বাংলার বুকের পাঁজর ভেঙে বয়ে যাওয়া ঝড়ের তাণ্ডব আপামর বাঙালীর অন্তরাত্মা নাড়া দিয়ে গেছে। এখন আর বেড়ার উপর দাঁড়িয়ে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা দেখার সময় নয়। এখন এক পক্ষে দাঁড়াতে হবে, অন্ধকার না আলো, প্রগতি না পশ্চাৎ-গমন, বিজ্ঞান না সংস্কারের আগুনে আত্মাহুতি।
কাল রাতেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন অনেকে মারা গেছেন ও পাঁচটি জেলা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। আজ জানা গেল 72 জন মারা গেছেন ও হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। কিন্তু, এই ঝড়ের তাণ্ডব, তার অপার্থিব শব্দের অনুরণন আর যেন প্রবল ক্রোধে সবকিছু চুরমার করে দেওয়া দুর্যোগ প্রমাণ করে দিল এই খণ্ডিত বাংলার মানুষ বড় একা। দেশের প্রধানমন্ত্রী পুরো 28 ঘন্টা নিশ্চুপ রইলেন, শাসকদলের এম পিরা নিশ্চুপ, জগাই-মাধাইয়ের অসংবেদনশীল টুইট- এ সব যোগ করলে একটা জিনিস পরিষ্কার ওদের স্ফীতকায় অপমান অক্ষমের বুক হতে রক্ত শুষে লক্ষ মুখ দিয়ে পান করতে উদ্যত; বেদনাকেও তারা স্বার্থোদ্ধত অবিচারে পরিহাস করে।
বাংলাকে যারা ব্যবসা করার জায়গা ভাবে আর সুযোগ পেলেই লাথি মারে তারা শুধু বিজেপি দলে আছে এমন ভাবার কারণ নেই। আলিপুরে একের পর এক প্রাসাদের কোটি কোটিপতিদের এখানে বাসস্থান, বাঙালীর উন্নত সংস্কৃতি তাদের পছন্দ, এখানকার সহজাত উদারতা তাদের পছন্দ কিন্তু তারা বিনিয়োগ করে অন্য রাজ্যে। বাঙালির ভালোমন্দে তাদের কোন দায় নেই। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য হয়তো রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেয় কিন্তু বাঙলা ও বাঙালীর একজন হয়ে ওঠার কোন ইচ্ছা তাদের নেই।
বাঙালী মানে “রসগুল্লা, মিষ্টি দই, ইলিশ মাছ” বলে যারা এখানে আসে সেই শাহরুখ খান অমিতাভ বচ্চনরা কখনো বাঙালীর জন্য কখনো কিছু করেছে শুনিনি। কলকাতার নামে দল বানিয়েও বাঙালিকে অপমান করতে তাদের বাধে না। বাঙালীর ভোটে নির্বাচিত একজন এডভোকেটের ও টিকি দেখা যাচ্ছে না। আঠারোর সাথে তার যতই রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকুক, বিপদের দিনে তারা একই পথের পথিক।
কাল প্রধানমন্ত্রী বিমানে চেপে বাঙালীর দুর্দশা দেখতে আসবেন, এই কয়েক ঘন্টা আগে পর্যন্ত যিনি মৌনীবাবা সেজে বসেছিলেন। তিনি কি আর দিতে পারেন? একবার “দোনো হাত মে লাড্ডু” দিতে চেয়েছিলেন। এখনো সেই দিল্লিকা লাড্ডু তার সম্বল। বাঙালিকে ছিন্নমূল করার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র তাদের রচনা, আসামের বাঙালীদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানোর নায়ক বাঙালিকে কিই বা দিতে পারেন? রাজ্যের বকেয়া 54000 কোটি টাকা, রাজ্যের কেন্দ্রীয় ঋণ মকুব, বাঙালিকে মর্যাদা দান এসব সহজাত দাবী বোঝার মত মননশীলতা তাদের নেই। রাজনীতির পঙ্কে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ভ্রষ্ট নেতা দেশকে কিই বা দিতে পারে?
কিন্তু হতাশ হলে চলবে না। “মৃত্যুরে করি না শঙ্কা,” তাই, বাঙালির রক্তে নেই দাসত্বের কলঙ্ক। আমাদের কবি লিখেছেনঃ
বর্জিতে হইবে দূরে জীবনের সর্ব অসম্মান;
সম্মুখে দাঁড়াতে হবে উন্নত মস্তক উচ্চে তুলি
যে মস্তকে ভয় লেখে নাই লেখা, দাসত্বের ধূলি
আঁকে নাই কলঙ্কতিলক।
ওয়াহাবি ও হিন্দি-হিন্দু সম্পসারণবাদের বদলে বিশুদ্ধ বাঙালিত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু হোক। আমি গর্বিত ভারতীয়, কিন্তু একইভাবে গর্বিত বাঙালী।
ইতিহাস সৃষ্টি করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী। ঘূর্ণিঝড় আমফানের ৩৬ ঘন্টার মধ্যে সশরীরে রাজ্যে এসে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন।
মৃতের পরিবারের জন্য ২ লাখ টাকা এবং যারা শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য ৫০০০০ টাকা করে ঘোষণা করলেন।
আসামে বাঙালিদের ডিটেনসন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে,খবরটা যে সত্যি সে ব্যাপারে যে কোনও রকম প্রমান জানানোর দরকার আছে বলে মনে করি।ডিটেনসন ক্যাম্পের ঠিকানা,ফোন নম্বর,ওয়েব সাইট,ই মেল,গ্রাউন্ড রিপোর্টিন,ফোটো দেখতে চাইছি।অনেকে বলছেন,পুরো ডিটেনসন ক্যাম্পের গল্প টা ফেক নিউজ।সেইজন্য জানতে চাইছি।এতবড় মিথ্যা কথা এতো জোর গলায় বলা,সেটা তো কার মায়ের গলায় শোনা যায়।