যুগটা যোগাযোগের, যোগবিয়োগেরও ।
সমাজের যত না, তার চেয়ে ঢের গুণ বেশি, সামাজিক-মাধ্যমের।
ভোর হবার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবানলের মত ছড়াতে থাকে রূপালী পর্দার নায়িকার অথবা প্রতিশ্রুতিবান নায়কের অপ্রত্যাশিত অকাল মৃত্যু-সংবাদ। অথবা প্রতিভাবান প্রিয় অভিনেতার প্রত্যাশিত কিন্তু আকস্মিক চলে যাওয়া !
আমরা, হাতফোনে আধোঘুমে স্টেটাস আপডেট দিই, শেয়ার করি,আর তার পর ঘুম ভেঙে উঠে দেখি, কজন লাইক করলো, কজন শেয়ার করলো, অথবা কে কি কমেন্টিলো !
এটাই অধুনা আন্তর্জাতিক মনুষ্য আচরণ।
লাইকের লালসা আর লিখন-লাস্যে অত:পর অর্ধদিবস অতিবাহন!
আজ থেকে যে দিন তা শুরু হলো, তাতে আর সেই মানুষটি থাকবেন না।
তার পর থেকে পৃথিবীর সকাল-বিকেলে তিনি নেই।
পৃথিবী প্রয়াণে অভ্যস্ত, আবহমান।
তাই বুদ্ধ, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ,আইনস্টাইন,যীশু, মোহাম্মদ,উত্তমকুমার, ডিরোজিও,স্টিভ জোবস , ইন্দিরা, মাইকেল্যাঞ্জেলো, সক্রেটিস, জ্যোতি বসু, জীবনানন্দ, হিটলার, ডায়ানা,গ্যালিলিও, নেপোলিয়ান বা শ্রীদেবী চলে গেলে যেমন তার কিস্যু যায় আসে নি, তেমনি,বচ্চন বা মোদী, বিল গেটস বা ওয়ারেন বাফে, সোনিয়া বা মমতা , ওবামা বা ট্রাম্প, ব্র্যাড পিট্ বা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় , বিমান বোস বা দিলীপ ঘোষ ,গাভাসকার বা বিরাট কোহলি , হকিং, মারাদোনা, শঙ্খ ঘোষ, শাহরুখ খান, পুতিন, ওয়াইসি বা মোহন ভাগবত চলে গেলেও তার কিস্যু যাবে বা আসবে না।
তাই আমরা আদৌ মনেও রাখবো না করোনা-শহীদ প্রথম সাফাইকর্মীটির নাম, কনস্টেবল দিলীপ সরকার, ডাঃ বিপ্লব দাশগুপ্ত, WBCS অফিসার দেবদত্তা রায় বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভ্রজিৎ চট্টোপধ্যায়ের কথা !
শুধু চলে যাওয়া মানুষগুলির মোবাইল নাম্বার মুছে দিতে গিয়ে আনমনা হবেন তাদের কিছু পরিচিতজন।
তারপর, সেই অনুপস্থিতিগুলিও সয়ে যাবে,অভ্যাস হয়ে যাবে।
ঠিক একই ভাবে, মানুষ মাতৃ-পিতৃবিয়োগ ব্যথাতেও অভ্যস্ত হয়ে যায়, তার পর একদিন সে নিজেও হারিয়ে যায়।
আর তারপর তার কথা মনে রাখার মতো মানুষজনেরাও মুছে যান।
পড়ে থাকে শুধু অনন্ত সময়-সমুদ্র আর প্রতিনিয়ত সময়ের ঢেউয়ে নতুন হতে থাকা চিরন্তন বেলাভূমি।
বাকি সব ভ্রম, মনের ভুল, কল্পনা।
কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়, অনন্ত কালপ্রবাহের নিরিখে এমনকি ক্ষণস্থায়ীও না।
কদিন আগে এমনই এক প্রিয়জন বিয়োগে উঠে এসেছিলো এই কথা গুলিই একটু অন্যভাবে।
“কেন এই আসা আর যাওয়া/কেন হারাবার লাগি এতখানি পাওয়া”
এটাই মানুষের চিরকালীন বিহ্বল-প্রশ্ন।
কবি লিখেছিলেন, দু দিন দিয়ে ঘেরা ঘরে/ তাইতে যদি এতই ধরে,/ চিরদিনের আবাসখানা সেই কি শূন্যময়?/ জয় অজানার জয় ॥
সেটাও তো বিশ্বাস আর কল্পনার তাকিয়া-বালিশে , নিশ্চিন্তি আর আশ্রয় খোঁজা।
বরং দুটো সরল কথা সহজ ভাবে বুঝে নিলেই তো হয়,
এক, সবই অনিত্য, আজ আছে, কাল নেই।
আর দুই, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষন আশ !
তাই, আসুন আশ মিটিয়ে আজকের মতন স্টেটাস আপডেট দিই, শেয়ার করি,আর তার পর দেখতে থাকি , কজন লাইক করলো, কজন শেয়ার করলো, অথবা কে কি কমেন্ট করল।
আজকের মতো তো বেঁচে নিই।
কাল কিসনে দেখা?
জয় অজানার জয় !