★ স্টেরয়েড কী কী ভাবে নেওয়া যা ?
‘যত মত তত পথ’ স্মরণ করুন। শরীরে যত রাস্তা আছে সব দিয়েই স্টেরয়েড নেওয়া যায়। মুখে খাওয়া, প্রশ্বাসের মাধ্যমে, পেশী বা শিরায় ইঞ্জেকশন, চামড়ায় ইঞ্জেকশন, অস্থিসন্ধির মধ্যে, চোখের ড্রপ, মলম ইত্যাদি প্রায় সম্ভাব্য সব রাস্তাতেই স্টেরয়েড নেওয়া যায়।
★মোটামুটি কত দিনের মধ্যে সাইড এফেক্ট দেখা যায়?
সাধারণত দু-সপ্তাহের বেশি স্টেরয়েড ব্যবহার করলে মূল সাইড-এফেক্টগুলো আসতে শুরু করে।
★মূল সাইড এফেক্টগুলো কী কী?
গ্লুকোকর্টিকয়েড
***************
ওজন বৃদ্ধি, পাকস্থলীর ঘা, হাড়ের ক্ষয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, পেশীর দুর্বলতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, চোখে ছানি, গ্লকোমা, ইনহেলারের মাধ্যমে নিলে মুখে ছত্রাক সংক্রমণ, গলা খসখসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
অ্যানাবলিক স্টেরয়েড
*********************
রক্তবাহের মধ্যে চর্বি জমে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, পুরুষের অস্বাভাবিক স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি, শুক্রাশয় ছোট হয়ে যাওয়া, বীর্যে শুক্রাণু হ্রাস, লিভারের টিউমার, সাইকোসিস ইত্যাদি। মহিলা অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত রজঃস্রাব,বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
স্টেরয়েড মলমের সাইড এফেক্ট নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি।
★সাইড এফেক্ট কমানোর জন্য কী কী করা যেতে পারে?
১. ভরা পেটে স্টেরয়েড খান। সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ মত অ্যাসিড ক্ষরণ কম করার ওষুধ।
২. সম্ভব হ’লে দিনে অনেকবার অল্প ডোজে না খেয়ে একবারে খেলে সাইড এফেক্ট কম হয়।
৩. প্রতিদিনের ডোজের চেয়ে একদিন ছাড়া ছাড়া খাওয়া সম্ভব হলে ক্ষতি কম হয়।
৪. ডাক্তারের পরামর্শ মত ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়ামের ব্যবহার হাড়ের ক্ষয় কমায়।
৫. ব্যায়াম ও পরিমিত আহার পেশী ও হাড়ের ক্ষতি কমায়।
৬. রক্তচাপ কমানোর ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
৭. চোখে আবছা দেখলেই ডাক্তার দেখান।
৮. অনেকদিন স্টেরয়েড চললে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন নিন।
৯. মুখে খাওয়া বাদে অন্য রাস্তায় স্টেরয়েড দেওয়া সম্ভব হবে কিনা আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। বিশেষ করে হাঁপানি-শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে অনেকের ভুল ধারণা থাকে স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করা ভালো নয়, অভ্যেস হয়ে যায়..ইত্যাদি। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইনহেলারে খুব অল্প পরিমাণ ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে। সাইড এফেক্ট কম হয়।
১০. স্টেরয়েড ইনহেলার নিলে মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে নিন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখে জল দিয়ে একটা আঙুল দিয়ে পুরো মুখ পরিষ্কার করে দিন। এতে ছত্রাক সংক্রমণ কমে যায়।
★কয়েকটি গোল্ডেন টিপস★
**************************
ক. পাশ করা মডার্ন মেডিসিনের ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া স্টেরয়েড খাবেন না। আশেপাশের বন্ধু, বাড়ির সদস্য, সহকর্মী কিংবা সহযাত্রীদেরও নিষেধ করুন।
খ. বাজারচলতি যে সব কাগজে মোড়া পুরিয়া, ওষুধের নাম না লেখা কাচের শিশি, শেকড়-বাকড়, সর্বরোগহর বটিকা পাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। এতে স্টেরয়েড মেশানো থাকতে পারে।
গ. মাথায় রাখুন সমগ্র বিশ্বে একমাত্র সর্বজনস্বীকৃত ও বিজ্ঞানসম্মত ফার্মাকোলজি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি হল বর্তমান মডার্ন মেডিসিন। এর বাইরে ওমুক-তমুক প্যাথি বলে যা যা চলে তার কোনোটাই বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে প্রতিনিয়ত ঘষে ঘষে তৈরি নয়। স্টেরয়েড প্রেস্ক্রিপশন আইনত পাশ করা মডার্ন মেডিসিনের ডাক্তার ছাড়া কেউ করতে পারেন না।
ঘ. নিজে থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। কিছুটা সময় আর অর্থ সাশ্রয় করতে গিয়ে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
ঙ. পারলে আপনার ডাক্তারের কাছে স্টেরয়েড ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাব্য সাইড-এফেক্ট নিয়ে আলোচনা করুন। যদিও এত বিপুল সংখ্যক পেশেন্টের মাঝে দাঁড়িয়ে অনেক সময়ই ডাক্তার সেটা করে উঠতে পারেন না।
সর্বোপরি, আবার একবার বলি- স্টেরয়েড নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না কিন্তু সতর্ক থাকুন। স্টেরয়েড একটি আশীর্বাদ। স্টেরয়েড আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার অন্যতম স্তম্ভ। স্টেরয়েডের যুক্তিযুক্ত ব্যবহার অসংখ্য মানুষকে রোগমুক্তি দিয়েছে। ভবিষ্যতেও দেবে। এবং, এটা ভাবুন- যখন লাভক্ষতির হিসেব করবেন তখন যদি লাভের ঘরে অনেক বেশি জমে তাহলে সামান্য সাইড-এফেক্টের দুশ্চিন্তা ভুলে থাকাই শ্রেয়। দুর্ঘটনা এড়ানোর ভয়ে কে কবে রাস্তায় নামা বন্ধ করেছে?
সচেতনতা ছড়িয়ে দিন। সুস্থ থাকুন।