১৯৭৪ সালে দাশপুরে বিশাল বন্যা হয়েছিল।
ভীষণ বন্যা,এতটাই আমরা ৫৫ ফুট উপরে জলের দাগ দেখেছিলাম। অতটা উপরে যে জল উঠতে পারে, শহুরে জীবন যাপনে অভ্যস্ত লোকজন চিন্তাতেও আনতে পারেন না ( সাধারণত :)।
সবচেয়ে যেটা কষ্টের, উপর থেকে হেলিকপ্টার পাক কেটে যাচ্ছিল, কিন্তু ত্রাণসামগ্রী দূরে সরে সরে যাচ্ছিল, ভেসে যাচ্ছিল, ফলে ক্ষিধে আরও অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছিল।
আমাদের শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল একটা মন্দিরচাতালে।
প্রতিদিন সকালে উঠে আমরা ছড়িয়ে পড়তাম নানা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, একজন ডাক্তারবাবু ছিলেন নাম তাঁর পবিত্রদা,পবিত্রদাকেই দেখতাম সাপ্লাই ঠিক আছে কি না, এটা নেই কেন, ওটা কী কেন এসব খোঁজ নিতে। অনেকেই খোঁজ খবর নিতেন।
একবার খুব কাছেই একটা গ্রামে খাবার দাবার কম দেওয়া হয়েছিল, পবিত্রদা শুধুমাত্র আমাকেই নিয়ে গেল সে গ্রামটায়, বিলিটিলি হলো (ক্ষিধে কি মেটে তাতে)!!
ফিরে আসার সময় পবিত্রদা বললেন ~একটা গান ধর মুকুল।
একপেট ক্ষিদে নিয়ে কি আর গান হয়? অগত্যা গ্রামের বাইরের দিকে এসে একটা গান ধরলাম ~ “চারটি নদীর গল্প শোনো”, ক্ষিধেটা কিন্তু চাগাড় দিয়েই যাচ্ছিল, মাথাটাও একটু ঝিমঝিম, সেই অবস্থা নিয়েই ছুটলাম সেই মন্দির চাতালে, এসেই আগে স্নান করে নিলাম, ফলতঃ ক্ষিধে জমজমাট।
বন্যা ছুটে চলে এলো, ” কি মুকুলদা খাওনি এখনো? স্টক তো ফাঁকা, এখন তোমাকে কি দিই বলোতো? একেবারেই ফাঁকা, নো স্টক।
আমাদের পাশেই মেডিক্যাল টীম, ওখান থেকেই একবোতল এভিল সিরাপ চঁ চঁ করে মেরে দিলাম।
পরের দিন ভোর হতে না হতেই বন্যা ছুটে এলো, এই নাও দাদা, এক্ষুনি এলো, চটপট খেয়ে নাও তো, সারাটা রাত না খেয়ে আছো,
চিঁড়েগুড় খাও আগে, তারপরে বাতাসা আসছে।