রাষ্ট্র বলছেন, লড়াই কোরো না, জিততে পারবে না।
পুলিশ বলছেন, একজনকে ধরে দিয়েছি তাই নিয়ে খুশি থাকো।
বিরোধী রাজনৈতিক দল বলছেন, আমাদের তাঁবে এসো, তবে তোমার হয়ে লড়বো ।
আর ওঁরা,
বিত্তের প্রতাপহীন.
ক্ষমতার প্রভাবহীন
অস্তাচলের দিকে বয়েস যাওয়া
এক দম্পতি দাঁতে দাঁত চেপে বলছেন
‘লড়বো, তবুও।’
বাড়িতে ভিড়ের আনাগোনা বহুদিন বন্ধ হয়ে গেছে।
সাংবাদিকের ক্যামেরা বাইটের খোঁজে এখন আর ঘোরে না আশেপাশে,
চ্যানেলে চ্যানেলে কত নতুন ইস্যু উঠে এসেছে,
পাশেই জ্বলছে বাংলাদেশ,
সেই বিদেশ নিয়ে দেশ সরগরম।
এ সময় দৈনিক নব্বইটা সরকারি নথিকৃত ধর্ষণের দেশে
একটি’তে মন দিলে টি আর পি’র লোকসান।
ওঁরা বাকি সমস্ত সংবাদ ঠেলে শুধু নয়ই আগস্ট
একটা তছনছ করা ফোনে আটকে রয়েছেন,
মানুষ না থাক, কোল ঘেঁষে ভিড় করে রয়েছে
অজস্র আত্মজা-স্মৃতি,
যাদের চারহাতে আগলিয়ে ওঁরা মন্ত্র জপা’র মতো বলে চলেছেন,
‘তবুও লড়বো। শ্বাসের সমাপ্তি পর্যন্ত, শরীরে রক্তপ্রবাহ
চালু থাকা পর্যন্ত, লড়বো।’
নামী উকিল তাঁর শিষ্য-শিষ্যা সহ হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।
আদালত ক্রমেই শুনানির দিন আরো লম্বা বিরতিতে ফেলছেন,
সকলেই জানে এই রাবারব্যান্ডে স্থিতিস্থাপকতা অসীম,
বাড়তেই থাকবে ওটা বছর, দশক পেরিয়ে শতাব্দীর দিকে।
সি বি আই প্রায় বলেই দিয়েছেন এর বেশি কিছু আর তদন্ত এগোবে না।
সরকার না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এগোলেও হবে কচুপোড়া।
যাদের ওপর জাস্টিস দেওয়ার ভার, তাঁরা হয় হাত ঝেড়ে ফেলছেন,
অথবা দায় চালান করে দিচ্ছেন অন্য কাঁধে।
শুধু দুই জোড়া ন্যুব্জ কাঁধ এই মুহূর্তে অ্যাটলাসের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠছে,
ঘুণে ধরা বিচারব্যবস্থা আর উইয়ে খাওয়া গণতন্ত্র তাঁদের মোকাবিলায় থতমত খাচ্ছেন,
যতই অন্ধকার ছুঁড়ে দিচ্ছেন তাঁদের দিকে আলকাতরার মতো,
ততই তাঁরা বজ্রমানিক হয়ে জ্বলে উঠছেন,
অনু্চ্চ কিন্তু দৃঢ়তম স্বরে বলছেন ‘লড়বো।’।
সুধী নাগরিকবৃন্দ,
আপনারা পথে নামুন বা না নামুন,
ওঁদের কিছু আসে যায় না।
আপনাদের দশ মাইলের মানুষ-শেকল আবার হবে কি না হবে,
প্রতি স্বরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’
প্রতি মনে তিলোত্তমা’র নামে পুনরায় দ্রোহ-দাবানল হবে কি না হবে, প্রশ্ন অবান্তর,
ওঁরা নির্ভরশীল নন আপনাদের ওপর।
ওঁরা লড়বেন। আপনারা থাকলেও। না থাকলেও।
ওঁরা লড়বেন। সমস্ত পরিস্থিতি জাস্টিসের বিরুদ্ধে গেলেও।
ওঁরা লড়বেন। অন্তিমে বৃহৎ অশ্বডিম্ব প্রসবের আশংকা থাকলেও।
আপনি থাকতে পারেন ওঁদের পাশে।
আবার নাও পারেন,
তবে সেক্ষেত্রে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে।
বাড়িতে যত আয়না আছে, সরিয়ে ফেলুন।
মোবাইলের সেলফি ক্যামেরায় লিউকোপ্লাস্ট সাঁটুন।
প্রতিবিম্ব দেখা যায় এমন কোনো বস্তুর সামনে খবরদার যাবেন না।
বাকিরা দেখলে দেখুক,
অন্তত নিজেরকে নিজের মুখ দেখাবেন না।
মানুষ হলে সেটা আপনি পারবেনও না।