দু’খানা প্রশ্ন এসেছে। দেখতে প্রায় একই। কিন্তু ভেতরের জিজ্ঞাসাটা আলাদা। একেবারেই আলাদা।
একজন প্রশ্ন করেছেন, মানো কি না তিনিই ঈশ্বরী?
অন্যজনের জিজ্ঞাসা, আপনি ঈশ্বর মানেন?
প্রথম প্রশ্নটার উত্তর আগে দিই। আজ এই বয়সে পৌঁছে পয়লা আষাঢ়ে সেই চিরন্তনীকে ঈশ্বরী ভাবি কিনা?
তার উত্তর এক কথায় হ্যাঁ। সে চিরন্তনী। অমর অজর অক্ষয়। বস্তুত এই নশ্বর জীবনে বহুবার সে সামনে এসেছে। এসে হারিয়েও গেছে। কিন্তু যে সময়টুকু আঙুল ধরেছিল, সেই মুহূর্তগুলো যেন আমার অনন্তে মিশে গিয়েছিল।
এই প্রশ্নটার অন্য দিকটা কৌশলী।
যে রূপেই ঈশ্বরী এসে থাকুক, ব্যাপারটা আসলে ভালোবাসাই। আমরা, এই সময়-খণ্ডে আবদ্ধ সামাজিক জীব। তাই সমাজ শোভন পোষাক পরাই, সেই ভালোবাসার গায়ে।
সেই ভালোবাসা পুরুষ আর নারীর হতে পারে। আবার আদৌ লিঙ্গ নির্ভর নাও হতে পারে।
যেহেতু ‘তিনিই’ ‘ঈশ্বরী’ কিনা প্রশ্ন করা হয়েছে, বোধহয় আমাকে ‘পুরুষ’ ধরে নিয়েই প্রশ্নটা করা হয়েছে।
হ্যাঁ, আমি শারীরিক ভাবে পুরুষই। শারীরিক কলকব্জা আর হরমোন ইত্যাদি অন্য অনেক পুরুষের মত আমাকেও আজীবন ভুগিয়েছে, স্বীকার করতেই হবে। যদিও এই ভুগিয়েছে কথাটা বাতুলতা।
তুঙ্গভদ্রার তীরে উপন্যাসে যেখানে মণিকঙ্কনা অন্য রাণীরা আছেন জেনেও রাজার প্রেমে পড়ে, আমাদের মনে কিন্তু রাজার চরিত্র ইত্যাদি দাগ ফেলে না। তখনকার সামাজিক বিন্যাসই ওই রকম ছিল।
এ যুগে বিন্যাস পাল্টিয়েছে। তাই সম্পর্কের গায়ে ওই সমাজশোভন পোষাক। তাতে ক্ষতি নেই কিছু।
সমস্ত সম্পর্ককেই যে শরীর অবধি পৌঁছাতে হবে, এটা অসুস্থ ভাবনা। কিন্তু প্রবল মানসিক তৃষ্ণায় যাকে ভালোবাসি তার দিকে অপলক তাকিয়ে থেকেছি। হ্যাঁ, তাকিয়ে থেকেছি পূজাবেদীতে বসা আমার সেই ঈশ্বরীর দিকে। সেটার কদর্থ করলে বিপদ।
সত্যিই বিপদ। ঈশ্বরীকে পূজার শেষে নিয়ম মেনে বিসর্জন দিতে হয় কখনও। পূজার আনন্দ-বেদনা-বিধুর মুহূর্ত গুলোই চিরন্তন। সেই স্মৃতিই বাঁচিয়ে রাখে।
নইলে, অন্যরকম ভাবলে, বিসর্জনের পর দ্রুত বেরিয়ে পড়ে খড়ের কাঠামো। সেই আঘাত নির্মম শুধু নয়। বড় কুৎসিত আর রুচিহীনও।
না, আমার ঈশ্বরী এমন কাজ করতেই পারেন না।
যে করেছে, সে ওই বিসর্জনের পরে ভেসে যাওয়া খড়ের কাঠামো। সে আমার কেউ নয়।
এই ঈশ্বরীকে নিয়ে একটা লেখা আপনাদের পড়াই।
★
নিশিলাগা মানুষের পাপ
——————————-
পয়লা আষাঢ় আজ। ব্যথা সইল আমার শহর।
নিরুপায় বৃষ্টি ভিজে কেটে গেল অনন্ত প্রহর ।
থেমে থাকল হৃৎপিন্ড। তৃষ্ণাতুর ঘরদোর বাড়ি,
বাকরুদ্ধ হয়ে চাইল যেন তোকে চিনে নিতে পারি।
আজ সারাদিন ধরে ঠিক যেন শীতের কাঁপন
আমূল নাড়িয়ে দিচ্ছে। এ গোপন ব্রত উদযাপন
যে জানতো, যার কাছে রাখা ছিল গোপন পাঁচালি,
তাকে চুপিচুপি বলি …
এই ভাল, না এসে বাঁচালি!
দুর্বল শেকড় জুড়ে অবৈধ মায়াভরা টান,
নিশিলাগা মানুষকে ঈশ্বরী নিয়ত পাঠান!
এই বেশ ভাল হল।
তা নইলে হয়তো বা আজই
ঝড় এসে উপড়ে নিত সাংসারিক সব বৃক্ষরাজি।
সাবধানে পার হই পাপ সাঁকো, একা … নিজে নিজে।
ঈশ্বরী হাসেন।
আমি বুঝে যাই … রক্ষা পাইনি যে ..
★
বোঝাতে পারলাম কি?
হ্যাঁ, তিনিই ঈশ্বরী! যতদিন বিসর্জনের বাজনা না বাজে!
পরের প্রশ্নটা আলাদা। উত্তরও আলাদাই দেব।