আমার একটি জড়বুদ্ধি ছাত্র আছে| বড় ভালোবাসত সে মনীষী ও দেশনেতাদের গল্প শুনতে| অন্য পড়া তার অল্প বুদ্ধি দিয়ে মনে রাখতে না পারলেও রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কি গান্ধীর জীবনকথা পরম মমতায় সাজাতো তার স্মৃতিভাণ্ডারে|
যখনি জিজ্ঞেস করতাম গড়গড় করে বলত রবীন্দ্রনাথ কি নজরুলের জীবনের খুঁটিনাটি| কখনো বা তাঁদের ছড়া গান কবিতা| কী না অবাক হতাম!
ক্লাসে ছোট ছোট সরল বাক্যে কোনো না কোনো মনীষীর জীবন আলেখ্য সাজিয়ে দিতাম তাকে| এই ধরুন পাঁচ ছটি বাক্যের প্যারাগ্রাফ| আশ্চর্য কাণ্ড -– ছেলেটি প্রথম পাঁচটি বাক্যে অনায়াস থাকলেও প্রতিবারই হোঁচট খেত শেষ বাক্যে| যেখানে মনীষীর মৃত্যুর তারিখ লিখতাম|
কী রবীন্দ্রনাথ কী নজরুল! যার বেলাতেই হোক না কেন, মনীষীর মৃত্যুর সাল চক্ষে আসলেই কাঁপত| যেন ভূতের ভয় লেগেছে তার| কাঁপতে কাঁপতে একেবারে ডেস্কের তলায় লুকোত|
ছেলেটি বেশ ডাকাবুকো| হাঁকডাক দিয়ে ক্লাস জমাত নিজস্ব খোশমেজাজে| তাহলে? কবেকার মনীষীর মৃত্যতে কেন এতো কাতর এতো ভীত আমার বাচ্চাটা?
আজ বুঝি| Able বা কাবিল মানুষের চেয়ে ষাটগুণ দ্রুততায় এই “Differently Able” শিশু বুঝি বুঝে ফেলেছিল গান্ধী নেতাজির মৃত্যুতে দেশ ক্রমশ ছাইবে ভুতের দলে! আছড়ে পড়বে প্রেত| তার কটু বাস! জলহীন ভুতমেঘে ভরবে আকাশ| বিষম জলে খাদ্য খতম|
ওহ হো| আজ হয়ত আমার সেই দস্যি খোকা দুগুনা বিষম খাচ্ছে| মানিয়ে নে| চলমান ফোনের লেখাপড়ার সুবাস তোদের নাকে ঢুকবে না –এ সত্য বুঝে নে| অনলাইনের বাইরের লাইনে দাঁড়িয়ে থাক| থাকাটা প্র্যাক্টিস তো কর!
পায়ে ব্যাথা করছে –নারে? আয় আমার কোলে একটু আয়| চাপড় দিয়ে ঘুম আনি| আচ্ছা একটা গল্প বলি| শুনবি ঈশপের সেই গল্পটা? সেই যে সেই –বেশ কটা বোকা পাখির মাঝে অচঞ্চল বসে এক জ্ঞানী প্যাঁচা! তার নচ্ছার পরামর্শে বিব্রত বিহঙ্গ| শুনবি?
উফ! পায়ে কুটুস করে কামড়ালো ইঁদুর|
ইঁদুর বলল –ভাবিস না| উড়বে বোকা পাখিরাই|
এবার ও ঘুমিয়েছে| একটু দেখুন না– ওর বেলাইনে খাড়া থাকা পায়ের তাপ|
ছবি সৌজন্যে: স্মরণীয়া চক্রবর্তী।
সাম্প্রতিক কোনো রচনায় এমন রূপক পড়েছি বলে মনে হয় না। অসাধারণ লেখা হয়েছে।