বলা বারণ
জানি কিছু বলা বারণ, তাই বলছি না কিছু। ধর্মীয় আচার, পারিবারিক ঐতিহ্য, লোকাচারের ভাবাবেগ; জানি এসব নিয়ে কিছু বলা বারণ। তাই আসুন আবেগের বন্যায় ভেসে গিয়ে ভুলে যাই শারীরিক দূরত্বের কথা, ভুলে যাই মাস্ক পরার কথা, ভুলে যাই শিয়রে শমনের কথা। এসব বিশেষ দিনে এসব একঘেঁয়ে, বিরক্তিকর কথা তোলে কোন আহাম্মকে! দেখছেন না মিডিয়াও কীরকম গা ভাসিয়ে দিয়েছে আবেগের সফেন সমুদ্রে! হয়তো কালপরশু আবেগের পালে টি আর পির হাওয়া কম বুঝলে প্রশাসনকে অপদার্থ বলে গালাগাল দিয়ে ঘন্টাখানেকের চর্বি চর্বণ নামানো যাবে। আজ কোনো বিতর্ক নয়। খুব বেশি হলে ‘মহালয়া শুভ না অশুভ’, ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী না উত্তমকুমারের দেবী দুর্গতিহারিণী’, ‘মিমির না দিতিপ্রিয়ার দূর্গা’, – এসব বিষয়ে বিতর্ক চলতে পারে। আজকের দিনে অন্য কোনো বিতর্ক নয়। আজ কুল, chill, boss! কিন্ত আমার যে এই ফটোগুলো দেখে যাকে বলে chill down the spine হচ্ছে! একদিনে প্রায় একলক্ষ সংক্রমণের চোখ সয়ে যাওয়া অতি সাধারণ তথ্যের কথা ভেবে, দশলাখ পেরিয়ে যাওয়া চিকিৎসাধীন কোভিড রোগীর অকিঞ্চিৎকর পরিসংখ্যান দেখে, দৈনিক সুস্থতার দৈন্যতার ছোট্টখবরে চোখ আটকে যাওয়ায়, সাড়ে তিনশ পেরিয়ে যাওয়া ডাক্তার মৃত্যুর তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনার ধাক্কায় শিরদাঁড়ায় ঠাণ্ডা শিহরণের স্রোত বইছে। এই দেখুন আবার বেআক্কেলে কথাবার্তা! উৎসবের মরশুম সবে শুরু, জনগণের আবেগ নিয়ে কে খেলবে গুরু? প্রশাসন শক্ত হলে বিরোধীরা গোল দিয়ে বেরিয়ে যাবে। প্রশাসন নরম থাকলে বিরোধীরা চরম হবে পরে, হিসেব কষে উৎসব-টুৎসব কেটে গেলে। আর গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ এখন আবেগের প্রাবল্যে, প্রবল প্রতিযোগিতায়, চোখে পটি বেঁধে গান্ধারী। আসলে জনগণ জানে আবেগ, মানে নিষেধ ভাঙার নিয়ম। আমরা সাবধানতাকে ভয় বলে পরিহাস করি, নিয়মনিষ্ঠকে OCD রোগী বলে খ্যাপাই। আমরা জানি না পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে, প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যা হয়ে এসেছে প্রতি বছর, ঠিক সেরকমটাই আমাদের চাই-ই-চাই। তাই আপাতত এসব বাজে লেখায় মন না দিয়ে, পুজোর চারদিন (বা দশদিন) জমিয়ে ঘোরার প্ল্যান-প্রোগ্রামটা করে ফেলুন। আর কে না জানে পুজোর কদিন মাস্ক-ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং, এসব জাস্ট পোষায় না গুরু।
অতএব, আপাতত “তব অচিন্ত্য…”। তবে শেষমেশ “জয়সঙ্গীত ধ্বনিছে তোমারই ভুবনে” গাইতে গেলে যে কিছুটা দায়িত্বপালন করতে হয় আমাদেরও! Oh shit!!! আজকের দিনে আবার ঐসব দায়িত্ব-ফায়িত্বের অলুক্ষুণে কথাবার্তা! “কে আছিস? আঁতেলটাকে Facebook থেকে বের করে দে তো!”