গতকাল কলকাতা শহরে 300 কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেছে। এই বিশাল সংখ্যক পজিটিভের কারণ নিহিত আছে আমাদের “শক্ত ঘাড়ের” সাথে- যা নিয়ম বাঁকিয়ে নিজের মতো করে ফেলতে প্ররোচিত করে! শনিবার কলকাতা ও দক্ষিন 24 পরগনা যেতে হয়েছিল। শতকরা 85% মানুষ ঠিক সাইজের মাস্ক নেই, ঠিকমতো পরতেও দেখলাম না। অনেকে জৈন মুনির মতো মুখ ঢেখেছেন কিন্তু নাক খোলা, অনেকে শুধু থুতনি, কেউ বা শুধু তার থাইরয়েডকে ভাইরাস থেকে বাঁচাতে চাইছেন।
কিছু বিষয় আছে যা বিতর্কের উর্ধ্বে ও বিনা বাক্য ব্যয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মানতে হবে। ভাইরাস ড্রপলেটে ছড়াচ্ছে না বায়ুবাহিত এই বৈজ্ঞানিক চর্চা পরে করলেও চলবে। দেখা গেছে ঘন ঘন হাত ধোয়া ও ঠিকমতো মাস্ক লাগানো রোগ প্রতিরোধ করে।
বিজ্ঞান জেনে সব কিছু করা, বিজ্ঞান মেনে সবকিছু করা অতি উত্তম অভ্যাস। তার জন্য দরকার জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে জীবনের ধ্রুবতারা করতে পারা। তা কি আমরা পেরেছি? তাহলে ফেসবুক জুড়ে মানুষে মানুষে বিভেদ ও ঘৃণার আবহ তৈরী হতো না।
মাস্ক পরানোর জন্য জনে জনে প্রহরী দেওয়া সম্ভব নয়। শারীরিক দূরত্ব মানার জন্য ও প্রহরী দেওয়া যাবে না। এই কাজটা নিজেকে করতে হবে। সীমান্তে যারা লড়ছেন, তাদের জন্য আমাদের এত গর্ব, অথচ আমরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের দায়িত্ব না বুঝে চোখে আঙুল দাদার মতো অপরের ভুল ধরতে ব্যস্ত!
করোনা যুদ্ধে যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন ও আনলক রোগ ছড়াতে সাহায্য করেছে, অবৈজ্ঞানিক কাজ দেশের প্রধান প্রধান ব্যক্তিদের প্ররোচনায় দেশময় ছড়িয়েছে ও মানুষের বাঁচার ন্যূনতম বন্দোবস্ত করার পরিবর্তে করোনা উপলক্ষে বিভেদকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে তাতে আজকের বিষময় ফল প্রত্যাশিত ছিল। তবু, এই লড়াইয়ে সরকার ছাড়া উপায় নেই।
বেড়ে চলা বিপুল সংখ্যক রোগীর মধ্যে যারা ঝুঁকিপূর্ণ তাদের হাসপাতালে রাখতে হবে। এই রোগে ফুসফুস থেকে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, অনেক সময় হঠাৎ ও বেশিরভাগ সময় কোন উপসর্গ ছাড়াও রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে 85% দেখা যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের তাই পরিকাঠামোহীন পরিবেশে রাখলে মৃত্যুহার বাড়তে পারে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি বা অন্য শ্বাসজনিত পীড়া, ক্যানসার ও তার চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা।
মহামারি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা, সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়ে আবার আস্তে আস্তে কমে যাওয়ার যদি রেখাচিত্র আঁকা হয় তাকে “বেল কার্ভ” বলে। এই সময় কাল মোটামুটি তিন মাস। এই তিন মাস নিজেদের জেদ, ইগো, ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রাগ, অভিমান একটু সংযত করে সামাজিক ঐক্যের পরিবেশ রচনা করতে হবে। এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেবার জন্য সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। অনেক ভুল ত্রুটি আছে- কিছু স্বেচ্ছাকৃত, কিছু অনবধানতায়। তবু, এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য একটি অভিন্ন প্রটোকল তৈরী ও তা বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে। নাহলে, মৃত্যু মিছিল আটকানো যাবে না।
সঠিক পর্যবেক্ষন।