পয়লা জুলাই চিকিৎসক দিবসের দিন থেকে মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট ডাক্তাররা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
গত 17ই মে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নবান্ন সভা ঘরে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন। সে বৈঠকে ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছিলেন মেডিকেল কলেজে পঠন-পাঠন এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নতুন করে যেন আবার শুরু করা হয়। করোনা রোগীদের পাশাপাশি যেন শুরু করা হয় নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা যা তিন মাস ধরে বন্ধ আছে।
আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। গত 24 শে মে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেও আশ্বাস মেলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
মেডিকেল কলেজের পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিদের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তাদের সঙ্গে সহমত হন এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে তাদের বক্তব্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেন।
কিন্তু কি দেখা গেল? পয়লা জুলাই দুটি সরকারি নির্দেশ বেরোলো, প্রথমটিতে বলা হলো মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অন্য মেডিকেল কলেজে করা হবে। দ্বিতীয়টিতে বলা হলো পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হবে অন্য মেডিকেল কলেজে।
মে মাসের শেষে মেডিকাল কলেজে এমসিআই ভিজিট ছিল। সেই সময়ে কোন বিক্ষোভকে এড়াতেই বোধহয় এই নির্দেশ বার করা হয় ভিজিটের পরে।
মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট ডাক্তাররা কেবল নিজেদের জন্য আন্দোলন করছেন না। স্পষ্টতই তাদের আন্দোলন করোনা রোগী চিকিৎসার পাশাপাশি করোনা নয় এমন রোগীদের চিকিৎসা করার জন্যও। আমরা সবাই জানি নন কোভিড রোগীদের কি দুর্দশার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সারা রাজ্য জুড়ে।
অবশ্যই সব রোগীদের চিকিৎসা হলে মেডিকেল ছাত্র, ইন্টার্ন, এমডি-এমএস প্রশিক্ষণার্থী, ডিএম-এমসিএইচ প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হাসপাতালের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজও। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা হাতে কলমে কাজ শিখতে পারবেন না এমনটা কেমন ভাবে হতে পারে?
ছাত্র-ছাত্রীদের এই দাবির পক্ষে মত দিয়েছেন কলেজ কাউন্সিল উপস্থিত সমস্ত বিভাগীয় প্রধান প্রথমবার 27 শে মে, আবারও 2রা জুন।
2রা জুন কলেজ কাউন্সিল মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ও।ছাত্র শিক্ষকদের সঙ্গে সহমত হয়েও তিনি জানিয়েছেন তার কিছু করার নেই।
কোভিড 19 এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস রাজ্য সরকারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। যখনই মুখ্যমন্ত্রী আলোচনার জন্য ডেকেছেন তারা গিয়েছেন, পরামর্শগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তারা জানেন কোভিড 19 এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব সরকারকেই দিতে হবে। সরকারের পাশে থাকা তারা নিজেদের কর্তব্য মনে করেছিলেন।
কিন্তু আজ সরকার যুক্তির ধার থাকছেন না।
কেবল মেডিকেল কলেজ নয়, একই অবস্থা কলেজ অফ মেডিসিন এন্ড সাগর দত্ত হাসপাতাল এবং এন আর বাঙ্গুর হাসপাতালেরও। সাগর দত্ত হাসপাতালে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি নেই বললেই চলে, কেবল ইন্টার্নদের ভরসায় সেখানে ডাক্তারদের জন্য কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে কেবল কোভিড চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ 24 পরগনার এক বিশাল সংখ্যক রোগীর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ডি এন বি প্রশিক্ষণার্থীদের পঠন পাঠন ও প্রশিক্ষণ।
সরকারের কাছে ডাক্তারদের দাবিঃ
১। কোভিড 19 চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ করা হোক। কোন টিচিং হাসপাতালকে কেবল কোভিড চিকিৎসার কেন্দ্র না করে প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজে একটি করে ব্লক থাকুক করোনা চিকিৎসার জন্য।
২। যে কলেজ থেকে ইন্টার্নরা পাস করেছেন সে কলেজ ছাড়া অন্যত্র তাদের রোটেশনাল ট্রেনিং হতে পারে না। কেননা সব কলেজই পরিকাঠামো না বাড়িয়ে ছাত্র সংখ্যা বাড়ানোয় চাপের মধ্যে রয়েছে।
৩। একই কথা পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিদের জন্যও। তারা ভর্তির সময় যে মেডিকেল কলেজকে বেছে নিয়েছেন তাছাড়া অন্যত্র তাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা অনায্য।
৪। কেবল কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে যে হাসপাতালগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলির সমস্ত ভবনের স্থাপত্য করোনা চিকিৎসার উপযুক্ত নয়। অন্য চিকিৎসা বন্ধ রাখায় এক বিশাল সংখ্যক (মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে সহস্রাধিক) শিক্ষক চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক কর্মহীন বসে রয়েছেন। সরকার ভবনগুলোকে এবং চিকিৎসকদের কাজে লাগিয়ে রোগগ্রস্ত জনতার দুর্দশা লাঘবের চেষ্টা করবে এমনটাই সরকারের কাছে প্রত্যাশা।
৫। করোনা চিকিৎসা থেকে সিনিয়ার বা জুনিয়ার কোন শ্রেণীর ডাক্তারই পিছনে হটতে চাইছেন না। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের নেতৃত্বে তারা প্রাণপাত করবেন কিন্তু পাশাপাশি তারা চান অন্য রোগীদের চিকিৎসাও হোক, পঠন পাঠন ও প্রশিক্ষণ আবার শুরু হোক।