …
গল্প এক
….হাতুড়েবুড়ো বসে আছেন ওর একলা খুপরিতে । বাইরে বর্ষা ঘনঘোর। বুড়োর মাথার ওপরে ফ্যান বনবন – ফ্যান বনবন। তবুও বুড়োর ফুটপাথিয়া বাটিক- জামা ঘাম চুপচুপে। বাইরে ব্যাঙেদের বিরতিময় কটকটানি। ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর মেঘডম্বরুর মাঝে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এক ভদ্রমহিলার আগমন – দুটো হাঁটুই বাতে বিকল।
হাতুড়ে অনেক ক্ষণ থেকেই চাপিপাসু হয়ে গেছিলেন। মনোজকে (কিছুদিন আগে মনোজের পিতা মদন প্রয়াত হয়েছেন – সেই থেকেই ঈষৎ জড়বুদ্ধি মনোজ দোকান চালাচ্ছে) হাঁকাহাঁকি শুরু করলেন – মনোজ ওরে মনোজ দুটো চা দিবি?
বৃদ্ধা হাত নেড়ে না বললেন। তারপর নিজের জিভটা দেখালেন। হাতুড়ের চা খাওয়ার ইচ্ছেটাই চলে গেল। ইয়াঃ বড়ো ফুলকপির মতো আকৃতির কিছু একটা জিভের ডানদিকের আদ্ধেকটা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। জিভ ভালো করে নাড়তে পারছেন না। কোনো ক্রমে বললেন যে উনি সব রিপোর্টই নিয়ে এসেছেন।
হাতুড়ে রিপোর্ট দেখে স্তম্ভিত। দেড় বছর আগের রিপোর্ট। পরিষ্কার লেখা আছে ক্যানসার। হাতুড়ে ডাক্তার তো, তাই ক্যানসারের কি টাইপ স্টেজ এসব বোঝেন না। শুধু ক্যানসার শব্দটুকুই বোঝেন।
অন্যান্য কাগজের মধ্যে দেখা গেল একটা ডিসচার্জ সার্টিফিকেট বা হাসপাতাল থেকে লেখা ছুটির চিঠিও রয়েছে। তখন এই জিভের জন্যই ভর্তি হয়েছিলেন। না – বিশ্বাস করুন কোত্থাও রোগটার নাম লেখা নেই। এবং ঐ বিখ্যাত ডাক্তার বাবু কোনও অঙ্কোসার্জেনের কাছেও পাঠান নি।
মনোজ কাগজের কাপে করে দুটো চা নিয়ে এলো। হাতুড়ে দুটো পেয়ালাই নিজের দিকে টেনে নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন “বাড়িতে কে আছে?”
ভদ্রমহিলা বহু কষ্টে বলতে পারলেন “একমাত্র ছেলে বিদেশে অধ্যাপনা করে।”
এখন লক ডাউন। হাতুড়ের ব্রেনেও লক ডাউন হয়েছে। ধীর ভাবে বললেন “দিদি, আপনাকে একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।”
বুড়ির কপালে বিনবিনে ঘাম জমলো “আগের ডাক্তার বাবু তো অপারেশন করে বললেন আর হবে না – সেরে গেছি ..” তারপর এক অসীম হতাশা এসে ওনার মুখটা– ওনার শরীরটা ঢেকে ফেললো।
হাতুড়েও – এই নির্লজ্জ হাতুড়েও কথাটা বলে লজ্জা পেলেন – এই আকাশব্যাপী লক ডাউনে প্রবাসী পুত্রের মা – বাতে পঙ্গু একাকী বৃদ্ধা কি করে যাবেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে? অথচ রিপোর্ট প্রায় দেড় বছর আগেকার। সবাই জানতো শুধু যে রোগী সে’ই জানে নি।
সব চুপচাপ ।
“কেন বলে নি রোগের কথাটা?” ঝাঁকড়াচুলো প্রশ্ন করে।
হাতুড়ে সিগারেট টানতে টানতে বলেন “হয়তো মহিলা রিপোর্ট নিয়ে যায় নি …”
যুবক ঘাড় নাড়ে “না, তুমি ডাক্তারের ফেভারে কথা বলছো … ঐ ডাক্তার ভীষণ ওভারকনফিডেন্ট ছিলো … ভেবেছিলো – আমি যা করবো ঠিক করবো….”
সুধা স্টিলের একটা ছোটো বাটি থেকে পান সুপুরি চূন আর মৌরি বার করে পান বানায়। তারপর পানে গাল ফুলিয়ে বলে “আসলে ঐ (কচমচ কচমচ) ডাক্তার নিজের হাতিই রুগিডারে ধরি রাখতি চেইছিলো”
বিজয় এসে পানের জন্যে সুধার সামনে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে “শোনো আমার মনে হয় ঐ ডাক্তার তাড়াহুড়োয় লেখতে ভুলে গেছেন, ডাক্তারের কাছে তো সময় থাকে না ”
হাতুড়ে বলেন “আরেকটা ঘটনা বলি তাপ্পর আমরা ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করবো, কেমন?”
হাতুড়ে দ্বিতীয় ঘটনা আরম্ভ করেন।
গল্প দুই
হাতুড়ে বসে বসে টেবিল বাজিয়ে বেসুরো গান গাইছিলেন– সজনী সজনী রাধিকা লো দেখ অবহুঁ চাহিয়া। চমৎকার জমেছিল। বাইরে ঝমঝমিয়ে রোদ্দুর পড়ছে। জলীয় বাষ্প ভেসে ভেসে বাতাস ভারী করে তুলেছে। পেছনের মদের দোকানের ফেলে দেওয়া পচা চাট আর পচা কাদার গন্ধ। কাকেরা মাংসের হাড় নিয়ে টানাটানি করছে। লক ডাউনের বাজার না শ্মশান প্রান্তর বোঝা দায়। এমন সময় তিনি এলেন।
পঞ্চাশের নিচে বয়স। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রূপ পরিণতি পেয়েছে। “আমাকে তারক ব্যানার্জিবাবু পাঠিয়েছেন।” একটা রিপোর্ট বার করে দিলেন।
রিপোর্ট দেখে হাতুড়ের যে কটা চুল অবশিষ্ট আছে তারা এক মহাজাগতিক আকর্ষণে খাড়া খাড়া হয়ে গেল। সুগার ভয়াবহ রকম বেশী। ফাস্টিং তিনশো ছিয়াশি।
“কতোদিনের সুগার ?”
“দশ বারো বছর”
“আগের রিপোর্ট?”
“আনা হয় নি”
হাতুড়ে ঘোষণা করেন “সব রিপোর্ট নিয়ে না এলে আমি আপনাকে দেখবো না”
হতচকিত ভদ্রমহিলা জানালেন উনি একজন বিখ্যাত ইয়ে বিশেষজ্ঞকে দেখাতেন।
হাতুড়ে নির্বিকার টেবিল বাজিয়ে গাইতে থাকেন “মৃদুল গমন শ্যাম আওয়ে মৃদুল গীত গাহিয়া”
মহিলা অগত্যা ওনার ছেলেকে ফোন করলেন। একটু পরে মা আর ছেলে দুজনেই ব্যাজার মুখে রিপোর্টপত্র এগিয়ে দিলো।
হাতড়ে হাতড়ে হাতুড়ে সেই অসীম কাগজের বান্ডিল থেকে কয়েকটি রিপোর্ট খুঁজে বার করলেন। দুটো কিডনিই খারাপ হয়ে গেছে। ইউরিয়া ক্রিয়াটিনিন অনেক অনেক বেশী। ইকো দেখাচ্ছে হার্ট একদম ভালো পাম্প করছে না – ডগা থেকে আরম্ভ করে অনেক জায়গা নড়তেই পারছে না কাজেই পাম্প করার প্রশ্নই নেই। এবং বিষ্ময়ের কথা এগুলো তো রোগিনী জানেন়ই না এমনকি প্রেসক্রিপশনে এগুলো লেখাও নেই।
বুঝিয়ে বলার পরে মা ছেলে খানিকক্ষন স্তব্ধবাক বসে রইলো।
“তাহলে এতদিন মায়ের ভুল চিকিৎসা হচ্ছিল?”
হাতুড়ে হাসেন “না, তা কেন হবে? এই অবস্থায় যে যে ওষুধ চলার কথা তাই চলছিলো”
তারপর হাতুড়ের লেখা কিছু টেস্টের প্রেসক্রিপশন নিয়ে মা ছেলে চলে গেল। ঝাঁকড়াচুলো যুবক আঙ্গুল দিয়ে এলোমেলো চুল আরও এলোমেলো করে ভাবতে লাগলো।
সুধা পানের পিক গিলে বললো “ঠিক ঠাক চিকিচ্ছে হলে গন্ডগোল কোথায়?”
বিজয় একটা বিড়ির মুন্ডুটা দু আঙ্গুলে চেপ্টে দিয়ে অন্য দিকটা দাঁতে চেপে লাইটার জ্বালায় “হ্যাঁ, আমরা মুখ্যু সুখ্যু মানুষ রোগের নাম দে’ কি করবো? চিকিচ্ছেটা ঠিক হলিই তো হলো …” বলে নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে।
এলোমেলো চুল যুবক বলে “ঠিকই কথা। কিন্তু এটা তো একটা ওপেন মার্কেট মানে ক্যাপিটালিজম … মানে … একটা লোক কি কিনবে – কি খাবে – কাকে দেখাবে – কোথায় দেখাবে সেটা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে – সুতরাং তাকে সমস্ত তথ্য জানতেই হবে …নৈলে তো তার ডাক্তার বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে না…” বিজয় বিড়ি ফেলে দেয়।
“ঠিকই তো কথা …” সুধাও বলে “এ্যাখুন মনে হচ্ছে কথাটা তো ভাই বলতিছে ঠিকই…”
হাতুড়ে আবার একটা সিগারেট বার করে। বিজয় লাইটার ধরে মুখের সামনে। রোগা যুবক দ্বিতীয় সিগারেট দেখে ভুরু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে। “বুঝলি মোটুরাম? আসলে ডাক্তাররা মুখে যতই বলুক আমি একজন পেশাদার আসলে মনের মধ্যে গেঁথে আছে ‘ভগবান’ ‘ডেমি গড’ এই সব শব্দগুলো। মনের ভেতরে সে ভাবে আমি ভগবান – তাই একটা অদ্ভুত অহং , একটা আমিই সেরা ভাব নিয়ে সে রোগী দেখে। আসলে সে যে একজন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ মানুষ সেটা ভুলে যায়। যেমন এই কিডনি খারাপ কেসটায় রোগী যদি ঠিকঠাক জানতো তাহলে রক্ত পরীক্ষা টরীক্ষা ঠিক সময়ে করতো – তাই না?”
সুধা বলে “কাকা বসো চা বানাই – ভাই তোমার চায়ে চিনি দিমু?”
ঢ্যাঙা তর্জনী তুলে এক চামচ ঈঙ্গিত করে ।
You ought to be a part of a contest for one of the highest quality websites on the internet.
I’m going to highly recommend this blog!
অসংখ্য ধন্যবাদ ।
অসংখ্য ধন্যবাদ
Really a good deal of fantastic info!
Best Essxay writing
modernist painting https://an-essay.com/high-end-shoes
It’s an awesome article in support of all the online users; they will take benefit
from it I am sure.
I do not know any thing about blog or any thing . I just write and send my essay to the editors .
So sorry can’t help.
ধন্যবাদ মহাশয় ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ ।
Read…thoroughly…apni ato bhalo kore bujhiyechhen je akhon porishkaar bujhte parchhi hospital e emergency r baire rogi r odhikaar heading er niche ja ja point lekha thake…taar ektio mana hoyna…ta niye amra patient er porijon ra kono question korina ba korle durbyabohaar ba complete indifference pete hoy…athocho patient er kortobyo hishebe patient er barir lok hospital er jabotiyo niyomaboli word for word palon kore…one sided business…business based on someone’s worst fear…and someone’s pride to be on the other side….thanks a lot Sir.
Educated and aware patients are generally difficult patient s for the doctors. The disease is carried inside the patient’s body, the doctor is doing a paid favour by agreeing to attempt a repair.
Chances of success depends on level of complications.
I as a patient completely refuse to get educated because that helps the doctor to feel like a God. Yes l can go to many Gods but will not agree to know more than the working instructions.
This way the medical industry will have a graceful death till the time AI replaces most human doctors and l as a patient survive with minimum scolding from the doctor for trying to be educated.