করোনা ছড়িয়ে গেছে। বেসরকারি ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করার সুযোগ থাকায় প্রায় প্রতিদিনই আমার একজন-দুজন রোগীর পজিটিভ বেরোচ্ছে।
লকডাউনের সময় জ্বরের রোগী খুব কম ছিল। এখন শুধুই জ্বরের আর গলা ব্যথার রোগী। বেশিরভাগের বক্তব্য হালকা জ্বর আসছে। কিন্তু খুব দুর্বল লাগছে। কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। কোন কিছুর স্বাদ গন্ধ পাচ্ছেন না। জ্বর প্রায় ছয়- সাত দিন পর কমছে।
সকলকেই কোভিড- ১৯ পরীক্ষার জন্য লিখছি। কিন্তু অধিকাংশ রোগীর আর্থিক অবস্থা খারাপ। প্রাইভেটে পরীক্ষা করতে পারছেন না। তাঁদের সরকারি জায়গায় যোগাযোগ করতে বলছি। দু-চার জন যাচ্ছেন। বেশিরভাগই যাচ্ছেন না। যারা প্রাইভেটে পরীক্ষা করছেন তাঁদের অনেকেরই পজিটিভ বেরোচ্ছে।
আমার এক স্কুলের বন্ধু, তার স্ত্রী, বাবা ও মা জ্বর নিয়ে দেখাতে এসেছিলেন। তাদের অন্তত একজনকে কোভিড – ১৯ পরীক্ষা করাতে বলেছিলাম। চারজনই করিয়েছে এবং চারজনই পজিটিভ। ওরা স্বামী- স্ত্রী ভালো আছে। কিন্তু বাবা মায়ের জ্বর, কাশি কমেছে না। লোকাল কাউন্সিলরকে জানিয়েছে। ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে। ফোনে স্বাস্থ্যদপ্তরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে।
সবচেয়ে মুশকিলে পড়েছে ওদের চার বছরের মেয়েকে নিয়ে। সে সম্পূর্ণ সুস্থ। ঘরে চারজন করোনা রোগীর সাথে থাকছে। তাকে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়ারও উপায় নেই।
যতটা সম্ভব সতর্কতা নিয়ে রোগী দেখছি। তবু জানি করোনায় আক্রান্ত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। হয়তো এ যাত্রা বেঁচে যাবো। কারণ আমার কোনো অন্য অসুখ বিসুখ নেই। তবু দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাড়ির লোকজনকে নিয়ে।
আজ থেকে মধ্যমগ্রামের কিছু জায়গায় নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু রাস্তা ঘাটের ভিড় দেখে সেটা মনে হচ্ছে না। সাধারণ মানুষই বা কি করবে। দীর্ঘদিনের লকডাউনে তাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। করোনার ভয়ের থেকে কর্মহীন হওয়ার ভয় প্রবল হয়ে উঠেছে। হয়তো করোনায় তাদের কিছু হবে না। কিন্তু তারা বাড়ির বয়স্কদের সংক্রমিত করতে শুরু করলে বিপদ আরও বাড়বে।
পরিস্থিতি সত্যিই জটিল। কি হতে চলেছে বলা অসম্ভব। নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়া আর কোনো কিছুর উপর আপাতত ভরসা করতে পারছি না। একটাই আশার কথা, এই রোগে মর্টালিটি নিঃসন্দেহ কম। না হলে এতদিনে আমাদের আশপাশ শ্মশান হয়ে যেতো।