ওহে ইতিহাসবিদ, ২০২০র কোভিড ভল্যুমটা আনো তো!
ওই যে কোণের দিকে রাখা বেশ মোটামতো বই,
কি হবে দিয়ে প্রাচীন আর মধ্যযুগের জ্ঞান অত,
স্কুলের ইতিহাসে বর্তমানের লড়াইয়ের চ্যাপটার ঢোকাবোই।
পড়ো, পড়ো, কি লেখা আছে.. ছবি দেওয়া আছে নিশ্চিত,
প্রথম পাতাতে কি? মাস্কের কালোবাজারি.. টেস্টের অভাব..
পি পি ই’র হাহাকার.. বিরোধীর রাজ্যতে ফিরে পাওয়া ভিত..
ধুত্তোর, এ তো নেগেটিভ সব! প্রশ্ন উঠলে বাবা কে দেবে জবাব,
উল্টাও তাড়াতাড়ি, এই পর্যায়টা বাদ দিয়ে দিতে হবে সন্তর্পণে,
বরঞ্চ লেখা হোক বিদেশীর আগমনে দ্রুত খাড়া করা দেওয়ালের কথা,
নাহ, থাক, ওটাতেও ক্লাস ডিভিশনের ধারণা হবে কচি মনে,
ইমেজের যুগ বাবা, খারাপ প্রশ্নগুলো না ওঠাই ভালো অযথা,
পরের পাতায় যাও। ওই তো, কি সুন্দর ছবি, সবাই থালা বাজাচ্ছে,
তার মানে লকডাউন শুরু। আহা, পরের ছবিটাতে সবাই নেভাচ্ছে আলো,
লেখো তাড়াতাড়ি। পরের ছবিতে যাই, ওকি অতগুলো লোক হেঁটে কোথায় যাচ্ছে,
ওটা কোন বাচ্চার ছবি? জামলো মকদম.. নাম যেন চেনা চেনা, চেপে যাওয়া ভালো,
মরে গেছে দেখছি যে! আহারে, যাক গে কি করা যাবে, সময়ই তো দায়ী,
পরের ছবিটা দেখি.. ওই তো ঘোষণা হচ্ছে রেশনে চাল ডাল বিলকুল ফ্রী তে,
ও ছবিটা লাল কেন? রক্ত ও রুটি পড়ে রেলের লাইনে, নিচে ক্যাপশন ‘পরিযায়ী’
আহ! উল্টাও উল্টাও, ওই তো সিনেমার হিরো হিরোইন লাইন লাগাচ্ছেন ফান্ডে দিতে,
ওটা বেশ ফলাও করে লিখো। দেশের নয়, দেশের চালকের কথাই তো ইতিহাস
এখানেও ব্যত্যয় না হয়। ছবি দেখি.. জনহীন শুনশান রাস্তা, বাহ, লকডাউন সফল,
বিশ্বে বৃহত্তম, লিখতে ভুলো না। দূষণ গিয়েছে কমে, বিশুদ্ধ বাতাস,
এসবও লিখতে পারো। ভালো যা যা পারো লেখা চাই অবিকল।
পাতা উল্টাও দেখি তারপরে কি..পজিটিভ এক লাখ থেকে দশ..এগোচ্ছে আরো..সতেরো..
ডাক্তার নার্সদের ঘরে যেতে বাধা.. কেউ উঠালো না করোনা রোগীকে…
পড়শিরা একঘরে করেছে পজিটিভ পরিবারকে.. মরে গেলে সৎকার নিয়ে নানা গেরো..
ধুত্তোর, ভালো কিছু খোঁজো, কালিঝুলি মাখা সব সংবাদ গিয়েছে কে লিখে,
ওই তো! খোলা হচ্ছে মন্দির মসজিদ, শপিং মল, ফুটপাতের মার্কেট,
জারি হচ্ছে নির্দেশ মাস্ক পরে কেনাকাটার! কিন্তু দোকানের ছবিতে ভিড় নেই একদম,
ওটা সংশোধন করতে হবে, মনে রেখো। ওই তো এসে গেছে বিদেশ থেকে যুদ্ধজেট,
কি সুন্দর দেখো, দেখলেই বুক কাঁপবে শত্রুর। লেখো, ওসব আসার পরেই চীনের সুর নরম..
কি বললে? ওটা তথ্যে নেই? কতবার বলেছি, যা লেখা থাকে সবই কি সত্য নাকি,
লেখো একটু রেখে ঢেকে। পাতা উল্টাও.. মোটামুটি কুড়ি লাখের দিনে ,
বেশ ঘটা করে ভগবানের ভিত হবে। ওটা একটু ভালোভাবে লিখতে হবে,
ঈশ্বরটা বোল্ড লেটারে, দেশবাসীর আবেগ জড়িয়ে আছে ওর সাথে,
কি বলছো? খিদে? বেকারত্ব? মুদ্রাস্ফীতি? তুমিও হয়েছো বেশ, বুঝবে যে কবে,
আজ অবধি ইতিহাস সত্যি বলেনি, তথ্যরা বদলায় ধর্মের হাতে।
ও কি! উঠলে কেন ইতিহাসবিদ? কি বলছো, যা ঘটেছে তাই লিখবে?
ইন্টারনেটের যুগ বলে ভয় পাচ্ছো সবাই সব জানে? ভয় নেই, ভয় নেই,
অ্যালগরিদম কেনা যায়, খবর পাল্টে দেওয়া যায়। আর কবে তুমি যে শিখবে,
এটা মহামতি গোয়েবলসের যুগ। গুগল করে যা পাবে, এখন সত্যিকথা হয় সেই।
তবু, ঠিকই বলেছো, কটা দিন আরো যেতে দাও, লোকের স্মৃতিতে যাক ভেজালরা মিশে,
তারপরে চ্যাপটার যোগ করা যাবে। আপাতত সিলেবাসে ইতি হোক উনিশশো সাতচল্লিশে..