দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি বিশেষ ৩৩
গত কয়েকদিন ধরে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে কোভিড রোগীর সংখ্যা। বিগত পাঁচ দিনের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দশগুণ বেড়েছে এই রাজ্যে। কোন সন্দেহ নেই অপরীক্ষিত সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা এর কয়েক গুণ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবার সম্ভাবনা রয়েছে, আশংকা থাকবে অনেক মানুষের একসঙ্গে একই সময়ে সংক্রমিত হওয়ার। তাদের মধ্যে অল্প শতাংশ মানুষেরও যদি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তবে তা আমাদের রাজ্যের হাসপাতালগুলির সামগ্ৰিক চিকিৎসাক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এখনই অনেক চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীরা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে অতিমারী মোকাবিলা আরও কঠিন হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য বিগত কয়েক সপ্তাহের প্রশাসনিক কর্মকান্ড অনেকটাই দায়ী। চিকিৎসকদের সমস্ত আশংকা ও সাবধান বাণী অগ্ৰাহ্য করে কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটের প্রচারে সমস্ত বিধিনিষেধ ভেঙে জনসভা, মিছিল হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলই অতি উৎসাহে এতে অংশ নিয়েছে। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারেনি বরং উৎসাহিত করতে সাহায্য করেছে।
এরপর খোদ সরকারি উদ্যোগে উৎসাহে ও প্ররোচনায় সাধারণ মানুষকে বড়দিন নববর্ষের বে-লাগাম জনসমাগম ও বাঁধন ছাড়া উচ্ছাসে উৎসবে পালনে সামিল করা হয়েছে।
এখনই হাসপাতালে হাসপাতালে কোভিড বেডে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে, অনতি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। আমরা চিকিৎসকরা গত বছরের মে মাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা ভুলতে পারিনি, ভুলতে পারিনি অক্সিজেনের জন্য মানুষের হাহাকার আর মৃত্যু মিছিলের দিনগুলো।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ১০ জানুয়ারি ২০২২ থেকে গঙ্গাসাগর মেলা অনুষ্ঠিত হলে কি ভয়ানক অবস্থা হবে কোন বিশেষজ্ঞ বা পরিসংখ্যানবিদের সাহায্য ছাড়াই সামান্য বুদ্ধিশুদ্ধি আর মানবিক বোধ দিয়েই তা বোঝা যায়।
পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সংগঠন গুলির যৌথমঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডকটরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল- এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আমাদের দাবী অবিলম্বে এই মেলা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রয়োজনীয় আদেশনামা জারি করা হোক।
ভুললে চলবে না ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকেই মানুষ জন এই মেলায় সমবেত হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে এই ধরনের মেলা থেকে কি ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
সরকারিভাবে এই মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করলে সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার দায় ও কলঙ্ক কিন্তু একান্তই সেই সরকারের উপরই বর্তায়।
আমরা আশা রাখছি সরকার আমাদের উদ্বেগ আশঙ্কার গুরুত্ব অনুধাবন করে এই মেলা বন্ধ করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে।
পাশাপাশি সরকারের কাছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস দাবী জানাচ্ছে–১। সংক্রমিত মানুষদের খুঁজে বার করার জন্য কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হোক, ২। দ্বিতীয় ঢেউএর সময় যেসব বেসরকারী হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল সেগুলিকে আবার অধিগ্রহণ করা হোক, ৩। সরকারী হাসপাতালে খোলা যে সব কোভিড ওয়ার্ড বন্ধ করা হয়েছে সেগুলি আবার খোলা হোক।
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল
(এসোশিয়েসন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম, হেলথ সার্ভিস এসোশিয়েসন, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, ডক্টরস ফর ডেমোক্রাসি)
অনলাইন পিটিশনে সাক্ষর করুন।
https://chng.it/N5C2ydTvxR