অপ্রতুল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও অসহায় সহনাগরিকদের কথা বিবেচনা করে রায়গঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজ কিছু মানবিক চিকিৎসকের সহৃদয়তায় মৃদু উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগীদের অনুকূলে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে চলেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হোম আইসোলেশন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সরকার স্বীকার করুক বা না করুক করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। আগামী দু-এক মাসে এটি চরম আকার ধারণ করবে। মনে রাখবেন এই ভাইরাসটি প্রচণ্ড ছোঁয়াচে কিন্তু মারাত্মক নয়। ভারতে এর মর্টালিটি রেট ২%। তাসত্বেও ভারতে আক্রান্তের নিরিখে মৃতের সংখ্যাটি কিন্তু কম নয়।
এই ২%-এর মধ্যে আমরা পড়ে যেতে পারি। কিন্তু এটাকেও আমরা অনেকটা আটকে দিতে পারি হোম আইসোলেশনের মাধ্যমে। মৃদু আক্রান্ত রোগীদের হোম আইসোলেশনে রাখতে পারলে গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোভিড হাসপাতালে জায়গা দিয়ে চিকিৎসা করাটা সহজ হবে। বেডের সমস্যাটা অনেকটাই কমে যাবে। তাছাড়া, মৃদু আক্রান্ত রোগীদের গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের থেকে দুরে রাখতে পারলে জীবনের ঝুঁকিটাও কমে যাবে।
আশার কথা ভারতীয়দের ইম্যুনিটি পাওয়ারটা বেশি থাকায় অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। এখানে সরকারের কোনো কৃতিত্ব নেই। এমনিতেই সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোটাই বিধ্বস্ত, তার উপর গোষ্ঠী সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করলে সরকার হাত তুলে নিবে তাতে সন্দেহ নেই। তখন আপনাদের বা আমাদের ভূমিকা কী হবে এই নিয়ে গতকাল রায়গঞ্জের বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং সমাজকর্মীদের নিয়ে একটি ভিডিও কনফারেন্স করেছিলাম, সেই মিটিং এ বিশেষজ্ঞদের মতামতকে এখানে তুলে ধরলামঃ
১। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ার আগে অতি সত্বর বেসরকারি উদ্যোগে কোভিড অ্যাকশন টিম তৈরি করতে হবে। এই টিম ডাক্তার, নার্স, মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এবং সমাজকর্মীদের নিয়ে গঠিত হবে এবং স্বাস্থ্য দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে।
২। এই টিম মৃদু আক্রান্ত কোভিড রোগীদের হোম আইসোলেশনে থাকার জন্য উৎসাহ যোগাবে, টেলি মেডিসিন, পরামর্শ, পর্যবেক্ষণ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে রোগীদের সহায়তা প্রদান করবে। রোগীর অবস্থা খারাপ মনে হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
৩। এই টিম তৈরি করাতেও কিছু সমস্যা রয়েছে। ডেডিকেটেড টেকনিশিয়ান এবং নার্স সংগ্রহ করা বেশ কঠিন তবে ডাক্তারদের সম্মতি আমরা পেয়েছি।
৪। যদি নিজের বাড়িতে রোগীদের হোম আইসোলেশনের ব্যবস্থা না করা যায় তাহলে তাকে সরকারি আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। এই টিম তৈরিতে প্রশাসন সায় দিবে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে। স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করলে মানুষকে অনেক বেশি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে।
এই টিম তৈরিতে আমাদের প্রচেষ্টা জারি থাকবে। আর এজন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা এবং শুভকামনা ভীষণ কাম্য।
প্রাথমিকভাবে এই টিমের চারজন বিশিষ্ট চিকিৎসক টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরে আরো একজন ডাক্তার ডাঃ শম্ভূ পাসোয়ান এই অভিযানে সামিল হলেন, তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ (ফোন নংঃ 8116800336), তাঁকে পাওয়া যাবে রাত ৮ টা থে ৯টা অবধি।
কোভিড সংক্রান্ত কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে অবশ্যই তাঁদের ফোন করবেন। তাঁরা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল এবং মানবিক।
আপনারাও স্থানীয়ভাবে এরকম একটি টিম তৈরি করুন। দেখবেন অনেকেই এগিয়ে আসবেন। আসন্ন সময়ের জন্য এখুনিই প্রস্তুতি শুরু করুন।
আতঙ্কে থাকবেন না, সতর্কে থাকুন।
সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
শাহীদুর রহমান।
আরও বেশি মানুষের কাছে বার্তা যাবে। অসহায়, আর্ত মানুষ অবদমিত আতঙ্ক এবং ভেবে-নেওয়া মৃত্যুভয়ের মাঝে আছে। এদের কাছে গোমূত্র থেকে করোনাদেবী সবকিছুকেই পোস্ট-ট্রুথ-এর রাষ্ট্র বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করে। হাসপাতালে মানবিক চিকিৎসা দিতে না পারলেও।
সেখানে এই উদ্যোগে মানুষের সুরাহা না হলেও খানিকটা আশ্রয় মিলবে, সরকারি উদ্যোগের পাশে।
তবে ভারতীয়দের ইমিউনিটি ক্ষমতা বেশি, বিশেষ করে করোনার বিরুদ্ধ, এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
গোষ্ঠী সংক্রমণকে প্রতিহত করতে ডাক্তার বাবুদের এবং রায়গঞ্জের সচেতন নাগরিক বৃন্দের প্রচেষ্টাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।