আর জি কর আন্দোলন নিয়ে অনেক কথা চলছে। আন্দোলন কি ঝিমিয়ে পড়েছে? আন্দোলন কি শেষ হয়ে গেছে?
কিছুই তো হলো না। তাহলে আন্দোলন করে কি হলো?
এরকম হাজার প্রশ্নে চারদিক মেতে আছে। এইরকম আবহে আমার কয়েকটা কথা একটু বলার আছে। এইযে প্রশ্নগুলো বললাম এগুলোর একটি উৎস আছে।আন্দোলন নিয়ে আমাদের যে ধারণা আছে সেটা সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। সেখানেই এই প্রশ্নগুলো উঠে আসে। কেউ মনে করে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়া হলো আন্দোলন। কেউ মনে করে বিরাট মিছিল করা আন্দোলন। কেউবা মনে করে ভেঙে চুরমার করাই আন্দোলন। কারো ধারণা অনশন করা আন্দোলন। এরা কেউই ঠিক নয়, কেউই ভুল নয়। সবাই আসলে আন্দোলনের একটি একটি দিক উল্লেখ করছেন।
এবারে আসুন বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করা যাক।
আমার মা ছোটবেলায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিতো। মায়ের যে গুরু ছিলেন তার নাম স্বর্গীয় নলিন চক্রবর্তী। ওনার সঙ্গীত শিক্ষার ঘরে আমি ছোটবেলায় কয়েকবার গেছি। ওখানে একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ করেছিলাম। দেয়াল জুড়ে অনেকগুলি সেতার ঝোলানো আছে। মাঝখানে একজন বসে সেতার বাজাচ্ছে। এতগুলো সেতার কেনো ঝোলানো আছে তাই নিয়ে আমার জিজ্ঞাস্য ছিলো। মা বলেছিল, সব সেতার যদি একই সুরে বাঁধা থাকে তাহলে একটি সেতার বাজালে বাকিগুলো একসাথে নিজে নিজেই বাজতে থাকে।
মেডিকেল কলেজে যখন ছাত্র আন্দোলন করছি তখন বারবার এই সেতারের রুপক মাথায় এসেছে।
আরেকটি বিষয় আমার মাথায় দাগ কেটেছিল। উচ্চমাধ্যমিকে ফিজিক্স এ একটি প্রশ্ন আসতো। ব্রিজের ওপর একসাথে অনেকে মিলে মার্চ করা কেনো উচিৎ নয়। সেখানে আমরা শিখেছিলাম অনেকে মিলে একসঙ্গে মার্চ করলে তাতে যে অনুরণন তৈরি হয় তার অভিঘাতে ব্রিজ যতোই শক্ত হোক সেটা ভেঙে পড়তে পারে।
আন্দোলনে সব মানুষকে আমার এক একটা সেতার মনে হয়।
আন্দোলনে যে ডাক দেয় সে হলো সেতারি। সেতারি যে বজায় সেটাই আন্দোলন। সেই আন্দোলনে যখন সেতারির সঙ্গে ব্যাপক মানুষের মন এক সুরে বাঁধা হয়ে যায় তখনই আন্দোলন গণ আন্দোলন হয়ে যায়। লাখো মানুষ একসাথে পথ হাঁটে। এই পথ হাঁটা যখন অনুরণন তোলে তখন দুর্নীতির অটুট ব্রিজও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। কায়েমী স্বার্থ বারবার চেষ্টা করে যাতে সেতারগুলো কিছুতেই এক সুরে বাঁধা না হয়। তার জন্য মিথ্যা অপপ্রচার, ভয় দেখানো, আইনি হয়রানি করা সব চলতে থাকে। অসুরের দল সুরে বাঁধা সেতার ভীষন ভয় পায়। যে দ্রোহকাল ২০২৪ প্রকাশিত হলো সেটা আমার কাছে সেতার সুরে বাঁধার একটি প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টা আমাদের বিভিন্নভাবে সব সময় চালিয়ে যেতে হবে।
সবাই দ্রোহকাল ২০২৪ পড়ুন। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিন। আমাদের সব সেতার জাস্টিসের সুরে বাঁধতেই হবে। দুর্নীতির ব্রিজ ভাঙতেই হবে।
তোমার আমার একই স্বর
জাস্টিস ফর আর জি কর।