১.
চোদ্দ বছর আগে শহরে ঘটে গিয়েছে এক রহস্যময় হত্যাকাণ্ড। অজানা ভাইরাসে মারা গিয়েছে এক লক্ষ মানুষ। হত্যার দায় নিয়ে সাজা পেয়েছে কিছু তথাকথিত সন্ত্রাসী। তবু কিছু ধোঁয়াশা থেকে যায়, উত্তর মেলে না..
পার্লামেন্টে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একনায়কের শাসন শুরু হয়েছে। সঙ্গে অবধারিতভাবেই বাক-স্বাধীনতা রোধ আর ভয়ের রাজত্ব। এমন অবস্থায় একনায়কের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে শহরে আবির্ভাব হয় এক মুখোশধারীর।
জৈব-অস্ত্র আর মানুষের ওপর অনৈতিক ও নৃশংস পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটা একটা করে রহস্য উন্মোচিত হয়। সন্দেহ ঘনীভূত হয়..অজানা সন্ত্রাসী নয়, এই নারকীয় হত্যালীলার পেছনে সম্ভবত.. সেসব কথা বলা বারণ।
মুখোশধারী শিখিয়ে দেয় শুধু কিছু অট্টালিকা আর শাসনযন্ত্র নয়, দেশের সর্বাগ্রে প্রয়োজন আশার আলো। ভয়ের সামনে মূর্তিমান ‘যম’ হয়ে দাঁড়ায় সে। তাকে হত্যা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে একনায়ক। অগুনতি গুলি খেয়েও আবার উঠে দাঁড়ায় মুখোশধারী। শাসকের ডানহাত অফিসারের কলার চেপে ধরে বলে.. “Behind this mask there is more than just flesh. Beneath the mask there is an idea.. And ideas are bulletproof.”
‘V for Vendetta’। বিখ্যাত সিনেমাটির সম্পর্কে বাড়তি কিছু না বললেও চলে।
২.
করোনা এসে শিখিয়ে গেল মূর্তি আর বোমা-বন্দুক নয়, দেশের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’। সবার জন্য সমমানের, বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে।
ক্ষুধাতুর পেট মিসাইল দিয়ে ভরে না। রোগজর্জর শরীর দেশপ্রেমের বানানো গল্পে সারে না। করোনা শিখিয়ে গেল সবার আগে চাই প্রতিরোধী আর প্রাথমিক চিকিৎসার উন্নতি। আকাশঝাড়ু সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের চেয়েও অনেক বেশি দরকার সাধারণ স্বাস্থ্য-সচেতনতা। বড়ো কর্পোরেট হাসপাতালের চাকচিক্য আর ‘তোমার ছুটি, আমার নয়’-এর চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন খাদ্য-সুরক্ষা, পানীয় জল, পরিচ্ছন্নতা আর অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের নিয়মিত জোগান।
একদিকে আকাশছোঁয়া দারিদ্র্য আর অশিক্ষা। অন্যদিকে অর্থপ্রাচুর্যের অশ্লীল প্রদর্শনী। করোনা এসে স্টিমরোলার বুলিয়ে বলে গেল একটা ধুঁকতে থাকা দেশে জিডিপির ১.২% স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়- নিতান্ত লজ্জার।
৩.
আহত মুখোশধারী যখন মৃত্যুশয্যায় তখন পুরো দেশ এসে দাঁড়িয়েছে মুক্তির ‘বুলেটপ্রুফ আইডিয়া’ বুকে নিয়ে। তাদের সবার মুখে মুখোশ। তাদের এখন আর আলাদা অস্তিত্ব নেই। মুক্তির স্বপ্নে তারা সবাই একই মানুষ। মুখোশধারী এখন কোনও পৃথক সত্ত্বা নয়। সে কারো বাবা, কারো মা, কারো ভাই-বোন-বন্ধু। সে ‘আপনি’, সে ‘আমি’। একটা ভীত, মৃতপ্রায় সমাজকে পুনরুজ্জীবনের গান শুনিয়েছে সে। রাস্তায় নেমে এসেছে মানুষ.. ভেঙে পড়েছে অত্যাচারের প্রাণকেন্দ্র।
করোনা নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশ্বে ৪১ টি দেশের মতো এদেশেও জনগণের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নেবে সরকার। চিকিৎসার জন্য ঘটি-বাটি বেচে নিঃস্ব হয়ে যাবে না কেউ। করোনা স্বপ্ন দেখাচ্ছে দিন বদলের দিনের..
“Remember remember.. The 5th of November..”