করোনা কেসের সংখ্যা সারা দেশে বাড়ছে, পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। অতীতে ডেঙ্গু মোকাবিলার সময়েও আমরা সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। বলা বাহুল্য, সে সব কেউ মানেনি। এখনো চিকিৎসক সংগঠনগুলি আলাদা করে ও যুক্ত মঞ্চ একসঙ্গে নানারকম পরামর্শ দিচ্ছে। আমরা এ কথাও মনে করিয়ে দিতে চাই যে অনতিবিলম্বে কেসের সংখ্যা আরো বাড়বে ও শুভ্রজিতের মতো ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এসব ক্ষেত্রে মানুষ ও প্রশাসন চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তোলে তার অনেক নজির আছে। বর্তমানে যে ভাবে সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে তাতে সরকারের উচিত বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে সমন্বয় সাধনে যত্নবান হওয়া। আমরা নানাভাবে সরকারের সাথে সহযোগিতা করে চলেছি। আরো কিছু কার্যকরী পরামর্শ দিতে চাইঃ
১। হোম কোয়ারান্টিনে থাকাকালীন ভাইরাস পাওয়া গেছে বা সরাসরি সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এমন সব রোগীদের জন্য স্টেডিয়াম, স্কুল ও কলেজের বিল্ডিং ব্যবহার করা দরকার। এর ফলে সব রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে কম কর্মী লাগবে ও অল্প উপসর্গযুক্ত রোগীর যদি হঠাৎ অবস্থার অবনতি হয় তাহলে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে এমন বেডে স্থানান্তর করা যাবে।
২। সাধারণভাবে ১০-১৫% মানুষ এই রাজ্যে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেই হিসাবে কম পক্ষে ১৯ লক্ষ মানুষ মাঝারি ও বেশি মাত্রার উপসর্গ হতে পারে। এক সাথে হবে না। তবে সবচেয়ে সংকটময় সময় বেডের অভূতপূর্ব ঘাটতি হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেনঃ স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। যে সরকারি হিসাব পাওয়া গেছে তা থেকে মনে হচ্ছে ২.৫ কোটি বাড়ীতে ২৭ কোটি হোম ভিজিট হয়েছে। আমাদের পরামর্শ আরেকবার হোম ভিজিট করে কোভিড ঝুঁকি রেজেষ্ট্রি তৈরী হোক। সারা রাজ্যে সব ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের লিস্ট তৈরী হোক। এই কাজ সাধ্যাতীত বা দিবাস্বপ্ন নয়। সারা রাজ্যে জনস্বাস্থ্যে যত কর্মচারী আছেন সঠিক ব্যবহারে এই কাজ এখনই করা সম্ভব। ঝুঁকিপূর্ণদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ তৈরী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবে যদি এই তথ্যভাণ্ডার হাতে থাকে।
যদি সামাজিক সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে এই ১৯ লক্ষ মানুষের জন্য ৫৭০০০ ভেন্টিলেটর লাগবে, যা আমাদের আয়ত্তের বাইরে। সংক্রমণ ঠেকানো ছাড়া বাঁচার রাস্তা নেই।
৩। আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারী বেডের চিত্র মানুষের অভিজ্ঞতার সাথে মিলছে না। শুভ্রজিতকে ভর্তি করতে না পেরে মরিয়া হয়ে তাকে নন-কোভিড ITU-এ ভর্তি করার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ডিউটিরত চিকিৎসক নেন। তার আগে তাঁরা উপরমহলের সাথে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়। তা সত্বেও শুভ্রজিতকে বাঁচানো যায় নি। এখনো পুরো সঙ্কট আসে নি। আসলে এই ঘটনাও মহামারির আকার নেবে। কোভিড পজিটিভ রোগীদের জন্য Artificial intelligence-এর মাধ্যমে একসাথে অনেক টেলিফোন হ্যান্ডেল করতে পারবে এমন ব্যবস্থা করা সম্ভব। IVRS-এর মাধ্যমে সমন্বয় বাড়ানো যেতে পারে।
৪। হাসপাতালে ভর্তি প্রক্রিয়ার আমলাতান্ত্রিক নজরদারি বন্ধ হোক। এমারজেন্সি ট্রায়েজ এরিয়ায় হাসপাতাল পিছু অন্ততঃ পাঁচটি এমন বেড রাখা হোক যেখানে ১০০% অক্সিজেন দেওয়া যাবে ও অন্ততঃ দুটি ভেন্টিলেটর রাখা হোক। যতক্ষণ বেডের ব্যবস্থা না হচ্ছে ততক্ষণ রোগীকে এখানে রেখে চার থেকে ছয় ঘন্টার মধ্যে উপযুক্ত জায়গায় স্থানান্তর করা হোক।
৫। স্বাস্থ্য দপ্তরে আভ্যন্তরীণ সমন্বয় বৃদ্ধি করে টিম তৈরী করতে পারে এইরকম দক্ষ অফিসার যাঁদের নানা কারণে বাইরের জেলায় পাঠানো হয়েছে তাঁদের আবার ফেরত আনা হোক। এঁদের মধ্যে দু একজন আছেন যাঁরা মেডিকেল কলেজ এনেক্স হাসপাতাল সংক্রান্ত নেটওয়ার্ক তৈরী করেছেন, স্বাস্থ্য প্রশাসনের নাড়ি নক্ষত্র জানেন।
৬। প্রতিটি কোভিড এমারজেন্সিতে এমন অফিসার দরকার যাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে ও রোগী/রোগীর পরিবারের সাথে সরাসরি কথা বলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।