Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

গোলাপ ফোটে একবার…

IMG_20220417_085246
Dr. Aniruddha Deb

Dr. Aniruddha Deb

Psychiatrist, Writer
My Other Posts
  • April 17, 2022
  • 8:54 am
  • No Comments
শেষ পর্যন্ত শহর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিলাম। সম্পাদক আর পাওনাদারদের তাগাদা, বন্ধু বান্ধবদের উদ্বিগ্ন পরামর্শ, পাঠকদের নানা সুরের ফ্যানমেইলের হাত থেকে এক ঝটকায় নিজেকে সরিয়ে নেওয়া ছাড়া এ অবস্থায় আর কোনও রাস্তা খোলা পাইনি। রুদ্রকে বলেছিলাম কয়েকটা টাকা দিতে। রুদ্র ছাড়া আর চাওয়ার কেউ বাকি ছিল না। বন্ধু, আত্মীয়, সম্পাদক, প্রকাশক — সকলেরই মুঠো বন্ধ। কেউ কেউ তো আজকাল হিসেবের খাতাও খুলতে আরম্ভ করেছিল। আগের ধার শোধ না দিলে পরের ধার পাওয়া যাবে না।
“কোথায় যাচ্ছিস, জানাস,” রুদ্র বলেছিল। “টাকা লাগলে খবর দিস। আজকাল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা কোনও ব্যাপারই না।”
নেট ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্ট আমারটা নয়। নতুন করে করার ইচ্ছেও নেই। যেখানে যেতে চাই সেখানে ব্যাঙ্ক নেই বলেই আমার বিশ্বাস।
তিন দিন পরে প্রায়ান্ধকার গোধূলিতে পাহাড়ের কোলে বাসটা আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। বাসযাত্রী, কন্ডাকটর-ড্রাইভারের প্রবল আপত্তি সত্বেও ওখানেই নামলাম। বললাম — ভালো করে জানি কোথায় যাব। ওই পাহাড়ি টিলাটা ডিঙিয়ে আমার গন্তব্য। ওরা বলল — ওখানে কোনও গ্রাম নেই। কোনও দিন ছিল না। চলে চলো আমাদের সঙ্গে। শহরে পৌঁছে ভালো করে খোঁজ নিয়ে যেও তোমার ওই অদ্ভুত নামের গ্রাম কোথায় আছে জেনে নিয়ে। তবু শুনলাম না ওদের কথা। নেমেই পড়লাম। পাহাড়ি উপত্যকায় গ্রামটা খুঁজে পাওয়া কঠিন হওয়া উচিত না। দু-মাইল আগে পিছে হবে — এ-ই আর কী।
দু-রাত ট্রেনে কাটিয়ে শরীরটা আঁকড়ে যায়নি। তার কারণ ট্রেনে থেকেছি কেবল রাত-দুটোই। মাঝখানের দিনের বেলাটা টো-টো করেছি শহরের পথে পথে। তবু সামনের পাহাড়ি টিলাটার মাথায় পৌঁছতে দম যেন বেরিয়ে গেল। প্রথমে বুঝতে পারিনি। কতটুকুই বা দূর? দুশো গজ? কতটা চড়াই? সামান্য। প্রায় ওপরে পৌঁছে হাঁপাতে হাঁপাতে মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মনে হলো দোষটা আমার আরামপ্রিয় চল্লিশোর্ধ্ব শরীরের আর এই প্রায় সাত-আট হাজার ফুট উচ্চতার পাতলা বাতাসের। এক মুহূর্ত ভয় পেলাম, এর পর শ্বাসকষ্ট শুরু হবে? আর কি চলতে পারব কোনও দিন…
নিজেকে ধমক দিয়ে থামালাম। এরকম চিন্তার কোনও অর্থ নেই। এখানে বাতাস অত পাতলা নয়। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। চুপচাপ বসে রইলাম। একটু পরেই বুঝলাম, শরীর এখন ঠিকই লাগছে। উঠে দাঁড়িয়ে বাকি চড়াইটা খুব আস্তে আস্তে চড়ে টিলার উপর দাঁড়িয়ে সামনে তাকালাম।
আকাশের আলো প্রায় নিভে গেছে। পশ্চিমাকাশের লালিমা ক্রমে ফিকে হতে হতে এখন প্রায় বেগনে। তবু, সামনে বিস্তৃত প্রান্তর পুরোটাই দৃশ্যমান। কোনও গ্রামের চিহ্ন নেই!
এটা কী করে সম্ভব? মেঘদূত পরিষ্কার বলেছিল শহরে পৌঁছনোর পনেরো কিলোমিটার আগে রাস্তার বাঁ দিকে…
তা হলে বাঁ দিকে নয়? ডান দিকে? না কি পনেরো কিলোমিটারের হিসেবে ভুল? কার ভুল? মেঘদূতের, না আমার বাস-ড্রাইভারের? মেঘদূত বহু বছরের অভিজ্ঞ ট্রেকার। ওর দূরত্ব-জ্ঞান টনটনে। ও ভুল করেছে এ কথা ভাবতে পারছি না। আর আমার বাস-ড্রাইভার বলেছিল বারো বছর হয়ে গেছে এই রুটে বাস চালাতে চালাতে। সে-ই বা কী করে দূরত্ব ভুল করবে?
এই বিশাল প্রান্তরের মতো উপত্যকার প্রায় সবটাই তো এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। এই অন্ধকারে গ্রামের আলো দেখতে পাওয়া উচিত ছিল? মেঘদূত বলেছিল গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলেও সোলার ল্যাম্প রয়েছে ঘরে ঘরে।
রইল পড়ে এই বিরাট উপত্যকার মধ্যে তিনটে বেশ বড়ো জঙ্গল। এই জঙ্গলগুলোর কোনওটার ওপারে যদি গ্রাম থাকে তাহলে এখান থেকে তার রোশনাই দেখা না-ই যেতে পারে। প্রশ্ন হলো, কোনটা? এই বিরাট তেপান্তর-মার্কা উপত্যকায় দূরত্ব বোঝা, দিকনির্দেশ করা আমার মতো আনাড়ির পক্ষে কঠিন নয় — অসম্ভব। একবার নিচে নেমে গেলে আরও কঠিন হয়ে যাবে। তাই অনেক ভেবে ঠিক করলাম কোনদিকে আগে যাব। নিজেকে মেঘদূতের মতো ভাবতে বলে বেশ মেঘদূতী স্টাইলে হাঁটতে শুরু করলাম।
যেমন মেঘদূত বলেছিল — একেবারেই ছোটো গ্রাম। একবার গ্রামে পৌঁছন’র পরে ফতিমা আর ইফতিকারের বাড়ি খুঁজে পেতে অসুবিধে হয়নি। মেঘদূতকেও চিনেছে ওরা সহজেই। পাহাড়ি ঝড়ে পথ হারিয়ে সম্পূর্ণ উলটো পথে পাঁচজন ট্রেকারের দল, তাদের মধ্যে একজন পা-ভাঙা অবস্থায় স্ট্রেচারশায়ী, এ গ্রামে মাসে তিনটে আসে না। সমস্যা হয়েছিল আমি কেন এসেছি, কেন এ গ্রামেই থাকব, সে কথা বোঝাতে।
মোড়ল তলব করেছিল পরদিন। গ্রামের সব নারীপুরুষ জড়ো হয়েছিল। ঘর তো সাকুল্যে সতেরোটা। তা-ও মোড়লের আঙিনা উপচে পড়েছিল।
“কেন এসেছ? গল্প লিখতে? এটা একটা কারণ? গাঁয়ে গল্প আছে?” বোঝা-ই যাচ্ছিল মোড়ল বিশ্বাস করেনি।
বুঝিয়ে বলেছিলাম, গল্প সর্বত্র আছে। প্রমাণ হিসেবে আমার লেখা দুটো বই ব্যাগ থেকে বের করে দেখিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এমন বই আমার অনেক আছে। সঙ্গে এনেছি মাত্র দু’টোই। মলাটের পেছনে লেখকের ছবির সঙ্গে আমার মুখ মিলিয়ে নিয়েছিল মোড়ল, আর তারপর গ্রামসুদ্ধ সকলেই।
বলেছিলাম, “তোমাদের গ্রামে না আসলেও হত। কিন্তু মেঘদূতের মুখে শুনেছি তোমরা ভালো লোক। তাই…”
ইফতিকার মোড়লকে কী জিজ্ঞেস করল, ওদের ভাষা না বুঝলেও আন্দাজ করলাম আমার থাকা খাওয়া বাবদ কত টাকাকড়ি নেওয়া যায়, তা জানতে চাইছে। ওরা হোটেল চালায় না৷ ব্যবসায়ী জাত নয়। অতিথি-সৎকার করে পয়সা নিতে শেখেনি। অনেক আলাপ আলোচনা করে যে মূল্য দাবী করল, তাতে আমার সঙ্গে যা ছিল, তা খরচ করে মাস তিনেক ওখানকার মদ-বিড়ি খেয়ে থাকলেও বাড়ি ফেরার মতো টাকা অনায়াসে হাতে থাকবে।
মিটিং শেষ করার আগে মোড়ল আঙুল উঁচিয়ে বলল — কিন্তু যদি বেচাল দেখি…
আমি জোড়হাতে বললাম — দূর করে দেবেন। আমি চুপচাপ চলে যাব।
বেচাল দেখার কোনও সুযোগ পায়নি বেচারারা। ভোর না হতেই যে লোকটা গ্রাম ছেড়ে চলে যায় নদীতীরে কোনও একটা জনশূন্য জায়গার খোঁজে, বেশিরভাগ দিনই সঙ্গে নিয়ে যায় আগের রাতের রুটি আর ডাল, বা তরকারি, সারাদিন নদীতীরের পাথরের গায়ে পিঠ ঠেকিয়ে কখনও দূরের পাইনবন, কখনও পাহাড়চূড়ার বরফ, আর কখনও আকাশের মেঘ দেখে, নয়ত ওখানেই মুখে রুমাল-চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে নেয় সারা দুপুর — তার চাল-ই বা কোথায় যে বেচাল মাপবে ওরা? সন্ধে হলে অবশ্য গ্রামে ফিরতাম। গ্রামের বাইরে রঘুনাথের দোকানের স্থানীয় মদ খেতাম রোজই। অনেকেই আসত। কখনও মোড়লও। লিডারকে সব ধর্ম মানতে হয়। চেষ্টা করতাম লিমিট রেখে খেতে, কিন্তু কখনও বেশি হয়েছে আড্ডা গল্পে। সাথীরা ধরে ধরে নিয়ে গেছে ইফতিকারের বাড়ি। একদিন ইফতিকার বোঝাতে এসেছিল — মদ খাওয়া মুসলমানের পক্ষে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। সেদিন নেশার ঘোরেই বলেছিলাম —
আমি এত সুরা খাব, এত এত সুরা খাব,
আমার গোরস্থানে মাটিতে যেন তার সুবাস মাখা থাকে
যারা ফরিয়াদ করতে আসবে তারাও যেন
গভীর নেশায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে।
কে লিখেছেন জানো? ওমর খৈয়াম। কতদিন আগে লিখেছেন জানো? হাজার বছর। তাঁর কবিতা আজও লোকে পড়ে। সারা পৃথিবীর মানুষ এক ডাকে চেনে ওঁকে।
কী বুঝেছিল জানি না, কিন্তু আর কখনও বলেনি কিছু।
মোড়ল একদিন বলেছিল — সারা দিন বসে-ঘুমিয়ে লেখা হয়? কোনও দিন তো দেখিনি কাগজে কলম ঠেকিয়ে এক ছত্র লিখতে… এ কেমন লেখক?
জবাবে নিজের মাথার পাশে আঙুলের ডগা দিয়ে টকটক করে টোকা দেবার ভঙ্গী করে বলেছিলাম — আগে এখানে রান্না করতে হয়। তারপর কাগজ-কলম। এখানে গল্প চলে এলে লিখে ফেলতে সময় লাগে না। যেটা বলিনি তা হলো গল্প তখনও আসেনি।
ঠিক করেছিলাম, প্রথম এক মাস কারও সঙ্গে মেলামেশা করব না। হিউম্যান ইন্টারেস্ট নিয়ে গল্প অনেক লিখেছি, এখন প্রকৃতির কোলে থেকে প্রকৃতির সন্তানদের নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। তাই গ্রাম ছেড়ে কিছুদূর গিয়ে চুপ করে বসে প্রকৃতি দেখার চেষ্টা করতাম। রঘুনাথের মদের দোকানে, বা ইফতিকার-ফতিমার অনাড়ম্বর দৈনন্দিন জীবনে গল্পের আভাস যে পাইনি, তা নয়। তবে সেগুলো সযত্নে সরিয়ে রেখেছি। প্রকৃতি নিয়ে লেখা চাই।
কবে প্রথম মেয়েটাকে দেখেছি, খেয়াল নেই। হয়ত প্রথম দিনই, হয়ত পরে কখনও। প্রথম কোনটা চোখে পড়েছিল, জানি না। হয়ত ওকেই, হয়ত বা ওর ছাগলগুলোই। গ্রামের অনেক ছেলেমেয়েই সকাল থেকে গরু-ছাগল চরাতে বেরোত। মোড়লকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম, ইশকুল পাঠশালার ধার ওরা ধারে না। সরকারি স্কুল এ-গ্রামে কোনও দিন ছিল না।
অন্য ছেলেমেয়েরা কোন দিকে তাদের পোষ্যদের নিয়ে যেত, জানি না। একে দেখতাম রোজ। কিছুদিন পরে আন্দাজ করেছিলাম ওদের বোধহয় গরু ছাগল চরানোর নির্দিষ্ট জায়গা আছে। এর-টা গ্রামের কাছেপিঠেই।
রাখালের কাজ কতটা আগে জানতাম কেবল বই পড়ে। এই প্রথম স্বচক্ষে দেখে বুঝলাম, যেমনটা আন্দাজ করেছিলাম তেমনটাই, শুধু বিশ্রামের ভাগটাই বেশি। সারাদিন কেবল শুয়ে-বসেই কাটানো। আমারই মতন। আর দুপুরে দেখতাম পুঁটলি খুলে কিছু একটা খেত। পুঁটলি খোলার আগে নদীর ধারে এসে জল নিত বলে আমার ধারণা ছিল ও হয়ত চিঁড়ে জাতীয় কিছু ভিজিয়ে খায়। ওকে পুঁটলি হাতে জলের কাছে যেতে দেখলে আমিও নিজের খাবারের পুঁটলি খুলতাম। আমার রান্না করা খাবার। জলের কাছে যেতাম হাত ধুতে আর জল খেতে। দুজনেই একসঙ্গে খেতাম। মধ্যে ব্যবধান কত আমি বলতে পারব না — মেঘদূতকে ডাকতে হবে। কয়েকশো গজ তো বটেই। কেউ কারও মুখও দেখতে পেতাম না, কী খাচ্ছি তা-ও না। খাওয়ার ভঙ্গীতে মনে হত বুঝি গরাস তুলে মুখে খাবার তুলছে।
নাম দিয়েছিলাম ভানুমতী। পাহাড়ি গ্রামের রাজার বাড়ির মেয়ে, ছাগল চরায় — তার নাম তো আর কিছু হতে পারে না… অবশ্য রাজবংশের মেয়ে, সেটা আমার কল্পনা… তাতে কী? ভানুমতীই বা ওর কী এমন সত্যিকারের নাম?
অন্য সময় দেখতে পেতাম না ওকে। অবশ্য দেখার সুযোগই বা কোথায়? রোজ যখন রোদ পড়ে আসত ভানুমতী উঠে ছাগলদের নিয়ে ফিরে যেত গ্রামে। আমি যেতাম আরও পরে। সোজা রঘুনাথের দোকানে। সকালেও আমি যতক্ষণে বেরোতাম ততক্ষণে ও নদী পেরিয়ে চলে গেছে।
কিছুদিন যেতে বুঝলাম ছাগল চরাতে চরাতে ক্রমশ কাছে আসছে। আমি আজকাল ওর মুখ দেখতে পাই। একদিন দিন খাবার সময় নদীর ধারে নেমে এসে মুখ তুলে তাকাল, সেদিন স্পষ্ট দেখতে পেলাম ভানুমতীর চোখ। রোদে জ্বলে যাওয়া ঘাসের রঙ। তাকে অ-কবিরা বলে কটা।
রূপ বর্ণনা করতে পারব না। সর্বাঙ্গ ঢাকা একটা বেঢপ রং-জ্বলা বাদামী কাপড়ে, সেটাই মাথার ঘোমটা, আবার মুখের আবরণও বটে। নদীর ধারে ঢাকা সরিয়ে মুখ ধোয় — দেখতে পাই আপেলের লালিমার ছোঁয়া গালে, সরু ঠোঁটদুটো কোনও রকম প্রসাধন ছাড়াই গোলাপি। কৃষ্ণকলি নয়… ভানুমতীও না। বয়স কত? আন্দাজ করার চেষ্টা করি। বারো? তেরো? চোদ্দো? আর একটু বেশি? শেষে সেই চিরকালীন শব্দ ব্যবহার করে ক্ষান্ত দিই — উদ্ভিন্নযৌবনা।
অপেক্ষা করে থাকি সেই মুহূর্তটার জন্য, যখন দিনের শেষে ভানুমতী হাত তুলে ছাগলদের ডাকে। ঢিলে পোশাকের হাতা খসে পড়ে। বেরিয়ে আসে ধবধবে সাদা একটা সরু বাহু। লম্বা আঙুলগুলোর দিকে চেয়ে থাকি। জোব্বার আড়াল থেকে বেরিয়ে থাকা হাতের আঙুল আর রোগা, লম্বা, ফর্সা বাহুর শেষে কোমল আঙুলের মধ্যে অনেক তফাত। বোঝানো যাাবে না। মনে হয় স্বপ্ন দেখছি। তারপর ও চলে যায়, আমি শুয়ে থাকি স্বপ্নাবিষ্টের মতো। সন্ধ্যা নামে।
দিন কাটে। রোজ আমরা নদীর দুপারে, দুজনেই দুজনের উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু কোনও কথা হয় না। কথা দূরে থাক, চার চোখের মিলনই বা হয় কবার? তবু তাকিয়ে থাকি, পোড়া ঘাস-রঙা চোখজোড়া কখন তাকাবে আমার দিকে? কখন হাত তুলে ডাকবে ছাগলগুলোকে, দেখতে পাব ওর কবজি, বাহু?
একদিন, সকাল থেকে, রোজের মতই, দুজন একসাথে, কিন্তু নদীর দুপারে, সেদিন, কেন জানি ওর আমার দিকে খেয়ালই নেই। আমি বুঝতে পারছি ও আছে, ওপারে একটা পাথরে হেলান দিয়ে, হাতে কী যেন একটা, মন দিয়ে দেখছে, মাঝে মাঝে যেন আঙুল বোলাচ্ছে। কী হতে পারে? এ পারে আমি বড্ড দূরে। দেখতে পাওয়ার উপায় নেই।
কী মনে হলো নদী পেরিয়ে গেলাম। পাহাড়ি নদী, নামেই নদী। চওড়াও নয়, গভীরও না। জায়গায় জায়গায় পাথর। আমি তো রোজই পেরোই। ও-ও আগে পেরোত, আজকাল আর পেরোয় না।
এতই মগ্ন ছিল যে আমি যে কতটা কাছে এসে পড়েছি বোঝেনি। আমিও চুপিচুপি কাছে গিয়ে ওর হাতে কী দেখার আগ্রহে এতটাই মশগুল ছিলাম, যে একটা ছাগলের খুব কাছে এসে গেছি, খেয়াল করিনি। ছাগলটা হঠাৎ চমকে গিয়ে ম্যাঁ ডেকে এক লাফ দিয়ে পালাল। আমিও চমকালাম, মেয়েটাও। হাতে ধরা জিনিসটা লুকিয়ে ফেলল জামার ভাঁজে।
কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বললাম — দেখি?
হরিণীর কাতর চাহনি দিয়ে চাইল আমার দিকে। কিছু বলল না। আমি হাত বাড়িয়েই রইলাম। ভয়ে ভয়ে, চকিতে চারিদিক দেখে আবার আমার দিকে তাকাল। তারপর এক লহমার অবাধ্যতার অভিব্যক্তি দেখলাম।
মাথা নাড়ল। না।
বললাম — দেখাও বলছি।
আবার মাথা নাড়ল। একটু ঠোঁটও নড়ল। কিছু শুনতে পেলাম না, আন্দাজে বুুঝলাম, বলল — না।
আমার মাথায় অত্যাচারীর ভূত সওয়ার হয়েছে। বললাম — না দেখালে আমি গ্রামে গিয়ে সবাইকে বলে দেব…
এখন হাসি পাচ্ছে। তখন কিন্তু হাসিনি। ও-ও হাসেনি। বলতে পারত, কী বলবে? বলার কী আছে?
বলেনি।
আরও কিছুক্ষণ ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে জামার আড়াল থেকে হাত বের করে এনে মুঠো খুলে দেখিয়েছিল।
চিনি দিয়ে তৈরি সাদা একটা হাঁস। লক্ষ্মীপুজোয় যেমন থাকে।
আমি অবাক হয়ে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু না বলে ফিরে গেছিলাম নদী পার করে। ভানুমতীর দিকে আর তাকাতে পারিনি। ওইটুকু একটা অকিঞ্চিৎকর বস্তু, তা-ও একে মহার্ঘ্য, তায় গোপন! তাতে এত ভয় কেন? বুঝতে পারিনি। লজ্জা পেয়েছিলাম… ওই সন্ত্রস্ত দৃষ্টি আজও আমার চোখের সামনে ভাসে।
চুপ করে বসে থাকতে থাকতে কখন চোখ লেগে গেছিল, জানি না। হঠাৎ চমকে ঘুম ভাঙল গালে কী একটা সজোরে এসে লাগল বলে। চমকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা হনহনিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে দূরে। সঙ্গে ছাগলগুলো। দেখতে দেখতে এইটুকু হয়ে পাহাড়ি পাথরের সঙ্গে মিশেই গেল প্রায়। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে কোল থেকে কী একটা টুপ করে পড়ল। তাকিয়ে দেখি ওর হাতের চিনির হাঁসটা। ওটা ছুঁড়ে মেরেছিল বলেই ঘুম ভেঙে গেছিল।
হাঁসটা তুলে নিয়ে ফিরে এলাম বাড়ি।
পাতাগুলো উলটে পালটে সম্পাদক ভীষণ ভ্রূকুটি করে আমার দিকে চাইলেন। আবার পাতাগুলো তুলে নিলেন। সবকটা ঝেড়ে দেখে বললেন, “তারপর? শেষ হয়নি তো।”
বললাম, “ওটাই শেষ। সম্পূর্ণ গল্প।”
উনি একটু কাতরভাবেই বললেন, “কী করে এখানে শেষ করলেন? এখানে শেষ হতে পারে না। মেয়েটার কী হলো?”
“আর দেখিনি। অনেক খুঁজেছি। পরদিন থেকে ও ছাগল নিয়ে কোন দিকে যেত দেখতে পাইনি। উদভ্রান্তের মতো হেঁটে বেড়িয়েছি সেই উপত্যকায় ইতস্তত — দিনের পর দিন…”
“কাউকে জিজ্ঞেস করেননি?”
“কী জিজ্ঞেস করব? নাম জানি না, মা-বাবার নামও জানি না। রোগা মেয়ে, ছাগল চরায়… অদ্ভুত শোনাত না? কী ভাবত?”
সম্পাদকের মুখ আঁধার হলো। বললেন, “বড়ো আশা করে ছিলাম — আপনি অজ্ঞাতবাসে লিখতে গেছেন। না জানি কী পাব। অন্যরা পেল গ্রামের মদের ঠেকের গল্প, গরীব গ্রামবাসীর গল্প… আর আমি কী না পোলাম… এই…”
এই-টা কী, মুখে আনতে পারলেন না। কাতরভাবে লেখাটা দেখালেন।
বললাম, “আপনিই তো প্রেমের গল্প চাইলেন। আপনার পাঠক তা-ই চায়… আপনি গ্রামীণ অথনীতিভিতিক এক্সপ্লয়টেশনের গল্প ছাপতেন?”
“তা বলে… এটা প্রেমের গল্প হলো? প্রেম কই? সম্পর্ক সম্পূর্ণতা পেল না…”
“কী হলে সম্পূর্ণতা পেত? মেয়েটাকে ওখানে প্রেগন্যান্ট করে চলে আসলে?”
“না না, ছি-ছি, তা কেন? তবে… আর একটু…”
আমি কিছু না বলে, হাত বাড়িয়ে ভদ্রলোকের গোল্ড ফ্লেকের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে চেপে আর দুটো জামার পকেটে রেখে ওঁর মুখের পাঁচন গেলা ভাবটা উপভোগ করতে করতে হাত বাড়ালাম। দেশলাই বাক্সটা বাড়াতে গিয়ে থমকে গেলেন। আমি ততক্ষণে নিজের লাইটার দিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়েছি। অন্য হাতটা তখনও বাড়ানো। বললেন, “কী চাইছেন?”
বললাম, “লেখাটা দিন। আপনার পছন্দ হয়নি, এখন দেখি অন্য কেউ নেয় কি না।”
প্রায় ত্বড়িৎগতিতে হাতটা কাগজগুলো সরিয়ে নিল। বললেন, “পছন্দ হয়নি আবার কী? আলবাত হয়েছে। আমি শুধু বলছিলাম…”
উঠে পড়লাম। দরজার পর্দা সরাচ্ছি, শুনতে পেলাম, “আচ্ছা ওই হাঁসটার কী হলো? ওই চিনির তৈরি…”
দরজায় দাঁড়িয়ে ঘুরে বললাম, “পকেটে নিয়ে ঘুরতাম। দেখা পেলে দিয়ে দেব বলে। দেখাই তো পাইনি। তাই পকেটেই চলে এসেছিল এতদূর। টেবিলের ড্রয়ারে রেখেছিলাম কাগজ মুড়ে। মাস ছয়েক পরে দেখি কালো পিঁপড়েয় সাবাড় করে দিয়েছে।”
এবার বেরোতে বেরোতে শুনতে পেলাম, “প্রেমের গল্পের পরাকাষ্ঠা। যত্তসব।”
PrevPreviousশমীকরণ
Nextপয়লা বৈশাখে চিকিৎসক নিগ্রহNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

সরকারি ব্যবস্থায় আমাদের কোন কোন স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা?

July 5, 2022 No Comments

ডক্টরস ডায়ালগের ফেসবুক লাইভে ১লা জুলাই ২০২২ প্রচারিত।

আবার জিরোতে হিরো!

July 5, 2022 No Comments

গৌরচন্দ্রিকাঃ শিশিরদাকে খুব মিস করেছি এবার ট্রেকে গিয়ে। শিশিরদা আমাদের পঁয়ষট্টি বছরের তরতাজা যুবক। ট্রেকে অদম্য উৎসাহ। পারিবারিক কারণে যেতে পারেনি। নানা কারণে এ ট্রেক

তোমাতে করিব বাস

July 5, 2022 No Comments

প্রথম পর্ব। ডিসেম্বর ২০২১। ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে ধীরেসুস্থে একটা ফিল্টার উইলস্ ধরাল মনোজিৎ। তারপরে মুচকি হেসে বলল, “ডায়াবেটিসের জন্য লেডি ডক্টর দেখালে, ঠিক আছে। কিন্তু

ব্যঙ্গের নাম অগ্নিপথ (২)

July 4, 2022 No Comments

আগের দিন বয়সের কথা বলেছিলাম। এবার একটু অর্থনৈতিক বিষয়ের দিকে চোখ রাখা যাক। যা জানানো হয়েছে তাতে অগ্নিবীরেরা প্রথম বছরে পাবেন ৩০ হাজার টাকা প্রতি

ট্রাইকটিলোম্যানিয়া

July 4, 2022 No Comments

একটি সহজ বিষয় নিয়ে লিখবো। ধরা যাক- হঠাৎ রাস্তায় যেতে যেতে আপনি দেখলেন – একজন লোক প্রতিদিন বসে বসে নিজের চুল টেনে তুলছে! যখন যেখানে

সাম্প্রতিক পোস্ট

সরকারি ব্যবস্থায় আমাদের কোন কোন স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা?

Doctors' Dialogue July 5, 2022

আবার জিরোতে হিরো!

Dr. Sumit Das July 5, 2022

তোমাতে করিব বাস

Dr. Partha Bhattacharya July 5, 2022

ব্যঙ্গের নাম অগ্নিপথ (২)

Dr. Swastisobhan Choudhury July 4, 2022

ট্রাইকটিলোম্যানিয়া

Smaran Mazumder July 4, 2022

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

399824
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।