অবশেষে আজও দিনভর টালাবাহানার পর ঘোষিত হল ইলেকশনের ডেট। ৭ বছর। দীর্ঘ ৭ বছর পর আবার মেডিকেল কলেজ কলকাতার স্টুডেন্টস ইউনিয়ন তৈরী হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে। কলেজে কলেজে ইউনিয়ন ইলেকশন তুলে দিয়ে সিলেকশনের মাধ্যমে সরকারের দালাল অথোরিটির আদেশ পালন করা ‘ভালো’ ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সিল নয়; ছাত্রছাত্রীদের দাবি দাওয়া কন্ঠস্বর যাতে ন্যায্যভাবে উঠে আসতে পারে, তার জন্য মেডিকেল কলেজে ইউনিয়ন ইলেকশন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ শে ডিসেম্বর। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই যেখানে বেছে নেবে তাদের নিজের প্রতিনিধিদের। আর তার নেপথ্যে MCDSA-র হারা না মানা লড়াই। ইউনিয়ন ইলেকশন তুলে দিয়ে অগণতান্ত্রিক কাউন্সিল মডেলের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের কন্ঠস্বর কবরে চাপা দেওয়ার নয়া উদারবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে এ জয় নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। এ জয় কারো হাত পা ধরে চেয়ে পাওয়া নয়। দিনের পর দিন মাটি কামড়ে পড়ে থেকে লড়াই দিয়ে পাওয়া।
আরো একবার MCDSA এই একটি মাত্র কলেজে উপস্থিত থেকেও বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিল সময়ের খাতে বইতে বইতে বর্তমান বৃহৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরো কতটা প্রাসঙ্গিক উঠেছে তার লড়াই। মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে তো প্রথম বটেই, যে টানা লড়াই দিয়ে এই ইউনিয়ন ইলেকশনের দাবি MCDSA ছিনিয়ে আনল, বাংলার ছাত্রছাত্রী রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে তা একটি ল্যাণ্ডমার্ক।
বাংলার অন্যান্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও ছড়িয়ে পড়ুক ইউনিয়ন ইলেকশনের দাবি। কাউন্সিল নয়, ইউনিয়ন। ছাত্রছাত্রীদের কন্ঠস্বরকে চাপা দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুক সকল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। আর যে ছাত্রটি ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেয়েও শেষে নীরব থেকে যেতেই বাধ্য হয় বহিস্কার হওয়ার ভয়ে, যে ছাত্রটি পিতৃতান্ত্রিক পাওয়ার স্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেয়েও নীরব হয়ে থেকে যেতে বাধ্য হয় ক্ষমতার কাছে পরাজয় স্বীকার করে কিংবা ফেসবুকের পাতায় সীমাবদ্ধ থেকে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে ছাত্রটি আজও বাধ্য হয় শাসকদলের কোন দাদার ভয়ে শাসকদলের মিছিলে অংশ নিতে, পরিকাঠামো -বিহীন ল্যাবে দাঁড়িয়ে যে ছাত্রীটি শুধুই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে; MCDSA-র লড়াই হয়ে উঠুক তাদের অনুপ্রেরণা। হয়ে উঠুক বাংলার সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। গড়ে উঠুক আরো DSA বা যাদবপুরের DSF র মত এরকম ছাত্রছাত্রীদের লড়াইয়ের নিজস্ব সংগঠন। কোন সাংসদীয় দলের পদলেহন না করে যে সংগঠনগুলি হবে ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের অধিকার নিজে বুঝে নেওয়ার সংগঠন, নিজেদের হকের দাবি নিজেরাই লড়ে নেওয়ার সংগ্রামী সংগঠন। একখানা DSA বা DSF যদি এতোটা লড়াই দিতে পারে; শত শত কলেজে জন্ম নিলে তা ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব যে প্রতিস্পর্ধী ক্ষমতার জন্ম দিতে পারে….. সে ক্ষমতা ইতিহাসই আমাদের দেখিয়েছে।
পরিশেষে DSA-র সকল জুনিয়রদের জন্য এটাই বলা, এই লড়াই দিয়ে আদতে আর একটা নতুন লড়াইয়ের শুরু হল। সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে প্রস্তুত হ’ আগামীর দিনগুলোর জন্য। শাসকের ক্ষমতার দালালদে’র দালালির ক্ষমতা অনেক বেশী, অজানা নয়। কিন্তু তোদের লড়াই তো শুরুই হয়েছে অসম যুদ্ধে অসীম ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্যে।