সপ্তাহে দুদিন লকডাউন নিয়ে বাজারু বাঙ্গালী খুব খিল্লি করছে দেখছি। মিম ট্রোলের ছড়াছড়ি। কিন্তু এতে এত হাসাহাসি, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কি আছে বুঝতে পারছি না।
মানছি ভাইরাসের ইনকুবেসন পিরিয়ড হিসেব করে ৩ সপ্তাহ টানা লকডাউন প্রয়োজন বলে ঘোষণা করা হচ্ছিল। সেটা ঠিক, কিন্তু সেটা তখন ঠিক ছিল যখন দেশে ৫ হাজার করোনা কেস ছিল আর সারা দেশে একসাথে লকডাউন করা হয়েছিল। সেই সুযোগ আমরা হারিয়েছি। এখন ১৫ লাখ কেস। দেশের বাকি জায়গা খোলা অতএব এখন সেই পদ্ধতি প্রয়োগ সম্ভব নয়।
আর এমনিতেই মানুষের হাঁড়ির হাল। আবার টানা লকডাউন কি আমরা বহন করতে পারি? মনে হয় না। সেক্ষেত্রে এই সপ্তাহে দুদিন লকডাউনে কি লাভ হবে?
১. ধরে নিলাম রোজ লকডাউন না থাকলে ১০০০ সংক্রমণ হয়। যেদিন লকডাউন সেদিন স্বাভাবিক ভাবেই কিছু কম হবে, ধরা যাক ৫০০। তাহলে মাসে ৪০০০ কেস কম হবে। এতে হাসপাতালে চাপ কমবে। আপনি বলবেন কেন এই ৫০০ জন পরের দিন হবে। হ্যা হবে, কিন্তু পরের দিন। মানে একদিন হাসপাতালে তো চাপ কমল। মনে রাখবেন হাসপাতাল মানে শুধু বেড নয়। বেড আপনার বাড়িতেও আছে, আবার ক্যাওড়াওলা যাবার জন্যও আছে। হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এদের পক্ষে টানা পাঁচ মাস এভাবে টানা সম্ভব না। এভাবে পিপিই পরে এভাবে নিজের পরিবার, বাচ্চা থেকে দূরে থেকে, এভাবে রোজ গ্যারাজে স্নান করে ঘরে ঢোকা, কতদিন এই প্রেশার তারা সামলাতে পারবে? তার ওপর রোজ এত এত রোগী। দুমাস তিনমাস স্ট্রেচ করা সম্ভব তার পর ফেটিগ আসবেই। সেক্ষেত্রে যদি এই রোগীর প্রেশার একটু ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাতে লাভ রোগীর।
২. শুধু স্বাস্থ্য কর্মীরা নন। বাকি যারা ব্যাংকে কাজ করেন, বা অন্যান্য অফিস বা ব্যাবসায়ী তাদের পক্ষেও কি টানা সপ্তাহে ছদিন একই ভাবে সাবধানতা অবলম্বন করা সম্ভব? না। ক্লান্তি আসবেই, তাতেই আসবে অসাবধানতা আর তাতেই বাড়বে ইনফেকশন। সেখানে সপ্তাহে দুদিন এই মাস্ক, শারীরিক দুরত্ব আর স্যানিটাইজেসন থেকে বাড়িতে বসে খানিক রেহাই তো মিলবে। বাকি তিন চারদিন আবার টেনে দেবেন তারা মাস্ক পরে।
এখন ভাইরাসকে আর লকডাউন করে কন্ট্রোল করা সম্ভব না এটা মানুন। এখন লকডাউন একটু শক্তি সঞ্চয় করে রাখার জন্য আর একটু সময় কেনার জন্য যতদিন এর স্থায়ী সমাধান না আসে।
হাসাহাসি না করে নিজের দায়িত্বগুলো পালন করুন প্লিজ।