এ বি পি আনন্দে কিছুদিন আগে সন্ধ্যায় ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের অধুনা দুরবস্থা নিয়ে এক আলোচনা সভা হল। ব্যাঙ্কের কার্য সময় কমানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাতে সাড়া দিয়েছেন। তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ। জনৈক ডাক্তারবাবু মসহরা দিচ্ছেন ব্যাঙ্কের স্লট করে দেওয়ার জন্য।
আসল কথাটি হল যে, যে জায়গায় কাজ করে, সে তার জায়গাটা ভাল বোঝে। যেমন একটা হাতিকে যদি গাছে উঠতে বলেন, সে কি পারবে? কিন্তু একটা বাঁদর সেটা অনায়াসেই করে দেবে।
পেসেন্টদের রোগ হয়েছে, স্লট করে দিলে স্লট মতই আসবেন। ব্যাঙ্কের কাস্টমারের রোগ হয় নি, ্তিনি তাঁর সময়মতই আসবেন। ব্যাঙ্কে কাস্টমার একটা কারণে আসেন না, তাঁর আসার বিভিন্ন কারণ থাকে। তবুও তর্কের খাতিরে ধরা যাক টাকা তোলার কারণই আসল। ব্যাঙ্ক স্লট করে দিল। অ আজকে টাকা তুলে নিয়ে গেলেন, কাল আবার এলেন টাকা তুলতে, আপনি দেবেন না বলতে পারবেন? অ বলবেন আমার টাকা, সেই টাকায় আপনি মাইনে পান, দেবেন না মানে ইয়ার্কি হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্মচারী এরকম কথা রোজ শোনে্ন, আর হজম করেন। আ কে আজ ডাকবেন, আ বলবেন আমার আজ টাকা চাই না, কাল যাব। কখন কার টাকার দরকার হবে, কে জানে?
শুধুমাত্র পাসবুক আপডেট করার জন্য ব্যাঙ্কে লাইন পড়ে। লাইন পড়ে কোভিডের পাঁচশো তোলার জন্য। ডাক্তার বাবু মাস্ক পড়ার নিদান দিলেন, সেটা তো ব্যাঙ্ককর্মচারীরা মানছেন, অনেকাংশে সাধারণ জনগণই মানছেন না। এত এত ডাক্তার সংক্রমিত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন। তবে কি তাঁরাও ঠিকঠাক মাস্কটি পরেন নি?
পি পি ই পরে ব্যাঙ্কের কাজ করলে সংক্রমণ এড়ানো যাবে। টাকা গুনতে গেলে হাতের গ্লাভস পরেই অস্বস্তি হয়। ঠিকমত কাজ করা যায় না। তার উপরে সমস্ত নোট চেক করে নিতে হবে এবং দিতেও হবে কারণ জাল নোটও থাকতে পারে।
বদ্ধ জায়গা, গরম, মাস্ক পরে শ্বাস নিতে অস্বস্তি। তার উপরে পিপিই পরে কাজ করতে গেলে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা কোভিড থেকে হয়ত বেঁচে যাবে্ন, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি তাঁরা হয়ত এমনিই মরে যাবেন।
ব্যাঙ্কের অফিসার ইউনিয়নের প্রতিনিধি বলেছেন– সাতদিনের কোভিড ডিউটি করলে, সাতদিন হয়ত একটু বিশ্রাম করে, আগামীর লড়াইএর জন্য তৈরি করে নিতে পারেন ডাক্তারবাবুরা নিজেদেরকে। ব্যাঙ্ক কর্মচারীকে রোজ যেতে হয়। সমস্ত প্রতিষ্ঠানে তালা পড়েছে, ব্যাঙ্কে পড়েনি। ব্যাঙ্ককর্মী তালা লাগাতেও চান না, কিন্তু একটু হলেও তাঁরাও বিচলিত, সংক্রমিত হচ্ছেন সহকর্মী। মারা যাচ্ছেন সহকর্মী।
জীবিকার জন্য ব্যাঙ্ক কর্মচারীকে ব্যাঙ্কে যেতে হবে, ডাক্তারবাবুর কথা মত আগুনের মধ্যে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরাও হাঁটতে রাজি আছে, বরং তাঁরা তো যতুগৃহে বাস করছে। তাঁদের কথাটাও একটু ভাবুন, আপনি বলছেন বদ্ধ জায়গা, হ্যাঁ বদ্ধ জায়গা, সেখান থেকে কাজ সেরে যত তাড়াতাড়ি বাইরে বেরোতে পারবেন, পারবে্ন একটু স্বস্তির শ্বাস নিতে। জানিনা এখন কোভিড বায়ুতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা? ছড়াচ্ছে না ভেবেই লিখছি। আর একটা কথা, দুপুর দুটো অবধি সময়সীমা হলেও ব্যাঙ্ক দুটোয় কোনওদিনও বন্ধ হবে না, ক্যাশ শেষ করে, ডে এন্ড করতে করতে কম পক্ষে চারটে বাজবে, এখন যেমন পাঁচটা অবধি ব্যাঙ্ক হলেও ব্যাঙ্ক কর্মচারী কি পাঁটটাতেই ব্যাঙ্ক বন্ধ করতে পারে্ন?
তাই ব্যাঙ্কের কার্যকাল কমলে আর শনিবার আর রবিবার ছুটি হলে, একটু হলেও স্বস্তি হবে ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের আগামীর লড়াইটা চালিয়ে নিতে। ডাক্তারবাবুর সাথে ব্যাঙ্ককর্মচারীদের বিরোধ নেই কোনো। তাঁরাও সুস্থ থাকুন আমাদেরকেও সুস্থ রাখুন। আমরাও চাতকের মতন তাকিয়ে আছি সুদিনের আশায়।
লেখাটা জনৈক ব্যাংক কর্মচারীর।