এটা একটা অতিমারী পরিস্থিতি, যেটা অভূতপূর্ব না হলেও, ভয়ঙ্কর!
বিশ্বে এ যাবৎ প্রায় ১২ কোটি মানুষ কোভিডের কবলে পড়েছেন! প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে চব্বিশ লক্ষ মানুষ।
গতকাল সারা দেশে ২৭৫১২ জন নতুন রোগী ধরা পড়েছেন। মারা গেছেন ১৫৭ জন! ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০ (২৭৩৩৬ )-এর পর এই প্রথম এক দিনে এতো রোগী ধরা পড়লেন।
দ্বিতীয় ঢেউ বলার সময় এসেছে কি না তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এই প্রবণতা যথেষ্ট আশঙ্কার।
অনেক হাসপাতালে আবার কোভিড আইসিইউ এবং এইচডিইউগুলি ভর্তি হয়ে থাকছে, কোভিড আইসিইউ বা এইচডিইউ-তে বেড পাওয়া যাচ্ছে না, পাওয়া যাচ্ছে না ফ্রিতে ভেন্টিলেটর।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীর দল, সময়ের সঙ্গে এক অসম লড়াই লড়ে আমাদের হাতে এনে দিয়েছেন হাফ ডজন কার্যকরী ভ্যাকসিন! এতো তাড়াতাড়ি কোনো টীকা উদ্ভাবন থেকে প্রয়োগ মানবসভ্যতায় এই প্রথম! আর সেটাও আপৎকালীন প্রয়োগ!
তাই কি বলা হয়েছিল, কোন টীকা কতখানি কার্যকারী তথ্যগত সে সব কুটকাচালির সময় এটা নয়?!
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে কোন প্রতিষেধকই কিন্তু একশ শতাংশ কার্যকরী নয়! কোভিডের ক্ষেত্রেও তাই! এটা একটা ইভলভিং বা ক্রমস্ফুটায়মান পরিস্থিতি!
আমরা এখনো জানি না এটা মারীর শুরু, শেষ না মাঝামাঝি!
সবিনয়ে বলি এটা অন্যমত, সহমত, বহুমত, ভিন্নমতের সময় নয়! বিতর্ক চলুক কিন্তু নিজের, নিজের পরিবার পরিজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারপর!
অনেকে বলছেন ভ্যাকসিন নিয়েও কেস বাড়ছে কেন?
কোন সময়ে কোন দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ হচ্ছে সেটাও বিচার্য!
মার্কিন মুলুক আর ইংল্যান্ডে টিকাকরণ শুরু হয় তাদের ভয়াবহ দ্বিতীয় বা তৃতীয় তরঙ্গ শীর্ষে!
সেসব দেশে ভ্যাকসিনের পর কেস সংখ্যা নেমে এসেছে হুহু করে!
আমাদের দেশে, মধ্যপ্রাচ্যে, টীকাকরণ শুরু হয় মারীর প্রথম তরঙ্গ শেষে!
আমাদের দেশে জনসংখ্যার মাত্র দেড় শতাংশ প্রথম ডোজ পেয়েছেন!
সমীক্ষা অনুযায়ী আমাদের দেশে জনসংখ্যার মাত্র এক চতুর্থাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনো কোভিড থেকে নিরাপদ নন।
আমাদের ১০ কোটি রাজ্যবাসীর মধ্যে টীকা পেয়েছেন মাত্র ২০.৩ লক্ষ জন টীকা পেয়েছেন সব মিলিয়ে। অর্থাৎ এঁদের মধ্যে কেউ একটিমাত্র বা কেউ দুটি ডোজ পেয়েছেন। আর পরীক্ষা হয়েছে ৮৭ লক্ষের কিছু বেশি মানুষের। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের দু সপ্তাহ পরই শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
তাই কেস সংখ্যা বাড়তে শুরু হওয়ায় গেলো গেলো রব তোলার কিছু নেই!
আর, কোভিডের ফিরে আসার মূলে কোভিড বিধি নিয়ে আমাদের গয়ংগচ্ছ মনোভাব!
রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে উপলক্ষে সব রাজনৈতিক দলের মিছিল মিটিং সমাবেশের প্রতিযোগিতায় কোভিড বিধি উধাও।
অংশগ্ৰহণকারী সাধারণ মানুষ, নেতা-নেত্রীরা, এমনকি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ, রক্ষীবাহিনীর অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, থাকলেও তা থুতনিতে নামিয়ে রাখাটাই রীতি হয়ে গেছে, দূরত্ববিধি মানার কোন লক্ষণ নেই। অর্থাৎ সংক্রমণ ছড়ানোর প্রতিটি কর্মই পালিত হচ্ছে এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি নানা বিষয়ে পরস্পরকে বিরোধিতা করলেও এই বিষয়ে সবদলই সহমত।
পাশাপাশি চলছে টীকাকরণ!
এখন এটাই দেখার আমরা দ্বিতীয় তরঙ্গকে কতখানি বিলম্বিত বা খর্বিত করতে পারি!
বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠদের অতি অবশ্যই টীকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
নিজে পঁয়তাল্লিশ ঊর্দ্ধ হলে, কোমর্বিডিটি থাকলে, প্রথম সারির যোদ্ধা হলে নিজে অবশ্যই টীকা নিন।
আর হ্যাঁ, নাক ঢেকে মাস্ক পড়ুন, দুগজের শারীরিক দূরত্ব মেনে চলুন, হাত জীবাণুমুক্ত রাখুন ।
এটা একমাত্র উপায়, অস্তিত্বরক্ষার !