ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার খবর অনুযায়ী (১৯.০৬.২০২০) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন করোনা সংক্রমণ দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রিকার রিপোর্ট বলছে – WHO chief Tedros Adhanom Ghebreyesus said nearly half of the newly reported cases were from the Americas, with significant numbers from South Asia and the Middle East… The head of the World Health Organization said the coronavirus pandemic is ‘accelerating’ and that more than 150,000 cases were reported yesterday – the ”highest single-day number so far.” অর্থাৎ, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ থেকে ৬ মাস অতিক্রান্ত হবার পরেও একদিনে দেড় লক্ষের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এগুলো আমাদের জন্য খুব স্বস্তিদায়ক খবর নয়।
এপ্রিলের পরে ১৪ জুন, ২০২০-তে NDTV-র রিপোর্ট অনুযায়ী চিনে একদিনে সর্বোচ্চ ৫৭ জন নতুন করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে, বেইজিং সহ। যে দেশ থেকে করোনার উৎপত্তি এবং যেখানে কঠোরতম লকডাউনের মধ্য দিয়ে করোনা সংক্রমণকে রোখার চেষ্টা করে সফলও হয়েছে সে দেশে এতদিন পরে আবার সংক্রমণ? তাহলে করোনা প্রতিরোধের ইমিউনিটি কি করোনা আক্রান্ত হবার পরেও গড়ে ওঠে না? প্রশ্ন আসবে আমাদের মনে, মানুষের ইমিউনিটির চরিত্র কেমন?
বর্তমান সময়ে আমার পড়া অন্যতম সেরা যুদ্ধবিরোধী কবিতা রবার্ট সাদির “After Blenheim (The Battle of Blenheim)” একবার স্মরণ করা যেতে পারে – ব্লেনহেইমের যুদ্ধে নিহত কোন এক সৈনিকের খুলি হাতে ধরে শিশু পিটারকিন প্রশ্ন করেছিল – “But what good came of it at last? / Quoth little Peterkin.” করোনার সঙ্গে যুদ্ধেও আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে ভ্যাক্সিন তৈরি এবং সেটা কার জন্য মূলত ব্যবহৃত হবে – এ নিয়ে লড়াই আজ শুরু হয়েছে সেখানে পিটারকিনের মতো প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে – “বাট হোয়াট গুড কেম অফ ইট?” হয়তো কর্পোরেট শক্তির লাভ হবে। কিন্তু আমজনতার? প্রসঙ্গত স্মরণে রাখবো করোনার অনুষঙ্গে ব্যবহৃত যুদ্ধধর্মী শব্দের ব্যঞ্জনা। আমরা সবার বিরুদ্ধে জিততে চাই – প্রকৃতির বিরুদ্ধেও। তাই এতদিন প্রাণীদেহে মহানন্দে বাস করা ভাইরাসকে এর বাসচ্যুত করে আমাদের শরীরে বসবাসের জন্য ডেকে এনেছি। কিন্তু কি প্রকৃতি, কি মানুষ কারওরই সাথে যুদ্ধের অদম্য স্পৃহায় আমাদের ঘাটতি নেই। আমরা এক অদ্ভুত সময় অতিক্রম করছি যখন অবদমিত আতঙ্ক এবং ভেবে-নেওয়া মৃত্যুভয়ের সমাপতনে হাইড্রোক্সক্লোরোকুইনের মতো চিকিৎসার গুজব, অতিকথা এবং গল্পগাছায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। এমনকি কিছুক্ষেত্রে চিকিৎসকেরাও হয়তো ব্যতিক্রম নয়। নেচার-এ (২৭.০৪.২০২০) প্রতিবেদন লেখা হয় – “Pseudoscience and COVID-19 — we’ve had enough already”। সে প্রতিবেদনে বলা হয় – “Cow urine, bleach and cocaine have all been recommended as COVID-19 cures — all guff… And countless wellness gurus and alternative-medicine practitioners have pushed unproven potions, pills and practices as ways to ‘boost’ the immune system.” নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ বিশেষ প্রবন্ধ লেখা হয় – Covid-19 – A Reminder to Reason (এপ্রিল ২৯, ২০২০)।
এ যেন এক মৃত্যুমিছিল চলছে – করোনার মৃত্যুমিছিল। ২১.০৬.২০২০-তে worldometer-এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮,৯১৫,৮৯১ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪৬৬,৭২৮ জনের, সেরে উঠেছে ৪,৭৩৮,৬২৩ জন। এর মধ্যে খোদ আমেরিকাতেই মৃত ১২১,৯৮১ জন। সংক্রমণের হারে ভারত এখন ৪র্থ স্থানে – সংক্রমিতের সংখ্যা ৪১১,৭২৭, মৃত্যু ঘটেছে ১৩,২৭৭ জনের, সেরে উঠেছে ২২৮,১৮১। কিন্তু ভারতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ এখনো ঊর্ধমুখী বা এক্সপোনেনশিয়াল। তাহলে আমাদের মুক্তির উপায় কি? এখানেই আসবে আমাদের ইমিউন সিস্টেম নিয়ে প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার প্রসঙ্গ।
কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস ঘটিত যে ভয়ঙ্কর সংক্রমণের সময় আমরা অতিবাহিত করছি সেটা একেবারেই অচেনা, আগন্তুক। মানুষের শরীরের সাথে এর কোন পূর্ব পরিচয় ছিলনা। আগে যে আরএনএ ভাইরাস ঘটিত মহামারি হয়েছে – যেমন, ২০০২-৩-এ সার্স-কোভ-১ বা ২০১২-তে মূলত মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ মার্স (MERS) – সেগুলোর থেকে এর চরিত্র ভিন্ন। এর গায়ে থাকা স্পাইক প্রোটিনের ফলে সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি। সাধারণ ফ্লু-র চেয়ে ১০ গুণ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা। যদি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে তাহলে স্থায়ী সমাধান হবে, যেমনটা হাম, পোলিও বা স্মল পক্সের ক্ষেত্রে হয়েছে – বছরের পরে বছর ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে লাগাতার প্রচার এবং প্রতিটি দেশে সার্বজনীন টীকাকরণের ফলে। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া এ রোগগুলো এখন পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গেছে।
দুভাবে আমরা করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে স্থায়ীপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারি। এবং এ দুটোই একমাত্র পরীক্ষিত কার্যকরী পথ।
(১) সমষ্টিগত বা হার্ড (herd) ইমিউনিটি
যদি ৭০% থেকে ৯০% জনসংখ্যার সংক্রমণ ঘটে (১০.০৪.২০২০-তে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) তাহলে আমরা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছি এমনটা ভাবতে পারি। এরকম একটা পরিসংখ্যান প্রায় অসম্ভব। নিউ ইয়র্কের মতো করোনা-বিধ্বস্ত শহরে যেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৪,২৯৯ জনের (সমগ্র ভা্রতের চেয়ে অনেক বেশি) সেখানে শহরের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ১২.৩ থেকে ১২.৭% আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ওখানেও হার্ড ইমিউনিটির কোন ভরসা বৈজ্ঞানিকেরা দেখতে পাচ্ছেন না।
আমরা দুটো বিষয় নিয়েই একটু বিস্তারে কথা বলে নিই। ভাইরাসের প্রজনন সংখ্যা (রিপ্রোডাকশন নাম্বার) দিয়ে এর গতিপ্রকৃতি এবং সংক্রামিত করার ক্ষমতা মাপা হয়। একে বলা হয় R0 – যা দিয়ে বোঝা যায় একজন সংক্রমিত মানুষ ক’জনের মাঝে এই ভাইরাসকে পৌঁছে দিতে পারে। সংক্রমণের সময় সাধারণভাবে এ সংখ্যা ২-২.৫। চিনের য়ুহানে একসময়ে এটা ৪ অব্দি পৌঁছেছিল। এখন এ সংখ্যা ০.৩২-এর নীচে এসে পৌঁছেছে। এখানে আরো পরিষ্কার করে বলা দরকার – এপিডেমিওলোজির ভাষায় সংখ্যাটি ১-এর নীচে গেলে সম্পূর্ণ সংক্রমণমুক্ত বলা যেতে পারে না। যেটা হয় তাহ’ল সংখ্যাটি ১ এর নিচে গেলে নতুন করে সংক্রমণ হয়ে মহামারীর আকার ধারণ করার ক্ষমতা আর থাকে না। ১ এর নিচে গেলে নতুন সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়, নতুন ক্লাস্টার হবার সম্ভাবনা কমে যায়। একে সঠিক অর্থে সংক্রমণ মুক্ত বলা যায় না। Effective Reproduction Number 0.২৫ মানে আগে যদি R = ২ হয়ে থাকে যেখানে একজন মানুষ দুজনকে সংক্রমণ করছিলো (R = ২ ), এখন উল্টোটা, ৪ জন সংক্রমিত ও আক্রান্ত লোক লাগবে একজনকে রোগ ধরাতে গেলে, অর্থাৎ, খুব বড় ক্লাস্টার ছাড়া আর রোগ টিকবে না। ফলে সংক্রমণ ছড়াতে প্রায় পারবেনা বললেই চলে। এটা ঠিক সংক্রমণমুক্ত নয়, তবে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে একথা বলা যায়। ক্লাস্টারগুলো খুলে গেলে আবার ছোট বড় মহামারী হতে পারে, যেমনটা চিনে কিংবা সিঙ্গাপুরে হচ্ছে। আমরা এ লেখার শুরুতেই চিনের উদাহরণে দেখলাম।
হার্ড ইমিউনিটির চরিত্র নীচের ডায়াগ্রামটি থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারবো।
(২) টীকা বা ভ্যাক্সিন
হার্ড ইমিউনিটির ভরসায় আমরা বসে থাকলে সমগ্র দেশ উজাড় হয়ে যেতে বেশি সময় লাগবেনা। সর্বোপরি, এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। তাহলে বর্তমান মুহূর্তে আমাদের একমাত্র ভরসার জায়গা হ’ল ভ্যাক্সিন। অন্তত ৬টি গ্রুপ মানুষের ওপরে এবং অন্যরা প্রাণীদেহে পরীক্ষা শুরু করেছে। কতভাবে ভ্যাক্সিনের বিভিন্ন পদ্ধতি ভাবা হচ্ছে তার একটা রূপরেখা নেচার-এর এই চিত্র থেকে পাওয়া যাবে । (“The race for coronoavirus vaccines” – Nature, 30.04.2020)
১৬ মার্চ, ২০২০-র খবর ছিল ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথ-এর তরফে করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাক্সিন সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে mRNA-1273। এই মাইক্রোনিডল অ্যারে (MRA) পদ্ধতিতে যে আরএনএ (বা নিউক্লিক অ্যাসিড) ভ্যাক্সিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে, চর্চা হচ্ছে তার একটা রূপরেখা নেচারের ছবি থেকে পাওয়া যায়। এছাড়াও আমরা অনেকেই জানি আরও ৪ ধরনের ভ্যাক্সিন হয়। সেগুলো এখানে বিবেচ্য নয়।
<–(প্রথম mRNA-1273 ভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে মানুষের শরীরে)
সাধারণভাবে যে ভ্যাক্সিন তৈরি হয় এই ভাক্সিন তার থেকে ভিন্ন। এটা নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ বা আরএনএ, এক্ষেত্রে আরএনএ) ভ্যাক্সিন। এ ভ্যাক্সিন দেওয়া হয় তুলনামূলকভাবে নতুন মাইক্রোনিডল অ্যারে (MNA) পদ্ধতিতে। আমাদের মনে সঙ্গত প্রশ্ন উঠবে এই Microneedle array ব্যাপারটা কি? সহজ করে বললে একজন মানুষের আঙ্গুলের ডগায় একটি প্যাচ (ছোট ব্যান্ড এইডের টুকরোর সাথে তুলনীয়) লাগিয়ে দেওয়া হবে। এতে ৪০০টি ছোট ছোট স্পাইক প্রোটিনের নিডল বা সূঁচ থাকবে। এই সূঁচগুলো ত্বকের উপরিস্তরে (যেখানে ইমিউন প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি ও শক্তিশালী হয়) দ্রবীভূত হবে। এই সূঁচগুলো সবকটাই শুগার এবং প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ফলে সহজেই ত্বকে দ্রবীভূত হয়ে যায়।
<–(মাইক্রোনিডল অ্যারে প্যাচের একটি ছবি)
আরেকটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে এই ভ্যাক্সিনকে সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইনের আলাদা করে প্রয়োজন নেই। এমনকি গামা রশ্মি দিয়ে একে পরিশুদ্ধ করলেও এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়না। উল্লেখ করা দরকার, যেকোন ওষুধ, প্রযুক্তি বা ভ্যাক্সিনকে ৩টি ফেজের ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখানে ফেজ-১, ২ এবং ৩ কিভাবে হয় জেনে নেওয়া ভালো। ফেজ-১-এ কয়েক ডজন স্বাস্থ্যবান ভলান্টিয়ারকে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ফেজ-২-এ নেওয়া হয় কয়েক’শ মানুষকে। ফেজ-৩-এ সে পরীক্ষা করা হয় কয়েক হাজার মানুষের ওপরে – ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এখনও অবধি জেনেটিক মেটেরিয়াল – আরএনএ কিংবা ডিএনএ – থেকে তৈরি ভ্যাক্সিন FDA-র অনুমোদন লাভ করেনি। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একধরনের ইমার্জেন্সি অবস্থা তৈরি হয়েছে। এজন্য সমস্ত সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন তৈরির দৌড়ে ১১০টিরও বেশি কোম্পানি, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার মডার্না, চিনের সাইনোবায়োটেক এবং অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের সাফল্য অন্যদের থেকে এগিয়ে। কিন্তু আমাদের কাছে চিন্তার বিষয় হল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের প্রথম ভ্যাক্সিন ট্রায়াল সফল হয়নি। মডার্না-র ব্যাপারেও নিশ্চিত করে কিছু বলার মতো অবস্থা এখনো আসেনি। ভ্যাক্সিনের ভবিষ্যৎ এবং কার্যকারিতা নিয়ে নেচার-এর মতো পত্রিকায় মন্তব্য করা হচ্ছে – “The picture is so far murky” (চিত্র এখনো পর্যন্ত অস্পষ্ট)। (Coronavirus Vaccine Trials Have Delivered Their First Results — But Their Promise is Still Unclear – ২৮.0৫.২০২০) এখানে আরেকটা বিষয়ও আমাদের কাছে শেষ বিচারে চিন্তার কারণ হতে পারে। সায়ান্স জার্নাল-এর একটি খবর হচ্ছে “Unveiling ‘Warp Speed,’ the White House’s America-first push for a coronavirus vaccine” (১২.০৫.২০২০)। অর্থাৎ, ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজ যে বিকারগ্রস্ত গতি (Warp Speed) দেখাচ্ছে তা আমেরিকা-প্রথম এই মন্ত্র নিয়ে করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন তৈরি হবে। এ লেখাতেই পরে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে – “Eschewing international cooperation—and any vaccine candidates from China—it hopes to have 300 million doses by January 2021 of a proven product, reserved for Americans.” ভ্যাক্সিনের সুফল ভোগ করবে কেবল আমেরিকা। আরও বলা হয়েছে – “Warp Speed has already narrowed its list of vaccine candidates to 14 and plans to push ahead with eight”।
ভ্যাক্সিন নিয়ে পরীক্ষা শুরুর একেবারে গোড়ার দিকে নেচারে (১৮.০৩.২০২০) “Coronavirus vaccines: five key questions as trials begin” প্রবন্ধে মৌলিক কতগুলো প্রশ্ন রাখা হয়েছিল ভ্যাক্সিন ট্রায়াল নিয়ে – (১) মানুষের কি ইমিউনিটি তৈরি হয়? (এখানে বলার যে WHO পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে কোন “ইমিউনিটি পাসপোর্ট” নেই। একবার আক্রান্ত হলে একজন ব্যক্তি যে আবার আক্রান্ত হবেনা এরকম কোন নিশ্চয়তা নেই।) (২) যদি ইমিউনিটি তৈরি হয় তাহলে সেটা কতদিন অব্দি থাকবে? (উপরের প্রশ্নে এর উত্তর আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সেরে ওঠার পরে আবার সংক্রমিত হবার ঘটনা দেখা যাচ্ছে।) (৩) যারা ভ্যাক্সিন তৈরি করছে তারা কি ধরনের ইমিউন প্রতিক্রিয়া আশা করে? (৪) আমরা কি করে জানবো যে একটি ভ্যাক্সিন ঠিকভাবে কাজ করবে? (৫) ভ্যাক্সিনটি কি নিরাপদ হবে? এ প্রশ্নগুলো মাথায় রেখে ভ্যাক্সিন তৈরির কাজ চলছে।
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে মডার্না এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাক্সিনের ফেজ-১ ট্রায়ালের যে রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে তাতে বলা হচ্ছে – “At this time, neutralizing antibody data are available only for the first four participants in each of the 25 μg and 100 μg dose level cohorts. Consistent with the binding antibody data, mRNA-1273 vaccination elicited neutralizing antibodies in all eight of these participants, as measured by plaque reduction neutralization (PRNT) assays against live SARS-CoV-2. The levels of neutralizing antibodies at day 43 were at or above levels generally seen in convalescent sera. mRNA-1273 was generally safe and well tolerated”। অর্থাৎ, ২৫ এবং ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজে ভ্যাক্সিন দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ২০০ মাইক্রোগ্রামের একটি ডোজও ট্রায়ালে ব্যবহার করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ে mRNA ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে বিশেষ তৈরি হবার কারণ হচ্ছে যেসব পদ্ধতিতে এই ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয় তার বিশিষ্টতার জন্য – (১) এ পদ্ধতিতে mRNA ভ্যাক্সিন বেশি সুস্থিত হয়, (২) অ্যান্টিবডি প্রোটিন বেশি পরিমাণে তৈরি করতে পারে, এবং (৩) ভ্যাক্সিন ডেলিভারি অনেক ভাল হয়। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ “Amplifying RNA Vaccine Development” (১৮.০৬.২০২০) প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে – “These methods include the use of modified nucleosides as well as the development of nanoparticle-delivery technologies that stabilize mRNA, enhance cellular uptake, and improve the bioavailability of the mRNA once it is inside the cell.” আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ঊল্লেখ করা হয়েছে – “A clear advantage of mRNA vaccines is that, unlike DNA vaccines, they do not need to enter the nucleus to express the antigen. Instead, once inside the nucleus, a DNA vaccine will produce many copies of mRNA molecules, resulting in the production of more antigen per transfected cell.”
সায়ান্স পত্রিকার “Coronavirus vaccine update” সংবাদে (১১.০৬.২০২০) জানাচ্ছে – মডার্না-র ফেজ-৩ ট্রায়াল শুরু হবে এ বছরের জুলাইয়ে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং বহুজাতিক সংস্থা AstraZeneca-র যৌথ উদ্যোগে ভ্যাক্সিন তৈরির যে কর্মকাণ্ড চলছে এর ফেজ-৩ ট্রায়াল শুরু হবে সেপ্টেমবর মাসে। এরপরে শুরু হবে Johnson & Johnson-এর ট্রায়াল। মডার্না ফেজ-৩ ট্রায়ালের ডোজ ঠিক করেছে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। সায়ান্স-এর এই সংবাদে মন্তব্য করা হয়েছে – “Finally, there are political considerations… there is surely a desire on the part of the current administration to be able to announce this before the election in November… Politics aside, the organization and execution of all these trials will be a huge and complex effort, as mentioned, and when the numbers start coming out of them we’re going to surely be taken by surprise.” মেডিসিনের জগতের সাথে নিবিড়ভাবে প্রতি স্তরে প্রবেশ করলো ইন্ডাস্ট্রি, রাজনীতি, রাষ্ট্রের এক জটিল রসায়ন – medical-state-politics-industrial complex।
নেচার পত্রিকার (১২.০৬.২০২০) খবরের শিরোনাম – Latin American scientists join the coronavirus vaccine race: ‘No one’s coming to rescue us’। ভ্যাক্সিন তৈরির লম্বা দৌড়ে লাতিন আমেরিকার বিজ্ঞানীরাও আছেন কারণ ‘No one’s coming to rescue us’। ১০.০৬.২০২০-তে Johnson & Johnson-এর তরফে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে – “The randomized, double-blind, placebo-controlled Phase 1/2a study will evaluate the safety, reactogenicity (response to vaccination), and immunogenicity (immune response) of the investigational SARS-CoV-2 vaccine, Ad26.COV2-S, recombinant in 1045 healthy adults aged 18 to 55 years, as well as adults aged 65 years and older. The study will take place in the U.S. and Belgium.”।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে (২২.০৫.২০২০) জানানো হয়েছে – Oxford COVID-19 vaccine to begin phase II/III human trials। ফেজ-১ ট্রায়াল এপ্রিল, ২০২০-তে শুরু হয়েছিল ১০০০-এর বেশি ভলান্টিয়ার নিয়ে। এর ফলাফল পর্যালোচনা চলছে। এর পরের দফায় ১০,২৬০ জন ভলান্টিয়ারকে রিক্রুট করা হবে। “The phase II part of the study involves expanding the age range of people the vaccine is assessed in, to include a small number of older adults and children: • Aged 56-69 • Aged over 70 • Aged between 5-12 years”। এর পরে ফেজ-৩ শুরু সময়সীমা কিছূ ঊল্লেখ করা হয়নি।
এর আগে যা আলোচনা করেছিলাম যে বিভিন্নভাবে (অন্তত ৫ ধরনের) টীকা দেওয়া হয়। সেরকম মডার্নার ভ্যাক্সিনের থেকে পৃথক একটি ধরন হচ্ছে অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিন – “ChAdOx1 nCoV-19 is made from a virus (ChAdOx1), which is a weakened version of a common cold virus (adenovirus) that causes infections in chimpanzees, that has been genetically changed so that it is impossible for it to replicate in humans.”।
এতসবের পরেও এই সমস্ত টীকা বাণিজ্যিকভাবে কতদিনে বাজারে আসবে এবং সবার জন্য সুলভ এবং সহজলভ্য হবে কিনা জানা নেই।
ফলে আরও কিছুদিন অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কের প্রহর গোণা ছাড়া সামান্য বিকল্পই আমাদের সামনে খোলা আছে, যেমন সবাই জানেন – (১) পার্সোনাল তথা ব্যক্তিগত/সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং তথা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা (অন্তুত ৬ ফুটের বেশি), (২) যে কোন জিনিস ব্যবহারের আগে এবং পরে সাবান জলে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোওয়া বা অন্তত ৬০% অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, (৩) বাইরে বেরোলে আবশ্যিকভাবে ফেস মাস্ক (১০” লম্বা ও ৬” চওড়া টি-শার্টের দুটি খণ্ডকে ভালো করে সেলাই করে) ব্যবহার করা আর ফিরে এসে গরম সাবান জলে ভালো করে ধুয়ে ফেলা কিংবা ওয়াশিং মেশিন চালিয়ে পরিষ্কার করা, (৪) অচেনা জায়গায় বাতানুকুল ঘরে না থাকাই ভালো কারণ এসি-তে internal circulation of air হয় (সেক্ষেত্রে একাধিক ট্রায়ালে দেখা গেছে কারো করোনা সংক্রমণ হয়ে থাকলে অন্যদের সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়), এবং (৪) সামাজিক জমায়েত এড়িয়ে চলা। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী (১০.০৬.২০২০) কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টাডি-তে দেখা গেছে – “Widespread mask-wearing could prevent COVID-19 second waves”। আবার নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত (৮.০৬.২০২০) “Estimating the effctes of non-pharmaceutical interventions on COVID-19 in Europe” গবেষণাপত্রে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে – “Our results show that major non-pharmaceutical interventions and lockdown in particular have had a large effect on reducing transmission. Continued intervention should be considered to keep transmission of SARS-Cov-2 under control.”
এগুলো কতদিন রক্ষা করতে হবে তা আমরা এবং বিজ্ঞানীরা জানেন না। কারণ, ভাইরাসটি এখনো এর শক্তি, সংক্রমণক্ষমতা এবং মারণক্ষমতা হারায়নি। এর প্রায় ২০০টি বিভিন্ন স্ট্রেন পাওয়া গেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। এর দ্রুত মিউটেশনের ক্ষমতাও আছে। হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার খবর (১৩.০৬.২০২০) অনুযায়ী “Covid-19 virus may have mutated to become more infectious and stable: Study” এবং এই স্টাডিটি করা হয়েছে ফ্লোরিডার Scripps Research Institute-এ।
ইমিউনিটির গোড়ার কথা
আমাদের ইমিউন সিস্টেম একটি জটিল নেটওয়ার্ক যার মধ্যে শরীরের শ্বেত কণিকার বিভিন্ন কোশ আছে, আছে রক্তে সংবাহিত প্রোটিন এবং তার বিভিন্ন রূপ যেমন অ্যান্টিবডি, কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম, ইন্টারলিউকিন-১। আছে বিভিন্ন ধরনের ন্যাচারাল কিলার সেল। এছাড়াও রয়েছে রয়েছে মানবদেহের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম বা লসিকাতন্ত্র, প্লিহা, রক্ত মজ্জা বা bone marrow এবং থাইমাস।
এরা সবাই মিলে একজন আরেকজনের সাথে সংযোগ রক্ষা করে এবং কাজের ক্ষেত্রে একটি নেটওয়ার্কে জুড়ে গিয়ে বিভিন্নধর্মী রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এবং নান ধরনের প্রোটিন তৈরিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। শরীরকে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস, টিউমার, ক্যান্সার কোশ এবং অন্যান্য অজানা আক্রমণকারীর হাত থেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় শেষ অব্দি। একে আমরা বলি ইমিউনিটি। ভ্যাক্সিন এই ইমিউনিটিকে বাড়িয়ে তোলে। কোন ক্ষেত্রে সারাজীবন এই ইমিউনিটি কাজ করে, যেমন স্মল পক্স। কোন ক্ষেত্রে কয়েক মাস বা এক বছর যেমন, ফ্লু, হেপাটাইটিস, টিটেনাস ইত্যাদি।
নীচের চিত্রদুটি বি এবং টি-সেল নির্ভর ইমিউন সিস্টেমের কার্যকলাপের এক রেখাচিত্র বোঝাবে।
আমাদের শরীরে প্রধানত দুধরনের ইমিউনিটি হয় – (১) সহজাত বা innate, (২) adaptive বা অর্জিত। এছাড়াও আরেকধরনের ইমিউনিটির হদিস বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। একে বলা হচ্ছে “trained immunity” – উদ্ভিদে বা অমেরুদণ্ডীদের ক্ষেত্রে একে দেখা গেছে। এই বিশেষ ইমিউনিটিকে মানুষের ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনের কার্যকরী সহযোগী ইমিউনিটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সায়ান্স পত্রিকায় (২২.০৪.২০১৮) এই বিশেষ ইমিউনিটি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে মানুষের ইমিউন সিস্টেমের ক্ষেত্রে আগের থেকে “আনরেকগনাইজড” এক নতুন ইতিবাচক চরিত্র।
শরীরে প্রাথমিক আক্রমণের প্রতিরোধ দূর্গ হচ্ছে সহজাত বা innate ইমিউনিটি। এটা নন-স্পেসিফিক বা অনির্দিষ্ট। অজানা আক্রমণকারী দেখলেই শ্বেতকণিকার B cell রে রে করে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর অ্যাডাপ্টিভ বা অর্জিত ইমিউনিটির ক্ষেত্রে শ্বেতকণিকার T cell অংশগ্রহণ করে। নির্দিষ্টভাবে শত্রুকে চিনে নিয়ে আক্রমণ করে। এর মধ্যে মেমরি সেল থাকে যারা আবার স্মৃতি থেকে বুঝে নেয় শত্রুটিকে আগে দেখেছিল কিনা। সে অনুযায়ী এদের প্রতিরোধের হাতিয়ার সাজায়। নীচের চিত্রদুটি বিষয়গুলো বুঝতে খানিকটা সাহায্য করবে।
এই ইমিউনিটিকে নিয়েই, এদের সংসারকে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা, সুস্থ থাকা। করোনার আক্রমণের সময়ে একটি ভ্যাক্সিনের সন্ধানে ছুটে চলা যাতে মানব জাতি বাঁচে। এখানে আধুনিক সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং তাত্ত্বিক স্লাভোজ জিজেক-এর একটি উপলব্ধি ভেবে দেখার মতো – “Those in the charge of the state are in panic because they know not only that they are not in control of the situation, but also that we, their subjects, know this. The impotence of power is now laid bare.”(Slavoj Zizek – Pandemic! COVID-19 Shakes the World, Polity Press, 2020) অস্যার্থ, রাষ্ট্র প্রধানেরা এক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে কারণ তারা এটা জানে যে করোনা-পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। শুধু তাই নয়, তারা এটাও জানে যে তাদের শাসিতেরাও এ খবর জানে। ফলে রাষ্ট্রের ক্ষমতার অক্ষমতা ও নির্বীর্যতা প্রকট হয়ে খুলে গেছে। কাম্যুর প্লেগ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র Dr. Rieux একজায়গায় বলছেন – আমি জানিনা কি ঘটবে এবং আমার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু “For the moment I know this: there are sick people and they need curing.” চিকিৎসক হিসেবে আমাদেরও যুঝে যেতে হবে।
(এ প্রবন্ধটির ঈষৎ সংক্ষেপিত রূপ গুরুচণ্ডালী পত্রিকায় ১৮.০৬.২০২০-তে প্রকাশিত হয়েছিল।)
The analysis is quite elaborate so that a non-medical man like me may understand most of the analytical portions.
Apparently, the inferences drawn by Dr Jayanta are quite convincing and totally acceptable to me.
Incidentally, I had the opportunity to read his previous article on the same subject in Guruchandali.
ডাঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্য খুব প্রাঞ্জল ভাষায় আমাদের মতো সাধারণ কাছে বিষয়টি উপস্থাপিত করেছেন। বেশির ভাগ লেখার টেকনিক্যাল টার্মের অতি ব্যবহার বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকা মানুষের বোধগম্য হয় না। অতি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে গভীর চিন্তা প্রসূত ঝরঝরে আলোচনা।
দারুন লেখা।
এখনো পর্যন্ত 150 টা ক্যান্ডিডেট vaccine তৈরির পথে আছে , যদিও চূড়ান্ত ভাবে এগিয়ে এসেছে তিন টি বা চারটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষক রা সরকারি বা বেসরকারি উদ্দোগে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী গুলো, বা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো একক বা কখনো যৌথ উদ্যোগে দিন রাত্রি এক করে vaccine তৈরির প্রতিযোগিতায় আছে।
এর মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় Oxford University র দল টির কথা, যারা AstraZeneca নামক pharma কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ যে একসাথে কোরোনা র ভাসিসিনে কে জন সমক্ষে আনবে। এই vaccine টি আসলে genetically modified adeno virus vaccine যাতে, উচ্চতাপ বা উৎসেচকের প্রভাবে এক ধরণের adenovirus কে দূর্বল করে তার মধ্যে কোভিড 19 এর spike প্রোটিন এর code অর্থাৎ genetic material ( এক্ষেত্রে spike protein specific RNA র টুকরো) ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই রকম করে তৈরি vaccine টা মানুষের শরীরে ঢোকার পর (through injection) বংশ বিস্তার করতে পারে না, কিন্তু ভেতরের spike protein RNA র প্রভাবে COVID সংক্রমণ কে রুখে দেওয়ার জন্য শরীর কে প্রস্তুত করে অর্থাৎ, COVID virus particle যদি শরীরে প্রবেশ করে তাহলে তার জন্য antibody তৈরি করে।এই antibody ই শরীর কে উপযুক্ত রক্ষণমূলক (ডিফেন্স) কাজ বা সুরক্ষা দেবে কোভিড কে পরাস্ত করার জন্য।
এই vaccine এর phase I trail যদিও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক, phase II trail কিন্তু ততটা নয়। August September এ এই vaccine এর phase III trial হওয়ার কথা।যদিও গোটা পৃথিবী জানে যে AstraZeneca Oxford এর সাথে tieup করে এই vaccine এই বছরের মধ্যে পৃথিবীতে বানিজ্যিক ভাবে আনতে চলেছে। আবার শোনা যাচ্ছে যে এই vaccine এর শরীর কে কোভিড এর বিরূদ্ধে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা হয়তো শুধু এক বছরের। অর্থাৎ, এই vaccine বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আসলে, প্রতি বছরই তা জনগন কে দিতে হবে।
দ্বিতীয় হলো আমেরিকার biotechnology company Moderna র তৈরী mRNA vaccine। Moderna পৃথিবী বিখ্যাত RNA therspeutics এর জন্যই। RNA vaccine তৈরী হয়েছে spike protein এর mRNA কে viral particle এর total nuleic acid থেকে আলাদা করে। mRNA র অংশ টিকে এরপর liposome নামক সূক্ষ সূক্ষ lipid এর বিন্দুসম থলির মধ্যে পুরে। liposome গুলোকে এরপরই উপযুক্ত কোনো দ্রাবক বা media এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয় (through injection)। শরীরে প্রবেশের পর mRNA টি শরীরের কোশে protein তৈরী করে যা, পুরো কোভিড virus particle না হয়েও মানব শরীরে কোভিড virus এর বিরূদ্ধে antibody তৈরি করতে সক্ষম। কারণ, mRNA টি ছিল viral spike protein এর জন্য নিৰ্দিষ্ট কোড। এই protein ই (synthesised from mRNA) antibody তৈরী করে যে কোষ গুলি, তাদের উদ্বুদ্ধ করে,কোভিডি এর বিরূদ্ধে antibody তৈরী করতে।এই পদ্ধতিতেই mRNA1273 vaccine কোভিড এর বিরুদ্ধে কাজ করবে। এখনও এই vaccine এর phase III trail হয়নি, যদিও July August এ তা শুরু হওয়ার কথা আছে। আশার কথা হলো, phase II, phase I, দুটি trial এই এই vaccine উত্তীর্ন। 25 microogram এবং 100 microgram এই দুটি dose এ এই mRNA vaccine প্রয়োগ করে এর কার্যকারীতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আশা করা যায় যে এটিও খুব শীঘ্রই বানিজ্যিক ভাবে আমাদের কাছে আসবে।
তৃতীয় আর একটি vaccine দৃষ্টিপথে আছে , জার্মান pharma কোম্পানী, Biontech যা tieup করেছে Pfizer এর সাথে। এরা একসাথে তৈরী করেছে আর একটি nucleotide vaccine, অবশ্যই mRNA vaccine, যাতে covid virus এর spike protein কে code করে যে mRNA molecule টি তাকে genetically modify করে মূল mRNA এর nucleoside বদলে uridine ঢোকানো হয়েছিল। তারপর এই mRNA কে শক্তিশালী বা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় যাতে তারজন্য একটি stabilizer তথা adapter এর সাথে যুক্ত করে মানুষের শরীরে প্রবেশ করান হয়। এই vaccine টির ও phase I trial যথেষ্ট আশাপ্রদ।
RNA vaccine এর কয়েকটি সুবিধা আছে-
1. সহজে তৈরি করা যায়।
2. একসাথে অনেক এবং খুবদ্রুত তৈরি করা সম্ভব।
3. শরীরে প্রবেশের পর immunological reaction অর্থাৎ antibody তৈরি তে সমর্থ হলেও এটির থেকে covid like symptom তৈরী হওয়ার সম্ভবনা নেই।
4. mRNA থেকে spike protein এর অনুলিপি তৈরি হওয়ার পরই এটি বিনষ্ট হয়। অর্থাৎ cellular load বাড়ায় না।
5. mRNA টি কোষের মধ্যে নিজ প্রতিলিপি তৈরি করলে অনেক বেশি পরিমাণে spike protein এর অনু তৈরী হয় , ফলে, বর্ধিত হারে antibody তৈরী হতে পারে।
এখন দেখার বিষয় কোনটি আমাদের সামনে আগে পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হয়। অনেক পথ পর হয়ে তবেই একটা vaccine বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে আসে।তাই দোলাচল একটা থাকেই। প্রত্যেকটা trial এর ফলাফল এক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দেখতে হয়, কতোখানি সুরক্ষা দেবে, কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হতে পারে, কতদিন কার্যকরী থাকবে ইত্যাদি অনেক খুঁটিনাটি বিষয়।
তাই এখন শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা, কবে আমরা পাই প্রফেসর শঙ্কুর miraculin !!!!!