Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

সিম্ফনি

IMG_20210818_001536
Dr. Dipankar Ghosh

Dr. Dipankar Ghosh

General Physician
My Other Posts
  • August 18, 2021
  • 8:36 am
  • No Comments

বিকেলে ক্লাস শেষের পরে তমোঘ্ন কলেজ ক‍্যান্টিনে এসে বসেছিলো। হাতে একটা মাউন্টেন ডিউ। মাঝে মাঝে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে। বগা এসে বললো” কিরে আজ রিহার্শ করবি না?”

আরেকটা চুমুক দিয়ে বোতলটা বগার দিকে এগিয়ে দিলো “আজ বহুৎ চাপ গেছে ভাই তাছাড়া গীটার আনিনি তো ……”

বগা বোতলে একটা চুমুক দিলো বললো “চল ভাই ভাও নিস না। আরেকটা গীটার ম‍্যানেজ হয়ে যাবে। চল ভাই এটা তো লাস্ট ইয়ার… চ চ”

ওদের তিন জনের ব‍্যান্ড। বান্ধব গাঙ্গুলি, তমোঘ্ন আর ঋজু। সেদিন কিন্তু রিহার্সালে নতুন একজন ছিলো। এক ব‍্যাচ জুনিয়র অন্নপূর্ণা জয়রামন- থার্ড ইয়ার। বেশ মেলোডিয়াস গলা। গীটারে কর্ড দিয়ে ব‍্যাপক গান করে। ব্লুজ রক ওয়েস্টার্ন ফোক – সব‌ই। তমোঘ্নও খুবই ভালো গায়। ফ্রেশার্সের রিহার্সাল। বান্ধব গাঙ্গুলি বা বগা আছে ড্রামসএ – ও কেমিক্যাল‌-এর। এটা ওদের ওয়েস্টার্ন গ্রুপ।ঋজু পিয়ানোয়। এখন অন্নপূর্ণা এসে যোগ হলো। ভোকালিস্ট। ওরা ফ্রেশার্সে একটাই গান গাইবে। ঠিক হলো জন মেয়ারের স্টপ দ‍্য ট্রেইন।

ওদের পরমা ম‍্যাম বললেন “বাংলাতেও এধরনের গান আছে। এ যাত্রা মোর থামাও বলে রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে। সলিল চৌধুরীর‌ও একটা গান আছে এই রোকো পৃথিবীর গাড়িটা থামাও – আমি নেমে যাবো আমার টিকিট কাটা অন্য কোনও খানের … ”

ঋজু একটু গম্ভীর টাইপের ছেলে, ও বাধা দিয়ে বললো
“ম‍্যাম এটা আমাদের বেশী পছন্দ। এটা বেশ রীদমিক – ড্রামসে ট্রেনের শব্দটা ভালো আছে, এই গানটা হলো আমাদের এই জার্নিটা আর ভালো লাগছে না আমরা আবার ফিরে যেতে চাই পুরোনো দিনে”

পরমা ম‍্যাম ওদের বন্ধুর মতো – আই টির। মাঝে মাঝে ওদের গান শুনতে চলে আসেন। “চ আজ বাইরে কফি খেতে যাই”

“সিসিডি?”

“দ‍্যাটস ফার ফ্রম দ‍্য হস্টেল, লেটস সিট ইন দ‍্য কফি পাব ইটস নিয়ারার। কাছের থেকে কাছে ইটস কুল ট‍্যু”

কফি পাব থেকে বেরিয়ে দুজনে কলেজের মাঠে।অন্নপূর্ণার গীটারটা তমোঘ্ন ক‍্যারি করছিলো। মাঠে বসে কভারটা খুলে টুংটাং করতেই অন্নপূর্ণা গান ধরলো। গিম্মি গিম্মি গিম্মি- অ্যাবার গান। যদিও দুজন মেয়ের গাওয়া তবু তমোঘ্ন গলা মেলায় – হার্মোনাইজ করে। অসুবিধা হয়না -খুব‌ই চেনা গান। দুজনে দুজনের হাত ধরে হোস্টেলে চললো।

“ইউ মে কল মি আনু।”

“ওক্কে ডান”

আনু হাত নাড়ে “স‍্যাটারডে ইভনিংএ চ’ মুভি দেখি”

তমোঘ্নর রাতে ঘুম আসে না । কি বুদ্ধিমতী আর অসাধারণ সুর গলায়। উঠে বসে প্রীতমের কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে খায়। বারান্দায় একলা বসে বসে। ফ্রেশার্স তো এসেই গেলো আর মাত্র একটা মাস। এর মধ্যে একদিন প্রপোজ করতে হবে। শি ইজ টুউ গুড। তমোঘ্নর হাত ঘামে।

শনিবার রাতে সিনেমার শেষে তমোঘ্ন আর আনু শপিং মলে হাঁটছিলো। বলা যায় উইন্ডো শপিং করছিলো। আনু হানি টি আর অ্যাপল পাই অর্ডার দিলো। খাওয়া শেষে নিজের কার্ড দিয়ে বিল পে করলো।

“শাট আপ ইয়ার, য়‍্যু হ‍্যাভ পেড ফর দ‍্য টিকেটস।”
তমোঘ্ন মানুষের সমতায় বিশ্বাস করে – স্বাধীনতায়‌ও।সেদিন দুজনে কতটা পথ পাশাপাশি হেঁটেছে খেয়াল নেই।

“আরে য়‍্যার ইটস টেন পাস্ট ফিফটিন। হস্টেলকা গেট বন্ধ্ হো যায়েগা”

তমোঘ্ন ঘাড় নাড়ে। সময় কখন যে পার হয়ে যায় খেয়ালই থাকে না। “ওক্কে বাই আনু গুন্নাইট”

“সি ইউ” আনু একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে হস্টেলের দরজা দিয়ে অন্তর্হিত হয়। তমোঘ্ন পকেটে হাত পুরে স্টিভি ওয়ান্ডারের গান শিস দিতে দিতে নিজের মেসের দিকে চলতে থাকে।

“তমোঘনবাবু তুমার এতো দেরি হলে তো খাবার সব ঠান্ডা করে যাবে”

তমোঘ্ন উত্তর না দিয়ে ঢাকা তুলে খেতে বসে যায়। ঠান্ডা রুটি ডাল আর সবজি। নির্বিকার খেয়ে নেয়। অন্য দিন হলে ওদের মেসের ম‍্যানেজার প্লাস সর্বঘটের কাঁঠালি কলা যুধিষ্ঠিরদার সঙ্গে চিৎকার করতো ।

আনু আর তমোঘ্ন ক‍্যান্টিনে সময় কাটায়। মাঝে মাঝে কফি শপ। কখনও বা শপিং মলের গাছতলায় বসে গ‍্যাঁজানো। তমোঘ্নর আর প্রপোজ করা হয়নি। একসাথে হাতে হাত হাঁটা হয়েছে বহু পথ। জোকস শেয়ার করা হয়েছে। হাহা হিহি হাসি হয়েছে। প্রপোজ করাটা তমোঘ্নর একটা হাস‍্যকর রকমের ন‍্যাকামি মনে হয়েছে। আর কতটা পথ হাঁটলে দুটো মানুষ এক হয়? বব ডিলান সেটা বলে নি। তমোঘ্ন বাঁ হাতে সিগারেট ধরে উপুড় হয়ে শুয়ে হোয়াটস‍্যাপে মেসেজ করতে থাকে।

সুধা টয়লেটে গেছিলো- এতোক্ষণ ল‍্যাপটপে কাজ করছিলো। সুধাময় এই মেসে ওর রুমমেট। বললো
“দে ভাই লাস্ট টানটা মেরে শুয়ে পড়ি – তুইও এবার ঘুমো প্রায় দেড়টা বাজে”

অবশেষে এসে গেলো ফ্রেশার্স ওয়েলকাম অনুষ্ঠান। পুরো মিস-ম‍্যানেজমেন্টের চূড়ান্ত। থার্ড ইয়ারের পার্টি করা ছেলেগুলো স্টেজ ছাড়বে না। ওদের ছেলেমেয়েরা গ্রুপে স্কিট করছে। এখন‌ই প্রায় সাড়ে নটা বাজে। ওদের কখন শেষ হবে তার ঠিক নেই। অথচ দশটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতেই হবে। তমোঘ্ন মুড অফ করে গীটার নিয়ে ফেরৎ যাচ্ছিল। ঋজু ওকে দাঁড় করালো। অন্নপূর্ণা তমোঘ্নদের ব‍্যাচের এক হীরো – শমীককে ধরে থার্ড ইয়ারের ছেলেমেয়েদের স্টেজ থেকে নামালো। তমোঘ্ন আর ঋজু দুজনেরই মুড পুরো ফিউজ হয়ে গেছিলো।গাইতে হয় গাইলো। হাততালি তো হলোই না বরং প্রচুর আওয়াজ খেতে হলো।

“ইন্টেনশনালি ইউ ট‍্যু পারফর্মড য়‍্যোর ওয়র্স্ট। জাস্ট টু স্পয়েল মাই শো”

“দ‍্যাখ আনু মিউজিক একটা ইমোশনাল সাবজেক্ট ..দেখলি তো গান গাইবার আর কোন অ্যাটমস্ফিয়ার‌ই ছিলো না” ঋজু অন্নপূর্ণাকে বোঝানোর চেষ্টা করে।

“তোমার তো এই সিচুয়েশনটা জিততে হবে তবে তো আ রিয়েল আর্টিস্ট। ইউ টু জাস্ট ডিস‍্যাপয়ন্টেড মি …. বাই” ক্রুদ্ধ অন্নপূর্ণা হাঁটা দেয়।

তমোঘ্ন ভেবেছিলো আনুকে হস্টেলে এগিয়ে দেবে একটু বোঝাতে চেষ্টা করবে কিন্তু ও শমীক মানে ঐ হীরোর সঙ্গেই চলে গেল। তমোঘ্ন ওর যাওয়ার রাস্তায় তাকিয়ে ছিলো। আনু ফিরে তাকায় নি।

ঋজু ওর হাত ধরে টান দেয় “চ ভাই চ.. তোর খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে”

“শমীক একটা ড্রাঙ্কার্ড ফ্লার্ট” তমোঘ্ন চোয়াল শক্ত করে বাস্টার্ড। আগামীকাল আনুর সঙ্গে কথা বলবে।

রাতটা ভালো কাটেনি তমোঘ্নের। সকালে উঠে- শেষরাতে ঘুম এসেছিলো – তমোঘ্ন কলেজ ক‍্যান্টিনে বসে র‌ইলো। অন্নপূর্ণা সাধারণতঃ হোস্টেল থেকে এসে এক কাপ কফি খেয়ে তারপর ক্লাসে যায়। সাড়ে দশ। অন্নপূর্ণা হোস্টেলের মেয়েদের সঙ্গে সোজা ক্লাসে চলে গেল। তমোঘ্ন আরেক কাপ চা বলে’ পকেট থেকে সিগারেট বার করলো। ধীরে ধীরে অনেকক্ষণ ধরে সিগারেটটা টেনে ক‍্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।

মিহিরদা হাঁক পাড়লো “বাবু খাতায় লিখে রাখবো নাকি?”

তমোঘ্ন ঘাড় নাড়লো। লিখে রাখো। কলেজ গ্রাউন্ডে বড় একটা জামরুল গাছের তলায় দুহাত মাথার তলায় দিয়ে হাঁটু দুটো ওপরে ভাঁজ করে শূন্য মনে শুয়ে র‌ইলো। একটু পরে পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে আনুকে মেসেজ টাইপ করতে থাকে “দেয়ার হ‍্যাড বীন সাম মিস‌আন্ডারস্ট‍্যান্ডিং বিটুইন আস। লেটস টক টুগেদার।”

মেসেজ ডেলিভার্ড কিন্তু খোলা হয় নি। তমোঘ্ন আর একটা সিগারেট ধরায়। আনু রাগ করেছে। ও বড্ড ওভার রিঅ্যাক্ট করে। সিগারেট শেষ হতে ওটা পাশের ড্রেনে টুসকি মেরে ফ‍্যালে। তারপর আবার মোবাইল খোলে।এখন সাড়ে এগারোটা। আনুদের ক্লাস শেষ। ও রিং করে। মোবাইল বেজে যায়। আপনি যাকে ফোন করেছেন তিনি এখন ব‍্যস্ত আছেন। দয়া করে একটু পরে ফোন করুন।

বুড়ো জামরুল এক অস্থির যুবককে তার ডালপালা মেলে ছায়া দ‍্যায়। বুকে টেনে রাখে। তমোঘ্ন জামরুলের ছায়ায় শুয়ে থাকে। শুয়েই থাকে। ক্ষিদে পায় না। সাড়ে তিনটে।রোদ্দুর লী লী করছে। আনুদের ক্লাস শেষ হয়েছে। তমোঘ্ন উঠে ক‍্যান্টিনে যায়। আনুদের ব‍্যাচের বাকি সবাই বেরিয়ে এসেছে। তমোঘ্ন এগিয়ে গিয়ে আনুকে দেখতে পায়। ও এগিয়ে যায় । আনু ওকে এড়াতে অন্য দিকে সরে যায়।তমোঘ্ন ফোনে রিং করে। আনু ফোনটা প‍্যান্টের পকেট থেকে বার করে জাস্ট কেটে দ‍্যায়। স্তম্ভিত তমোঘ্ন তাকিয়ে থাকে। শমীক আসছে আনুর কাছে।

“বীচ। বীচ। বীচ। দ‍্য বীচ ডিচড মি”  তমোঘ্নের ইচ্ছে করে চিৎকার করতে- ইচ্ছে করে শমীককে, আনুকে ছিঁড়ে টুকরো করে দিতে। ও কিচ্ছু করে না। অন্ধের মতোন ফিরে যায়। ফিরে যায় মেসের ঘুপচি ঘরে।

“ও গড হোয়াই এভরিথিং হ‍্যাপেন্স টু মি?” তীব্র ঈশ্বর অবিশ্বাসী তমোঘ্ন কাকে প্রশ্ন করে? আনুর সঙ্গে ওর জীবনের সমস্ত মিসহ‍্যাপ শেয়ার করার ছিলো যে? কি হলো আনুর?

“তমোঘনবাবু চা বানাবো?”

তমোঘ্ন উত্তর দেয় না । ঘাড় নেড়ে না বলে। “যুধিষ্ঠিরদা চলে যাও” ও ঘরে বসে মোবাইল ডায়াল করে।

আনু ফোন রিসিভ করে। “প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি এনিমোর। ম‍্যায় বিজি হুঁ। বেকারকি বাতেঁ মুঝে না পসন্দ সমঝে?” পাথরের মতো হিমশীতল গলার আওয়াজ তমোঘ্নের হৃদয় চিরে ভেতরে ঢোকে।

ফোন কেটে যায়। তমোঘ্ন আবার ফোন করে। ফোন কেটে যায়। আবার ফোন করে….। করেই যায়। প্রতিবার‌ই যান্ত্রিক উত্তর আসে আপনি যে নম্বরে ফোন করেছেন সেটি এখন ব‍্যস্ত আছে কিছুক্ষণ পরে……

কতক্ষণ পরে? কতদিন? গত একমাস…প্রথম চুম্বন… হাতে হাত রেখে হাঁটা সব মিথ্যে? তমোঘ্ন দেখতে পায় শমীকের এনফিল্ডের পেছনে আনু… চুল উড়ছে .…শরীর ঠেকে আছে.. এনফিল্ডের প্রবল শব্দে তমোঘ্ন চমকে যায়। যুধিষ্ঠিরদা চা নিয়ে টেবিলটা টানছে।

ওহ্ গড লেম্মি বি এ্যালোন। আমাকে একটু একা…একটু একা একা থাকতে দাও। না তমোঘ্ন চিৎকার করে না। উঠে বেরিয়ে যায়। যুধিষ্ঠিরদা ডাকতে থাকে “বাবু…. ও তমোঘনবাবু ফিরে এসো”

তমোঘ্ন আচ্ছন্ন অনির্দেশে চলতে চলতে একটা বাজারে এসে পৌঁছয়। ঝোলানো এলসিডির আলো- কাটা পেঁয়াজ আর ভাজাভুজির গন্ধ- বমি আসে-চিৎকার চ‍্যাঁচামেচি- মাছের দরদাম-কাঁচা মাছমাংসের গন্ধ- ঝোলানো মাংস- ঝুলে থাকা শরীরের মতো প‍্যান্ট- তমোঘ্নর অসহ্য লাগে- ওখান থেকে একটু পাশের দিকে সরে যায়- সামনে একটা সবুজ উজ্জ্বল আলো- উঁচুনিচু পাথুরে রাস্তায় ও হাঁটতেই থাকে- পেছনের আলো তীব্রতর হয়- পেছনের এনফিল্ডের হর্নের আওয়াজ ওর কান ফাটিয়ে দ‍্যায়- ও দুহাতে কান চেপে ধরতে যায়- কে য‍্যানো ওর হাত ধরে প্রবল হ‍্যাঁচকা টান দ‍্যায়। তমোঘ্ন পড়ে যায় ছিটকে – টানের জোরে মাটিতে মাথা ঠুকে যায়- কনুই কেটে যায়।

ওর সামনে দিয়ে ঝমঝম করতে করতে দ্রুতগামী আলোর সারি আর একঝাঁক হতক্লান্ত মানুষ নিয়ে পেছন থেকে আসা একটা লোক‍্যাল ট্রেন তীব্র গতিতে ছুটে যায়। ও উঠে হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে থাকে “আমাকে একটুখানি একা, একা থাকতে দাও।”

ভিড় জমে… মুখে মদের গন্ধ আছে কিনা পরীক্ষা হয়। ড্রাগ এ্যাডিক্ট? গুঞ্জন বাড়ে। একজন মাঝবয়সী মানুষ এগিয়ে এসে বলে “এসো ভাই চা খাও”

ও মাথা নাড়ে – না।

লোকটা ওর আহত ডানা ধরে রেল লাইনের পাশে একটা চায়ের দোকানে বসায়। হুকুমমাখা সুরে বলে “চা খাও । জল ….” জলের জগটা এগিয়ে দ‍্যায়।

তমোঘ্ন ঢকঢক করে জল খায় চা খায়। লোকটা চায়ের দাম দিয়ে দ‍্যায়। “একটু বসে’ তারপর ফিরে যাও হে ”

তমোঘ্ন কোথায় ফিরবে? এ ট্রেনে একবার চাপলে আর ফেরা যায় না। প্লিজ স্টপ দ‍্য ট্রেন ….

স্টেশন থেকে নেমে অন্ধকার- একটা দুটো আলো- লাস্ট ট্রেন চলে গেলো- ফাঁকা স্টেশন চত্বর। ইতস্ততঃ কুলিরা প্ল‍্যাটফর্মে গামছা পেতে ঘুমোচ্ছে। একটা রিক্সাওয়ালা ওর দিকে চেয়ে দেখলো কিন্তু ওর নোংরা কাদা ময়লা মাখা জামাকাপড় আর কাটা ছেঁড়া শরীর দেখে উৎসাহ দেখালো না। য‍্যানো পুরোনো স্বপ্নে পাওয়া রাস্তায় তমোঘ্ন হেঁটে চলে। হেঁটে চলে। একটা বাড়ির গেট। মাধবীলতা তার ডালপাতা দিয়ে গেটটা প্রায় পুরো ঢেকে দিয়েছে।থোকায় থোকায় ফুল। গন্ধটা হঠাৎ ওকে চমকে দিলো।গেটের বাঁ পাশে কলিং বেল। তমোঘ্ন বাজাতেই থাকলো – যতক্ষণ না এক বৃদ্ধা এসে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চশমাটা ঠিক করে ওকে চিনতে পারলো।

“এসো ভাই ভেতরে”

তমোঘ্ন ঢুকলো। খটাং করে গেটে তালা পড়লো। বুড়ি এসে একটার পর একটা ঘরে আলো জ্বালতে লাগলো। ও নিজের ঘরে ঢুকলো।ওর পুরোনো দিনের ছবি। শান্তিপিসি ঝেড়েপুঁছে পরিস্কার করে রেখেছে। শান্তিপিসি এক এক করে জানালা খুলে দিলো। পেছনের বাগান থেকে ফুলের গন্ধ আসছে।

“জুঁই ফুল তোমার ঠাম্মার লাগানো ..”

তমোঘ্ন জানালার গ্রীল ধরে কপালটা গ্রীলে চেপে অন্ধকারটা ভেদ করে দেখতে চেষ্টা করে – সেই তীব্র চেষ্টায় ওর দু চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। ও দাঁড়িয়ে থাকে। প্রথম হেমন্তের শিরশিরানি ছাড়াও একটা ঠান্ডা ভেজা হাওয়ায় ওর কাঁপুনি ধরে। গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে ও কাঁপতে থাকে চোখ বেয়ে জল পড়তে থাকে। একটা অস্ফুট শব্দে ওর ঠোঁট ফুলে ওঠে।

“গরম জল দিয়েছি ভাই নোংরা জামা কাপড় ছাড়ো। তোমার হাফ প‍্যান্ট রাখা আছে বাথরুমে”

হঠাৎ খেয়াল হয় খুব টয়লেট পেয়েছে। কমোডে জলের আয়রন জমে দাগ হয়ে গেছে। কতো দিন পরে এলো।ঈষৎ গরম জল গায়ে ঢালে। কপালে হাতে কাটা জায়গাগুলো জ্বালা করে। পুরোনো গামছাটা নিয়ে রগড়ে গা মোছে। বেরিয়ে এসে দেখে শান্তিপিসি রুটি আর তরকারি সম্ভবতঃ ওর নিজের সকালের জলখাবারটা গরম করে দিয়েছে।

“খাবো না” ও আবার জানালার পাশে গিয়ে বসে। বাইরে মেঘ করছে। একবার বিদ‍্যুৎ চমকালো। শান্তিপিসি বেডকভারটা তুলে বিছানা ঝাড়ছে। বালিশ রাখার শব্দ পেলো। এগুলো অন‍্যরকম শব্দ – বহুবার শোনা – চেনা শব্দ। ও তাকালো না। তাকাবার দরকার হলো না।

“খাবারটা নিয়ে যাও এখন খাবো না”

শান্তিপিসি যায় না। রুটিটা ছিঁড়ে ভেতরে তরকারির পুর দিয়ে মুড়িয়ে মুখের কাছে ধরেই থাকে। আগের মতোন।তমোঘ্ন হাঁ করে। পুরোনো স্বাদ। বাসি রুটি আর আলু পটলের তরকারি। প্লেট নিয়ে পিসি চলে যায়।
“শুয়ে পড়বা আমি এসে মশারি টানিয়ে দেবো”

তমোঘ্ন সিগারেট ধরাতে গিয়ে ধরায় না। শান্তিপিসি এসে মশারি টাঙাচ্ছে। “তোমার এটা আমি মুছে মুছে রাখি এখন আর বাজনা বাজাও না?”

তাকিয়ে দেখে ওর পুরোনো গিবটোনের গীটারটা। ওর পড়ার টেবিলে একটা চাদর মুড়িয়ে রাখা আছে।
শান্তিপিসি চলে যায়। ও একটা সিগারেট ধরায়। আলমারি খুলে একটা পুরোনো দিনের প্রিয় টি শার্ট বার করে পরে নেয়। রাত ঝিমঝিম করতে থাকে। দূরে দূরে দু একটা কুকুর ডেকে ওঠে। জামা প‍্যান্ট থেকে ন‍্যাফথালিনের গন্ধ বাগানের জুঁই গেটের মাধবীলতার গন্ধ মিলে ওর আচ্ছন্ন লাগে। একটা বাড়ির জানালা দিয়ে আলো দ‍্যাখা যায়। হাওয়ায় পর্দা ওড়ে। মাঝে মাঝে বিদ‍্যুতের আলোয় দূরে দূরে ঘুমন্ত বাড়িদের অবয়ব বোঝা যায়। একটা প‍্যাঁচা অক্লান্ত ডেকে যায়। ওর মন এখন শূন্য। হিসেবে মিলছে না। সব হিসেব গন্ডগোল হয়ে গেছে।

আর কলেজে যাবে কিনা জানে না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দ‍্যাখে ঋজুর মিসকল। সময় দ‍্যাখাচ্ছে রাত একটা একুশ। বাইরের অন্ধকারে আনুর মুখটা ভেসে যায়। ইলেকট্রিক তারে একটা লম্বা ল‍্যাজ‌ওয়ালা পাখি দোল খায়। ক্রমশঃ রাত শেষ হয়ে আসে। একটা দুটো পাখি ডাকতে শুরু করে। একটু ঝাপসা আলোয় বাগানের গাছপালা আবছা আবছা বোঝা যায়। হঠাৎ হু হু করে হাওয়া বয়। আশেপাশের বাড়িতে জানালায় দুমদাম শব্দ হয়। বিদ‍্যুতের আলো আকাশে ঘনঘন জ্বলে ওঠে।বগুমগুম করে বাজ পড়ে। দুচার ফোঁটা বৃষ্টি টুংটাং করে কাচের জানালায় আওয়াজ তোলে।বচারপাশে পাখিরা ত্রস্ত ডেকেই যায়। একটা কাঠবেড়ালি ওর সামনে এসে দু পায়ে দাঁড়িয়ে চিড়িরররর চিড়িক ডাক তোলে। আকাশের ডান কোণ থেকে বাঁ কোণায় ড্রামের দ্রিমিদ্রিমি গড়িয়ে যায়। কোথায় একটা গরু ডাকে।

হঠাৎ মনে হলো ডাকটার স্কেলটা এফ। আনমনে গীটারে হাত চলে যায়। সুর না বাঁধা গীটারে তমোঘ্ন এফ স্কেল খুঁজতে থাকে। ঝড় তখন শিষ দিয়ে দিয়ে বয়ে চলেছে। এফ মাইনর কোথায়? হেভি মেটালের ক্রোধে বেজে ওঠে এফ মাইনর। পাগলের মতো গীটারের পিক চলছে – আঙ্গুল চলছে। ঝড় কমে যায়। শুরু হয় অঝোর বৃষ্টি অজস্র পাখিদের চিৎকার। ক‍্যারাবিয়ান ফ্লুটের মতো থেমে থেমে ডাকে পাখিরা। পাইপ বেয়ে বেয়ে জল পড়ে।ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়। গাছের পাতায় বাড়ির ছাতে আল্লারাখার তবলা। রেইন ওয়াটার পাইপে সেতার বাজে।জি মেজরে মেলডি বাজায় তমোঘ্নের আঙ্গুল। এই পুরোনো গীটারে এই সিম্ফনির স্কেলটা ওকে খুঁজে পেতেই হবে।

PrevPreviousবিষময় আশিবিষ
Nextএক পল্লব-গ্রাহীর সংস্কৃতি চর্চাঃ কবিতার জন্মান্তর… প্যারোডিNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত পোস্ট

ব্যঙ্গের নাম অগ্নিপথ (২)

July 4, 2022 No Comments

আগের দিন বয়সের কথা বলেছিলাম। এবার একটু অর্থনৈতিক বিষয়ের দিকে চোখ রাখা যাক। যা জানানো হয়েছে তাতে অগ্নিবীরেরা প্রথম বছরে পাবেন ৩০ হাজার টাকা প্রতি

ট্রাইকটিলোম্যানিয়া

July 4, 2022 No Comments

একটি সহজ বিষয় নিয়ে লিখবো। ধরা যাক- হঠাৎ রাস্তায় যেতে যেতে আপনি দেখলেন – একজন লোক প্রতিদিন বসে বসে নিজের চুল টেনে তুলছে! যখন যেখানে

ডা বিধান চন্দ্র রায়ের প্রতি এক জনস্বাস্থ্যকর্মীর শ্রদ্ধার্ঘ্য

July 4, 2022 No Comments

এক পাঠক বন্ধু ডা: বিধান চন্দ্র রায়কে নিয়ে লিখতে অনুরোধ করেছেন। তাই এই লেখা। এই লেখা রাজনীতিবিদ বিধানচন্দ্রকে নিয়ে নয়, এই লেখা প্রশাসক বিধানচন্দ্রকে নিয়ে

ডক্টরস’ ডে-তে কিছু ভাবনা-চিন্তা

July 3, 2022 No Comments

আজ ডক্টর্স ডে। ডাক্তারদের নিয়ে ভালো ভালো কথা বলার দিন। ডাক্তারবাবুদেরও নিজেদের মহান ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভের দিন। দুটিই বাড়াবাড়ি এবং ভ্রান্ত। কেননা, স্রেফ একটি বিশেষ

কেন? প্রথমাংশ: ছ’তলার রহস্য

July 3, 2022 No Comments

~এক~ হাতের বইটা নামিয়ে রেখে মিহির গুপ্ত দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকালেন। পৌনে একটা। ঘরে একটাই রিডিং ল্যাম্পের আলো। নিভিয়ে দিলেন। বাইরে ঝিমঝিমে অন্ধকার। শহর হলে

সাম্প্রতিক পোস্ট

ব্যঙ্গের নাম অগ্নিপথ (২)

Dr. Swastisobhan Choudhury July 4, 2022

ট্রাইকটিলোম্যানিয়া

Smaran Mazumder July 4, 2022

ডা বিধান চন্দ্র রায়ের প্রতি এক জনস্বাস্থ্যকর্মীর শ্রদ্ধার্ঘ্য

Dr. Samudra Sengupta July 4, 2022

ডক্টরস’ ডে-তে কিছু ভাবনা-চিন্তা

Dr. Bishan Basu July 3, 2022

কেন? প্রথমাংশ: ছ’তলার রহস্য

Dr. Aniruddha Deb July 3, 2022

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

399779
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।