যদিও খুনই বলুন বা ধর্ষণ, এসব ক্ষেত্রে আক্রান্তের দেশ-জাতি-ধর্ম-বর্ণ বা রাজনৈতিক পরিচয় কোনোটিই বিচার্য নয় (এধরণের ঘটনা সবরকম পরিচয়-বিচার নির্বিশেষে নিন্দনীয়), তবু কিছু তিক্ত কথা মনে হলো।
১. ধর্ষিতা মেয়েটি, যদ্দূর জেনেছি, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক। স্রেফ সমর্থক নন, এতটাই নিবিড় সেই “সমর্থন”, যাতে তিনি আশায় ছিলেন, কেবলমাত্র অমুকদাদার কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই তিনি কলেজের নির্বাচন-মুক্ত ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যাবেন। নিজেরই দলের অমুকদাদা যে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরিবর্তে সপারিষদ ধর্ষণে লিপ্ত হবেন, তা তিনি আগাম অনুমান করতে পারেননি (যদিও দলের সেই “দাদা”-র ট্র্যাক রেকর্ড মাথায় রাখলে, সামান্য কাণ্ডজ্ঞান প্রয়োগ করলেই, তেমন অনুমান কঠিন ছিল না – কিন্তু আমার এই পোস্ট আক্রান্ত মেয়েটিকে দোষারোপ, বা ভিক্টিম ব্লেমিং-এর উদ্দেশে নয়)।
২. ধর্ষিতার বাবা-ও, যদ্দূর শুনলাম, সেই একই দলের সমর্থক। স্রেফ সমর্থক নন, দলের কোনও একটি ‘সেল’-এর সক্রিয় সদস্য।
তো দলের নির্বিকল্প শাসনকালে, শাসক দলের এক সক্রিয় সদস্যের কন্যা (যিনি কিনা নিজেও দলের ছাত্রসংগঠনের সক্রিয় সদস্যা) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন – আপনি কি আশা করছেন যে সেই দলের নেতৃবৃন্দ থেকে সদস্য-সমর্থক সকলেই ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন?
না। একেবারেই না।
দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস হলে তেমন আশা অবান্তর।
দলের সদস্য বা সমর্থকের বিরুদ্ধে দলেরই কোনও উঠতি নেতা কোনও অপরাধ ঘটালে যে দল চুপ করে থাকে – অর্থাৎ মৌনতার মাধ্যমে (বা হাবিজাবি অবান্তর বাজে বকার মাধ্যমে) অপরাধী তথা অপরাধমূলক কাজের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে থাকে – সেই দলই তৃণমূল।
যাঁরা সক্রিয়ভাবে তৃণমূল করছেন অথবা ইনিয়েবিনিয়ে তৃণমূলের পক্ষে থাকছেন – আগের কথাগুলো মাথায় রেখে তারপর দলে থাকুন।
আচমকা নিজে বা আপনারই পরিবারের কেউ এধরণের অবাঞ্ছিত ঘটনার শিকার হলে, আর যা-ই হোক, প্লিজ, বিস্মিত হবেন না। অথবা বিস্মিত হওয়ার ভান করবেন না।
(অবশ্য বিলেত-আমেরিকায় বসে তৃণমূলের পক্ষে হ্যাজ নামালে চাইলে নির্বিঘ্নে নামাতে পারেন। নিরাপদ দূরত্ব থেকে ওসবে অসুবিধে নেই।)
আশা করা যাক, তৃণমূলের সক্রিয় সদস্য বাবা বা টিএমসিপি-র নেতৃত্ব-অভিলাষী মেয়েটি, কেউই আরজিকরে ডিউটিরতা ডাক্তার মেয়েটির খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদে কখনও পথে নামেননি। বলা যায় না, হয়তো তাঁরা, যাঁরা প্রতিবাদ করছিলেন, সর্বতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ছিলেন – সক্রিয়ভাবে না হলেও, অন্তত মনে মনে তো বিরুদ্ধেই ছিলেন।
তো যা-ই হোক, সেদিন যারা পথে নেমেছিল – আজও যারা প্রতিবাদ বন্ধ করেনি – এই ধর্ষণের প্রতিবাদে তারা-ই আবারও পথে নেমেছে। ভোটের অঙ্কে তাঁরা যত শতাংশই হোন না কেন, প্রতিবাদ তাঁরাই করছেন।
আর আইন কলেজের ধর্ষিতার (বা তাঁর বাবার) তথাকথিত ‘সহযোদ্ধা’-রা হয়ত এরই মধ্যে আরও নতুন কোনও ধর্ষণের ছক কষছেন। হ্যাঁ, প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ এবং খুন-ধর্ষণে অংশীদারত্ব – দুইয়েই তাঁদের তাকলাগানো সমৃদ্ধি।
এটুকুই মনে করিয়ে দেওয়ার ছিল।