কষ্ট করে পড়ে দেখতে পারেন।
ভারতীয় নারী, সে পিঠখোলা ব্লাউজ হোক চাই বোরখা বা চোলি ঘাঘরা পরিহিতা, তারা আমাদের দেশে এক বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে, অনতি ভবিষ্যতে যার অর্থনৈতিক প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
এই পোস্ট বুঝতে গেলে একটা সংজ্ঞার অর্থ সবার আগে জেনে নিতে হবে।
ফার্টিলিটি রেট: এর অর্থ হল একজন নারী পিছু ক’জন সন্তান জন্ম নিচ্ছে, তার সংখ্যা। সাদা বিচারে, প্রতিটি নারী যদি দুটি করে সন্তান প্রসব করেন, তাহলে জনসংখ্যা একই থেকে যাবে। গাণিতিক বিচারে এই সংখ্যাটা 2.1, এটা মাথায় রেখে আমরা এগোবো।
এতদিন আমরা শুনতাম, ভারতে জনসংখ্যার নিরিখে প্রতিবছর একটা আস্ত অস্ট্রেলিয়া ঢুকে যাচ্ছে। কিন্তু রিসেন্ট স্টাডিতে সেই ধারণাটা আমূল বদলে দিয়েছে আমাদের দেশের মহিলারা।
এই স্টাডি হয়েছে, রীতিমতো কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তরের অধীনে থাকা NFHS, National Family & Health Surveyর মাধ্যমে। এখানে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যা আমার আপনার ধ্যান ধারণাকে বদলে দেবে।
এই সার্ভে বলছে,
ভারতে এই মূহুর্তে ফার্টিলিটি রেট হল 2, যা 2.1, অর্থাৎ রিপ্লেসমেন্ট রেটের নীচে। এই হিসেবে 2040 পর্যন্ত আমাদের দেশে জনসংখ্যা বাড়বেনা। এবং পরবর্তী জেনারেশনের হাতে ফার্টিলিটির দায়িত্ব বর্তালে, জনসংখ্যা কমতে থাকবে। এখন হিন্দু পপুলেশনের মধ্যে এই রেট 1.9, এবং মুসলিমদের মধ্যে এটা 2.1 . অর্থাৎ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ফার্টিলিটি গ্যাপ ক্রমশঃ কমে আসছে।
ভারতের মাত্র পাঁচটি রাজ্যে ফার্টিলিটি রেট 2.4 কিংবা তার চেয়ে বেশি, বিহার ইউপি মেঘালয় ঝারখণ্ড মণিপুর।
একটা ইন্টারেস্টিং ডাটা শেয়ার করছি। কন্ট্রাসেপটিভ ট্যাবলেট, কণ্ডোম ইত্যাদির ব্যবহারে মুসলিমরা হিন্দুদের চেয়ে এগিয়ে, যদিও লাইগেশনের ক্ষেত্রে এরা পিছিয়ে আছে।
পুনম মুত্রেজা, Executive Director Population Foundation of India, বলেছেন, মুসলিম পরিবারে Girls’ Education দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই এই পরিবর্তন। আমার নিজের অভিজ্ঞতাও তাই বলে। হ্যাঁ, শিক্ষায় আলোকিত মেয়েদের সন্তান সংখ্যা সীমিত হবেই, সেখানে ধর্মের বাধা বেশি নাক গলাতে পারবেনা, কিংবা বলা যেতে পারে, মাতব্বরদের না চটিয়েও সঠিক পথের সন্ধানে তারা সফল হবেই বা হচ্ছে।
তাই একজন অবসর নেওয়া ইলেকশন কমিশনের বড় অফিসার বলেছেন, মুসলিম মহল্লাগুলিতে বেশি বেশি Police Station না বসিয়ে বেশি বেশি স্কুল কলেজ খোলা উচিৎ।
2005-06 এর এক স্টাডিতে দেখা গেছে, পলিগ্যামি অর্থাৎ একাধিক স্ত্রী রয়েছে এরকম রেট মুসলিমদের মধ্যে 2.5%, আর হিন্দুদের মধ্যে 1.77%.
পঞ্চাশের দশকে ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা মুসলিমদের তুলনায় বেশি ছিল 27 কোটি, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে 80 (আশি) কোটিরও বেশি।
একটা বিদেশী সংস্থার পর্যবেক্ষণ লিখছি।
PEW Research Center based in Washington, এরা ডেমোগ্রাফি নিয়ে কাজকর্ম করে, তাদের speculation হল, 2050 সালে ভারতের হিন্দু পপুলেশন হবে 77%, মুসলিমদের 18%.
পরিশিষ্ট:
আমি অবাক হচ্ছি ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায় যখন ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে তলে তলে নিজেদের এতটাই পরিবর্তন করে ফেলতে পারে, তখন তারা অন্যান্য বাকি সামাজিক দায়দায়িত্ব সম্বন্ধে ধ্বংসাত্মক না হয়ে আরেকটু অ্যাডভান্সড,আরেকটু সচেতন হলে ভালো হয়না?
নিজেদের ভালো হয়, দেশেরও ভালো হয়।
আফটার অল, সম্মান জিনিসটা ছিনিয়ে নেওয়ার বস্তু নয়, ওটা অর্জন করতে হয়।
একটু হলেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সময় দিন।
ভুল খবর, ভুল তথ্য রটিয়ে কেউ “খতরে মে” চেল্লালে, তাকে এইসব পরিসংখ্যান শুনিয়ে দিন।
—-
প্রথম লাইনটাতেই ফিরে যাই। ভারতীয় নারী, জাতিবর্ণধর্মনির্বিশেষে, কুর্নিশ আপনাদের এই অধমের তরফ থেকে। অলক্ষ্যে আপনারা দেশের ভবিষ্যত উন্নতির সোপান তৈরি করে দিচ্ছেন। তথ্যের কচকচিতে এই লেখাটা আরো বাড়ানো যেতো। সেই পথটা পরিহার করলাম।
সূত্র :
NFHS 5 report.
The Hindu.
The Indian Express.
pewresearch.org.
_________________
__________________