পুলিশের প্ল্যান্ট করা ছোট ছোট ইনফরমেশন নিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া নিজেদের দৈনন্দিন ‘ব্রেকিং নিউজ’-এর খাঁই মেটাচ্ছে – এরকম আগে কখনও হতে দেখিনি, এমন নয়।
কিন্তু এবারের ব্যাপারটা, হয়ত হাসপাতাল-ডাক্তার- স্বাস্থ্যব্যবস্থা জড়িয়ে ইস্যু বলেই, আমার একটু বেশি করে চোখে পড়ছে।
ধৃত সঞ্জয় রায় একেবারে কপিবুক স্কেপগোট মেটিরিয়াল। ডিটেকটিভ গল্পে এক্কেবারে শুরুতেই যাদের দিকে পাঠকের সন্দেহের নজর পড়ে, সঞ্জয় রায় ঠিক তেমন মানুষ। কলকাতা পুলিশের কৃতিত্বই বলব, যে, তাঁরা এত দ্রুত এমন চমৎকার একটি চরিত্রকে মাঠে নামাতে পেরেছেন। (দুর্জনে হয়ত বলবেন, সিভিক পুলিশের রাজত্বে আশেপাশে এমন চরিত্র প্রচুর,
কাজেই কলকাতা পুলিশকে খুব একটা খোঁজাখুঁজি করতে হয়নি।)
তদুপরি, এরকম ক্ষেত্রে পাব্লিকের বিরক্তির প্রকাশ – ক্ষমতার দিকে তির্যক নজর তথা গালিগালাজ ছুঁড়ে দিয়ে অল্পবিস্তর আত্মপ্রসাদ লাভের সুযোগ – এসবের যথাযথ সুযোগ না রাখতে পারলে ক্ষোভ লাগামছাড়া জায়গায় পৌঁছাতে পারে। সঞ্জয়কে সামনে রাখলে প্রেশার কুকারের সেই সেফটি ভালভের সিটি-টিও ঠিকঠাক পড়তে থাকে। ধৃত সঞ্জয়ের মাথায় কোন ক্ষমতাসীনের হাত? পুলিশের টহলদারি বাইক সঞ্জয়ের হাতে গেল কী করে? সঞ্জয়কে সেই রাত্রে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন কারা? প্রত্যক্ষত এসব প্রশ্নের সামনে পুলিশ ও সরকার উভয়েরই অস্বস্তি বাড়ে – অন্তত বাড়ার কথা – কিন্তু পুলিশ গুণ্ডা সরকার দুর্নীতিবাজ, এই রাজ্যে (দেশেও), এমন একাকার হয়ে আছে, এবং যে একাকার হয়ে থাকাকে আমরা একপ্রকার মেনেই নিয়েছি, তাতে এসব আলগোছে ওঠা প্রশ্ন আদতে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের ইকোচেম্বারে ধাক্কা খাওয়ার বেশি কিছুই কার্যকরী হয় না – পুলিশ ও সরকার, সম্ভবত, পাব্লিকের এহেন সারল্য দেখে আমোদ পেয়ে থাকেন।
তো এক্ষেত্রে তেমনই চলছে। ধৃত সঞ্জয় রায়ও ‘আমি শালা কারও তোয়াক্কা করি না, যা পারিস করে নে’, টাইপের হাবভাব নিয়ে চিত্রনাট্যে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে চলেছে – মানে, পুলিশের মুখে আমরা জানতে পারছি এই সহযোগিতার কথা – যেমন পুলিশ দুদিন বাদে জানালো রক্তমাখা জুতোর কথা – আরও দুদিন বাদে নিশ্চয়ই জানাবে মেয়েটির ভাঙা গাড়ির কথা – হয়ত জানব, গাড়ি ভাঙতে গিয়ে সঞ্জয়ের ডানহাতের কনুইয়ের তিন ইঞ্চি উপরে একটু ছড়ে যাবার কথাও…
আর এই সব নিয়েই চলছে, চলবেও, ব্রেকিং নিউজ…
আরজিকর-এর অধ্যক্ষ আপাতত সরকারের আস্তিনে লুকিয়ে রাখা শেষ তাস। অবস্থা নেহাত বেগতিক দশায় পৌঁছে গেলে বদলি বা কম্পালসারি ওয়েটিং, আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে যে কে সে-ই…
কিন্তু কী কিউট ব্যাপার, দেখুন, সেই রাত্রে ডিউটিরত ইন্টার্ন – যে কিনা ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা – তার খোঁজ, এবং তার ডাকসাইটে বাবার খবর, সেসব নিয়ে কোনও মিডিয়ারই মাথাব্যথা নেই!!!