রামমোহন রায় এবং ভারতের নবজাগৃতি – একটি প্রাথমিক অনুসন্ধান
‘এত ভ্রান্তি কেন মন দেখ আপন অন্তরে।
যার অন্বেষণ কর সে নিবাসে সর্বান্তরে।‘
—রামমোহন রায়
রামমোহন রায়ের জন্ম মোঘল সাম্রাজ্যের শেষ লগ্নে, পলাশীর যুদ্ধে (১৭৫৭ খ্রি:) জয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ বাণিজ্য সংস্থার বাংলা তথা সমগ্র হিন্দুস্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণের পরে। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দের সম্ভবত ২২ মে হুগলি জেলার দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী, দারকেশ্বর প্রভৃতি নদনদী বিধৌত অতিউর্বর শস্যশ্যামলা খানাকুল থানার রাধানগর গ্রামের ধনী ব্রাহ্মণ কুলিন পুরোহিত ও জমিদার রামকান্ত রায়ের দ্বিতীয়া পত্নী তারিণী দেবী বা ফুল ঠাকুরাণীর গর্ভে। রামমোহনের মাতৃকূলও উচ্চবর্ণের হিন্দু-তান্ত্রিক বংশ ছিল। তাঁর পিতৃকূল ছিল বৈষ্ণব মতের। তারিণী দেবীর জ্যেষ্ঠপুত্র জগমোহন। আরেকটি কন্যাও জন্মেছিল রামমোহনের আগে। রামকান্ত রায়ের প্রথমা পত্নী সুভাদেবী নিঃসন্তান ছিলেন। তৃতীয়া পত্নী রাসমণি দেবীর গর্ভে জন্মান রামলোচন। রামমোহনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা।
আবহমান কাল থেকে নিজস্ব পশ্চাৎপদ ও আবদ্ধ জীবনপ্রবাহ ও ধর্ম-কুসংস্কারে অভ্যস্ত অথচ প্রকৃতি ভরপুর স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলা এবং ভারতের গ্রামগুলি একদিকে কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত নবাবী শাসন অন্যদিকে দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায়ে কোম্পানির সরাসরি শোষণে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ক্রমাগত বিদেশী অত্যাচারী মুৎসুদ্দি পুঁজির (Comprador Capital) আক্রমণে প্রথমে পুর্ব ভারতের পরে অন্যত্র অর্থনীতি ছারখার হয়ে যায়। যার ফলে রামমোহনের জন্মলগ্নে ঘটে ভয়াবহ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৬৯ – ৭৩ খ্রিষ্টাব্দ বা ১১৭৬ – ৮০ বঙ্গাব্দ) যাতে অবিভক্ত বৃহত্তর বাংলার এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা প্রায় দুকোটি মানুষ মারা যান। ব্রিটিশ শাসনে একের পর এক দুর্ভিক্ষ ঘটে চলে।
এরপর লর্ড কর্ণওয়ালিস ভারতের ব্রিটিশ বড়লাট বা গর্ভনর জেনারেল হয়ে এসে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে এতদিনকার নবাব ও কোম্পানির রাজস্ব আদায়কারী দালাল জমিদারদের বিপুল মুনাফার পরিবর্তে জমির মালিক ও স্বত্বাধিকারী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় দেশের এতদিনকার স্বাধীন কৃষক হয়ে গেল কোম্পানি ও নবাবীর অধীনস্ত জমিদার-মহাজনদের প্রজা। বেড়ে গেল কোম্পানি ও নবাবী শোষণ ছাড়াও জমিদার এবং তাদের বসানো বিভিন্ন মধ্যসত্বভোগী আদায়কারীদের শোষণ ও অত্যাচার। যার সমষ্টিগত অভিঘাতে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক সর্বস্বান্ত ও রক্তশূন্য হয়ে গেল। বিশ্ববন্দিত বস্ত্র ও অন্যান্য কুটির শিল্প হয়ে গেল ধ্বংস। বলপূর্বক নীল, আফিম, চা ইত্যাদি চাষ করানো শুরু হল। এর বিরুদ্ধে অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হল যার মধ্যে শক্তি ও ব্যাপকতায় সর্বাগ্রে ছিল সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০ খ্রি:)।
আবার বর্ধমানের মহারাজা সেই সময় সর্বপ্রথম পত্তনি দিয়ে মধ্যসত্বভোগী তালুকদার সৃষ্টি করেন। ওই রাজবাড়িরই প্রধান পুরোহিত রুপান্তরিত নায়েব-তালুকদার ছিলেন রামমোহন পিতা রামাকান্ত রায় যিনি নিজেই প্রচুর ভূসম্পত্তি অর্জন করেন। এইরকম সময়ে এই রকম এক শ্রেণি অবস্থানে জন্ম রামমোহনের। তাঁর কার্যপরম্পরায় যেমন এই ব্রিটিশ-নবাবী-জমিদারি শাসন প্রণালীতে থেকে পরিষেবা দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল, আবার আমৃত্যু উদ্যোগ ছিল এই শাসন প্রণালীকে মানবিক, প্রজারঞ্জক, আধুনিক ও উন্নত করে তোলার। রামমোহন একদিকে যেমন নবাব ও কোম্পানির অধীনে চাকরি করেছেন আবার ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা সংস্কারে সক্রিয় ছিলেন। প্রতিবাদ করেছিলেন সাধারণ মানুষের ও মালঙ্গিদের পক্ষে ক্ষতিকারক লবণ আইন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী আইনের বিরুদ্ধে। বাংলার বিভিন্ন জেলায় দেওয়ানি সংক্রান্ত কাজ করে বাংলার গ্রাম ও কৃষিজীবন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তাঁর সময়ে, আগে ও পরে নির্যাতিত কৃষক, কারিগর, সৈনিক প্রমুখদের যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল তা আছড়ে পরে তাঁর মৃত্যুর ২৪ বছর পরে ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহে।
রামমোহন ছিলেন বাংলা তথা ভারতের নবজাগৃতির (Renaissance) প্রাণপুরুষ যদিও এই নবজাগৃতি ছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন কর্তৃক তাদের প্রয়োজনীয় সংস্কারজাত এবং ওই ঔপনিবেশিক-সামন্ততান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থার অঙ্গীভূত মূলতঃ অনুপস্থিত জমিদার (Absentee Landlords) ও বেনিয়ান শ্রেণির শিক্ষিত ও আলোকিত (Enlightened) অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পাশাপাশি রামমোহন ছিলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের (Nationalism) আদিগুরু যদিও এই জাতীয় চেতনা ছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন ও অত্যাচারী জমিদারি ব্যবস্থার অন্তর্গত ও সহায়ক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র দলিত, মুসলমান, আদিবাসী, জনজাতি কৃষক-কারিগরদের থেকে বিচ্ছিন্ন। এর মধ্যেও বেশ কয়েক বছর ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, রামগড় (হাজারিবাগ), মুর্শিদাবাদ, ভাগলপুর, রংপুর প্রভৃতি অঞ্চলের নবাবী ও কোম্পানির সেরেস্তায় কাজ করে অভিজ্ঞ ও সহানুভূতিশীল রামমোহন প্রজাহিতে শাসন সংস্কারের বিবিধ প্রস্তাব দেন। সেই সময় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তজাত অনুপস্থিত অত্যাচারী ধনী জমিদার-বেনিয়ারা, যারা ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম ভিত্তি ছিলেন, তাদের ব্রিটিশ পদলেহন ও জয়গানে মুখরিত বৃহৎ অংশটি যেমন ভোগ-বিলাস-নেশা-বিকৃতিতে মত্ত ছিলেন, অন্যদিকে তাদের একটি ক্ষুদ্র ‘আলোকিত’ অংশ পাশ্চাত্য জগতের শিক্ষা-সংস্কৃতি-জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন এবং তার মাধ্যমেই পশ্চাৎপদ ভারতীয় সমাজের সংস্কার চেয়েছিলেন। এঁদের প্রধান হোতা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, স্বাধীনচেতা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ভাষা ও ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব রামমোহন। তিনি মাতৃভাষা বাংলা সহ ইংরেজি ও নবাবী শাসনের সরকারি ভাষা ফারসি বিস্তারে, ধর্মীয় কুসংস্কার কুআচার ও গোঁড়ামি বিরোধিতায়, পৌত্তলিকতার বিপরীতে সর্বধর্ম সমন্বয় করে একেশ্বরবাদী দর্শনের প্রবর্তনে, নিষ্ঠুর সতীদাহ প্রথা নিবারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বৃহৎ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখকে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘ল্যান্ড হোল্ডারস্ সোসাইটি’, ‘গৌড়ীয় সভা’, ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সোসাইটি’। পাশাপাশি তিনি ছিলেন উদারতাবাদী ‘ব্রাহ্মসমাজ’, ‘আত্মীয় সভা’ প্রভৃতির এবং দুটি সূচনাকারী সংবাদপত্র ‘সংবাদ কৌমুদী’ ও ‘মিরাত-উল-আখবার’-এর প্রতিষ্ঠাতা।
রামমোহন শুধুমাত্র মেধাবী, প্রতিভাবান, নির্ভীক, দৃঢ়চেতা, একাগ্র কর্মবীর ছিলেন না তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের চাইতে অনেকগুণ আগুয়ান ও অনেক কিছুর সূচনাকারী। তাঁর সঠিক মূল্যায়ন এখনও হয়ে ওঠেনি। তার চাইতে বলা ভালো এখনকার ধর্ম-জাতপাত-সাম্প্রদায়িকতা-কুআচার-অপসংস্কৃতিতে সুড়সুড়ি দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত নিম্ন মেধার দুর্নীতিগ্রস্ত লোভী ভোগী লোক ঠকানো দুর্বল চরিত্রের শাসক এবং তাদের বশংবদ বুদ্ধিজীবীরা রামমোহনকে আড়াল করতে চায় যেমনটা রামমোহনের সময় কায়েমি স্বার্থের সমাজ প্রধানরা তাঁর বিরুদ্ধে কলঙ্ক অপবাদ ষড়যন্ত্র মোকদ্দমা আক্রমণের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। অথচ এই আধুনিক মানুষটি এককভাবে তাঁর পিতা, মাতা, আত্মীয়-পরিজন, সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্ভীক ও ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় গোঁড়ামি, বুজরুকি ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে এবং যুক্তি, গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে বলে, লিখে, বক্তৃতা দিয়ে, প্রচার চালিয়ে গেছেন আজীবন।
এই যুগাবতার পুরুষের বিদ্যাশিক্ষার সূচনা পিতৃগৃহে শুভঙ্করীর পাঠ অর্থাৎ প্রাথমিক গণিত শিক্ষা দিয়ে। তারপর রামনারায়ণ সর্বাধিকারীর ‘মুন্সিচালায়’ ফারসি ভাষার প্রাথমিক পাঠ। ফারসি তখন সরকারি ভাষা। মাত্র নয় বছর বয়সে শিক্ষার্জনের জন্য আরবি ফারসি শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র পাটনায় তাকে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে মাত্র আট বছর বয়সে তখনকার উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ জমিদারদের প্রথা মেনে তাঁর সাথে একটি বালিকার বিবাহ দেওয়া হয়। উক্ত বালিকার কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যু হলে শ্রীমতি ও উমা নামক অপর দুই বালিকার সাথে তাঁর বিবাহ দেওয়া হয়। পরে উমা দেবীর গর্ভে ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে রামমোহনের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাধাপ্রসাদ এবং ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে কনিষ্ঠপুত্র রমাপ্রসাদের জন্ম। রমাপ্রসাদ হুগলির ডেপুটি কালেক্টর ও হাইকোর্টের প্রথম বাঙালি বিচারক ছিলেন এবং ব্রাহ্ম সমাজের উপর বিস্তারিত লেখেন।
পাটনায় শিক্ষাকালীন বালক রামমোহনের ইসলাম ধর্মের বিশেষত সুফি সম্প্রদায় এবং বেদান্তের ব্রহ্মবিদ্যার একেশ্বরবাদ প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে যাকে তিনি সারাজীবন লালিত করেছিলেন এবং পঞ্চবেদ, উপনিষদ, শ্রুতি, স্মৃতি, জৈমিনীসূত্র, যাজ্ঞবল্ক্যর শ্লোক, গীতা, পুরাণ, বেদান্ত প্রভৃতির সহজ ব্যাখ্যা তিনি সাধারণের মধ্যে প্রচার করতে শুরু করেছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে আরবি-ফারসি শিক্ষা সম্পূর্ণ করায় সংস্কৃত শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য তাকে বারাণসী পাঠানো হল। মাত্র ১৪ বছর বয়সের মধ্যে সংস্কৃত শাস্ত্র অধ্যয়ন করে ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রচলিত ধর্ম ও সংস্কারের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের যুগে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ‘হিন্দুদিগের পৌত্তলিক ধর্মপ্রণালী’ লিখে হিন্দুধর্মের পৌত্তলিকতা সহ অসারতার বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেন। এছাড়াও রুমি ও হাফিজের কাব্য, আরবী মুতাজিলা সম্প্রদায়ের যুক্তিবাদ তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। তাঁকে নিয়ে সমাজে, গ্রামে, গৃহে মাতব্বর ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপতা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর তিনি ঘুরতে ঘুরতে দুর্গম হিমালয় লঙ্ঘন করে তিব্বতে পৌঁছে সেখানে দু’বছর অধিষ্ঠান করেন। সেখানে বিশদে বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, পাশাপাশি মঠ ও লামাতন্ত্রের কায়েমি স্বার্থ উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টা করেন। ফলে তাঁর জীবন সংশয় উপস্থিত হয়। কয়েকজন কোমলহৃদয়া তিব্বতী নারীর সাহায্যে প্রাণ রক্ষা করে কোনক্রমে ফিরে আসতে পারেন। তিনি নারীজাতির প্রতি কৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং সারা জীবন তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে গেছেন।
এরপর কয়েকটি রাজ্য ঘুরে ১৭৯২-তে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু তাঁর মতাদর্শ নিয়ে গোঁড়া পরিবারের সাথে বিরোধ, সমাজের মাতব্বরদের সাথে দ্বন্দ্ব এবং সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের কারণে ১৭৯৭-এ কলকাতায় তাঁদের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু তাঁর নিজ জন্মভূমিতে থাকার জেদ থেকে তাঁর পরিবার ও সমাজ তাঁকে নিরস্ত করতে পারেনি। গ্রামে জায়গা না পেয়ে রাধানগরের রঘুনাথপুর শ্মশানের মধ্যে তিনি ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে নিজগৃহ নির্মাণ করেন যেখানে তাঁর পরিবার থাকত এবং তিনি গ্রামে এলে সেখানেই থাকতেন। জমিদারির আয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তিনি ব্রিটিশদের কাছে মহাজনী ব্যবসা করে আয় শুরু করেন। এইসময় উইলিয়াম কেরি, হরিহরানন্দ বিদ্যাবাগীশ ও তিনি মিলে ‘মহানির্বাণতন্ত্র’ নামক একেশ্বরবাদী (Uniterian) ধর্মতত্ত্বের উপর একটি পুস্তক প্রকাশ করেন। ১৭৯৯-এ আবার বেরিয়ে পড়ে পাটনা, বারাণসী প্রভৃতি ভ্রমণ করেন এবং ইসলাম ধর্ম ও হিন্দু ধর্মশাস্ত্র নিয়ে আরও বিশদে অধ্যয়ন করেন। ইউরোপীয় রেনেসাঁ এবং অষ্টাদশ শতকের ইউরোপীয় দার্শনিকদের মুক্তচিন্তা তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। গ্রীক গণিতবিদ ইউক্লিড ও দার্শনিক অ্যারিস্টটলের কাজও তাঁকে আকৃষ্ট করে। বহু ভাষা শিক্ষার পাশাপাশি তিনি তন্ত্রশাস্ত্র ও জৈনধর্ম নিয়েও অধ্যয়ন করেন। খরচ চালানোর জন্য বারাণসীর ব্রিটিশ কমিশনারের অফিসে মাসিক ১০০ টাকা বেতনে করণিকের কাজ করেন। ১৮০৩ ও ’০৪-এ ঢাকা, জালালপুর (ফরিদপুর) ও মুর্শিদাবাদে কোম্পানির প্রতিনিধি টমাস উডফোর্ডের দেওয়ান নিযুক্ত হন এবং ওই সময়েই আরবী ভূমিকায় ফারসিতে লেখা ‘তুহফাৎ-উল-মুয়াহ্হিদিন’ (জ্ঞানের সন্ধান) রচনা করে একেশ্বরবাদ প্রচার করতে থাকেন।
এরপর কোম্পানির কালেক্টর প্রগতিশীল জন ডিগবির সহকারি হিসাবে ১৮০৫ থেকে ১৮১৪ অবধি ঢাকা, ভাগলপুর ও রংপুরে কর্মরত ছিলেন এবং দেশের ভূসম্পর্ক, কৃষি ও কর ব্যবস্থা প্রভৃতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ঐ সময় তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জগমোহনের মৃত্যু হলে তার তিন পত্নীর মধ্যম পত্নী অলকমঞ্জরী দেবীকে সহমরণে বাধ্য করা হয়। রামমোহন অনেক চেষ্টা করেও প্রতিহত করতে না পেরে সতীদাহ প্রথা বন্ধের উদ্যোগ শুরু করেন। ১৮১৫-তে ভূটান রাজার অনুরোধে কোচবিহার-ভূটান সীমান্ত বিরোধ মেটানোর দায়িত্ব পালন করেন। ঐ বছরেই তাঁর কলকাতার মানিকতলার বাড়িতে দার্শনিক আলোচনার ও তর্কের কেন্দ্র ‘আত্মীয় সভা’ (বন্ধু সম্মেলন) স্থাপিত হয়ে বিদ্ব্যৎ সমাজে আলোড়ন তৈরি হয়। লেখেন বাংলা ভাষার প্রথম গদ্য ‘বেদান্তসার’।
১৮১৬ তে লেখেন ‘কেনোপনিষৎ’ ও ‘ঈশোপনিষৎ’ এবং এই দুটি ও ‘বেদান্তসারে’-র ইংরাজি অনুবাদ করেন। ওই বছরেই হেদুয়ার কাছে শুঁড়িপাড়ায় একটি ইংরেজি স্কুল স্থাপন করেন। যার ছাত্র সংখ্যা ছিল ১০০। ১৮১৭-তে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডেভিড হেয়ার প্রমুখের সাথে ‘ক্যালকাটা বুক সোসাইটি’ স্থাপন করেন এবং এই প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বাংলা ও ইংরেজিতে ভূগোল গ্রন্থ ও একটি মহাকাশবিজ্ঞান গ্রন্থ ‘খগোল’ লিখে দেন। তিনি জাতি ও ধর্মচ্যুত হয়েছেন এই অভিযোগে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্ররা তাঁর মায়ের সহযোগিতায় তাঁকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার মোকদ্দমা রুজু করেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার হাইডে ইস্টকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যা আজ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলা ও ইংরেজিতে ‘কঠোপনিষৎ’ ও ‘মান্ডুক্যোপনিষৎ’ অনুবাদ করেন। রামমোহনের অসাধারণ কৃতিত্ব সনাতন হিন্দু ধর্মের কঠোর উচ্চবর্ণের পুরুষতান্ত্রিক পবিত্র শ্রুতি পরম্পরা ভেঙ্গে প্রাচীন শাস্ত্রকে লিখিতরূপে বিভিন্ন ভাষায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সহজরূপে প্রকাশ করা এবং নারী ও শূদ্রদের ধর্মীয় সমানাধিকারের দাবি তুলে ধরা। তিনি ধর্মকে বিচ্ছিন্ন বিমূর্ততা, বাহুল্য ও জাঁকজমকপূর্ণতা থেকে কর্মমুখর সমাজ জীবনের স্বাভাবিক অংশীদার করে তুলেছিলেন।
১৮১৮ থেকে রামমোহন সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু করেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, আলোচনা সভায় সতীদাহ নিবারণের আহ্বান জানালেন। শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে মানুষকে বুঝিয়ে এই প্রথা বন্ধের আর্জি জানান। বিপরীতে সমাজের মাতব্বর পুরোহিত এমনকি পণ্ডিতরা একত্রিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ, চরিত্র হনন, এমনকি তাঁকে শারীরিক আক্রমণ শুরু করেন। অবিচল তিনি তখন শাস্ত্র ঘেঁটে শাস্ত্রের প্রমাণ দিয়ে রচনা করেন ‘সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সম্বাদ’। অচিরে পুস্তিকাটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থ সহজ সরল ভাষায় লিখে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। ১৮১৯-এ লেখেন ‘সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বাদ।’ পরে সহমরণ নিবারণ বিষয়ক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ‘সহমরণ বিষয়ক’ (১৮২৯)। এছাড়াও বিভিন্ন সভা সমিতি পত্রিকায় এই বিষয়ে বত্তৃতা, আলোচনা, বিতর্ক, প্রবন্ধ রচনা চালিয়ে গেছেন।
১৮২০-তে বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট থেকে যিশু খ্রিষ্টের বিবিধ উপদেশ সংকলন করে লেখেন ‘Precepts of Jesus-Guide to peace and happiness।’ ৮২ পাতার বইটি শ্রীরামপুরের ব্যাপটিষ্ট মিশন থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির উপর মার্শম্যানের সমালোচনার জবাবে লেখেন ‘An Appeal to the Christian Public’। তাঁর একেশ্বরবাদ পাদ্রীদের প্রচলিত ত্রিতত্ত্ব Trinity ভাষ্য অর্থাৎ ঈশ্বরের ত্রিরূপ (পিতা, শিশুপুত্র ও পবিত্র আত্মা) ধারণার মূলে আঘাত করেছিল। ১৮২১-এ লেখেন Second Appeal to the Christian Public in defence of the Precepts of Jesus’। একেশ্বরবাদী ভাবধারায় ভারতের বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়কে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে দ্বারকানাথ ঠাকুর, পাদরি অ্যাডামস্ দের নিয়ে তৈরি করেন ‘কলিকাতা ইউনিটেরিয়ান কমিটি।’ এত বছর পর তাঁর বিরুদ্ধে চলা শরিকি মোকদ্দমাগুলি সুপ্রীম কোর্টে খারিজ হয়ে যায়। তাঁকেই আবার মোকদ্দমাকারী ভ্রাতুষ্পুত্রের চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হয়। ১৮২১-এ রামমোহনের উদ্যোগে বাংলা ভাষায় সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সম্বাদ কৌমুদী’ প্রকাশিত হয়ে রাজ্যের ও দেশের সংবাদজগতের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক স্থাপিত করে। এরপর অবাংলাভাষী পাঠকদের জন্য তখনকার সরকারি ভাষা ফারসিতে ১৮২২ থেকে বের করতে থাকেন ‘মিরাত-উল-আখবার’ (জ্ঞানের দর্পণ) পত্রিকা।
১৮২২-এ প্রতিষ্ঠা করেন ‘অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল’। সমাজে বিধবা ও কন্যা সন্তানদের প্রবল বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বামীর ও পিতৃ সম্পত্তিতে তাদের সমান অধিকারের দাবিতে শাস্ত্র ঘেঁটে যুক্তি জাল বেছান। লেখেন ‘Brief Remarks regarding Modern Encroachments on the Ancient Rights of Females according to the Hindoo law of inheritance’ যা তাঁর মৃত্যুর ১৩৪ বছর পরে ১৯৫৬-তে আমাদের দেশে কার্যকর হয়। ১৮২৩-এ ব্রিটিশ শাসকদের জারি করা কঠোর প্রেস অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে প্রতিবাদপত্র পাঠান যা পরাধীন ভারতে অধিকার রক্ষায় ছিল একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তাঁর লেখা খ্রিষ্ট বিরোধী এই অজুহাত দেখিয়ে পাদরিরা যখন কোন প্রেসকে ছাপতে দিচ্ছিল না তখন নিজেই তৈরি করলেন ‘ইউনিটেরিয়ান প্রেস’ এবং সমগ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করলেন ‘Final Appeal to the Christian Public’। ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য গর্ভনর জেনারেল লর্ড আর্মহার্ষ্টকে দীর্ঘ পত্র দিলেন। ১৮২৪-এ দাক্ষিণাত্যের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে কৃষকদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। ১৮২৪-২৫ জুড়ে লিখলেন একের পর এক সমাজ সংস্কারমূলক প্রবন্ধ। ১৮২৬-এ সংস্কৃত ও বাংলায় বেদান্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ‘বেদান্ত কলেজ’ স্থাপন করলেন।
১৮২৮-এ বিভেদধর্মী জুরি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেন। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতিসাধনে যে ‘কর্মাশিয়াল অ্যান্ড প্যাট্রিয়াটিক অ্যাসোসিয়েশন’ গঠিত হয়েছিল তার যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন। জোড়াসাঁকোর ২২৮ আপার চিৎপুর রোডে ফিরিঙ্গি কমল বোসের বাড়িভাড়া নিয়ে ‘ব্রহ্মসভা’ স্থাপন করলেন যা ‘ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিত হল। তাঁর পৌরহিত্যে ব্রাহ্মসমাজের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হল। ব্রাহ্মসমাজের জন্য ব্রহ্ম উপাসনা সঙ্গীত রচনা করলেন ও সুর দিলেন। রবীন্দ্র ভাষায় এই ‘মহা ঋত্বিক’ ইসলাম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্ম ঘেঁটে তার যাবতীয় অপব্যাখ্যা, পুরোহিত সম্প্রদায় সৃষ্ট নানাবিধ কুআচার ও অনাচার সরিয়ে এক একেশ্বরবাদী বাহুল্যবর্জিত ব্রাহ্ম ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলতেন ঈশ্বর এক, নিরাকার, পরম ব্রহ্ম। এর পক্ষে তিনি একের পর এক প্রবন্ধ ও পুস্তক ধর্মশাস্ত্রের যুক্তিজাল বিছিয়ে বিভিন্ন ভাষায় রচনা ও অনুবাদ করেন। পাশাপাশি তিনি ‘ইউনিভার্সাল রিলিজিয়নে’র ধারণা পেশ করেন এবং ধর্মাচরণের জোয়াল থেকে সমাজ ও কর্মকে মুক্ত করতে ও মুক্ত বুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক গঠনে উদ্যোগী হন। ১৮১৫ থেকে তাঁর মানিকতলা ও সিমলার গৃহে এই উদ্যোগের সাথে শিবপ্রসাদ মিশ্র, গোবিন্দ মাল, দ্বারকানাথ ঠাকুর, হলধর বসু, রাজনারায়ণ সেন প্রমুখ কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তি যুক্ত হন। সমসময়ে কবি ও শিক্ষাবিদ লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-’৩১) হিন্দু কলেজের ছাত্রদের নিয়ে ‘ইয়ংবেঙ্গল’ আন্দোলন শুরু করেন।
সতীদাহ নিবারণের বিষয়ে গর্ভনর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্কের সাথে আলোচনা চালিয়ে তাঁকে বোঝাতে সক্ষম হলেন। ১৮২৯-এ ঐতিহাসিক ‘সতীদাহ নিবারণী আইন’ পাশ হল। কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের বিপরীতে মুক্ত বাণিজ্যের, চীন ও ভারতের মধ্যে অবাধ বাণিজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন। লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা পুস্তিকা ‘A View of the Present State and Future Prospects of the Free Trade and Colonization of India’। ১৮৩০-এ চিৎপুরে ব্রাহ্মসমাজের নিজস্ব ভবন তৈরি হল। আলেকজান্ডার ডাফকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করলেন ‘জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন’ যা পরবর্তিতে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত হয়।
দিল্লির তৎকালীন মোঘল বাদশা দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬-’৩৭) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে প্রাপ্ত বার্ষিক ১২ লক্ষ টাকা বৃত্তি বর্দ্ধিত করে ১৮ লক্ষ করার জন্য ইংল্যান্ডের রাজার কাছে তদ্বির করার উদ্দেশ্যে রামমোহনকে উপযুক্ত পাত্র মনে করেন এবং তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দিয়ে বিশেষ দূত হিসাবে ১৮৩০-এ ইংল্যান্ডে পাঠান। রামমোহনের ইংল্যান্ডে যাওয়ার আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সতীদাহ প্রথা পুনরায় চালু করার লক্ষ্যে রাজা রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে রক্ষণশীলরা ‘ধর্মসভা’ প্রতিষ্ঠা করে, তহবিল গঠন করে, বহু মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি ফ্রান্সিস বেথির মাধ্যমে ইংল্যান্ডে প্রিভি কাউন্সিলে আবেদন পাঠিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে গিয়ে এর বিরুদ্ধে সওয়াল করা। ১৮৩০-র ২১ অক্টোবর সরকারের অনুমতি পেয়ে ১৫ নভেম্বর প্রথমে কলিকাতা থেকে ‘ফর্বস্’ স্টিমারে খেজুরিতে পৌঁছে, সেখানে এক রাত্রি স্থানীয় পোষ্ট অফিসে কাটিয়ে ‘অ্যালবিয়ন’ জাহাজে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সঙ্গে ছিলেন পালিত পুত্র রাজারাম বা শেখ বকসু, পাচক রামরত্ন মুখোপাধ্যায় ও ভৃত্য রামহরি দাস। ১৮৩১-র প্রথম দিকে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপের কেপ টাউনে অবতরণ করেন এবং কাছাকাছি জায়গাগুলি ভ্রমণ করেন। কেপ টাউনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আর্থিক সাহায্য করেন। ফেরার পথে জাহাজে ওঠার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে তাঁর পা ভেঙ্গে যায় যার জন্য তিনি আমৃত্যু কষ্ট পেয়েছেন।
১৮৩১-র ৮ এপ্রিল লিভারপুল বন্দরে পৌঁছে নতুন চালু হওয়া ট্রেনে করে ম্যাঞ্চেস্টার শহরে পৌঁছন। সেখানে তাঁকে দেখতে বিপুল জনসমাগম হয়। শ্রমিকদের ভিড় সামলাতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। তারপর লিভারপুল হয়ে লন্ডনে পৌঁছন। সেই রাতেই তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে প্রথিতযশা দার্শনিক জেরেমি বেন্থাম চলে আসেন। দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ইতিহাস – ও শিক্ষাবিদ লর্ড মেকলে। রামমোহনের লেখা ও কাজকে পাশ্চাত্যে আগে থাকতেই পরিচিত করিয়েছিলেন তাঁর অনুরাগী সাংবাদিক জেমস বাকিংহাম ও জেমস পেগস। ১৮৩১-র ৫ জুলাই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রামমোহনকে সম্বর্ধনা দেয় এবং তাঁর সম্মানে এক ভোজসভার আয়োজন করে। ১৯ আগস্ট, ১৯ সেপ্টেম্বর ও ২৮ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের হাউস অফ কমনস্ নিযুক্ত সিলেক্ট কমিটির সামনে রামমোহন ‘ভারতের রাজস্ব ব্যবস্থা’, ‘আদালতে ফারসির পরিবর্তে ইংরাজি ভাষার ব্যবহার’, ‘ভারতীয়দের বিচার ব্যবস্থায় উচ্চপদে নিয়োগ’, ‘ভারতীয় জনগণের অবস্থা’ প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন এবং সওয়াল করেন। এরপর তিনি ফ্রান্স ভ্রমণের আবেদন জানান। তিনি পাশপোর্ট প্রথা তুলে দেওয়ার ও আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রপুঞ্জ জাতীয় সংস্থার প্রস্তাব দিয়ে ইন্ডিয়া বোর্ড সেক্রেটারির কাছে চিঠি লেখেন। ১৮৩২ এর ১৮ জুন নতুন জুরি বিলে রামমোহনের অনেকগুলি দাবি গৃহীত হয়। রামমোহন ইউরোপীয়ানদের ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুপারিশ করে লেখেন ‘Remarks on settlement in India by Europeans’। তিনি মনে করতেন ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক একাধিপত্য অপশাসনের কারণ। তাই তিনি এই একাধিপত্য ভেঙ্গে অবাধ বাণিজ্যের কথা বলেছেন। ভারতে ইউরোপীদের স্থায়ীভাবে থাকার কথা বলেছেন। ভারতকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মত স্বায়ত্তশাসিত উপনিবেশের ধারণা দিয়েছেন। ইংল্যান্ডে রামমোহনের আগমনে রেভারেণ্ড ডি. ডেভিশন প্রমুখ ‘ইউনিটেরিয়ান’ খ্রিস্টধর্মের প্রবক্তারা খুব উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। বিশিষ্ট অভিনেত্রী ফ্যানি কেম্বল, সমাজসেবী মিস কিডেল, মিস কাসেল প্রমুখেরা রামমোহনের চিন্তাধারার অনুরাগী হয়ে ওঠেন। বিশিষ্ট দার্শনিক রবার্ট ওয়েনের সাথে রামমোহনের তর্ক যুদ্ধ হয়েছিল। সখ্য গড়ে উঠেছিল বিশিষ্ট পণ্ডিত উইলিয়াম রস্কো, সংবাদপত্র সম্পাদক জন বাউরিং প্রমুখের সাথে। তাঁর যুক্তিবাদী দর্শন ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্সের বুদ্ধিজীবী মহলে আলোড়ন তোলে।
১৮৩২-র সেপ্টেম্বর মাসে রামমোহন ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে ফ্রান্স পৌঁছলেন। বিশিষ্ট দার্শনিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদরা তাঁর সাথে দেখা করতে আসেন। রাজা লুই ফিলিপ, কবি টমাস ম্যুর প্রমুখের সাথে সাক্ষাত হয় এবং তাঁর সম্মানে বেশ কয়েকটি ভোজসভার আয়োজন হয়। তাঁর পাণ্ডিত্য, ব্যক্তিত্ব, উন্নত চিন্তাভাবনায় এই আধুনিক মেধাবী মানুষটি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের গুণীজনকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেন। ১৯৩৩-এ ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। ওই বছর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। তাঁর লেখা প্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ প্রকাশিত হয়। ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলে সতীদাহ চালুর ‘ধর্মসভা’র আবেদন বাতিল হয়ে যায়। সার্থক হয় রামমোহনের সতীদাহ প্রথা নিবারণের দীর্ঘকালীন সংগ্রামের। তাঁর তীক্ষ্ণ যুক্তিপূর্ণ এবং আবেগমথিত সওয়াল এই মহান জয় এনে দেয়। ওই বছরেই ইষ্ট ইন্ডিয়া বিল-এর সংস্কার অনুমোদিত হয় যাতে ব্রিটিশ সংসদে সাধারণ নাগরিকদের ভোটদান সুনিশ্চিত হয়। ভারতের বাদশার বৃত্তি বৃদ্ধির দৌত্যও সফল হয়। কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরস্ বাদশার বার্ষিক বৃত্তি আরও তিন লক্ষ টাকা বৃদ্ধি করে। এরপর তিনি সুহৃদ ও গুণগ্রাহীদের সাথে সাক্ষাতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রাচ্য জ্ঞানের আকর পারস্য ও তুরস্ক ভ্রমণেরও পরিকল্পনা ছিল। অন্যদিকে কলকাতা ও লন্ডনে তাঁর ব্যাঙ্কার ম্যাকিনটোস অ্যান্ড কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে পড়ায় রামমোহন প্রবল অর্থসঙ্কটে পড়েন। তিনি তখন দেশে ফেরা মনস্থ করে ব্রিস্টলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শ্রান্ত অসুস্থ অবস্থায় সেখানে গুণগ্রাহী বন্ধু রেভারেন্ড ডাঃ ল্যান্ট কার্পেন্টারের স্টেপলটন গ্রোভের গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী কন্যা মারি কার্পেন্টার এবং রামমোহনের সুহৃদ ডেভিড হেয়ারের ভগিনী তাঁর শুশ্রষা করেন। রামমোহনের সঙ্গে আলাপে মুগ্ধ মারি কার্পেন্টার পরে সমাজসেবার কাজে ভারতে চলে আসেন। তিনি রামমোহনের জীবনী লিখেছিলেন। বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ জন বিশপ এস্টলিন এরপর রামমোহনের চিকিৎসা শুরু করেন।
১৮৩৩-র ১১ সেপ্টেম্বর ব্রিস্টল শহরের গণ্যমান্যরা রামমোহনের সম্মানে একটি বড় সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে রামমোহন বিভিন্ন বিষয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চমৎকৃত করেন। কিন্তু এরপর তাঁর অসুস্থতা বেড়ে চলে। জ্বর কিছুতে কমে না। ১৮৩৩-এর ২৭ সেপ্টেম্বর রাত দুটো বেজে পঁচিশে ৬১ বছর বয়সে ভারত-আত্মা, ভারত-পথিক, ভারতের নব জাগরণের অগ্রদূত, প্রাচ্য-প্রতীচ্যের সমন্বয়কারী, দার্শনিক, পণ্ডিত, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ রামমোহন রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্তে মস্তিষ্কের আস্তরণের প্রদাহ বা মেনিনজাইটিস ধরা পড়ে। রামমোহনের দেহকে প্রথমে সমাধিস্থ করা হয়েছিল স্টেপলটন গ্রোভের প্রাঙ্গণে। পরে দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংল্যাণ্ডে এসে আর্নোজ ভেলে রামমোহনের সমাধি স্থানান্তরিত করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছতে না পারলেও সেখানে ইউনেটরিয়ান আন্দোলন এবং দাসপ্রথা বিরোধী আন্দোলনে রামমোহনের চিন্তা ও কাজ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। বিখ্যাত মার্কিন চিত্রকর এবং সংরক্ষক রেমব্রান্ড পিল তাঁর একটি প্রতিকৃতি আঁকেন।
এই সত্য সন্ধানী অগ্রদূতের সম্পর্কে প্রাথমিক অধ্যয়ন করে দেখা গেছে তিনি একটি জীবনে বহু কিছু করেছেন এবং দেশের মধ্যে বহু বিষয়েই ছিলেন পথিকৃত। সংক্ষেপে বলা যায় তিনি ছিলেন আধুনিক ভারতের যুগ প্রবর্তক, প্রাচীন ভারতীয় বিদ্যার পুণরুদ্ধারকারী আবার আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রবর্তক। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বাতাবরণের মধ্যে তিনি ছিলেন আপোষহীন এক ভারতীয় অভিযাত্রী, সমাজ সংস্কারের অগ্রপথিক, শিক্ষায় নব জাগরণের পুরোধা। তিনি বাংলা ভাষার আধুনিক গদ্য রীতি ও ব্যাকরণের স্রষ্টা, নতুন একেশ্বরবাদী মানবিক ব্রাহ্মধর্মের সূচনাকারী, বিচার ব্যবস্থার ভারতীয়করণের হোতা। বাংলার সর্বপ্রথম নারীবাদী পুরুষ যিনি নারীর আধিকার রক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। সতীদাহ রদ ছাড়াও তিনি বহু বিবাহ, কন্যা বিক্রয়, কন্যা পণ প্রভৃতি কুপ্রথার বিরোধিতা করেছেন। স্ত্রী ও কন্যাদের স্বামীর ও পিতার সম্পত্তির অধিকার নিয়ে লড়েছেন। বিধবাদের কষ্ট লাঘবের জন্য ধনভাণ্ডার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। কৃষকদের দুর্দশার সমব্যথী ছিলেন। প্রজারঞ্জক ভূমি, রাজস্ব ও কৃষি ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তাব দেন। কৃষক ও মালঙ্গিদের লবণ আন্দোলনে অগ্রণী ছিলেন। কৃষকদের আত্মনির্ভরতার জন্য তাদের জন্য জমির চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা বলেন। রায়তদের উন্নতি ও উন্নত প্রশাসনের কথা ভেবেছিলেন। কৃষি অর্থনীতি ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ভাবনার ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রদূত। নাগরিক অধিকার, নির্ভীক সাংবাদিকতা, জাতিপুঞ্জ গঠন প্রভৃতি ধারণাও তিনি দুশো বছর আগে রেখে গেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীগুলি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এই পথিকৃত উদারতাবাদী (Liberal) ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করে স্বাধীনতার কথা বলেননি, বলা হয়তো সম্ভবত ছিল না সেইসময়ে অথবা ধারণাটিই তখন তৈরি হয়নি। কিন্তু কোম্পানির একাধিপত্য ও অপশাসনের বিরুদ্ধে বলেছেন। ভারত-ব্রিটেন সুসম্পর্ক এবং ভারতের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি ও প্রভাব বৃদ্ধির প্রয়াসী ছিলেন।
এছাড়াও তিনি ছিলেন জ্ঞান পিপাসু, উদারতাবাদী, বিশ্বমানবিক, সাহিত্যিক, বহুভাষাবিদ, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, পর্যটক, সম্পাদক অনেক কিছুই। রামমোহন সংস্কৃত, আরবী, ফারসি, উর্দু, হিব্রু, গ্রীক, ল্যাটিন, ইংরেজি, ফরাসি, হিন্দি ও বাংলা এগারটি ভাষায় নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছিলেন। এই অপ্রমত্ত সত্যসন্ধানী প্রতিটি ধর্মের মূলগ্রন্থগুলি পড়ার জন্য বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার উপর মনোযোগী হন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিন্দাকে মুকুট বলে অলংকৃত করেছিলেন। রামমোহনের পরবর্তী অপর বাঙালী মহামানব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অজস্র গুণাবলী ও কৃতিত্বের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর অসামান্য পুরুষকারকে সর্বাপেক্ষা সেরা গুণ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন সেরকমই ‘চারিত্রপূজা’ প্রবন্ধে রামমোহন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন। ‘‘…নিজের মহত্বে তাঁহার কী অটল আশ্রয় ছিল, নিজের মহত্বের মধ্যেই তাঁহার হৃদয়ের কী সম্পূর্ণ পরিতৃপ্তি ছিল, স্বদেশের প্রতি তাঁহার কী স্বার্থশূন্য সুগভীর প্রেম ছিল!’’ রমা রলা থেকে জওহরলাল নেহরু, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রামমোহনের অসাধারণ অবদানের কথা সশ্রদ্ধচিত্তে জানিয়েছেন। লণ্ডনের ইউনিটেরিয়ান সোসাইটি তাঁকে বলেছেন, ‘Apostle of the East’। তাই তাঁর জন্মের সার্ধ দ্বিশতবার্ষিকিতে কায়েমী প্রতিষ্ঠান তাঁকে যতই অবজ্ঞা করুক, অশিক্ষা-কুশিক্ষা-কূপমণ্ডূকতা তাঁর মহতী কীর্তি সতীদাহ নিবারণকে ‘শূকরের খোঁয়াড়ে’ (বর্তমান সময়ের এক ‘সর্বজ্ঞ’ রাজনীতিকের উক্তি) যতই নিক্ষেপ করুক, শিক্ষিত দেশপ্রেমী মানবতাবাদী প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে তাঁর অবদান অক্ষয়। আসুন সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের এই গভীর তমসার কালে—তাঁর সৃষ্ট আলোকবর্তিকার প্রজ্জ্বলনে আমরা এগোনোর পথ খুঁজে পাই। তাঁর জন্মের সার্ধ দ্বিশতবর্ষে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
রাধানগরে রামমোহনের পৈতৃক বাড়িটি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে পুনর্গঠিত করেন রামমোহনের দৌহিত্রী এবং রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রবধূ হেমলতা দেবী। রামমোহনের জন্মবেদীটি স্থাপন করেন ভারতপ্রেমী রেভারেণ্ড জেমস লং। ‘রামমোহন স্মৃতি রক্ষা কমিটি’ এর বিপরীত দিকে ইংল্যাণ্ডের ব্রিষ্টলের তাঁর সমাধিস্থলের আদলে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সমগ্র প্রাঙ্গণটি ২০২২-এ পশ্চিমবঙ্গ সরকার হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে। রঘুনাথপুর শ্মশানে রামমোহনের গৃহের ভগ্নাবশেষ, সংশ্লিষ্ট আমবাগান এবং অলকমঞ্জরী দেবীর সতীদাস স্থল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন হুগলী জেলা পরিষদ।
কৃতজ্ঞতা:
- Raja Rammohan Ray: An Apostle of India Awaking (3 Vol.)—S.K. Sharma
- The life and letters of Raja Rammohan Ray—Sophia Dobson Collet
- Rammohan on Indian Economy—Susovan C. Sarkar
- A Lecture on the Life & Labours of Rammohan Ray—William Adam
- Rammohan Ray: A critical biography—Amiyo Sen
- Biography of Raja Rammohan Ray—D.C. Vyas
- Rammohan Ray: The Era of Socio Economic Reforms—Dr. Sangh Mitra
- Raja Rammohan Ray—S. Golrani & S. Ram
- The Making of Modern India—N.K. Raghaban
- Raja Rammohan Ray—Kalyani Mukherjee
- Selected Works of Raja Rammohan Roy–Ed. Kalidas Nag & Debjyoti Burman
- Autographed letter of Ramaprasad Ray to John Bowring (1852)
- Rammohan Ray and the Process of Modernization in India—Ed. V.C. Joshi
- On Rammohan Ray—R. C. Majumder
- Rammohan Ray ‘The Making of Victorian Britain’ —Lyrn Zastaupil
- The Last Days in English of the Raja Rammohan Ray—Mary Carpenter
- রামমোহন রায়—ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
- ভারতপথিক রামমোহন রায়—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- রাজা রামমোহন রায়—সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর
- সতী—ডঃ স্বপন বসু
- রামমোহন: বিচিত্র ব্যক্তিত্ব—উজ্জ্বল কুমার মজুমদার
- রামমোহন রচনাবলী—হরফ প্রকাশনী
- বিশ্বপথিক রামমোহন—ডঃ পরেশচন্দ্র দাস
- রামমোহন রায় ও আমাদের আধুনিকতা—রণজিৎ গুহ
- যুগগুরু রামমোহন—ক্ষিতিমোহন সেন
- আবার রামমোহন—পার্থ চট্টোপাধ্যায়
- রামমোহন ও তৎকালীন সমাজ ও সাহিত্য—প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়
- রামমোহন সমীক্ষা—দিলীপ কুমার বিশ্বাস
- ‘পান্থজন’ পত্রিকা, ভারত-আত্মা রামমোহন সংখ্যা
- অপ্রমত্ত সত্যসন্ধানী—মল্লারিকা সিংহ রায়
- পথিকৃৎ রামমোহন—সুদেব মাল
- ভারতের প্রথম ‘লিবারাল’—ছন্দক সেনগুপ্ত
- সার্ধ দ্বিশতবর্ষ রামমোহন রায়: মানবতাবাদের বিশ্বনেতা—অমিত দাস
- ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস (১ম ও ২য় খণ্ড)—সংকলনঃ অরণি সেন
- প্রথম আলো : দেশ—রামমোহন সংখ্যা, ১৭ মে ২০২২
- স্বাস্থ্য শিক্ষা উন্নয়ন, অক্টোবর ২০২২, বিশেষ ক্রোড়পত্র
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: বাসুদেব বসু, সম্পাদক, রাধানগর পল্লী সমিতি এবং সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, চুঁচুড়া