কেন- এই জিজ্ঞাসাই বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কতদূর নিয়ে যায়? বেশ কিছুদূর। তবে জিজ্ঞাসাটা বজায় থাকা চাই। নিউটনের টাকে আপেল পড়লে তার জিজ্ঞাসা জাগে, কেন? সে মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার করে। সেটা আমরা মেনে নিয়ে খুশি থাকি, মাধ্যাকর্ষণ কেন সেটা জানতে চাইনা অনেকেই- পদার্থবিদ্যায় যাঁরা বিশেষজ্ঞ তাঁরা নিশ্চয়ই এসব নিয়ে ভাবেন, সেই ভাবনা থেকেই বিজ্ঞান এগোয়।
ডাক্তারিতেও সেরকম, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্তরে যেসব জিনিস হয় বলে জানতাম, পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্তরে জানলাম সেগুলোর কার্যকারণ লোকে ভেবে বের করেছে। সাবস্পেশ্যালিটিতে তারও গভীরে গিয়ে ‘কেন’র সন্ধান হয় ক্লাসে। আমি নেহাতই অকৃতী অধম, সঙ্গদোষে এই জিজ্ঞাসার সাগরে নিক্ষিপ্ত হয়েছি। তাই মনে বিশেষ ‘কেন’ না থাকলেও দায়ে পরে ‘কেন’সন্ধান করতে হয়। এতদিন জানতাম এই ক্লাসে কেন সন্ধানই জীবনের সবচেয়ে দুরূহ সত্যান্বেষণ।
কিন্তু এই জগৎ তো প্যান্ডরা দিদির বাক্স। সে কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকে নিয়ত। দু’দিন পরপর আউটডোর করার পর শ্রান্ত-ক্লান্ত-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ মহিলা আউটডোরে পদার্পণ করি। সামনে ওয়ার্ডসওয়ার্থের ড্যাফোডিলসের চেয়ে বেশি রোগিনী, যাঁরা মনে করেছেন তাঁরা দুরূহ হৃদরোগাক্রান্ত এবং রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সরকারি হাসপাতালে ছাড়া তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। সেই জন্যে ভোরবেলা ট্রেন ধরে তাঁরা উপস্থিত হয়েছেন।
প্রত্যেকেরই প্রায় বুক ঢিপঢিপ করে, আঙ্গুল দিয়ে তাঁরা দেখান এখানে হার্টের ব্যথা হচ্ছে, কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ইসিজি, ইকো ইত্যাদি পরীক্ষার পর যখন বলা হচ্ছে ওঁদের হার্ট ভালো আছে, তখনই আসছে সেই অমোঘ প্রশ্ন, তবে ‘কেন’ এরকম হচ্ছে?
এখন আমি সামান্য হার্টের ডাক্তার, বক্ষগহ্বরের শ’খানেক আরো ব্যথা উৎপন্নকারী অঙ্গের সূলুকসন্ধান আমি করি কী ভাবে! তখন বাধ্য হয়ে বলতে হয় সেই থ্রি ম্যাজিকাল ওয়ার্ডস- “মেডিসিনে দেখিয়ে নিন”। উত্তরটা পছন্দ হয়না বেশির ভাগেরই, রেগে তারা ‘কেন’র আগল দেয় খুলে…
“গ্যাস হয় প্রচুর, কেন ডাক্তারবাবু”
“গিঁটে গিঁটে ব্যথা জানেন, কেন বলুন তো”
“ঘাড়ে খুব ব্যথা, কেন?”
“সর্বশরীর যন্ত্রণা, খুব দুর্বল, কেন ডাক্তারবাবু”
‘কেন’র স্তুপে বাল্মীকির মতো চাপা পড়ে শেষে বুঝতে পারি, আসল ‘কেন’ ক্লাসে নেই, আছে ফিমেল ওপিডি-তে। ইসকো সামহাল ডালা, তো লাইফ ঝিঙ্গালালা😂😂🤣🤣
পুনশ্চঃ সব পেশেন্টের সব সিম্পটমেরই কারণ থাকে, সেটা শারীরিক হতে পারে বা মানসিক- সেটা স্বল্প পরিসরে এবং সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করতে না পারাটা আমার সীমাবদ্ধতা/ ব্যর্থতা।।t