যারা ফাঁক খুঁজে চলেছেন ডাক্তারদের এবং এই আন্দোলনের ছিদ্র খুঁজে চলেছেন —
আপনাদের সবিনয়ে কয়েকটি কথা জানাতে চাই।
কলকাতা তথা জেলার সমস্ত, আবার বলছি, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলি, যাতে জুনিয়র ডাক্তার অর্থাৎ ইনটার্ন, হাউসস্টাফ, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি এবং সদ্য এম ডি পাশ করা রেসিডেন্ট ডক্টররা থাকেন, তাঁদের কাজ সিনিয়ররা সামলাচ্ছেন। আউটডোর খোলা, ইমার্জেন্সি খোলা।
জেলাস্তরের অন্যান্য হাসপাতাল, যেমন জেলা, মহকুমা, স্টেট জেনারেল, রুরাল এবং ব্লক হাসপাতালে যেখানে সরকারি চাকরি করা ডাক্তাররা থাকেন — সেখানে কোনো কর্মবিরতির প্রশ্ন নেই।
জেলা, মহকুমা এবং স্টেট জেনারেল স্তরের সরকারি হাসপাতালগুলিতেও কিছু সিনিয়র রেসিডেন্ট এবং হাউসস্টাফ থাকেন, সংখ্যায় অল্প। তবে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এই জুনিয়র ডাক্তাররাই যেমন চিকিৎসা পরিষেবার মেরুদণ্ড, জেলা, মহকুমা বা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তেমন নয়। সেখানে সরকারি চিকিৎসকরাই মুখ্য — সিনিয়র এবং জুনিয়রদের অনুপাত সেখানে ৫:১ কিংবা আরো কম।
গ্রামীণ এবং ব্লক হাসপাতালে কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসক একেবারেই নেই, পুরো চিকিৎসাব্যবস্থার ভারই সরকারি জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার এবং অল্পসংখ্যক স্পেশ্যালিস্টদের কাঁধে।
আমি কখনোই দাবি করছি না, যে সমস্ত পরিষেবা স্বাভাবিকভাবে চলছে। বেশ কিছু নন ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার, যেগুলিকে আমরা ‘কোল্ড ওটি’ বলে অভিহিত করি, সেগুলি পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার, প্রসব, ক্যানসার কেমো/রেডিওথেরাপি, ডায়ালিসিস ইত্যাদি পরিষেবা যথাসাধ্য স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। তাই চিকিৎসকের অভাবে রোগীমৃত্যুর হাহাকার পড়ে গিয়েছে রাজ্যে — এটি অবশ্যই অতিকথন।
আমি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের একজন সিনিয়র ডাক্তার, খবরের কাগজ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মুখে ঝাল না খেয়ে আপনাদের সরাসরি যে কোনো একদিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যে কোনো বিভাগের আউটডোরে এসে স্বচক্ষে দেখে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালাম।
অতীতে বহু অত্যাচার, অনাচার হয়েছে — সুরাহা হয়নি। তাই বলে ‘আমার উপর নাই ভুবনের ভার’ বলে থেমে যাওয়ার যুক্তি দেখি না, ক্ষমা করবেন।
আর একটা কথা। অতীতের কামদুনি, শিলিগুড়ি, হাঁসখালির ঘটনার সঙ্গে বর্তমান ঘটনার মূল পার্থক্য কী জানেন? একজন কর্তব্যরত মহিলাকে তাঁরই কর্মক্ষেত্রে, সরকার পোষিত দুর্নীতির শিকার হয়ে, চূড়ান্ত অবমাননাকর এবং যন্ত্রণাময় মৃত্যুকে মেনে নিতে হয়েছে — যে কর্মক্ষেত্রের নাম ‘হাসপাতাল’। এটা গাজা বা ইউক্রেনের কিভ নয়, এটা সহজ সাধারণ, শান্তিপূর্ণ কলকাতা।
প্রতিবাদ আন্দোলনের মাধ্যমে আজ যদি এই হত্যা ও ধর্ষণকাণ্ডের জড় অবধি পৌঁছনো না যায়, ধামাচাপা পড়ে যায় সবকিছু, তবে হাসপাতালে পরিষেবা নিতে আসা যে রোগী-রোগিণীদের কথা বলছেন, তাঁদের সম্ভ্রম, শ্লীলতা ও প্রাণেরও বিন্দুমাত্র গ্যারান্টি থাকবে না ভবিষ্যতে — একথা দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আবার এমন ঘটনা ঘটবে, প্রশাসন আবারও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায় এড়িয়ে যাবেন।
এমন একদিন আসবে যে নিজের ঘরের নিভৃতিতেও কেউ নিরাপদ থাকবেন না।
অসুস্থ মানুষের প্রতি আপনাদের সংবেদকে করজোড়ে নমস্কার জানিয়েও বলছি, এই আন্দোলনের শেষ দেখতে দিন, আপনারাও চমকে উঠবেন।