সে এক রূপকথা ।
দেশের পর দেশ তখন লড়ে চলেছে শত্রুর বিরুদ্ধে, খিদের বিরুদ্ধে। কেউ পারছে, কেউ লড়াইয়ের ময়দানে … সে থাক। কিন্ত সে শত্রু- যেন ইন্দ্রজিতের মতো- অদৃশ্য থেকে ছুঁড়ে চলেছে একের পর এক মৃত্যু। সভ্যতার ইতিহাসে এমন অভিশাপ – মনে পড়ে না খুব বেশি!
ইয়েমেন থেকে একদিন সূর্যমুখী মেয়েটি জানালো- পাহাড়ের গায়ে যত গাছ ছিল, তার অল্প কিছু পাতা বাকি আছে। সে ক’টা ফুরালে, খিদে আর লাগবে না মনে হয়!
আফ্রিকা থেকে এক সূর্যমুখী মা জানালো- সর্বভূক রাক্ষুসে বাচ্চাগুলো কাঁদছিল খুব।
বললাম- চুপ! মুখপোড়ার দল! এই তো উনুনে….তখন ঢাকনা দেয়া হাঁড়িতে জল আর পাথরের টুকরোগুলো সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল একসাথে!
পৃথিবীর নানা দেশে আরো কত সূর্যমুখীরা তাকিয়েছে আকাশে- খবর আসেনি সব।
ভারতের একটি রাজ্য থেকে পুলিশ জানালো- ঢালাই মেশিনের ভেতর সিমেন্ট আর বালির মত মিশে ছিল গোটা পঞ্চাশেক সূর্যমুখী প্রাণ। বন্দী করা হয়েছে!
করোনাকে ধোঁকা দিতে, স্যানিটাইজার লেখা ত্রিপল ঢাকা গাড়িতে ব্যারেলের বদলে ছিল অভুক্ত সূর্যমুখী কিছু। পুলিশকে ধোঁকা দেয়া যায়নি মোটেই!
অথচ তখন সূর্যের তেজ কমে আসছিল। শুধু খিদে আর মৃত্যু ছাড়া কারো কোন তেজ নেই যেন!
হঠাৎ একদিন এক অলৌকিক সকালে সবাই… রান্নার মাসি, সাফাই কর্মী, ড্রাইভার, গেটের দারোয়ান, পরিযায়ী শ্রমিক, অটো রিকশা টোটো চালক, দিনমান খেটে খাওয়া মজুর, সব্জিওয়ালা থেকে শুরু করে দুধওয়ালা- ব্যাংকের পাসবই নেই এমন সব সূর্যমূখীরা- তাকালো আকাশের দিকে, সূর্যের দিকে- মুখ হা করে- এইসব সূর্যমুখীরা দেখলো- একটা বিশালাকৃতির সুদৃশ্য ফড়িং উড়ে এসেছে আকাশে- তারপর আরো অনেক ফড়িং… তারা একে একে ছড়িয়ে পড়লো সারা আকাশ জুড়ে।
কথিত ছিল, এমন ফড়িং সব আশীর্বাদ বয়ে আনে সূর্যের থেকে। এই বুঝি টুপটাপ ঝরে পড়বে কয়েক মুঠো চাল- চালহীন জলভরা ভাতের হাঁড়ির মুখ খুলে গেছে- বাষ্পের চাপে। সে ও সূর্যমুখী!
সদ্য যোদ্ধার খেতাব পাওয়া কিছু ঢাল তরোয়াল হীন নিধিরামও দাঁড়িয়েছে এসে- যুদ্ধক্ষেত্রে। ক্ষত-বিক্ষত সূর্যমুখী সব তাঁরাও তখন। মেঘের আড়ালে থাকা শত্রুকে ঘায়েল করতে হবে- ফড়িংয়ের থেকে যদি
একটা বর্ম মেলে…
দ্রুম দ্রুম … এদিকে ওদিকে তখনো ব্যয়বহুল যুদ্ধ চলছে, অন্ধকারে…
কিছু সূর্যমুখী সৈনিক নিথর হয়ে পড়ে- কেন কেউ খবর রাখে না! বাহাত্তর বছর পরও সূর্য ওঠেনি-
মৃত্যু উপত্যকায় !
সুদৃশ্য ফড়িং বিকট শব্দে ডানা ঝাপটিয়ে উড়তে শুরু করেছে … উড়েই চলছে ….
তারপর একসময় ফড়িংয়ের পেট থেকে শুরু হয় আশীর্বাদী মূল্যবান পুষ্পবৃষ্টি। সাথে আসে দৈববাণী – নেই ঢাল তরোয়াল?
ক্ষতি নেই মরে গেলে,
মরণের বীমা ফেলে!
ছেড়ো না কো হাল!
সূর্যমুখীদের লক্ষ্য করে…. ফড়িংয়ের পেট থেকে চাল আর বর্মের বদলে ঝরতে থাকে কয়েকশো টন ফুল।
এক কবি তাঁর লেখা কবিতা ছিঁড়ে ফেলে – ফের নতুন করে লেখে- যদি জোটে মোটে দুইটি পয়সা,/ চাল কিনো না গো ক্ষুধার লাগি!/থালা পেতে থাক সূর্যমুখীরা,/ পুরোটায় তার ফুল কিনে দিও হে ফড়িংয়ের অনুরাগী।
সূর্যমুখীরা জানে- এইসব অলৌকিক ফড়িংয়েরা পুষ্পবৃষ্টি শেষে উড়ে যাবে- রাজার সভায়।
সেখানেই এইসব রূপকথাদের রূপরেখা আঁকা হয় ।
অসাধারন।