অজস্র প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে দেশ, রাজ্য, পাড়া। পেশা, বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ অসংখ্য প্রশ্নচিহ্নের মতো ঝুলে আছে গলি, রাজপথ, স্টেশন, মাঠঘাটের আনাচে কানাচে।
কে?
কারা?
কেন?
কখন?
কী করে?
কে প্রথম দেখেছে?
কখন দেখেছে?
তারপর কী করেছে?
কী রঙের চাদর?
কতজন লোক অকুস্থলে?
ছবি কে তুলল?
অসম্পর্কিত মানুষের ভিড় কেন সেখানে?
যাদের ছবি দেখা যাচ্ছে, তাদের মুখ অমন ভাবলেশহীন কী করে?
সবাই মানুষ তো?
ধোঁয়াশা মৃত্যুর সময় নিয়ে, ঘটনাস্থল নিয়ে, সুরতহাল নিয়ে, ময়নাতদন্ত নিয়ে, দাহ নিয়ে — এমন কি প্রকাশিতব্য ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়েও।
প্রশাসন আর ন্যায়পালিকার প্রসাধন ঘুচে গলিত চামড়া বেরিয়ে পড়েছে, বেরিয়ে পড়ছে হাড়গোড়।
বাকি আছে আইনসভা — সে-ও মহাভারতীয় ঐতিহ্য বজায় রাখবে হয়ত।
এমন একটা সময় আমরা কোভিড ক্রান্তিকাল পেরিয়েও দেখতে পাচ্ছি, যেখানে সমস্ত মানুষ গুলিয়ে, ঘেঁটে একশা হয়ে রয়েছে। দার্জিলিংয়ের ছড়িয়ে যাওয়া কুয়াশার মতো বিষাদের ধূমজাল একটা গোটা সমাজকে গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। বিষাদের ভারে কেউ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন, কেউ ক্রুদ্ধ, কেউ তীব্রভাবে শোকার্ত, কেউ বা হতাশ।
অনেকেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছেন সুবিচার আসবে। দেরিতে হলেও আসবে। সদর্থক ভাবে বদলাবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। মেয়েদের প্রতি, তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি, পুরুষদের প্রতিও।
আর আমাদের চিকিৎসকদের সাদা অ্যাপ্রন, ঘোলাটে হতে হতে আমার চোখে রক্তাভ হয়ে উঠছে দিন কে দিন। লজ্জা হচ্ছে, তীব্র বিবমিষা জাগছে।
সুবিধাজনক অবস্থানে গড়াতে গড়াতে কোন নরকে গড়িয়ে যাচ্ছে আমার পেশা?
তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, দুই এক শতাংশ সমপেশাজীবী এতবড় জঘন্য অপরাধযজ্ঞের হোতা/সাক্ষী, তাহলেও ডাক্তার অভয়ার কফিনের ভার বাকি নিরানব্বই শতাংশ চিকিৎসককেই আজীবন বইতে হবে।
১৪৩১ এর শারদীয় দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত অনিতা অগ্নিহোত্রীর ‘মৃত্যুকালীন জবানবন্দি’ কবিতা থেকে কয়েক লাইন —
‘পাবলিক সালিশি চেনে, গণপ্রহারেও বররুচি।
ভিডিও ভাইরাল করে, লাশ রেখে ফিরে আসে ভাতের থালায়।
এইসব শ্লীল বর্বরতা, মেনে নিয়ে তবু আমাদেরই হাতে জনাদেশ।
জয়ী হও। নিশ্ছিদ্র ভবিষ্যৎ। শাসকের।
ইজ্জতের ভাত আর ফিরবে কি কোনওদিন? ভিন্ন মত নিয়ে বেঁচে থাকা?’