আমাদের দেশে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গ্যাসের ওষুধ। র্যানটাক, ফ্যামটাক, প্যান, ওমেজ এই সব নামগুলি জানেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়।
ওষুধের দোকানদারও এই সব ওষুধ নিজেরাই বিক্রি করেন। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত প্রয়োজন ছাড়াই সাধারণ মানুষ এই সব ওষুধ কিনে খান।
আমি হামেশাই দেখেছি, পেচ্ছাপে সংক্রমণের জন্য তলপেট ব্যথা করছে, রোগী প্যান ট্যাবলেট কিনে খাচ্ছেন। কোমরে ব্যথার জন্য ওমেজ খাচ্ছেন। এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাকে গ্যাসস্ট্রাইটিসের ব্যথা ভেবে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে অমূল্য সময় নষ্ট করছেন।
এরকম হাতুড়ে চিকিৎসার ফলাফল যে মোটেই সন্তোষজনক হয়না, তা বলাই বাহুল্য। বিশল্যকরণী গ্যাসের ওষুধ খেয়ে অপেক্ষা করার অভ্যাস অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে।
তাছাড়াও এই সমস্ত গ্যাসের ওষুধকে আমরা যতটা নিরাপদ বলে মনে করি, এগুলি আদৌ তা নয়। দীর্ঘদিন ধরে একটানা খেয়ে গেলে যথেষ্ট ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ক্ষতিগুলি।
১. রক্তে গ্যাস্ট্রিন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ আমরা সকলেই জানি প্যানটোপ্রাজল, ওমিপ্রাজল এই ওষুধগুলি আমাদের পাকস্থলীতে প্রোটন পাম্পের কার্যক্ষমতা কমিয়ে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরিতে বাধা দেয়। গ্যাস্ট্রিন হরমোন আবার এই অ্যাসিড তৈরিতে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন ধরে এইসব ওষুধ খেলে গ্যাস্ট্রিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা অ্যাসিড তৈরির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং অ্যাসিড তৈরির কোষগুলিকে (প্যারাইটাল সেল, এন্টেরো ক্রোমাফিন সেল) সংখ্যায় বাড়ায় এবং তাদের আকার- আকৃতিগত পরিবর্তন ঘটায়। যে কারণে গ্যাসের ওষুধ বন্ধ করলেই অ্যাসিড তৈরির পরিমাণ ভয়ানক বেড়ে গিয়ে শারীরিক সমস্যা হয়, এবং গ্যাসের ওষুধ বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। তাছাড়া এন্টেরো ক্রোমাফিন সেলের আকৃতিগত পরিবর্তনের জন্য ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যদিও এখনও সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ।
২. নিউমোনিয়াঃ দীর্ঘদিন ধরে এই ওষুধগুলি খেয়ে গেলে নিউমোনিয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। অ্যাসিড পাকস্থলীতে অনেক রোগ জীবাণু ধ্বংস করে। গ্যাসের ওষুধ খেয়ে গেলে পাকস্থলীর অ্যাসিডের অভাবে সেখানে অনেকরকম ক্ষতিকারক জীবাণু মনের সুখে ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলে এবং সেখান থেকে ফুসফুসে পৌঁছে নিউমোনিয়া করে। তাছাড়াও গ্যাসের ওষুধ আমাদের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমিয়ে দেয়। যদিও কিভাবে কমায় সেটা এখনও পরিষ্কার ভাবে জানা যায়নি। তাই বয়স্ক মানুষদের যদি গ্যাসের ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খাওয়াতেই হয়, তাহলে তাদের বাৎসরিক ইনফ্লুয়েঞ্জা আর নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন দেওয়া উচিৎ।
৩. ডাইরিয়াঃ পাকস্থলীতে অ্যাসিডের অভাবে একই ভাবে ডাইরিয়ার বিভিন্ন জীবাণুর (মূলত ক্লসট্রিডিয়াম ডিফিসিলি) বাড়বাড়ন্ত হয়। যাঁরা নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খান তাঁরা অনেক বেশি পেটের অসুখে ভোগেন। প্যানটোপ্রাজল জাতীয় ওষুধের চাইতে র্যানিটিডিন জাতীয় ওষুধে এই সমস্যা একটু কম হয়।
৪. হাড় ভাঙাঃ বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে এই সমস্ত ওষুধ ব্যবহারকারীদের মধ্যে মেরুদণ্ডের, কবজির বা হিপ জয়েন্টের হাড় ভাঙার সম্ভাবনা অনেক বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ১৪ দিন ওমিপ্রাজল খাওয়ার পরে খাদ্যনালীতে ক্যালসিয়াম শোষণের পরিমাণ প্রায় ৪১% কমে গেছে।
৫. হাইপোম্যাগনেশেমিয়াঃ দীর্ঘমেয়াদী গ্যাসের ওষুধ ব্যবহার করলে রক্তে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে মাংসপেশির দুর্বলতা, খিঁচ ধরা থেকে শুরু করে খিঁচুনি, হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দের গণ্ডগোল, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৬. রক্তে ভিটামিন বি ১২ কমে যায়।
৭. বৃক্ক বা কিডনির সমস্যাঃ অ্যাকিউট ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস বলে কিডনির একটি মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। যা মূলত গ্যাসের ওষুধ শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই হয়।
৮. ডিমেনশিয়াঃ ভিটামিন বি ১২ সহ আরও অনেক প্রয়োজনীয় পদার্থ কমে যাওয়ায় এবং অ্যামাইলয়েডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বয়স্কদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
৯. এছাড়াও গ্যাসের ওষুধের সাথে অন্যান্য ওষুধ খেলে, অন্যান্য ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় কমে যায়। যেমন আয়রন শোষণের জন্য পাকস্থলীতে অ্যাসিডের প্রয়োজন। সেজন্য আয়রন ট্যাবলেটের সাথে গ্যাসের ওষুধ খেলে আয়রন ট্যাবলেটের কার্যকারিতা অনেক কমে যায়।
এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার নতুন নতুন ক্ষতিকারক দিক, নিয়মিত আমাদের সামনে আসছে। তাই কথায় কথায় ওষুধের দোকান থেকে গ্যাসের ট্যাবলেট কিনে খাওয়া উচিৎ নয়। অথবা খেলেও ২ সপ্তাহের বেশি কখনওই নয়।
এর বেশি খেতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
Excellent post Oindrinda.
Great awareness rising post
Excellent Oindrinda.
Great awareness rising post.
Sharing permission sought for.
?
Nice massage.Every one doing this things.
খুব প্রয়োজনীয় তথ্য। এগুলো জেনে সমৃদ্ধ হলাম। যদিও আমি এই রকম উপায়েই চলি। তবু যথেষ্ট সংশয় কাজ করতো মনে। সেটা দূর হলো।
Thanks
ডাক্তারইতো সবচেয়ে বেশি গ্যাস-অম্বলের ওষুধ লেখে। শতকরা ৯০ ভাগ নিদানপত্রেই তা লেখা থাকে।
লেখাটি সুন্দর কিন্তু অসম্পূর্ণ।
বাস্তব বর্ননা জানানোর জন্য কৃতজ্ঞ
আম আদমি হিসেবে আমাদের কাছে গ্যাসের ওষুধের কোনও প্রাকৃতিক বিকল্পও তো নেই! আছে কি? থাকলে সেদিক নিয়ে যদি একটু বলেন।
OCD র চিকিৎসার জন্য যদি দীর্ঘদিন fludac খেতে হয় তবে খুব গ্যাসের সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে একটা করে omez tablet খেতে হয়। সেটাও কি ক্ষতিকর? কতদিন পর্যন্ত omez খাওয়া যেতে পারে?
Like!! Thank you for publishing this awesome article.
Thank you ever so for you article post.