এ মুহূর্তে যে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি হৈচৈ হচ্ছে তার নাম রেমডেসিভির (a nucleotide analogue with broad-spectrum antiviral activity both in vitro and in vivo in animal models against multiple emerging viral pathogens) – সবার জানা। এছাড়া করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা তুঙ্গে। কিন্তু বর্তমান প্রবন্ধে ভ্যাক্সিন নিয়ে আলোচনা করছিনা – আমি সীমাবদ্ধ থাকবো রেমডেসিভির এবং ডেক্সামেথাসন নিয়ে। এর আগে গুরুচণ্ডালীর পাতাতেই ভ্যাক্সিন নিয়ে (১৮.০৬.২০২০) বিস্তৃত আলোচনা করেছি। ভ্যাক্সিন ছাড়াও সংক্রমণমুক্ত রোগীদের রক্তের প্লাজমা দিয়ে চিকিৎসার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন ট্রায়ালও হচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া-র খবর অনুযায়ী “Health ministry adds steroid dexamethasone in Covid-19 treatment protocol” (27.06.2020)।
রেমডেসিভির নিয়ে প্রথম ট্রায়াল রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে (১০.০৪.২০২০) “Compassionate Use of Remdesivir for Patients with Severe Covid-19” শিরোনামে। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বেরোয় ল্যান্সেটে (২৯.০৪.২০২০) “Remdesivir in adults with severe COVID-19: a randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre trial” শিরোনামে। লক্ষ্য করার বিষয় এ ট্রায়ালটি “randomized, double-blind, placebo-controlled, multicentre” চরিত্রের – যেমনটা সঠিক বৈজ্ঞানিক ট্রায়ালের ক্ষেত্রে হবার কথা। রেমডেসিভির-এর বর্তমান আবিষ্কর্তা Gilead Sciences কোম্পানি এবং NIH স্বাভাবিকভাবেই এই ওষুধের ট্রায়াল দিয়েছে। কিন্তু এদের ট্রায়ালগুলো open-label, double-blind নয়। ফলে বিজ্ঞানের বিচারে বিশ্বাসযোগ্যতা কম।
এখানে এপিডেমিওলজিস্ট ডঃ অরিন্দম বসু আরেকটু বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর কথায়:
দু-একটা ব্যাপার একটু যোগ করা যাক। এক, ওপেন লেবেল ট্রায়ালের গোলমালটা কোথায় এখানে: ওপেন লেবেল ট্রায়াল মানেই যে ভুলভাল তা নয়, যদিও এতে একটা মস্ত গলদ আছে। গলদটা এই রকম: “যাঁরা এই ট্রায়ালে যোগ দেন, আর যাঁরা এই ট্রায়ালগুলো পরিচালনা করেন, তাঁদের উভয় তরফ ই জানেন কে কোন ওষুধ পাচ্ছেন।” এখন যাঁরা ট্রায়াল পরিচালনা করছেন মানে গবেষকরা (এক্ষেত্রে গিলিয়াড ফারমা এবং তাঁদের চিকিৎসকরা), তাঁদের যদি স্বার্থ থাকে যে ওষুধটির কার্যকারিতা দেখাতে পারলে আখেরে লাভ হবে, তাহলে আমরা যারা ব্যাপারটা খোলা মনে বিচার করতে চাই, তাঁদের এ কথা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে গবেষকগণ গবেষণার ফলাফল “তাঁদের দিকে টেনে খেলিয়ে” সেই মত রিপোর্ট করবেন। এতে করে যেটা হয়, সেটা এক ধরণের নির্ণয় করার একদেশদর্শিতা ইংরিজিতে “Ascertainment bias”)। এখন রোগী আর সাধারণ চিকিৎসককূল জানতে চাইবেন কারা মারা গেলেন, কারা বেঁচে উঠলেন, এই গুলো প্রাথমিক। এবার দেখুন, এই ব্যাপারগুলোর রিপোর্টিং যেহেতু না রোগী কি “বললেন” বা ডাক্তার “কি দেখলেন বা রিপোর্ট করলেন কি ভাবে করলেন” এই ব্যাপারটির ওপর নির্ভর করে না, এগুলো নৈর্বক্তিক। নৈর্ব্যক্তিক শারীরিক ও চিকিৎসিয় ফলাফল যেখানে গবেষণার বিষয়, সেখানে ট্রায়াল ওপেন লেবেল হলেও মেনে নেওয়া যায়, যদি আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে গবেষণাটি যথাযথ ভাবে Random Number ধরে ট্রায়াল করা হয়েছিল, বা কে রেমডেসিভির আর কে প্রচলিত ওষুধ পাবেন তার নির্ণয়ে গবেষকদের কোন হাত ছিল না। এবার রেমডেসিভির ট্রায়ালে যদি ধরেও নিই যে যদৃচ্ছভাবে নম্বর ধরে ধরে কে রেমডেসিভির আর কে অন্যান্য ওষুধ পাবেন এইভাবে রেমডেসিভির আর অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল, অতএব কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য, তাহলেও এখানে দেখা যাচ্ছে সেই ব্যাপারটিতে রেমডেসিভির ঠিক কাজ দিচ্ছে না।
দুই, কে কতদিনে সেরে উঠলেন, সেটা গবেষণার লক্ষ্য হয়ে উঠল কেন? বেশ কথা, এবার একটা ব্যাপার দেখা যাচ্ছে যে রেমডেসিভির নিলে নাকি তাড়াতাড়ি সেরে ওঠা যায়, মানে চার দিন কম থাকতে হবে হাসপাতালে। এরকম একটা
ফলাফলকে ঢালাও করে প্রচার করার উদ্দেশ্য বুঝতে গেলে আরো একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। সেটা এইরকম: সংক্রামক রোগের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি পরিমাপ ব্যবহার করা হয় তাকে বলে effective reproduction number।
সূত্রানুযায়ী effective reproduction number = beta / gamma । অতএব এটি দুটি পরিমাপের ওপর নির্ভর করে: একটি beta, মানে জীবাণুটি কত সংক্রামক, অন্যটি gamma, এবং এই গামা পরিমাপকের সূচক অসুখটি কতদিন থাকে (অসুখটির স্থায়িত্ব), এবং গামা = ১ / স্থায়িত্ব। অস্যার্থ, গামা পরিমাপক টিকে যতটা বাড়িয়ে নেওয়া যাবে তত effective reproduction number টিকে কমিয়ে আনা যাবে, তার মানে মহামারীর ওপর নিয়ন্ত্রণ পেতে সুবিধা হবে। তো, মহামারীর সময়ে “অমুক ওষুধ হাসপাতালে থাকার মোট দিন কমিয়ে দিচ্ছে”, এই কথাটি কাদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ? সাধারণ মানুষ বা চিকিৎসককূলের কাছে ততটা নয়। কিন্তু মনে করুন, আপনি একটি দেশের যাঁরা মহামারী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন, আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন এমন একটি নিদান যাতে অসুখটির স্থায়িত্ব কমে যায় (মানুষ সেরে বেঁচে উঠলেও একই ব্যাপার, যদিও তাতে অনেক দিন ধরে হাসপাতালে থাকতে হলেও হতে পারে, কমও হতে পারে), সেক্ষেত্রে “গামা” ফ্যাকটর টিকে নিয়ন্ত্রণ করে আপনি effective reproduction number কমাতে পারবেন, এবং এইভাবে মাহামারীটির উপর নিয়ন্ত্রণ পাবার একটি পথ পেতে পারেন। আর ফারমাসিউটিক্যাল কোম্পানী দেখবে রোগী বাঁচাতে পারুক না পারুক, যারা বেঁচে গেল তাদের রোগের স্থায়িত্ব কমছে দেখাতে পারলে একটা বাজার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তবে, লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, তাহলেও কতদিনে ভাল হয়ে গেলেন এইটিকে কোন মতেই নৈর্ব্যক্তিক ফলাফল হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই এই পরিমাপকটিকে ইচ্ছেমতন গুলিয়ে দেওয়া সহজ। যে কোন কারণেই হোক, তিন চারদিনের তফাৎ ব্যাপারটি অধিকাংশ দেশের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি।
প্রসঙ্গত, একটা বিষয় বলে রাখা ভালো – আন্তর্জাতিকভাবে মান্য বিভিন্ন জার্নালের নাম বারেবারেই ব্যবহার করা হবে। এদের সংক্ষিপ্ত নাম জানা থাকলে পুরো জার্নালের নাম প্রতিবারে ব্যবহার করার দরকার পড়বেনা – নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন (NEJM), ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল (BMJ), জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA) ইত্যাদি।
এবারে ল্যান্সেটের গবেষণার মূল বক্তব্য নিয়ে কথা বলি – In this study of adult patients admitted to hospital for severe COVID-19, remdesivir was not associated with statistically significant clinical benefits. However, the numerical reduction in time to clinical improvement in those treated earlier requires confirmation in larger studies. হাসপাতালে থাকার সময় ১৫ দিনের পরিবর্তে ১১ দিন হয়েছে। এই ৪ দিনের হিসেবকে (৩১%) কতটা উল্লেখযোগ্য বলা যাবে তা বিবেচনার বিষয়। তবে এই ওষুধ Veklury (remdesivir) আবিষ্কারের ঘোষণার পরের দিন (৩০.০৪.২০২০) Gilead-এর শেয়ারের মূল্য ৮.১% বেড়ে যায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর খবর অনুযায়ী (২৫.০৬.২০২০) এখন Gilead-এর শেয়ারের দাম ১৭% বেড়ে গেছে এই আশায় যে চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যাবে, কিন্তু “it has not yet set a price.” – এখনো কোন দাম নির্ধারিত হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ICER (Institute of Clinical and Economic Review) আপাতত রেমডেসিভিরের তিন ধরনের দাম ঠিক করেছে – (১) যদি “at cost” অর্থাৎ উৎপাদনের খরচের প্রায় সমান যদি ধরা হয় তাহলে (আমেরিকার মূল্যমান অনুযায়ী) ১০ দিনের চিকিৎসার খরচ ১০ ডলার, (২) যদি চিকিৎসায় মৃত্যুর দিক থেকে কোন পরিবর্তন বা উপকার না হয়ে থাকে তাহলে ৩৯০ ডলার, এবং (৩) যদি চিকিৎসায় মৃত্যুর দিক থেকে উপকার হয়ে থাকে তাহলে ৪,৫০০ ডলার। (BMJ Blog – 3.06.2020 – “Treatments don’t work if can’t afford them: the global need for open and equitable access to remdesivir”) কিন্তু একেবারে হালে (২৯.০৬.২০২০) Gilead Sciences-এর তরফ থেকে একটি খোলা চিঠি দেওয়া হয়েছে – “An Open Letter from Daniel O’Day, Chairman & CEO, Gilead Sciences”। সে চিঠিতে রেমডেসিভিরের মূল্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে – “To ensure broad and equitable access at a time of urgent global need, we have set a price for governments of developed countries of $390 per vial. Based on current treatment patterns, the vast majority of patients are expected to receive a 5-day treatment course using 6 vials of remdesivir, which equates to $2,340 per patient… the price for U.S. private insurance companies, will be $520 per vial.”
এখানে JAMA-য় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের উল্লেখ প্রাসঙ্গিক হবে – “Missed Opportunities on Emergency Remdesivir Use” (24.06.2020)। রেমডেসিভিরের দামের ক্ষেত্রে প্রবন্ধটিতে মন্তব্য করা হয়েছে – However, in the case of remdesivir, the price should also reflect the outsized role the US government had in its development. The phase3NIAID-designed and government-funded trial is only the most recent example of federal investment in the drug.
BMJ Blog-এই “Remdesivir in the plague year: ‘Observations of the most remarkable occuernces’” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল (১০.০৬.২০২০০)। সেখানে আমেরিকার হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস-এর সেক্রেটারি অ্যালেক্স অ্যাজারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল – “another example of the Trump Administration moving as quickly as possible to use science to save lives,” এবং “seamless cooperation between government and private industry under the President’s all-of-America approach to covid-19….” এই “seamless cooperation between government and private industry”-র নমুনা হচ্ছে ২০২০-র প্রথম ৩ মাসে মার্কিন কংগ্রেসে লবি করার জন্য Gilead Sciences প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। বহুজাতিক সংস্থা Gilead Sciences নিশ্চয়ই দানসত্র খুলে বসেনি!
এর মধ্যেই ওষুধটি আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে এবং জাপানে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। Gilead-এর নিজের ওয়েবসাইটে (৭.০৫.২০২০) জানানো হচ্ছে – Due to the current public health emergency, the U.S. Food and Drug Administration (FDA) has issued an Emergency Use Authorization for remdesivir for the treatment of COVID-19. In the United States, remdesivir is an investigational drug that has not been approved by the FDA for any use, and the safety and efficacy of remdesivir for the treatment of COVID-19 has not been established. The distribution of remdesivir in the United States has been authorized only for the treatment of hospitalized patients with severe COVID-19 … Remdesivir is not yet licensed or approved outside of Japan and ongoing clinical trials continue to evaluate its safety and efficacy. মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
Gilead Sciences Inc.-এর নিজস্ব ট্রায়াল এবং ফলাফল
১৭.০৬.২০২০ তারিখে ক্যালিফর্নিয়ায় কোম্পানির তরফে বিবৃতি দেওয়া হয় “Gilead Sciences Statement on Phase 2/3 Clinical Trial of Remdesivir in Pediatric Patients Hospitalized With COVID-19” শিরোনামে। বলা হয় Gilead “has designed and will soon begin enrolment of an open-label, single-arm Phase 2/3 clinical trial that will evaluate the safety, tolerability, pharmacokinetics and efficacy of remdesivir in treating approximately 50 pediatric patients with moderate-to-severe COVID-19, including newborns through adolescents.” লক্ষ্যণীয়, শিশুদের ক্ষেত্রে – নবজাত থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত – ট্রায়াল (ফেজ২/৩) শীঘ্রই শুরু হবে। কিজন্য? রেমডেসিভিরের “safety, tolerability, pharmacokinetics and efficacy” পরীক্ষা করার জন্য। ভালো কথা। কিন্তু বিজ্ঞানে ও মেডিসিনে যে কঠোর ডাবল-ব্লাইন্ড, প্ল্যাসেবো-কন্ট্রোল্ড, র্যান্ডমাইজড ট্রায়াল হয় এটা তার পরিবর্তে open-label এবং single-arm ট্রায়াল। এরকম ক্ষেত্রে ট্রায়ালের নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়। প্রসঙ্গত, রেমডেসিভির দিনে ১০০ মিলিগ্রাম ডোজে ইন্ট্রাভেনাস পথে দেওয়া হয় ৫ দিন বা ১০ দিন।
NEJM Blog-এ (২১.০৬.২০২০) মন্তব্য করা হয়েছে – “It’s reasonable to be skeptical of clinical trial press releases, especially when issued by private pharmaceutical companies with multi-million dollar marketing divisions. These notoriously exaggerate the importance of study results, especially when focused on surrogate markers of disease that may or may not predict clinical outcome.” অর্থাৎ, লক্ষ কোটি ডলারের কারবারি ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলোর প্রেস বিবৃতিকে সন্দেহের চোখে দেখাই ভালো। এরা কুখ্যাতভাবে এদের ফলাফলকে ফাঁপিয়ে দেখায় এবং শেষ ফলাফল কি হচ্ছে এনিয়ে ধন্দ থেকে যায়।
যাহোক, Gilead Sciences-এর কথায় আসি। একটু দীর্ঘ ইংরেজি উদ্ধৃতি। কিন্তু সবার বোধগম্য এবং প্রতিটি শব্দ মনযোগ দাবী করে। কি বলছে কোম্পানির বিবৃতি? “There is the possibility of unfavorable results from ongoing and additional clinical trials involving remdesivir and the possibility that Gilead and other parties may be unable to complete one or more of such trials in the currently anticipated timelines or at all. Further, it is possible that Gilead may make a strategic decision to discontinue development of remdesivir or that FDA and other regulatory agencies may not approve remdesivir, and any marketing approvals, if granted, may have significant limitations on its use. As a result, remdesivir may never be successfully commercialized.” এখানে বলা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হল – (১) ট্রায়ালে প্রতিকূল ফলাফল পাবার সম্ভাবনা আছে, (২) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ঈপ্সিত লক্ষ্যে ট্রায়াল সম্পূর্ণ করা নাও যেতে পারে, (৩) হয়তো কখনই রেমডেসিভির বাণিজ্যিকভাবে সফল হবেনা।
আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয় (Gilead Announces Results From Phase 3 Trial of Remdesivir in Patients With Moderate COVID-19) যে রেমডেসিভির বর্তমানে জাপান ছাড়া পৃথিবীর আর সর্বত্র “an investigational, unapproved drug. “। এখানে আরও জানানো হয় – “Gilead initiated two randomized, open-label, multi-center Phase 3 clinical trials for remdesivir, the SIMPLE studies, in countries with a high prevalence of COVID-19 infections. The studies were conducted at more than 180 trial sites around the world, including sites in the United States, China, France, Germany, Hong Kong, Italy, Japan, Korea, the Netherlands, Singapore, Spain, Sweden, Switzerland, Taiwan and the United Kingdom.” ১৫টি দেশের বিভিন্ন সেন্টারে ট্রায়াল হলেও আবার সেই গোড়ার বিপত্তি থেকে গেল – ওপেন-লেবেল। ডাবল-ব্লাইন্ড এবং প্ল্যাসেবো-কন্ট্রোল্ড নয়।
বিবৃতির শেষে মোট ১০টি রেফারেন্স দেওয়া রয়েছে। এর মধ্যে NEJM, BMJ এবং JAMA-র উল্লেখ রয়েছে। আমি এবার সে তথ্যসূত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
২ নম্বর রেফারেন্সে NEJM-এ প্রকাশিত (২২.০৬.২০২০) “Remdesivir for the Treatment of Covid-19—Preliminary Report”-এর উল্লেখ করা হয়েছে। কি বলা হয়েছে এই রিপোর্টে? এক কথায় সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে – “Remdesivir was superior to placebo in shortening the time to recovery in adults hospitalized with Covid-19 and evidence of lower respiratory tract infection.” অর্থাৎ, রেমডেসিভির সেরে ওঠার সময় কমানোর ক্ষেত্রে প্ল্যাসেবোর চেয়ে উন্নত। রেমডেসিভিরের বাণিজ্যিক নাম Veklury. ঐ ট্রায়াল রিপোর্টে আরও বলা হল – “However, given high mortality despite the use of remdesivir, it is clear that treatment with an antiviral drug alone is not likely to be sufficient.” এখানে NEJM-এ প্রকাশিত আরও দুটো ট্রায়াল রিপোর্টের উল্লেখ করবো – “Compassionate Use of Remdesivir for Patients with Severe Covid-19” (10.04.2020) এবং “Remdesivir for 5 or 10 Days in Patients with Severe Covid-19” (27.05.2020). দ্বিতীয় ট্রায়ালে সিদ্ধান্ত হিসেবে জানানো হয়েছিলো – “In patients with severe Covid-19 not requiring mechanical ventilation, our trial did not show a significant difference between a 5-day course and a 10-day course of remdesivir. With no placebo control, however, the magnitude of benefit cannot be determined.” প্ল্যাসেবো-কন্ট্রোল না থাকা যে ট্রায়ালের একটি সমস্যা সেটা এই ট্রায়ালেই স্বীকার করে নেওয়া হল। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – এই দুটি ট্রায়ালকেই অর্থ দিয়েছে Gilead Sciences (Funded by Gilead Sciences; GS-US-540-5773 ClinicalTrials.gov number, NCT04292899.)।
৩ নম্বর রেফারেন্সে রয়েছে JAMA-য় প্রকাশিত (৯.০৬.২০২০) গবেষণাপত্র “Randomized Clinical Trials and COVID-19 – Managing Expectations”। এখানে র্যান্ডোমাইজড বিভিন্ন ট্রায়াল নিয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রেমডেসিভিরের কথা একবারের জন্যও বলা হয়নি।
৪ নম্বর রেফেরেন্স ব্লুমবার্গ বিজনেস সংবাদপত্র থেকে। এর শিরোনামেই পরিষ্কার হবে প্রবন্ধটি কি বলতে চায় – “Gilead Falls as Drug Has Only Small Benefit in Large Trial”।
৮ নম্বর রেফারেন্সে রয়েছে BMJ-তে প্রকাশিত (২৪.০৩.২০২০) “Covid-19: trials of four potential treatments to generate “robust data” of what works”। এখানে বলা হয়েছে – “the novel antiviral drug remdesivir, developed by Gilead in response to Ebola; lopinavir and ritonavir in combination with the immune system regulator interferon B; the antimalarial drug chloorquine”। এর মধ্যে lopinavir and ritonavir বাতিল হয়ে গেছে অনেক আগে। ক্লোরোকুইন এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে ট্রাম্পের “খেলা ঘুরিয়ে দেবার মতো” ওষুধ বলার পরে যে হুল্লোড় শুরু হয়েছিল তা ইংল্যান্ডের RECOVERY ট্রায়ালের পরে সলিল সমাধি লাভ করেছে। কিন্তু দুটি প্রকট সত্য আমাদের সামনে এনেছে – (১) করোনা আমাদের সচকিত করে এ কঠোর সত্যের সামনেন দাঁড় করিয়ে দিল – তথাকথিত গণতান্ত্রিক এবং এক-পার্টি ব্যবস্থার দেশের মধ্যে সত্যিই কি কার্যত কোন ফারাক আছে? ট্রাম্পের টুইটের পরে আমেরিকার স্বশাসিত মান্য সংস্থা এফডিএ ব্যতিক্রমীভাবে Emergency Use Authorization (EUA) এ ওষুধগুলোর সীমাবদ্ধ ব্যবহারকে অনুমোদন দিল। আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ ট্রায়াল শুরু করে দিল। এগুলোকে ঠিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বলা যাবে কি? নাকি একটি একদলীয় শাসনের আরেকটি রকমফের? (২) রাষ্ট্র, কর্পোরেট পুঁজি এবং রাজনীতির কাছে নতজানু হল বিজ্ঞান এবং মেডিসিন। এক নতুন মেডিক্যাল-ইন্ডাস্ট্রিয়াল-স্টেট-পলিটিক্স কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে। আমরা সাধারণ মানুষ এবং চিকিৎসককুল এর কাছে অসহায়।
১০ নম্বর রেফারেন্সে উদ্ধৃত করা হয়েছে BMJ-তে প্রকাশিত (২৬.০৫.২০২০) “Selected NHS patients will be treated with remdesivir” প্রতিবেদনের। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – “Selected NHS patients in hospital with covid-19 will be given the antiviral drug remdesivir after early trial data suggested that it shortened the time to recovery by about four days”। নজর করার মতো বিষয় হল রেমডেসিভির নিয়ে সবকটি ট্রায়াল এবং বিবৃতিতেই বারেবারে “সেরে ওঠার সময় ৪ দিন কম” এ কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বলা হচ্ছেনা “improved survival” হচ্ছে কিনা। এর অর্থ হল শতকরা কতজন মরণাপন্ন রোগী এ ওষুধের ব্যবহারে জীবন ফিরে পাচ্ছে সেকথা সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। “Selected NHS patients will be treated with remdesivir” (২৬.০৫.২০২০) প্রতিবেদনেই BMJ-র এক্সিকিউটিভ এডিটর কামরান আব্বাসি মন্তব্য করেছেন – “the NIH study now published in the New England Journal of Medicine, are inconclusive, and those published in major journals tend to overestimate any benefit. The danger is that the trial is never finished because it becomes hard to recruit patients. We end up with an unanswered research question, and the study is not replicated by other research groups. Meanwhile patients are prescribed a drug with uncertain benefit and even less information on harms.” অর্থাৎ, এমনকি NEJM-এও যে ট্রায়াল প্রকাশিত হয়েছে তা থেকে কোন সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছুনো যায়না। শুধু তাই নয় রোগীদের এমন একটা ওষুধ দেওয়া হচ্ছে যার উপকার অনিশ্চিত এবং ক্ষতি কতটা হতে পারে সে সম্বন্ধে আমাদের কাছে তথ্য আরও কম। আব্বাসির শেষ কথা – “the early adoption of remdesivir was a triumph of hope, and probably marketing, over data.” আমাদের বেঁচে থাকার আশা, আকাঙ্খা এবং তথ্যের চেয়ে বাজারের শক্তি বেশি হবার ফলে রেমডেসিভির বাজারে এসেছে।
রেমডেসিভির নিয়ে আরও কথাঃ
BMJ Blog –এ (১০.০৬.২০২০) Remdesivir in the plague year: “Observations of the most remarkable occurences” শিরোনামে লেখায় কিছু মেডিসিনের ট্রায়াল এবং বিজ্ঞানের অবস্থান থেকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়েছে যদিও Gilead নিজে বলছে এখনো এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা (সেফটি) যথেষ্ট প্রমাণিত নয় তা সত্ত্বেও National Institute of Allergy and Infectious Diseases (যার নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যান্টনি ফাউচি) থেকে বলা হয়েছে – “Hospitalized patients with advanced covid-19 and lung involvement who received remdesivir recovered faster than similar patients who received placebo”। ঠিক এরকম একটা খবরের জন্যই মিডিয়াকুল অপেক্ষা করছিল। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ (AP News) দাবী করলো এটা হচ্ছে “A 1st” এবং এটাই হবে ““standard of care” এবং অন্য সমস্ত চিকিৎসাকে এর সাপেক্ষে বিচার করতে হবে। আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের নির্লজ্জ প্রদর্শনী এবং রেমডেসিভির সমার্থক হয়ে গেল।
এর পরবর্তী প্রশ্নটি মেডিসিনের অবস্থান থেকে আরও বিপজ্জনক। এখানে কোনও ট্রায়ালের এন্ড পয়েন্ট (end points) কি তা নিয়ে সামান্য আলোচনা করে নিই। কোন ট্রায়াল শুরু করার আগে ঠিক করে নিতে হয় আমি কি কি বিষয় খুঁজে দেখতে চাইছি – যেমন, রোগী হাসপাতালে থাকার সময় কমছে কিনা, মৃত্যুহার কমছে কিনা, রোগীর উপসর্গের নিরসন হচ্ছে কিনা বা হলে কতোটা ইত্যাদি। আরও অন্যান্য বিষয়ও খোঁজা যেতে পারে। সেটা নির্ভর করবে কোন রোগ এবং তার জন্য কোন ওষুধ নিয়ে ট্রায়াল হচ্ছে তার ওপরে। এগুলোকে বলে প্রাইমারি এন্ড পয়েন্ট। এবার ট্রায়াল চলাকালীন দেখা গেল এমন কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যা প্রাথমিকভাবে ভাবা হয়নি। এগুলোকে বলে সেকেন্ডারি এন্ড পয়েন্ট। সেগুলো তখন আবার বিচার করা হয়। এবং নতুন সিদ্ধান্তুও তৈরি হতে পারে।
ট্রায়ালের জন্য একটা সময় ধরে বাছাই করা রোগীদের রিক্রুট করা হয়। তাদের দুভাবে ভাগ করা হয় – randomly। একদল পাবে চালু চিকিৎসার ওষুধ কিংবা পরিস্থিতি সাপেক্ষে কোন ওষুধ পাবেনা। এদেরকে প্ল্যাসেবো বাহু (arm) বলা হয়। আরেকদলকে যে ওষুধটি নিয়ে ট্রায়াল দেওয়া হবে সে ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু না চিকিৎসক না রোগী কেউই কি দেওয়া হচ্ছে তা জানতে পারেনা। ফলে এ ট্রায়াল হল ডাবল-ব্লাইন্ড, প্ল্যাসবো-কন্ট্রোল্ড, র্যান্ডোমাইজড কন্ট্রোল্ড ট্রায়াল। এটাই বিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং গ্রাহ্য ট্রায়াল। এরকম ট্রায়ালকেই অর্থনীতিতে কাজে লাগিয়ে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়দের নোবেল প্রাপ্তি।
BMJ Blog –এর প্রবন্ধটিতে সংশয় প্রকাশ করা হল – “what was not reported in the Gilead Sciences, Inc. announcement nor in the NIH announcement made on the same day was the fact that the registered primary endpoint of this study was changed on the clinicaltrials.gov website on 16 April 2020.” ভাবুন অবস্থাটি। ট্রায়াল চলাকালীন যদি ইচ্ছেমতো এন্ড পয়েন্ট পালটে দেওয়া হয় তাহলে ট্রায়ালে যা পেতে চাইছি তা নিজেদের মতো করে তৈরি করে নেওয়া যাবে। BMJ Blog –এর বক্তব্য – “The original primary outcome, registered on 20 February 2020, was a seven-point clinical hierarchy focused principally on the most severe objective consequences of infection with covid-19, including death. On 16 April 2020, the revised primary endpoint became the “day of recovery”, reflecting only the lowest illness severity status of the originally registered primary endpoint.”
বৈজ্ঞানিক মহলে এধরনের কাজকে ভ্রূকুটি ও তাচ্ছিল্য করা হয়। সেজন্যই বিজ্ঞানীরা সংশয়ী – “The decision to both change the endpoints and terminate the study prematurely, has left open a variety of critical questions that would have been answered had the study carried on to its conclusion using its original primary and secondary endpoints.”
এভাবে এন্ড পয়েন্ট পালটে ফেলে যে ট্রায়াল রেজাল্ট আসবে তা কি খুব নির্ভরযোগ্য বলা যাবে? নাকি অমিত শক্তিধর রাষ্ট্র এবং কর্পোরেট পুঁজির যৌথ শক্তি একেই একমাত্র “সত্য” বলে চালিয়ে দেবে বিশ্বজুড়ে, যেমনটা আমেরিকান মিডিয়া বলতে শুরু করেছে? ক্যালিফর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এক বিজ্ঞানীর পরম আক্ষেপ – “We’ve squandered an incredible opportunity to do good science” (আমরা ভালো বিজ্ঞান করার একটি অবিশ্বাস্য সুযোগকে তছনছ করে ফেললাম)।
Gilead-এর টুকরো অতীত ইতিহাস
Gilead-এর পূর্বতন ইতিহাস স্বচ্ছতা এবং বৈজ্ঞানিক অবস্থানের দিকে থেকে খুব উজ্জ্বল নয়। ২০০৫-এ অ্যান্টিফ্লু ড্রাগ ট্যামিফ্লু (জেনেরিক নাম – ওসেল্টামিভির) নিয়ে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে (BMJ) বিস্তর লেখালেখি হয়েছিল। এ ওষুধটি কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছিল। কিন্তু ওসেল্টামিভির-এর সমর্থনে যে তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছিল সেগুলো সবই কোম্পানির দেওয়া তথ্য – “eight of the 10 randomised controlled trials on which effectiveness claims were based were never published, the evidence could not be relied on. Also, the two published studies were funded by Roche and authored by Roche employees and external experts paid by Roche (“Tamiflu: the battle for secret drug data” – 29.10.2012, BMJ). ওসেল্টামিভির আবিষ্কার করেছিল Gilead, Roche-কে বিপণনের দায়িত্ব দেয়। BMJ-তে পরবর্তী সময়ে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিল – The missing data that cost $20bn (10.04.2014)। অর্থাৎ, উপযুক্ত ট্রায়াল ছাড়াই একটি ওষুধ ২০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে নিয়েছিল। এজন্য রেমডেসিভিরের ক্ষেত্রেও সাধু সাবধান!
রেমডেসিভির ট্রাম্পের America First নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে (১.০৫.২০২০) একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম – Remdesivir Affirms the American Way. এনপিআর (npr) নিউজ এজেন্সি-তে প্রকাশিত খবর (২.০৫.২০২) – Gilead Lobbying Rose As Interest in COVID-19 Treatment Climbed। এই প্রতিবেদনে বলা হল যে Gilead আমেরিকান কংগ্রেসের সাথে লবি করার জন্য ২০২০-র প্রথম তিন মাসে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে – The pharmaceutical company spent $2.45 million on lobbying in the first three months of the year, a 32% increase over the $1.86 million it spent in the first quarter of 2019. এর প্রত্যক্ষ ফল হল এপ্রিলের শেষে রেমডেসিভিরের বাজারে আসা এবং আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে ব্যবহারের অনুমোদন।
POGO (Project on Government Oversight)-তে দু কিস্তিতে FDA নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথমটি – FDA Depends on Industry Funding; Money Comes with “Strings Attached” (১.১২.২০১৬) এবং দ্বিতীয়টি – DRUG MONEY: In FDA Meetings, ‘Voice’ of the Patient Often Funded by Drug Companies। মোদ্দা বিষয় হল, FDA-এর মাঝেও যে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থ কাজ করে এবং দানবীয় ফার্মা কোম্পানিরা বিভিন্ন গাইডলাইনকে নির্ধারণ করে সে বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের গোচরের বাইরে রয়ে যায়।
সাম্প্রতিকতম সংযোজন ডেক্সামেথাসন
ইংল্যান্ডে ১১,৫০০-র বেশি রোগীকে নিয়ে, ১৭৫টি NHS হাসপাতালকে যুক্ত করে RECOVERY (Randomised Evaluation of COVid-19 thERapY) ট্রায়াল শুরু হয়েছিল মার্চ মাস থেকে। এই ট্রায়াল একটি অতিবৃহৎ র্যান্ডোমাইজড কন্ট্রোল্ড ট্রায়াল। এই ট্রায়াল কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধের ফলাফল নিয়ে পরীক্ষা শুরু করে। এই তালিকায় রয়েছে – (১) Lopinavir-Ritonavir (কোন ফলাফল নেই), (২) কম ডোজে ডেক্সামেথাসন, (৩) হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন (পরিত্যক্ত হয়েছে), (৪) অ্যজিথ্রোমাইসিন (পরিত্যক্ত হয়েছে), (৫) Tocilizumab, এবং (৬) Convalescent plasma (collected from donors who have recovered from COVID-19 and contains antibodies against the SARS-CoV-2 virus) অর্থাৎ করোনা-আক্রান্ত যেসব রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছে তাদের রক্তের প্লাজমা অংশ দিয়ে চিকিৎসা।
১৬.০৬.২০২০-তে RECOVERY trial-এর যে প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশিত হল তার শিরোনাম – “Effect of Dexamethasone in Hospitalized Patients with COVID-19 – Preliminary Report”। RECOVERY trial রিপোর্টের সিদ্ধান্ত হিসেবে জানানো হল – In patients hospitalized with COVID-19, dexamethasone reduced 28-day mortality among those receiving invasive mechanical ventilation or oxygen at randomization, but not among patients not receiving respiratory support.
নেচার পত্রিকায় “Coronavirus breakthrough: dexamethasone is first drug shown to save lives” সংবাদে (১৬.০৬.২০২০) বলা হল – The drug, called dexamethasone, is the first shown to reduce deaths from the coronavirus that has killed more than 430,000 people globally. In the trial, it cut deaths by about one-third in patients who were on ventilators because of coronavirus infection. অস্যার্থ, এই প্রথম একটি ওষুধ পাওয়া গেলো যা মৃত্যুকে কমিয়ে দেয়। রেমডেসিভিরের ক্ষেত্রে হাসপাতালে থাকার দিন সংখ্যা কমেছিল (১৫ থেকে কমে ১১ দিন), মৃত্যু কমেনি।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে ট্রায়াল রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে ডেক্সামেথাসন ব্যবহার করার ফলে যে আক্রান্তরা ভেন্টিলেটরে রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ১/৩ অর্থাৎ ৩৩% মৃত্যু কম হয়, যারা অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ১/৫ অর্থাৎ ২০% মৃত্যু কম হয়। কিন্তু যারা স্বাভাবিক অবস্থায় আছে তাদের ক্ষেত্রে এ ওষুধের কোন ভূমিকা নেই। নেচার পত্রিকার প্রবন্ধে গুরুত্ব দিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে – “the pattern of response — with a greater impact on severe COVID-19 and no effect on mild infections — matches the notion that a hyperactive immune response is more likely to be harmful in long-term, serious infections”। দুটি মারাত্মক পরিণতির ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুকে প্রতিহত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে – (১) সাইটোকাইন স্টর্ম (যখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম এলোপাথাড়ি আচরণ করতে থাকে), এবং (২) fulminant myocarditis (হার্টের এক মারাত্মক সমস্যা)। ডেক্সামেথাসন সম্ভবত এই ইমিউন সিস্টেমের ঝড়কে প্রতিহত করতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। নেচার পত্রিকার পূর্বোক্ত প্রবন্ধেই মন্তব্য করা হয়েছে – “Although remdesivir1 was shown to shorten the amount of time that patients may need to spend in the hospital, it did not have a statistically significant effect on deaths.”
BMJ-র সংবাদ “Covid-19: Demand for dexamethasone surges as RECOVERY trial publishes preprint” (23.06.2020)। BMJ-র ১৬.০৬.২০২০-র সংবাদ Covid-19: Low dose steroid cuts death in ventilated patients by one third, trial finds”। প্রসঙ্গত, ডেক্সামেথাসনের ডোজ ৬ মিলিগ্রাম – মুখ দিয়ে বা ইন্ট্রাভেনাস পথে দেওয়া যাবে। দাম একেবারেই সামান্য, ভারতে সাধারণভাবেই ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়।
NEJM Blog-এ “Dexamethasone Improves Survival in COVID-19 — Why This Should Be Practice Changing Even Before the Paper is Published” (২১.০৬.২০২০) শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধে লেখা হল – “But consider — this isn’t a press release by a giant company, citing a minor change in an inflammatory cytokine or quality-of-life metric in an open-label study. It’s a respected clinical trials group, funded by the government of Great Britain, and they are reporting a survival benefit from their clinical trial.…None has been a randomized clinical trial with a survival benefit.” (নজরটান মূল প্রবন্ধে ব্যবহৃত) এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হল “improved survival”-এর ওপরে। মানুষের বেঁচে থাকাই তো সবচেয়ে বেশি মূল্যবান!
শেষ কথা
কর্পোরেট পুঁজি শুধু পুঁজির বিস্তার ঘটায় না, প্রতিমুহূর্তে পণ্য-মানুষ, পণ্য-নির্ভরতা এবং অগভীর, গুজব-নির্ভর একটি বিশেষ সামাজিক মানসিকতার নির্মাণ করে। বিশেষ করে অতিমারির এই সংকট সময়ে যখন মানুষ যা কিছু হাতের কাছে পাচ্ছে তাকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছে তখন এই social psyche তথা সামাজিক মনস্তত্ত্ব বিশেষভাবে কাজ করে। আমরা এক অদ্ভুত সময় অতিক্রম করছি যখন অবদমিত আতঙ্ক এবং ভেবে-নেওয়া মৃত্যুভয়ের সমাপতনে হাইড্রোক্সক্লোরোকুইনের মতো চিকিৎসার গুজব, অতিকথা এবং গল্পগাছায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। ভারতে রামদেব বাবাও ঢুকে পড়েছে, হোমিওপ্যাথির অব্যর্থ ফললাভের গল্প শুরু হয়েছে। এমনকি কিছুক্ষেত্রে চিকিৎসকেরাও হয়তো ব্যতিক্রম নয়। নেচার-এ (২৭.০৪.২০২০) প্রতিবেদন লেখা হয় – “Pseudoscience and COVID-19 — we’ve had enough already”। সে প্রতিবেদনে বলা হয় – “Cow urine, bleach and cocaine have all been recommended as COVID-19 cures — all guff… And countless wellness gurus and alternative-medicine practitioners have pushed unproven potions, pills and practices as ways to ‘boost’ the immune system.” নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ বিশেষ প্রবন্ধ লেখা হয় – Covid-19 – A Reminder to Reason (এপ্রিল ২৯, ২০২০)। এখানে বলা হয় – “Physicians, trained as scientists, are expected to follow a hypothesis-driven, rational, evidence- based approach to clinical decision making, but we, too, can be swayed by stories under the pressures of a crisis.”
এরকম এক সার্বিক সামাজিক ও মানসিক অবস্থায় আমরা চিকিৎসকেরা কি পারবো বহুমূল্যের রেমডেসিভিরের পাশাপাশি একেবারেই স্বল্পমূল্যের ডেক্সামেথাসন ব্যবহার করতে? আমরা তো সে পথে হাঁটতে, অন্য পথে ভাবতে ভুলে যাচ্ছি। ভুলে যাচ্ছি “Another World is Possible” এই প্রত্যয়ে থাকতে। উচ্চমূল্যের চিকিৎসার জন্য বছরে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে চলে গেলেও আবার সেই চকচকে পাঁচতারা প্রাইভেট হাসপাতাল স্বাস্থ্যপরিষেবার (স্বাস্থ্য নয় কিন্তু, পার্থক্যটি নজরে রাখবো) খোঁজই তো আমরা/তারা করি। তাই রেমডেসিভিরের মতো ওষুধেরা ক্রমাগত মুনাফা করে চলে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। কেবলমাত্র রোগ-কেন্দ্রিক ভার্টিকাল প্রোগ্রাম একমাত্র প্রোগ্রাম হয়ে উঠবে। আমরা উত্তরে থাকি মৌন। এজন্য রেমডেসিভির আর ডেক্সামেথাসনের আখ্যানের মাঝে লুকিয়ে আছে আরও বৃহত্তর আখ্যান।
সে আখ্যান বুঝতে পারলে আমাদের মঙ্গল।
(এই প্রবন্ধটি ঈষৎ সংক্ষেপিত রূপে গুরুচণ্ডালী পত্রিকায় ৩০.০৬.২০২০-তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল)
WHAT ABOUT THE LOW COST RECREATIONAL MEDICINE IO AVOID COVID 19
Dexamethasone কে এখুনি Holy Grail ধরছি না তবু ভয় একটাই। এতো কম দামি ওষুধের ওপর মানুষ ভরসা রাখবে তো! সরকার, ফার্মা কোং ইত্যাদির মিলিত প্রচেষ্টায় সস্তার ওষুধ তো বেশিদিন টেকে না! সামান্য আয়রন ট্যাবলেট তার প্রতি বড়ির দাম দশ টাকার আশপাশে। সরকারি ভর্তুকিযুক্ত জন্ম নিরোধক বড়ির খরচ মাসে কুড়ি টাকা কিন্তু তাতে মানুষের আস্থা কম।
কাঞ্চন, ধন্যবাদ। এই আখ্যান এবং সোশ্যাল সাইকি নিয়েইতো শেষে বলেছি। একই মানসিকতার শিকার আমরা সবাই।
ডাঃ ভট্টাচার্যের আগের লেখাটা পড়েছি।
বর্তমান লেখাটি অবশ্য আগের লেখার ওপর ভিত্তি করেই লেখা।
তবে এবার ওষুধের ওপর চর্চা আরও বিস্তারিত এবং স্পষ্ট।
দুঃখ একটাই লাভের লড়াইয়ে মৃত্যুমিছিল আরও লম্বা করার অপচেষ্টা আর কতদিন চলবে।
ডাঃ জয়ন্ততো শেষে এই দিকটাই ইংগিত করেছেন।
Ei gobeshonay Indian scientists der abodan ki nei?
বিদেশে কিছু ভারতীয় বিজ্ঞানী ভ্যাক্সিন তৈরির প্রকৃত গবেষণার সাথে যুক্ত আছেন।
কর্পোরেট পু৺জি ও তার পৃষ্ঠপোষক দের মুখোশ খুলে দেওয়া র জন্য ধন্যবাদ। মানবতাবিরোধী এই সমস্ত প্রতি ষ্ঠান ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে আমাদের গন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবেই।
Khub sunder lekha sir.
অনেক গবেষণার পর এত নিখুঁত ভাবে লিখা যাই। অনেক ধন্যবাদ স্যার সুন্দর ভাবে বিষয় টি লিখার জন্য ♥️?? স্যার আপনি সুস্থ থাকবেন।