১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দে মহামতি এডওয়ার্ড জেনারের গুটি বসন্ত (small pox)-এর টীকা আবিষ্কারের বৃত্তান্ত আজকের দিনে অধিকাংশ মানুষের জানা আছে। পাগলা ডাক্তার, এডওয়ার্ড জেনার বাড়িতে দুধ দিতে আসা গোয়ালিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের “পাণিগ্রহণ করতেন” অর্থাৎ হাত চেপে ধরতেন। ফলে অধিকাংশ গোয়ালিনী ভয়ে তার বাড়িতে দুধ দিতে যেতে চাইত না। কিন্তু এই পাগলামির মধ্যেই আবিষ্কৃত হল কালান্তক গুটিবসন্তের টীকা। গোয়ালিনীদের আঙ্গুলে গোরুর বাঁট থেকে যে গোবসন্তের সংক্রমণ হয়, তারই রস জেনার চামড়ায় একটি আঁচড়ের মাধ্যমে মানবশরীরে প্রবেশ করিয়ে গুটি বসন্ত থেকে বহু মানুষের মৃত্যু প্রতিরোধ করেন। যদিও তখন ভাইরাস সম্বন্ধে মানুষের কোন জ্ঞানই ছিল না। তীক্ষ্ণধী জেনার লক্ষ্য করেছিলেন গোবসন্তের প্রভাব (vaccinia–একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ) মানুষের শরীরে খুবই কম, কিন্তু একবার এর আক্রমণ হলে মারাত্মক গুটি বসন্তের (variola) বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়। জেনারের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার কিছু পরিবর্তিত ও উন্নত হয়ে সারা পৃথিবীতে বসন্তের টীকা হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক পরে সরকারি আইন এটিকে আবশ্যিক করলে ক্রমে পৃথিবী থেকে গুটি বসন্ত বিদায় নেয়। এই গোবসন্ত বা vaccinia থেকেই ইংরাজীতে টীকার ওষুধটির নাম ভ্যাক্সিন (vaccine) এবং টীকা দেওয়াকে বলা হয় ভ্যাক্সিনেশন (vaccination)। অবশ্য বর্তমানে অনেক প্রাচ্যবিদ মনে করেন যে জেনারের এই বিদ্যা এক কুম্ভীলক বৃত্তি। গোবসন্ত বা মানুষের বসন্তের গুটির রস সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে প্রতিষেধক তৈরীর জন্ম চীন দেশে। জিপসী বা বেদে সম্প্রদায়ের হাত ধরে তা ইউরোপে এসে পৌঁছায়। জেনার সাহেবের বাড়ির কাছেই বেদেদের একটি বসতি ছিল সেখান থেকে নাকি এই বিদ্যা তিনি সংগ্রহ করেন।
এরপর আসি লুই পাস্তুরের কথায়। তিনি ছিলেন রসায়নবিদ। কিন্তু তার বিশ্বজোড়া খ্যাতির কারণ তিনি জলাতঙ্ক রোগের টীকা আবিষ্কার করেছিলেন। জলাতঙ্ক (hydrophobia বা rabies) একটি মারাত্মক রোগ যা তথাকথিত পাগলা কুকুর বা অন্যান্য পাগলা জন্তুর কামড় থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। প্রকৃতপক্ষে যদি কুকুরটি বা আক্রমণকারী জন্তুটি রেবিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে তার লালার সঙ্গে জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকে। লুই পাস্তুর ভেড়ার মস্তিষ্কে এই ভাইরাসটি ইঞ্জেকশন করে সংক্রমণ ঘটান। পর্যায়ক্রমে পঞ্চান্নটি ভেড়ার মস্তিষ্কে একের পর এক সংক্রমণ ঘটিয়ে ভাইরাসটিকে দুর্বল (Fixed virus) করে ফেলেন। তারপর এটি পরীক্ষামূলক ভাবে প্রাণীদেহে প্রয়োগ করে সাফল্য পান। তার প্রথম মানুষ রোগী ছিল জোসেফ মিয়েস্টার নামে এক বালক। পাগলা কুকুরে কামড়ানো এই বালককে তিনি তাঁর আবিষ্কৃত জলাতঙ্কের টীকা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জীবাণু আবিষ্কার এবং তার প্রতিষেধক টীকা আবিষ্কারের যেন ঢল নামে। ১৮৯২ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয় ভাইরাস যার নাম টোব্যাকো মোজাইক ভাইরাস। ১৮৮৪ সালে কলেরার প্রতিষেধক, ১৮৯৬ তে টাইফয়েড, ১৮৯৭ তে প্লেগ, ১৯২৩ ডিপথেরিয়া, ১৯২৪ এ ধনুষ্টংকার, ১৯২৬ হুপিং কাশি এবং ১৯৩২ সালে পীত জ্বরের (yellow Fever) টীকা আবিষ্কার হয়, ১৯৩৭এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় টাইফাসের ভ্যাক্সিন বহু মানুষের জীবন বাঁচায়। ঐ একই বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিনও আবিষ্কৃত হয়েছিল। এরপরে আরও বিস্তর ভ্যাক্সিন বেরিয়েছে যার অনেকগুলিই ভাইরাস ঘটিত রোগ প্রতিরোধী। যেমন পোলিও, হাম জ্বর, মাম্পস, জার্মান হাম জ্বর, জলবসন্ত, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস এ, ভাইরাস ঘটিত ডাইরিয়া ইত্যাদি। টীকার দাপটে কালান্তক ব্যাধি গুটিবসন্ত ১৯৭৪ সালে ভারতবর্ষ এবং ১৯৮০ সালে সারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মেছে ( যার পেছনে সরকারি প্রচার এবং বিশেষজ্ঞদের প্রভাব বহুল পরিমাণে রয়েছে) নানাবিধ টীকা দিয়ে শিশুকে সুরক্ষিত করে ফেলতে পারলে তার আর কোন রোগ হবে না। ফলে প্রয়োজনীয় অনেক টীকার সাথে জরুরি নয় বা তেমন ভাবে প্রয়োজনীয় নয় এমন বহু টীকারও রমরমা ব্যাবসা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ম্যালেরিয়া, এইচ আই ভি (HIV, AIDS রোগ সৃষ্টিকারী)-র ক্ষেত্রে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন কোটি কোটি ডলার লগ্নী করে বসে আছেন, যাতে ভ্যাক্সিনটি ব্যবসা করে অর্বুদ নির্বুদ ডলার কামিয়ে নিতে পারে।
কোভ্যাক্সিন
ধান ভানতে শিবের গীত অনেকটাই হল। মূল বিষয়ে আসা যাক। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় ১০০র ও বেশি দেশে যে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই লেখা পর্যন্ত ৮ লক্ষেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার টীকা আবিষ্কার করতে প্রায় ১৩টি দেশের ৩০ টির বেশি গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা প্রাণপাত করছেন। কখনো শোনা যাচ্ছে চীন নাকি তার সৈন্যবাহিনীর জন্য করোনার টীকা আবিষ্কার করে ফেলেছে এবং গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনাদের দূর থেকে সেই টীকা দেখিয়ে জিভ ভেঙিয়েছে। আবার কখনো শুনছি অক্সফোর্ডে করোনার টীকার মানব প্রয়োগ ( human trial) সম্পন্ন। বস্তুতপক্ষে যেকোনো সংক্রামক রোগের টীকা আবিষ্কার করতে গড়ে অতীতে ৩ থেকে ১৪ বছর সময় লেগেছে। বহু টীকা কার্যকরী বলে প্রমাণ হয়নি। কলেরা বা টাইফয়েডের ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া ভ্যাক্সিন কালস্রোতে হারিয়ে গেছে। যক্ষ্মা রোগের বিখ্যাত ভ্যাক্সিন বিসিজি কতটা কার্যকরী সে নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে কারণ ঐ ভ্যাক্সিনের দ্বারা শরীরে যে প্রতিরোধক প্রোটিন বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা সবধরনের যক্ষ্মা রোগকে ঠেকাতে সক্ষম নয়। প্রশ্ন আছে শিশুদের ডাইরিয়ার রোটাভাইরাস ভ্যাক্সিন, জরায়ু মুখের ক্যান্সার রোধে এইচ পি ভি ভ্যাক্সিন এবং জাপানি এনকেফেলাইটিস রোগের ভ্যাক্সিন নিয়ে। মুখে খাওয়া পোলিও ভ্যাক্সিনও (Sabin) সন্দেহের ঊর্দ্ধে নয়। ভ্যাক্সিনের ব্যবসা বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিদের নয়নের মণি। আর সম্পন্ন ঘরের বাবা মায়েদের শিশুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার জন্য যদি বলা যায় জন্মের পরেই কোন মহার্ঘ্য টীকা দিলে তার শিশু কোনদিন কোন পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে না, তবে অনেকেই তা করবেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিহত করার প্রায় সমস্ত রকমের কৃৎকৌশল এবং বিশেষজ্ঞদের গুরুগম্ভীর পরামর্শ দেশে দেশে ব্যর্থ হওয়ার পরে এখন চলছে বৈজ্ঞানিক হাতুড়েপনা।
কখনো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, কখনো ভিটামিন সি, কখন অন্য ভাইরাসঘাতী ওষুধ (Remdesivir ও Faviperavir) ইত্যাদির যথেচ্ছ ব্যবহার কোন সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছাড়াই। এর মধ্যে যে কোম্পানি এই গুপ্তকক্ষের চাবিকাঠি খুলতে পারবে সে এক বছরেই ১০০ বছরের মুনাফা করে নিতে পারবে।
সবাই যদি এগিয়ে আসে, তাহলে নরেন্দ্রজীর নেতৃত্বাধীন ভারত কি পিছিয়ে থাকতে পারে!
দেশে যত কোটি অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুই থাকুক না কেন, সামরিক শক্তিতে ও সেনাবাহিনীর কলেবরে আমরা পৃথিবীতে চতুর্থ বা পঞ্চম। আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েল থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ের নিরিখে সারা পৃথিবীতে দ্বিতীয়। আমাদের পেছনে রয়েছে ৫ হাজার বছরের বিজ্ঞানচর্চার গৌরবময় ইতিহাস। বেদের যুগেই আমাদের ১২০ ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমান অন্তরীক্ষে ভ্রমণ করত! রামায়ণ মহাভারতের সময় আণবিক অস্ত্র ছিল আমাদের করায়ত্ত্ব! যদিও বিগত দুশো বছরে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন তালিকায় এবং বিগত ৭০ বছরে স্বাধীন ভারতে কোন চিকিৎসাবিজ্ঞানের আবিষ্কার বা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ভারতবর্ষে ঘটেনি (ম্যালেরিয়া পরজীবী ও কালাজ্বরের ওষুধ এই দুটি পুরনো ঘিয়ের গন্ধ বাদ দিয়ে)। তবুও করোনা ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের এই ম্যারাথন দৌড়ে ভারত দ্রুত প্রথম দিকে উঠে আসার কথা ঘোষণা করেছে।
গত দুশ বছরের টীকা আবিষ্কারের ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি, তা ঘটতে চলেছে। সরকারি সংস্থা ICMR এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়ে দিয়েছে যে সেই পুণ্য লগ্ন আগতপ্রায়। আগামী ১৫ আগষ্ট, অর্থাৎ আজ থেকে মাত্র ৩৫ দিন বাদে ৭৪তম পবিত্র স্বাধীনতা দিবসে আবিষ্কৃত হবে কোভ্যাক্সিন নামে সেই বিশল্যকরণী। ভারতবর্ষ মুনি, ঋষি ত্রিকালজ্ঞ জ্যোতিষীদের দেশ, আংটি, পাথর, কবচ তাবিজের দেশ। মায়ের চরণামৃত, পীর বাবার সিন্নি, বন্ধ্যাত্বের স্বপ্নাদ্য ওষুধ এইসবের পুণ্যভূমি। এখনো বহু মানুষ স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের উপর নির্ভরশীল। এটা ধরে নিতে অসুবিধে হওয়া উচিত নয় যে প্রধানমন্ত্রীজী বা তাঁর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা আই সি এম আর এর মহা নির্দেশক ডাক্তার ভার্গব কঠোর যোগ সাধনা বা স্বপ্নাদেশে হয়ত এই টীকার প্রকৌশল প্রাপ্ত হয়েছেন। এ ঘটনা কেবল মাত্র ভারতবর্ষের মত আধ্যাত্মিক দেশেই সম্ভব। এর পিছনে বাবা রামদেবের পুণ্য আশীর্বাদও থাকা অসম্ভব নয়।
টীকা আবিষ্কার বনাম জুতা আবিষ্কার
টীকা আবিষ্কার জুতা আবিষ্কারের থেকে বোধকরি কিছুটা কঠিনই হবে। ২রা জুলাই, ২০২০, আই সি এম আর (ICMR )চিঠি দিয়ে ভারত বায়োটেক সংস্থাকে জানিয়েছিল ১৫ই আগষ্ট, ২০২০ তারিখের মধ্যে কোভ্যাক্সিনের (COVAXIN) প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে হবে, কারণ ওই দিনই লালকেল্লা থেকে এই ভ্যাক্সিনের ঘোষণা করা হবে। যে কোন ভ্যাক্সিন নিরাপদে বাজারজাত করার আগে আন্তর্জাতিক নীতি মালা অনুযায়ী ত্রিস্তর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথম স্তর বা ফেজ ওয়ান ট্রায়ালে সামান্য কিছু সুস্থ মানুষদের উপর উদ্দিষ্ট রাসায়নিকটি প্রয়োগ করে দেখা হয় যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না এবং সামান্য পরিমাণে হলেও প্রতিরোধী বা অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা। এই ফেজ ওয়ান ট্রায়াল মানব দেহে করা হয় ইঁদুর, গিনিপিগ, খরগোশ, ভেড়া প্রভৃতি মনুষ্যেতর প্রাণীর উপর প্রয়োগ করার পরেই। দ্বিতীয় স্তর বা ফেজ টু ট্রায়ালে কয়েক শত মানুষকে (স্বেচ্ছাসেবক) এই পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা হয়। উদ্দেশ্য হল, যখন প্রকৃতই কোন ব্যাক্তি ওই জীবাণুর সংস্পর্শে আসবেন, তখন যাতে তাঁর শরীরে সংক্রমণ না ছড়ায় অথবা সামান্য উপসর্গ হয়ে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। এরপরে ফেজ থ্রি ট্রায়াল, যার পোশাকি নাম হল (placebo controlled double blind randomised trial)। অর্থাৎ এক বেশ বড় জনগোষ্ঠীর অর্ধেক মানুষকে প্রস্তাবিত টীকাটি দেওয়া হবে এবং বাকি অর্ধেক মানুষকে একই পদ্ধতিতে শুধু লবণ জল বা স্যালাইন দেওয়া হবে। কিন্তু কারা কি পেলেন তা থাকবে চূড়ান্ত গোপনীয়। যদি দেখা যায় যে সব রোগী placebo ( রোগীতোষ ) ইঞ্জেকশনটি পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের হার আসল টীকা পাওয়া মানুষের তুলনায় অনেক বেশি (রাশি বিজ্ঞানের কাই স্কোয়ার টেস্ট, পি ভ্যালু ক্যালকুলেশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি দ্বারা প্রমাণিত) তবেই সেই টীকা বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা যেতে পারে। তার পরেও ৩-৫ বছর লক্ষ্য রাখতে হবে কোনো ক্ষতিকারক ADE ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Ab dependant enhancement) হচ্ছে কিনা। সেক্ষেত্রে টিকাটি প্রত্যাহার করে নিতে হবে ।অনেক সময় পরীক্ষামূলক ভ্যাক্সিন প্রয়োগের ফলে জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করার মতো প্রতিষেধক (Neutralising Antibody) র পরিবর্তে রোগ প্রতিরোধে অক্ষম অন্যান্য অ্যন্টিবডি (Non Neutralising Antibody) বিপুল পরিমাণে তৈরি হতে পারে। এবং তাতে সাইটেকোইন স্টর্ম ( Cytokyne Storm )বলে এক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। ভ্যাক্সিন গ্রহীতার মৃত্যু ঘটতে পারে। অতীতে যত ভ্যাক্সিন এই ত্রিস্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তাতে নুন্যতম ৫-১২ বছর সময় লেগেছে। দেশের নিজস্ব আইনকানুন, নৈতিকতা, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক দিক মেনে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মতি নিয়ে (Informed Consent) এই কাজ করা দরকার। ভারতের ওষুধ ও প্রসাধনী আইন (Drug and Cosmetic Act, 1940, 1945) Schedule y ধারাতে এই বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশ রয়েছে। 2009 সাল থেকে সরকারি নির্দেশ নামায় আছে Clinical Trial Registry Of India (CTRI) এর নিবন্ধীকরণ ছাড়া কনো ওষুধ বা টীকার Clinical Trial করা যায়না। ইবোলা, এইচ আই ভি এবং রেস্পিরেটরী সিনসিটিযাল ভাইরাসের ভ্যাক্সিন বার করতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে ADE তে বহু স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হয়েছে।
দেশপ্রেমের কিল ও ভ্যাক্সিনের কাঁঠাল
সংখ্যাধিক্যের জোরে, কলমের এক খোঁচায় জম্মুকাশ্মীরের বিশেষ অধিকার হরণ করা যায়, ৩৭০ ধারা রদ করা যায়, স্কুলের পাঠ্যসুচী থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ফেডারেলিজমের ধারণা সরিয়ে হিন্দুত্ব ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু বড়কর্তা, মেজকর্তাদের নির্দেশ দেশপ্রেমের কিল মেরে ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের কাঁঠাল পাকানো যায় না।
করোনা হলো একটা আর এন এ ভাইরাস অর্থাৎ এর জেনেটিক বস্তুটি ডি এন এ নয়, আর এন এ।
সাধারণ ভাবেই আর এন এ ভাইরাসের ক্ষেত্রে রেপ্লিকেশন (DNA থেকে DNA) বা রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন ( RNA থেকে DNA ) তৈরি হবার সময় নানা পরাব্যাক্তি বা মিউটেসন ঘটে : ফলে হুবহু আগের RNA র প্রতিলিপি তৈরি হয় না। কিছু কিছু জিন পাল্টে যায়। তাই এক প্রজন্মের ভাইরাসের বিরুদ্ধে টীকা তৈরি করলে তা পরের প্রজন্মের ভাইরাসের উপর কাজ নাও করতে পারে। আগেই বলা হলো যে RNA ভাইরাসের দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় জিনগত পরিবর্তনই এই জন্য দায়ী। জিন পরিবর্তনের জন্য ওই ভাইরাসের এন্টিজেন বা প্রোটিনও পাল্টে যায়। ফলে এন্টিবডি ভিত্তিক আগের টীকা নতুন ভাইরাসকে মারতে পারে না। একে বলে antigenic shift and drift. ফলে প্রত্যেকবার নতুন টীকা বার করতে হয়। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। প্রতি বছর নতুন টীকা বার করতে হয় ও তা প্রতিবছররোগীকে দিতে হয়।
সেইজন্য DNA ভাইরাসের তুলনায় RNA ভাইরাসের টীকা আবিষ্কার অনেক কঠিন। HEPATITIS A ও B-এর ভ্যাকসিন বেরিয়ে গেছে ২০/২৫ বছর আগে (দুটিই DNA ভাইরাস)। কিন্তু আরো প্রাণঘাতী RNA ভাইরাস HEPATITIS C-র টীকা এখনো বার করা যায় নি।
এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে, করোনার বিষয়টি আরো জটিল। ছয় মাসেই এর বহুবার জিনগত পরিবর্তন হয়েছে নিজে থেকে। ২৯ ধরণের (subtype) করোনা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। তাদের চরিত্র, সহনশীলতা, সংক্রমণের তীব্রতাও আলাদা। এক দেশে আবিষ্কৃত টীকা অন্য দেশে কাজ নাও করতে পারে।
৩৫ দিনে পাঁচ বছরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন করে করোনাঘাতী ওষুধও আবিষ্কার করা যায় না, যতই আমারা চরক, সুশ্রুত, পতঞ্জলি, কণাদ, শংকরাচার্য্য প্রভৃতি মুনিঋষিদের বংশধর হইনা কেন। দেখা যাক মহামতি প্রধানমন্ত্রী ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের পবিত্র লগ্নে দেশবাসীর হাতে কি মহৌষধি তুলে দেন। কিন্তু আকন্ঠ দেশপ্রেমের সোমরস পান করেও ঐ জাতীয়তাবাদী কোভ্যাক্সিন নিতে আমার অসামর্থ্য এখানেই জানিয়ে রাখলাম।
“পাগলা কুকুরে কামড়ানো এই বালককে তিনি তাঁর আবিষ্কৃত জলাতঙ্কের টীকা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন।” এই বাক্যটা মনে হয় ভুল। vaccine দিয়ে জলাতঙ্ক হওয়া আটকানো যায়, জলাতঙ্ক রোগ হলে vaccine দিয়ে আর সুস্থ করা যায়না। মনে হয় বাক্যটা অন্যভাবে লেখা দরকার। সাধারণের কাছে অন্য মানে হবে।
চমৎকার লেখা। খুবই দরকারি। কয়েক জায়গায় পরে কিছু এডিটিং দরকার। গড়ে ৩ থেকে ১৪ বছরের ঐ গড়ে ভাগ দিলেই ভালো হয়। বরং অন্যত্র লেখা ‘ন্যুনপক্ষে ৫ থেকে ১২ বছর’ বেশি ভালো। যাহোক, এসব লেখক নিজে আরেকবার দেখলেই নিশ্চয়ই ঠিক করে দেবেন। তবে এমন জরুরি লেখার বহুল প্রচার পাবে এই আশা রাখি
খুব তথ্যবহুল দরকারী একটি লেখা ৷ রাজনীতির রং টা আর একটু কম হলে ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ হতো ৷ এমন লেখা সবার পড়া উচিত ৷
রাজনৈতিক খোঁচা গুলো বাদ দিলেই ভালো, The Doctors Dialogue এর তাহলে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে, তাছাড়া এই মঞ্চটি তো আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি, Admin দের কাছে publish করার আগে review করার অনুরোধ রইল।
যেটা লিখেছেন তা সম্পূর্ণ সঠিক
সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে
Pharmaceutical industry এর nexus আছে পুরোটা জুড়ে
WHO CDC UNO are big scammers