জীবনের অবাক করা দেওয়া নেওয়া নিয়ে দুটো অভিজ্ঞতার কথা বলি।
★
প্রথমে প্রত্যাহারের গল্প।
সে ধরুন বছর পঞ্চাশেক আগের কথা। হোস্টেলে পাশের রুমের অসিতদাকে রাস্তার কুকুর কামড়ালো। তখনকার দিনে এখনের মত এই ভ্যাক্সিন পাওয়া যেত না। সেই পেট ফুটো করে চোদ্দোখানা বিকট ইঞ্জেকশন। ইনঞ্জেকশন নেওয়া শুরু। তবু ডবল শিয়োর হওয়ার জন্য অসিতদা কায়দা করে কুকুরটাকে ধরল। তখনকার দিনের চালু ডিকটম ছিল, কুকুর যদি কামড়াবার পর দশদিন বাঁচে তবে আর তার থেকে জলাতঙ্ক হবার ভয় নেই।
অসিতদা সেই কুকুরের গলায় দড়ি বেঁধে তিনতলায় নিজের ঘরের কড়ায় বেঁধে রাখল তারপর। এলাহি খাবার দাবার এল তার জন্য পরের দশ দিন।
দশদিন পরও কুকুরটা বেঁচে রইল। অসিতদা কুকুরের গলার বকলশ খুলে অতঃপর পেছনে তিন লাথি মেরে তিনতলা থেকে তাড়ালো।
কেঁউ কেঁউ করতে করতে তার সেই পলায়ন দৃশ্য আজও মনে পড়ে।
পালাবার সময়ে সেই কুকুর হতভাগা নিশ্চয়ই ভেবেছিল, এই দশদিন জামাই আদর করলই বা কেন, আজ লাথি মেরে তাড়ালই বা কেন?
এই রকমের তাড়া আমিও খেয়েছি প্রাথমিক সমাদর প্রত্যাহারের পরে।
★
এবার দ্বিতীয় কাহিনি। প্রাপ্তির গল্পটা বলি।
দুদিন আগে বালিগঞ্জ থেকে ফিরছি সন্ধ্যের মুখে। ফলওয়ালি এক মেয়ের থেকে আতা কিনলাম। ওই বুনো ফল(আমার ছোটোবেলায় বনে ঝোপে থাকত ওই ফলবতী গাছ!) এখন মহার্ঘ। যাই হোক, সেই মেয়ে যেটা বেছে দিল, পাথরের মত শক্ত। তাকে বললাম, ‘হ্যাঁ গো মা, এই একেবারে কাঁচা ফলটা দিলে? একটু পাকা দেখে দিলে হত না?’
সরাসরি উত্তর না দিয়ে সে শুধোলো ‘বাড়ি কোথায়? রেলেই ফিরবে?’
গন্তব্য জানালাম, বনগাঁ লোকালে হৃদয়পুর!
সে একটা একদম পাকা আতা আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘নেবে এটা? তোমার ওই টেরেনে আর ইস্টিশনে নামার ভিড়ে কিন্তু পুরো মণ্ড হয়ে যাবে!’
শিউরে বললাম, ‘থাকগে মা, যা দিয়েছো ওটাই দাও।’
হাতের পাকা আতাটা ফেরত দেবার জন্য তার দিকে বাড়াতেই ঝাঁঝিয়ে উঠল, ‘ওটা তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে খাও দিকিনি। দাম দিতে হবে নে! যেটা নে যাচ্চো ওটা কালপরশুই পাকবে খনে’!
নির্দেশ মত খেতে হল ওই ফুটপাতে দাঁড়িয়েই।
★
তাই বলছিলাম,
আমি অকৃতি অধম, তাই বলে তুমি…
কম করে কিছু দাওনি!
★