স্কুলের দিন শেষ। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পর যাদবপুর আর শিবপুর ঘুরে অবশেষে মেডিক্যাল কলেজ।
তখন গুগল ম্যাপ ছিল না। কলেজ ষ্ট্রীটে বাস থেকে নেমে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছি- কোন বাড়িটা মেডিক্যাল কলেজ। আঠেরো বছরের আমার উদ্বিগ্ন জিজ্ঞাসায় সামনের ফলওয়ালা কোনো কথা না বলে বুড়ো আঙুল ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে দেখিয়ে দিল- সামনের পাঁচিলটাই!
তিন নম্বর অর্থ্যাৎ এমারজেন্সী গেট দিয়ে ঢুকে সপ্তপদীতে দেখা সেই বিখ্যাত সিঁড়ি আর গথিক স্তম্ভের সারি ডানদিকে রেখে নার্সিং কলেজ, কলেজ ক্যান্টিন। তারপর ‘ওভাল’ আর ঘড়িওয়ালা লালবাড়ি। তার সামনেই লম্বা লাইন তরুণ-তরুণী দের। ভর্তির ফর্ম তোলার।
সাপের মত সে লাইন এঁকেবেঁকে গেছে সেন্ট্রাল সিলেকশন অফিসের দরজায়। বি সি রায় ব্লকে। তার লাল দেওয়ালে লিষ্ট সাঁটা- কে কোন কলেজে পেয়েছে তার খতিয়ান!
লিষ্টে নিজের নাম দেখে নিশ্চিত হয়ে আবার লাইনে। ভাদ্রের চড়া রোদ। সেখানে লাইনে সামনের ছেলেটির সাথে চটজলদি বন্ধুত্ব। সে বেচারা সিএমসি ভেলোরে ডাক্তারি পড়তে পেয়েও সব ছেড়েছুড়ে বাংলার সিএমসি -তে। অবশ্য সে চান্স পেয়েছে বাঁকুড়ায়। সহজ-সরল। তাকে কেউ বুঝিয়েছিল, খ্রিষ্টান কলেজের হোষ্টেলে থাকতে গেলে নাকি গোমাংস ভক্ষণ করতে হবে! তাই সেখান থেকে ভয়ে পালিয়েছে সে।
এইসব আলোচনা। এমন সময় ফর্মের লাইনের সামনের দিকে খুব হইচই। একটি মেয়ে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছে। সবাই হতভম্ব- ভ্যাবাচাকা। ঠিক তক্ষুণি পাশ দিয়ে যাচ্ছিল স্টেথো গলায় একজন ত্রিশোর্ধ ডাক্তার আর দু-জন ছাত্রছাত্রী। ডাক্তার ভদ্রলোক অসুস্থ মেয়েটির পালস্ দেখলেন। তারপর বললেন ‘হিট স্ট্রোক’ নয়। ‘ভেসো-ভেগাল অ্যাটাক’ মনে হচ্ছে। খুব ভয়ের কিছু নেই। তখন এই দুটোর কোনোটারই বিন্দুবিসর্গ জানতাম না। কিন্তু অসুস্থ মেয়েটি সেই প্রাথমিক চিকিৎসায় কয়েক মিনিট পরেই উঠে দাঁড়াল।
তখন শিবপুর আর যাদবপুরে কড়া র্যাগিং সামলে এসে মেডিক্যাল কলেজ মনে হল স্বর্গোদ্যান। এখানে মানুষকে মারা নয়, বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়!