২/৬/২০
Shramajibi Swasthya Udyog এবং West Bengal Doctors Forum এর মেডিকেল টিম হিসেবে হিঙ্গলগঞ্জের পাঁচ-ছ টা জায়গা কভার করার পর কলকাতা ফিরে একদিনের গ্যাপে আবার রওনা দিলাম আমরা পাথরপ্রতিমার উদ্দেশ্যে। পৌঁছোতে প্রায় বিকেল হল। Pdsf West Bengal এবং Amphan Relief Network : আম্ফান রিলিফ নেটওয়ার্ক এর সাথীরা ছোট রাক্ষসখালি দ্বীপে ২০০ পরিবার কে ২০০ ত্রিপল এবং খাদ্যশস্য, সব্জি, শুকনো খাবার, তেল, সাবান এর প্যাকেট এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে সাধারণ ত্রাণ এর কাজ করবে। পৌঁছনোর পর সেই জিনিসপত্র প্যাকিং, কি ধরনের রোগী বেশি হবে সেই সার্ভে করার জন্য স্থানীয় সংগঠক দের সাথে কথাবার্তা ইত্যাদি করা হল।
সাধারণ ত্রাণ এর কাজের পাশে ক্যাম্প করে স্বাস্থ্যশিবির চলবে কাল।
৩/৬/২০
পাথরপ্রতিমার বড়চূড়া নদী থেকে বোটে কার্জন ক্রিক পেরিয়ে পৌঁছাতে ঘন্টা দেড়েক। রাক্ষসখালি এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির হল৷ মেডিকেল টিমে ডাক্তার হিসেবে ছিলাম আমি দেবাশিস হালদার, Bubai Mandal, Soumadip Rakshit(ইন্টার্ণ), Apan Samanta(ফাইনাল ইয়ার ছাত্র) ও Monalisa Ghosh(নার্স)। স্থানীয় এক বিডিও অফিসের কর্মী এখানকার উদ্যোক্তা ছিলেন।
এখানে বাঁধ ভাঙার থেকে বেশ অনেকটা দূরে স্বাস্থ্য শিবির হওয়ার কারণে এবং সাধারণ ত্রাণসামগ্রী বন্টনের সময় স্থানীয় রাজনৈতিক চাপান উতোরের ফলে (পঞ্চায়েতের শাসক-বিরোধী ঝামেলা) স্বাস্থ্য শিবিরে ৭০ এর বেশি রোগী আমরা দেখতে পারিনি।
তবে সাধারণ ত্রাণসামগ্রী বিলির কাজ সুষ্ঠুভাবেই হয়। PDSF, কালি কলম ইজেল, আম্ফান রিলিফ নেটওয়ার্ক এর সাথীরা ও স্থানীয় সংগঠকেরা জেনারেল রিলিফের কাজ করলেন।
৪/৬/২০
গতকাল পাথরপ্রতিমার ছোট রাক্ষসখালির পর আজ দুটি স্বাস্থ্য শিবির আয়োজিত হল SSU-WBDF এর মেডিকেল টিম এর উদ্যোগে।
একটি ক্যাম্প হল মৌসুনি দ্বীপের বালিয়াড়া অঞ্চলে। কলকাতা থেকে সপ্তাহান্তের বেড়াতে আসার জায়গা মৌসুনি কে দেখলে চেনার উপায় নেই এখন। আম্ফানের এতদিন পরেও এলাকায় জলমগ্ন থাকার ছাপ স্পষ্ট।
এখানে স্বাস্থ্যশিবির হয় নদী মোহনার কাছে।চর্মরোগ, পেটের রোগ, আঘাত ছাড়াও বিভিন্ন দীর্ঘদিন এর অসুখ এর রোগীরা এলেন। মোট ১০২ জন রোগী দেখা হল। অন্যধরনের একটা ব্যাপার দেখা গেল। আরো অনেক রোগী নাকি আসতেন, এই ভীতিতে আসেন নি যে জ্বর সর্দি কাশি হলে তাদের হয়তো আমরা কোরোনা সাসপেক্ট হিসেবে কোথাও ‘তুলে নিয়ে যাব’।
দ্বিতীয় ক্যাম্পটি হল নামখানার মাধবগঞ্জ এলাকায়, হেলেন ক্লোজার এর কাছে। রোগীর সংখ্যা ১১২। এখানে মূলত ক্রনিক রোগীর সংখ্যাই বেশি। লকডাউন এর কারণে এবং তারপর আম্ফান এর কবলে পড়ার ফলে তারা দীর্ঘদিন চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না৷
এই দুই জায়গা মিলিয়ে আমাদের সহযোগিতায় যারা ছিলেন, অর্থাৎ আম্ফান রিলিফ নেটওয়ার্ক এর সাথীরা মোট প্রায় ৪৫০ দুর্গত পরিবার কে অত্যাবশকীয় খাদ্যদ্রব্য (ডাল, চিঁড়ে, আলু, পেঁয়াজ, তেল), সাবান, টর্চ, স্যানিটারি ন্যাপকিন; বাচ্চাদের খেলনা, ১০০ পরিবার যাদের ঘরের চাল উড়ে গেছে তাদের ত্রিপল দেন।
স্বাস্থ্য শিবিরে ডাক্তারি টিম বাদেও অডাক্তার ভলান্টিয়ার হিসাবে সাহায্য করার জন্য ছিল Priyasmita, Animesh, শ্রে য়া, Arijit Chakraborty এবং স্থানীয় সংগঠকেরা।
সব মিটিয়ে কলকাতা ফিরতে প্রায় রাত সাড়ে দশটা প্রায়। ওদিকে Ratul দার থেকে ফোনে জানলাম কলকাতার টালার বস্তিতে ঝড়বৃষ্টি সামলে স্বাস্থ্যশবির শেষ করতেও প্রায় নটা বেজেছে।
এদিকে ডাঃ Himadri Sekhar Bera, Nebedita Dutta, Anindya Sundar Mandal, Debashis Barman দের টিম ওইদিন মাধবকাটিতে স্বাস্থ্যশিবির করছে৷ পরদিন ওই টিমের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতা থেকে রওনা হল ডাঃ Jieshnu Mukhopadhyay এবং Arya Chaudhuri। পরের দুদিন আরো তিনটে জায়গায় স্বাস্থ্যশিবির এর পরিকল্পনা নিয়ে।
৫/৬/২০
নিবেদিতা, জিষ্ণু, আর্য দের টিম এইদিন স্বাস্থ্যশিবির করল চর সাহেবখালির সাত্রা তে। উল্লেখ্য এই জায়গায় আগে Mrinmoy Bera, আমি সহ একটা টিম স্বাস্থ্য শিবির করে গিয়েছিলাম দিন পাঁচেক আগে, কিন্তু সেবার সময়ের অভাবে বেশি রোগী দেখা সম্ভব হয় নি।
(উল্লেখ্য, ডাঃ মৃণ্ময় বেরা ইতিমধ্যে UNICEF এর উদ্যোগে তৈরি টিমে গোসাবা অঞ্চলে টানা তিনদিনে বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য শিবির করে ফিরে এসে আপাতত আবার ডাঃ Siddhartha Gupta , Arka Mukherjee, Sikha দি, Arpita এর সাথে টিম করে পোর্টের জাহাজে করে সাগরে। সেখানেও বেশ কিছু স্বাস্থ্য শিবির এর পরিকল্পনা রয়েছে)
এদিন ই কুলতলির দেউলবাড়িতে ডাঃ শর্মিষ্ঠা রয়, অর্ণব সাহা সহ একটি টিম স্বাস্থ্যশিবির করে।
৬/৬/২০।
এদিন হুগলির ধনিয়াখালিতে আম্ফান বিধ্বস্ত এলাকায় স্বাস্থ্য শিবিরে ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ, হিমাদ্রি বেরা, Snigdha Hazra সহ একটি টিম যোগদান করে।
জিষ্ণু, নিবেদিতা, আর্য, অনিন্দ্য, দেবাশিস এদের টিম ভান্ডারখালির শিতোলিয়া তে স্বাস্থ্য শিবির করে প্রায় ৩০০ রোগী দেখে।
৭/৬/২০
আজ স্বাস্থ্য শিবির হল ক্যানিং ব্লক ২ এর পাড়গাঁতী, হাতিয়ামারি তে। এদিনের WBDF-SSU মেডিকেল টিমে ডাক্তার হিসেবে ছিলাম আমি দেবাশিস হালদার, ডাঃSoumya Kanti Bag, সুজয় বালা, Arnab Saha, সৌম্যদীপ রক্ষিত,নন্দিতা বর্মন। আমাদের সাথে ছিলেন ‘সিলিকোসিস আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটি’র সাথীরা।
চিকিৎসা, ওষুধপত্রের পাশাপাশি পানীয় জল পরিশোধন এর জন্য স্টক সলিউশন, মাস্ক, সাবান, মহিলা দের স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়ার ব্যবস্থা ও করেছেন স্থানীয় সংগঠকেরা। মোট ২৮০ জন মতো রোগী দেখা হল।
এছাড়া এই দিন ই নোনাডাঙা বস্তিতে ডাঃ Koushik Chaki সহ একটা বড় টিম, মেটেখালি তে ডাঃ Arjun Dasgupta, Punyabrata Goon সহ আরেকটি টিম স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করে।
ডাঃ Mrinmoy Sarkar, Rumelika Kumar, আপন সামন্ত সহ আরেকটি টিম কুলতলির পেটকুলচাঁদে PDSF সহ আরও নানা উদ্যোক্তাদের আয়োজনে সাধারণ ত্রাণসামগ্রী বিলির পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্পে যোগ দেয়।
৮/৬/২০
ডাঃ Soumyakanti Panda, Manas Mahapatra, বিতান দত্ত সহ WBDF-SSU এর মেডিকেল টিম আজ মেদিনীপুর এর খেজুরি অঞ্চলে স্বাস্থ্যশিবির করে।
আমফান বিধ্বস্ত এলাকা গুলোতে এই কদিনে মোট ৬৮ টি স্বাস্থ্য শিবির আমরা এখনো পর্যন্ত আয়োজন করতে পেরেছি SSU- WBDF এর যৌথ উদ্যোগে। সবকটার আপডেট সেভাবে দিতে পারলাম না হয়তো, নিজে ও কাছের সিনিয়র-বন্ধু-জুনিয়র রা যে স্বাস্থ্য শিবির গুলিতে অংশগ্রহণ করেছি ও আয়োজন করতে উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলোর আপডেট ই রইল। এ বাদেও অনেক গুলো ক্যাম্প, টিম এর কথা হয়তো বাদ পড়ল, সেগুলোর কথা হয়তো আলাদা ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া তে এসেছে।
জনস্বাস্থ্যের দাবিতে মুখর হওয়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত খেটে খাওয়া মানুষের সংহতিতে দাঁড়ানোর এই প্রয়াস চলবে।
✊✊✊