আজ একটি নিঃশর্ত জোট বাঁধার কথা লিখবো। না, জোটের কথা শুনেই হঠাৎ মাতালের হাতে ধরা মদের গ্লাসের মতো ছলকে উঠবেন না যেন! এ আপনার ভোটের আগের বহু আকাঙ্খিত রাজনৈতিক জোটের কথা নয়।
অতএব, বাকিটা পড়ার আগে যদি ছেড়ে দিতে চান, দিন। আপনার হতাশ জীবনে আশার আলো আনার জন্য এ লেখা নয়।বরং এই বাজারে খানিকটা অস্বস্তি হতে পারে। অতএব, সাধু সাবধান। এ এক ‘কহানি পাত্থর কি’!
সত্যি ঘটনা অবলম্বনে- এই ডিসক্লেইমার আর আলাদা করে দেবো না, কারণ আমার কল্পনাশক্তি এমনিতে খুব কম বলে, যা টুকটাক লিখি, সবই বাস্তব জীবন থেকে নেয়া ঘটনাই! আরো বলা ভালো, ডাক্তারি জীবন থেকে থেকে নেয়া ঘটনা।
অনেকে বলেন, কেন এসব ঘটনা লিখবো? রোগীর কথা তো লেখা যায় না! মানবিক ডাক্তার হলে তো আরোই নয়!
দাঁড়ান খানিক। মানবিক ডাক্তার বলতে কি বোঝায়? মিডিয়ার বক্তব্য না শিখে নিজের মগজ থেকে বলুন তো!
যে মানুষের ডাক্তারি করে, যার দিনরাত ওঠাবসা মানুষের সঙ্গে, যার হাত নিজের অজান্তেই ছুঁয়ে ফেলে একজন মানুষের হৃদস্পন্দন, বোঝার চেষ্টা করে- এই হৃদয় সুস্থ না অসুস্থ, সে মানুষ যদি মানুষের কথা লেখে, দয়া করে তাকে রাজনৈতিক ঠুলি পরাতে যাবেন না! এই মানুষগুলোর কথা যদি লেখা না যায়, যদি এদের নিয়ে লেখা মানবিক না হয়, তাহলে কি রাজনীতি করতে হবে মানবিক হবার জন্য? সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবী হতে হবে মানবিকতার ঢোল বাজাতে? পারলাম না মশাই!
আপনি মানবিক হবার জন্য যেখানে পারেন যান, যে থালায় পারেন খান! খেতে না পেলে ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্টের জন্য অপেক্ষা করুন। কেউ আটকাবে না।
আমি এদিকেই যাচ্ছি, একটা জীবনকাল এদিকেই হেঁটে যাবো মাথা নিচু করে! এদিকে এখনো মানুষ আছে।
যাকগে, আইন মেনেই রোগীর নামধাম প্রকাশ করার মতো বালখিল্য কাজ আমি করি না। সত্যি বলছি , ভালো লাগতো যদি সেটাও করতে পারতাম! এই সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের নাম ধরে এক একটি গল্প লিখে যদি এই সমাজের প্রত্যেকটি দেয়ালে সেঁটে দিতে পারতাম, ভালোই লাগতো!
যেটি হবার নয়, সেটি নিয়ে ভেবে লাভ নেই। তবু বেনামে হলেও যে মানুষটির কথা লিখছি, আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাদের কাছে যেতে পারার এই সুযোগটা না পেলে, জীবনে হয়তো অনেক অপ্রাপ্তি থেকে যেত।
এ ঘটনা এই গত পরশুর।
সকালবেলা বেশ ফুরফুরে মেজাজে নিজের কাজ করছি। কাজ মানে – পেটের ছবি মানে ইউএসজি করা।
হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে এলেন বছর ষাট এর এক ভদ্রলোক। হঠাৎ এভাবে ঢুকে পড়ায় খানিক বিরক্ত হই।
মুখ তুলে তাকাতেই দেখলাম- তিনি লজ্জিত। বিনম্র মার্জিত গলার স্বর। – মাফ করবেন ডাক্তারবাবু। আমি না বলেই ঢুকে পড়লাম।
– আচ্ছা বলুন কি সমস্যা?
– এরপর যে রোগী আসবে, সে আমার ভাই। একটু দেখবেন।
বুঝলাম, রোগীর সঙ্গে আসা মানুষ স্বভাবতঃই খানিকটা ব্যস্ত হন। হেসে বললাম – একটু নয় , পুরোটাই দেখবো।
ভদ্রলোক আশ্বস্ত হলেন।- আপনাকে কি রোগীর সমস্যাটা বলতে পারি?
– অবশ্যই।
যেটুকু জানলাম, সেটি হলো- বেশ কয়েক বছর আগে ধরা পড়েছিল পিত্তথলির পাথর।
তারপর, যেমনটা হয়, বেশিরভাগ মানুষ প্রথমে অপারেশন করাতে চান না। অপারেশনের নাম শুনলেই তারা অন্য বিকল্প ভাবতে শুরু করেন। সে বিকল্পগুলো কি সবাই জানে। কিন্ত আধুনিক চিকিৎসা মতে, অপারেশনই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা!
এই ভদ্রলোকও সেটাই করলেন। এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে একজনের কাছে জানলেন- পাত্থর গলে যায়! কয়েকটি দানা আর কয়েকটি ফোঁটার কামাল!
আমি মাঝে মাঝে এসব শুনে বাইরে বাইরে হাসি। বুকের ভেতরে কাঁদি। মগজের ভেতরে রেগে যাই।বলতে পারি না যে, ওতে পাথর দিলে গলে যেতে পারে, কিন্ত পিত্তথলির পাথর গলে না! কোনদিন গলেছে বলে চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে অন্ততঃ লিপিবদ্ধ হয়নি!
বললাম- এখন কি সমস্যা নিয়ে এসেছেন?
– খুব শ্বাসকষ্ট।
– আচ্ছা।
আমি বুঝতে পারি- আমারও কেমন যেন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এই এক গল্প, এই এক রকমের শয়ে শয়ে রোগী, এই এক রকমের ধাপ্পাবাজি, এই এক রকমের শ্বাসকষ্ট- প্রতিদিন আমার ঘরের ভেতরে অক্সিজেন কমিয়ে দেয়। আমার চারপাশে বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড, মনোক্সাইড জমতে থাকে।
আমি ঘর ছেড়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে চাই। পারি না।
পারি না বলেই শেষ পর্যন্ত আমারও শ্বাসকষ্ট হয়!
রোগী বিছানায় শুতে পারছে না। বললাম- একটু সময় দিন। না হলে কি করে হবে?
বলতে ইচ্ছে করছিল- আরে আমি তো আর তিয়াত্তর বছর ধরে নেতাদের মতো পাঁচ বছর অন্তর পাঁচ বছর করে সময় চাইনি!
এতোটা সময় দিয়ে যে মানুষটি ভেবেছিল- পাথর গলে যাবে, সেই মানুষটি তবু প্রচণ্ড বিরক্ত হয়। হয়তো বা ভেতরে থাকা পাথরগুলো একটু একটু করে ঠুকে যাচ্ছে তার জীবনীশক্তিকে।
– পারবো না। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
শুনতে কেমন যেন এই দেশের মৌলিক অধিকার বঞ্চিত আমজনতার আর্তির মতো লাগছে না?স্বাধীনতার পর এতো বছর ধরে, তারা ভেবেই চলেছে– দেশের নীতি নির্ধারণকারীরা যতোই ধাপ্পাবাজি ফাটাক, একবার অন্ততঃ তাদের কথা ভাববে, তাদের অসুখকে চিনবে, জানবে, একজন অন্ততঃ তাদের দুঃখের পাথর গলিয়ে দেবে!
তা হয় না। সে রকম নেতা কাম ডাক্তার তাদের কপালে জোটে না!
তারা বারবার চেষ্টা করতে থাকে। বিকল্প পথে হাঁটতে যায়। তারপর যথা পূর্বম তথা ….
মনে পড়ে যায় একটি বাংলা প্রবাদ –
কপালের নাম গোপাল,
কেনে গাই, হয় আবাল।
ওই বিখ্যাত ওষুধ বিক্রেতাদের দেয়া ভাঁওতাবাজির ফলাফলের মতোই, নেতাদের ভাঁওতাবাজির ফলে দুঃখের পাথর দিন কে দিন বড় হতে থাকে!
মানুষের ভাগ্য ঠুকতে থাকে সেই পাথরে।
তারা রক্তাক্ত হয়। রক্তাল্পতায় ভোগে। শেষে একদিন- খুব শ্বাসকষ্ট হয়!
সেদিন প্রত্যেকটি মানুষ একা, প্রত্যেকটি মানুষ নির্দল। সে দিন তাঁরা অদৃষ্টের উপর ভরসা করতে শুরু করে। আর তখনো, একদিকে রমরমিয়ে চলে তাদের অদৃষ্ট বিক্রির ব্যবসা। দোকান বসতে থাকে পথে ঘাটে, উপাসনালয়ে, ভোটের জনসভায়, টিভির চ্যানেলে, মন্ত্রাণালয়য়ে, সংসদে, গবেষণাগারে! মোহনীয় বিজ্ঞাপনে ছেয়ে যায় দশ দিক।
সে মানুষ জেতে না। জিততে পারে না। হায় রে, ভোট! হায় রে জোট!
বললাম – পারবেন না বললে হবে না। একটু সময় দিন। না হলে অসুখ জানা যাবে না। চিকিৎসা হবে না।
কি, এবার আমাকেও রাজনৈতিক নেতা মনে হচ্ছে তো? হোকগে। আপনাদের অনেক কিছুই মনে হয়!আমি ভোট চাইনি। ভোট চাই না।
চটজলদি নিজের কাজ শুরু করি। তাড়াতাড়ি বাকি সব দেখে নিয়ে চলে আসি পিত্তথলি দেখতে।না! পিত্তথলি তো দেখতে পেলাম না!
তার বদলে যা দেখলাম সেটা বেশি ঘটা করে বলতে যাবো না। পিত্তথলির পাথর গলে যাওয়া তো দূরের কথা, সেই পাথরের চারপাশে পিত্তথলি জুড়ে তৈরি হয়েছে একটি বড় সাইজের ক্যান্সার। সেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশে … ক্ষুদ্রান্ত্রে, লিভারে! তার সাথে পেটে, বুকে জমেছে জল।প্রভাব পড়েছে হৃৎপিণ্ডের উপর! শ্বাসকষ্ট!
এই পরিসরে ছোট্ট কয়েকটি ডাক্তারি তথ্য দিই- পিত্তথলির ক্যান্সার খুব কমন নয়। ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। আর ধরা পড়ার সময় প্রায় সব রোগীর ক্ষেত্রেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে অন্য কোথাও। ধরা পড়ার পর পাঁচ বছর বেঁচে থাকা মানুষের শতকরা হিসেব হয়তো পাঁচ পার্সেন্টও নয়!! এ থেকে যা বোঝার বুঝে নিন।
একবার মনে হলো- ক্রুর হাসিতে ফেটে পড়ি।
একবার মনে হলো- প্রচণ্ড রেগে যাই!
একবার মনে হলো- কেঁদে ফেলি! তারপর মনে হলো – না! অনেক হয়েছে! এইবার এইসব মানুষের দল ছেড়ে অন্য কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করি মহাসমারোহে !! অন্ততঃ সবাই জানবে – আমি ‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাই!’ প্রতিবার নিজেরটা গুছিয়ে নিয়ে অন্য দলে চলে যাবো।
আর এই মানুষগুলো অসহায় হয়েও বিশ্বাস করবে – এ বুঝি আমাদের মসিহা! আর আমি সেই সুযোগে পরের বার চাটার্ড বিমানের টিকিট খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়বো।
মনে হলো- সত্যি যদি কোনদিন সুযোগ পেতাম, ক্ষমতা ব্যবহার করার সুযোগ পেতাম- কি জানি হয়তো এই ধরনের মানুষের জন্য কিছু করতে পারতাম!!
আমি জানি, সে কাজ আমি পারবো না। তাড়াতাড়ি রিপোর্ট লিখে দিয়ে রোগীকে বাইরে পাঠালাম।
ফিরে এলেন সেই ভদ্রলোক।
– আপনার কে হন উনি?
– ভাই।
বললাম- শুনুন, এখন যা অবস্থা হয়েছে, তাতে জলদি একটা বায়োপসি করিয়ে দেখুন কি করতে পারেন।
আমার চোখ এড়ালো না- ভাই বলে ডেকেছেন বটে, তিনি তার মায়ের পেটের ভাই নন! রোগীর নামটা আমার চোখে ভাসে।
এই দেশে দুই ভাইয়ের জাত ধর্ম আলাদা, আর দুই ভাই একে অন্যকে ভাই বলে ডাকবে, এ জিনিস চোখের সামনে দেখা তো দূর, কল্পনা করতেও খানিকটা সময় লাগে, শক্তি লাগে, সহিষ্ণুতা লাগে!
কিন্ত ভদ্রলোক বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করেই জোর গলায় যখন বললেন ‘আমার ভাই’, ঠিক তখনই আমি বুঝলাম- গোল্লায় যাক এইসব চলমান রাজনীতি আর ভড়ং!!
ভদ্রলোক খানিকটা আহত হলেন। বলে চললেন – আমি জানি কেন এটা হলো! পাথর পাথর এতোদিন কেউ ফেলে রাখে!
আমি চুপ করে আছি।
ইচ্ছে হচ্ছিল একবার ব্রিগেড সমাবেশে একটা মঞ্চে দাঁড়িয়ে, মাইকের ভলিউম সর্বোচ্চ করে দিয়ে – লাল নীল হলুদ সবুজ সব পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে লাখ লাখ মানুষকে জিজ্ঞেস করি – “পাথর! পাথর! এতোদিন কেউ ফেলে রাখে?”
মনে হচ্ছিল তারপর দেখতে পাবো- লাখ লাখ পাথরে ঠুকে যাওয়া রক্তাক্ত মানুষ একটা একটা করে পাথর তুলে ছুঁড়ে মারবে বঙ্গোপসাগরে! আমি সেই মিছিলের শেষ থেকে শুরু করবো নতুন মিছিল। উল্টোদিকে।
– ডাক্তার বাবু, কিছু আশা আছে?
বলতে পারলাম না যে- এদেশে আশা করবেন না!
এদেশে আশা বাঁচে না! এদেশে সব আশাকে পাত্থর চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হয়! তারপর নিরাশাই বেঁচে থাকে আর তাই নিয়ে ব্যবসা চলে জোরকদমে!
এখানে মানুষের কোন দল নেই!!
মানুষের জন্য কোন দল নেই!
বোঝালাম চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস থেকে পাওয়া নলেজ দিয়ে। বোঝালাম- এই হলো পরিসংখ্যান। দেখুন কি করা যায়।
ভদ্রলোক বোধহয় দাঁতে দাঁত চেপে ধরে আছেন।
দৃঢ় কন্ঠে বললেন- ঠিক আছে ডাক্তার বাবু। আপনি যা যা বললেন, তাই করাবো।
ভদ্রলোক বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমি অন্য রোগীকে দেখাবো এবার।
হঠাৎ ভদ্রলোকের যে কথাটি শুনে চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাতে গিয়ে প্রায় চেয়ার থেকে পড়ে যাচ্ছিলাম সেটি হুবহু তুলে দিচ্ছি – সাথের কাউকে বলেছেন- “ভাইয়ের ক্যান্সার হয়েছে! ভাই তো আর ক্যান্সার নয়! চিকিৎসা হবে!”
কি জানি হয়তো ক্যান্সার শুনে অন্য কেউ ছোঁয়াচে রোগ অব্দি ভেবে বসেছেন!
এদেশে মানুষ শুধুমাত্র বাইরের পোশাক দেখে মানুষকে অব্দি ছোঁয়াচে ভাবে! সেখানে ক্যান্সার তো প্রায় আসন্ন মৃত্যুদূত!
এই সহজ সত্যি কথাটি কানে বাজতে থাকলো সারাটা দিন। বাজবে আরো বহুদিন ধরে!
সত্যি বলতে- কোন রাজনৈতিক দলের নেতা মন্ত্রী কর্মীদের বলতে শুনলাম না যে – ও আমার ভাই । ওর শরীরে বাসা বেঁধেছে জাত পাত ধর্ম মিথ্যা লোভ ও মোহের ক্যান্সার। কিন্ত ও তো ক্যান্সার নয়!! কি হয়েছে? চিকিৎসা হবেই!
এই দেশে কত কিছুই যে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে গেছে আমাদের মগজে, সে হিসেব আমরা রাখিনি!
আমরা হিসেব করেছি- কার কার কি কি ক্যান্সার হয়েছে, কার কোনটা ছোঁয়াচে – তাকে ছোঁব না!
ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে হবে- এটি আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা নয়। আজো!
এই লেখাটি লিখতে লিখতে অব্দি আমি ভাবছি – এই সহজ সত্য কথাটি এদেশের মানুষ এতো সহজে বুঝবে না!! আগেও বোঝেনি!
আজ এ দল, কাল ও দল করে যাঁরা ভাবছেন মানুষের জন্য কাজ করবেন, যাঁরা ভাবছেন এই সব মানুষের দুঃখ ও দুঃখের কারণ দূর করবেন, জমে থাকা পাথরকে আরো বড় হতে দেবেন, অপারেশন করবেন না বা করতে দেবেন না, গলে যাবে বলে ভাঁওতা দেবেন, তাঁদের বলবো – আপনারা যা করছেন সেটাই করুন!
না! তথাকথিত রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সামান্যতম ইচ্ছে আমার নেই। তবু চুপিচুপি একটা খবর দিয়ে যাই- দল আমারও আছে! সে দলে এই মানুষগুলোও আছেন। আমরা ডাক্তাররা আছি। স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন। আর হ্যাঁ, আমাদের ভোটাধিকারও আছে!
এতো বছর হতে চললো- এইসব মানুষের অবস্থা বিন্দুমাত্র পাল্টাতে দেখিনি তো কি হয়েছে?
এই যে ভদ্রলোক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে নিঃশর্ত জোট বাঁধার কথা বললেন ক্যান্সার আক্রান্ত ভাইয়ের সাথে, এই যে ভদ্রলোকের কঠিন গলার স্বর –
এই যে ভদ্রলোক পাত্তাও দিলেন না দু’জন জন্মদাত্রী মাকে, পাত্তা দিলেন না কোন উপসনালয় কে অব্দি, পাত্তা দিলেন না কোন অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তাদের, পাত্তা দিলেন না কোন ঠিকাদারদের, পাত্তা দিয়ে গেলেন আমার মতো নিতান্তই একজন অনামী ডাক্তারকে, এই যে মানুষটি অনায়াসে বলে গেলেন- …. ভাই ক্যান্সার নয়, এই একটি মাত্র কথা শোনার জন্যই আমিও আছি এই দলে! আমি বা আমরা – আছি এই জোটে।
বিগত পনের বছর ধরে এই জোটে আছি। সম্ভব হলে ভবিষ্যতের পনেরোশো বছর থাকতে রাজি আছি!
আমাদের দলের কোন পতাকা নেই।
আমাদের দলবদলের হিড়িক নেই!
আমাদের আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশ নেই।
আমাদের ভোট চাওয়ার তাগিদ নেই।
আমাদের পদের লোভ নেই।
আমাদের অমুক তমুককে হঠাৎ হঠাৎ ভালো লাগে না!
শুধু আমার বা আমাদের মতো আধুনিক চিকিৎসকদের কাছে এ এক অলিখিত নিঃশর্ত জোট।
কেউ কেউ বলেন – আমরা নাকি দেশদ্রোহী!
তা হলাম না হয়! এই তকমায় আপত্তি নেই, গর্ব আছে।
আপনি মশাই না দেখতে পেলে চোখ কচলাতে থাকুন। কচলাতে থাকুন যতক্ষণ না আপনার চোখ থেকে উঠে যায় ভাঁওতাবাজির পর্দা। মাথা ঠুকতে থাকুন পাথরে! ঠুকতে থাকুন ততক্ষণ, যতক্ষণ অব্দি আপনার শ্বাসকষ্ট না হয়!
এই জোটে আসবেন একদিন! আসতে হবে আপনাকেও।
অসুখ বিরোধী,
আমি ও আমরা- রুগ্ন মানুষের সাথে বেঁধেছি জোট।
মৃত্যু নিরোধী ,
করিনি হিসেব লাভ, ক্ষতি, পদ, করিনি হিসেব ভোট!
অসাধারণ
দারুন।