রাত হয়েছে। ঘুমোতে পারছি না।
বত্রিশ তেত্রিশ বছর আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগে হাউস স্টাফ থাকাকালীন সেখানকার সেমিনার রুমে বহু রাত্রি যাপন করেছি। কখনো একা, কখনো সতীর্থ হাউসস্টাফ ব্রজ কিংবা সোমনাথের সঙ্গে। নির্ভয়ে।
তারপর দূর গাঁয়ের একাধিক হাসপাতালে বহুবার নাইট ডিউটি দিয়েছি। কোয়ার্টার থেকে হাসপাতাল বাড়ি পর্যন্ত নিশুত রাতে হেঁটে গিয়েছি গ্রুপ ডি দাদার লণ্ঠনের আলোর ভরসায়।
নির্ভয়ে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মা ভর্তি থাকার সময়ে মাঝরাতে ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে কার্ডিওলজি বিভাগ অবধি হেঁটে গিয়েছি একা। নির্ভয়ে।
এখন নিজের বাড়ির চার দেওয়ালের ভিতরেও ভয় করছে। আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে এই ভয়, জানি।
রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে, স্বদেশে, বিদেশে, পথে, প্রান্তরে, রেলে, বিমানে, বাসে, ট্যাক্সিতে, স্বগৃহে, কর্মক্ষেত্রে — কোত্থাও একজন নারী নিরাপদ নয়।
না, লাশকাটা ঘরেও নয়।
আর জি করের ডাক্তার মেয়েটি প্রতিটি মিডিয়া চ্যানেলে প্রতিনিয়ত পুনর্লাঞ্ছিত হয়ে চলেছে, মারা যাওয়ার পরেও।
শাবাশ, সভ্যতা!
কাল আমি ওর জায়গায় থাকতে পারি। অথবা পরশু, কিংবা তরশু। বা, আরো কিছু বছর পরে। রাণাঘাটের আশি বছর বয়স্কা সন্ন্যাসিনীও রক্ষা পাননি।
ভাগ্যিস আমার মা মারা গিয়েছে। নয়ত, আর জি করের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের পিজিটির অসহায় মায়ের মতোই সন্তানশোক বুকে নিয়ে জ্বলতে হতো তাকে। হয়তো।
এই অবধি পড়ে কোনো সুভদ্র, সুশিক্ষিত মিসোজিনিস্ট ঠোঁট মুচড়ে হেসে মনে মনে বলতেও পারেন — “পঞ্চান্ন বছরের বুড়ি মাগী, এখনো রে প ড হওয়ার ভয়? কে ছোঁবে রে তোকে?”
প্রকাশ্যেও বলতে পারেন — রুখবে কে?
(আমার শব্দপ্রয়োগ ক্ষমা করবেন, প্রমিত ভাষা আর আসছে না লেখনীতে)
🙏