– মনা, দাদুকে বলে দও তমার কী হচ্যা
ঘাড়ের ওপর তিন-চারজন রোগী। সামনে যতদূর চোখ যায় লাইনের শেষ নেই। একটানা ঘাড় গুঁজে রোগী দেখে যাচ্ছি। অনেকক্ষণ ধরে একটু চা খাওয়ানো ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু উঠতে পারছি না। অবিশ্রান্ত চিৎকার চেঁচামেচি। রোগের ইতিহাস নিতে গিয়ে চেঁচিয়ে গলা ফেটে যাচ্ছে। এরকম অবস্থায় এসব কথা কানে এলেও ঠিক মাথায় আসে না।
– তমার ছাতি-এ কী হচ্যে জামা তুল্যা দেখি দও দাদুকে।
এবার একটু অবাক হলাম। আশেপাশে আপাতত সেরকম বয়স্ক কাউকে দেখছি না। চোখ না তুলে প্রেসক্রিপশন লিখছি। লেখা শেষ করে বাচ্চার বাবার হাতে কাগজটা দিতে আমাকে দেখিয়ে ‘মনা’কে বললো– দাদুকে নমস্কার কর ত বাবু। কত ভালঅ কর্যা তমাকে দ্যাখছ্যা…
এইবার পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হ’ল। ‘দাদু’টি তাহলে আমি! ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বাসে প্রথমবার ‘কাকু’ শুনেছিলাম কিন্তু ‘দাদু’ শোনার সৌভাগ্য এই প্রথম। নিজের মনে খুব একচোট হেসে নিলাম। অবশ্য অপসৃয়মান কেশরাজি দেখে ‘দাদু’ ভাবাটা খুব অসম্ভবও নয়। তার ওপর মাস্কের আড়াল…
আসলে এই টুকরো হাসিগুলো বাদ দিলে বাকি সময়টা কী বিপুল অন্ধকার! অগুনতি মৃত্যুমিছিলে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। রোগী-হাসপাতাল-আইসিইউ-ভেন্টিলেটর… সেসব তো ছিলই, শেষ ক’দিনে খুব পরিচিত কতগুলো মুখকে হারিয়ে যেতে দেখলাম, যাদের প্রত্যেকের এখন জীবনের গান গাওয়ার বয়স। ফেসবুকের পাতায় এখনো তাদের জীবনের উৎসবের রোজনামচা। তারা খাতায় কলমে এখনো আমার ফেসবুক-বন্ধু। ক’দিন আগেও কথা হয়েছে। আমার এলেবেলে হাতমকশো লেখার তলায় এখনো তাদের উপস্থিতি। ভাবতেই পারছি না, সেসব প্রোফাইলের মালিকেরা এখন ডিসেকশন টেবিলে লিভার-কিডনি-লাংস-হার্ট-ব্রেন হয়ে আছে। আধো অন্ধকার, ফর্মালিন গন্ধ ঘরে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো কাটাছেঁড়া হবে। যে বুকজুড়ে তারা সুখের দিনের গল্প লিখছিল অথবা অন্তত বাইরের লোকে তাই জানছিল, আজ হঠাৎ সেই বুক চিরেই খুঁজে দেখা হবে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ। এ অমোঘ সত্যের সামনে কোনও সাহিত্যের লালিত্য নেই। এ ‘চিরে যাওয়া’য় কোনও কলমের আঁচড় নেই। কোনও রূপকের আশ্রয় নেই। এই ‘চিরে যাওয়া’ আক্ষরিক অর্থেই কেটে ফালাফালা করে ফেলা। ডিসেকশন-নাইফ মায়ার তোয়াক্কা করে না।
জলজ্যান্ত মানুষটা চলে গেলে শুধু স্মৃতিটুকু ছাড়া আর কিচ্ছু পড়ে থাকে না। ওই বুঝি জুতো ঘষটে আসার শব্দ! ওই বুঝি রান্নাঘরে চায়ের কাপের টুং! ওই বুঝি পরিচিত গন্ধটা! না থাকাটাও সয়ে আসে একদিন। অবসন্ন চোখের ওপর ভালোবাসার হাত রাখে সময়।
বহুদিন বাদে বেশ সকাল সকাল ঘুম ভেঙেছে। ব্যালকনি ছুঁয়ে নরম রোদ। আকাশটাও কী অসামান্য নীল! রুজিরোজগারের লড়াই, বিকেল গড়িয়ে ঠান্ডা ভাত, অগণিত মানুষের কর্মব্যস্ততা, পেশীতন্তুতে অদৃষ্টের প্রতি সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ… কোথাও কিচ্ছুটি বদলায় নি। যাদের ছাড়া এক মুহূর্তও কাটিয়ে ফেলা অসম্ভব মনে হ’ত আমরা তাদের ছাড়াই দিব্যি হাঁটতে শিখে যাই। ছোট ছোট আনন্দ তখনও ছুঁয়ে যায়। রাস্তায় বুনো ঝোপের সাথে একটা নীল অপরাজিতা ফুটে আছে। বিজয়া দশমীর বিসর্জন শেষে হাতে বেঁধে দেওয়া হয়। ছোটবেলায় আমাদের ছোট্ট টালির চালের ভাড়াবাড়ির পাশে অসংখ্য নীল অপরাজিতা ফুটে থাকতো। ক্লাবের ছেলেরা পুজো-মণ্ডপে নিয়ে যেত। বিসর্জন শেষে বামুনঠাকুর সবার হাতে বেঁধে দিতেন। তারপর কোলাকুলি, প্রণাম। ‘অপরাজিতা’ হারতে দেয় না। ‘অপরাজিতা’ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র শোনায়। বাড়ির মেয়ে চলে গেলে মারীর দেশ ‘অপরাজিতা’র আশ্রয় চায়।
(ছবিগুলো সকালে মোবাইল ক্যামেরায় তোলা)
Dear Sauma — I am an old man now.Running 88 yrs. Should have sent this comment to your very moving composition in my MOTHER TONGUE – BELOVED “BANGLA” — but couldn’t as I am very naive with today’s galloping IT technolodgy. I am –” Nijadeshe Porobashi ” — nana karone /nijo icchate noi. Leaving in Pondicherry but certainly not in ” Famous Ashramer Chotrotolaye”. I congratulate your style of presentation of a serious matter — so that it stires up even the most insolent and cold casual perviewer. Your write ups and that of jayanta Bhattacharya — assure me– in my twilight years — that not all of Intellectual Bengali Medical Intelligentsia — have retreated into — 19th. century Dickensian England’s Pickwick Clubs fraternity as ” Happy boy Joe-s “. Keep up your flame and keep dishing such PITHY BLOGS — a WARM HUG from my rusty body and mind…..nirmalyada