সার্জ ক্যাপাসিটি শব্দটা প্রথম শুনি PG ক্লাসে প্রফেসর রনদেব বিশ্বাস এর মুখে। স্যার তখনও বেঁচে যদিও দুরারোগ্য স্নায়বিক রোগ স্যার এর শরীরে থাবা বসিয়ে দিয়েছে। কথা বলতেন আস্তে আস্তে। মাঝে মধ্যে আনমনা হয়ে হাইজিন ইনস্টিটিউট এর সেই বিশাল লেকচার থিয়েটার এর বিশাল জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতেন চুপ করে। আবার সম্বিৎ ফিরে পেলে লেকচার শুরু হত। তার প্রতিটা মনি মুক্তো যাতে হারিয়ে না যায় তাই বাড়ি ফিরে ক্লাস নোট এর পাতা গুলো টাইপ করে রাখতাম ওয়ার্ড ফাইলে।
মাস ক্যাজুয়ালটি ম্যানেজমেন্ট পড়াতে গিয়ে স্যার ওই শব্দটা শিখিয়েছিলেন। ধরুন একটা বাস বা ট্রেন দুর্ঘটনায় একগাদা রুগী একসাথে হাজির ইমার্জেন্সীতে। তাদের সবাইকে ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে গেলে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো দরকার একধাক্কায়। কি করে বাড়ানো যাবে? অনেক গুলি উপায়ের মধ্যে একটা উপায় হল প্রি ও প্যারা ক্লিনিক্যাল বিষয়ের অধ্যাপক চিকিৎসক যারা সাধারণত রুগী দেখেন না যেমন এনাটমি, ফিজিওলজি কমুনিটি মেডিসিন ইত্যাদি ডিসিপ্লিনের ডাক্তারদের ডেকে নিয়ে আসা। প্রফেসর বিশ্বাস এর সেই অতদিন আগে বলা কথাগুলো আজ মনে পড়ে গেল।
আর জি কর হাসপাতালে এক রুগী মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলা বিনা চিকিৎসায় অভিযোগ খণ্ডন করতে গিয়ে সেখানকার MSVP ঠিক এই কথাটাই বললেন। কিছু জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতিতে থাকার জন্য যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সিনিয়র ডাক্তাররা আগের তুলনায় যতটা সম্ভব এফোর্ট বেশি দিচ্ছেন। ক্লিনিক্যাল সাব্জেক্ট এর অধ্যাপক চিকিৎসকদের পাশাপাশি প্রি ও প্যারা ক্লিনিক্যাল বিষয়ের অধ্যাপক চিকিৎসক এরাও এগিয়ে আসছেন অবস্থা সামাল দিতে। সার্জ ক্যাপাসিটি বাড়াতে।
আমরা জেলায় চাকরি করি। আমরাও সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পরিষেবা সচল রাখতে। জেলার দুটি মেডিক্যাল কলেজের MSVP অনুরোধ করা মাত্র আমাদের বিভিন্ন সেকেন্ডারি টায়ারের হাসপাতাল থেকে দশ জন চিকিৎসককে আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি দুটি মেডিক্যাল কলেজে। তারা হাসিমুখেই গেছেন ও কাজ করছেন। যারা রয়ে গেলেন, তারাও হাসিমুখে এই ফাঁক ভরাট করার চেষ্টায় আছেন। এদের অনেকেই আমার মতো কর্মবিরতিটা আন্দোলনের ফর্ম হিসেবে পছন্দ করেন না। কিন্তু এই আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হ্যাঁ। এটা ঠিক যে একদিনের একঘণ্টার প্রতীকী প্রতিবাদ ছাড়া আমাদের জেলার সরকারি চিকিৎসকরা বিরাট কিছু করেন নি সংগঠিত ভাবে। কিন্তু তারাও সিনিয়র হিসেবে এইভাবেই জুনিয়রদের পাশে আছেন। কারণ তারা জানেন যে এই আন্দোলনটাকে ভেঙ্গে দেয়ার অপচেষ্টায় যারা যুক্ত তাদের মোক্ষম হাতিয়ার হল রুগী পরিষেবায় ঘাটতি এই আওয়াজটা তুলে দেওয়া বদনাম করা। তাই এর মোকাবিলায় পরিষেবা সচল রাখার জন্য, রেফার যথা সম্ভব কম করার জন্য জেলার ছোট ছোট হাসপাতালের আমার সহকর্মীরা এভাবেই দ্বিগুণ পরিশ্রম করে সার্জ ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে এভাবেই আন্দোলনের পাশে আছেন।
প্রফেসর বিশ্বাস আজ বেঁচে থাকলে খুশি হতেন তারই সব ছাত্র-ছাত্রী কিভাবে তাদের অধিতবিদ্যা প্রয়োগ করে চলেছে। গতকাল শিক্ষক দিবসে কিছু লেখার সময় পাইনি। আজ আমার জীবনে পাওয়া অন্যতম সেরা শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানালাম। আমি জানি স্যার বেঁচে থাকলে তাঁর অশক্ত শরীর নিয়েও আজ আর জি কর হাসপাতালে হাজির হতেন, বলতেন, তোমরা সবাই দেখে নাও কাকে বলে সার্জ ক্যাপাসিটি।
সার্জ বোঝোস হালার পো হালা? ঢেউ রে ঢেউ। ভাসাইয়া দিমু এক্কেবারে। আমাগো লগে লাগতে আসিস না।
Satti! Professor Ranadeb Biswas Sir er abhab aj bhishon mone hocche
খুবি ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে.
😍😊
এক্সিলেন্ট লেখাটা ।মন ভরে গেলো।
মাঝে মাঝে না মন কেমন করে এতো।
যে মনে হয় কী যেন এক সম্পূর্ণতা পেলো না পেলাম না।সেইই আর কী।…..খুব ভালো লাগলো।
ভালো থেকো।
এ কি গো!!!!!😔😴😮💨😐
কিছুই জানি না তো!😪
Speedy recovery dear.💕🩵
Comrade ✊️🙏