কর্মখালি
করোনা ভাইরাস মাস্ক পরে একটা মই-এ চড়ে দেওয়ালে পোষ্টার সাঁটছিল। পোষ্টারগুলোয় লেখা ‘কর্মী চাই’।
চিন্তিত মনে পাশের রাস্তায় পায়চারি করছিল চিত্রগুপ্ত। মোড় ঘুরেই তার চোখে পড়ল এই দৃশ্য।
‘আরে, করছিস কি?’
‘বিজ্ঞাপন দিচ্ছি।’
‘আজকাল এইভাবে কেউ বিজ্ঞাপন দেয় নাকি? টিভিতে দে, পত্রপত্রিকায় দে। ওয়েবসাইটে দে।’
‘ওয়েবসাইটে দিয়েছিলাম। কোনো রেসপন্স নেই।’
‘তাহলে টিভি-তে দে। কিংবা কাগজে।’
‘কাকে দেব? টিআরপি নিয়ে যা জালিয়াতি চলছে তাতে চ্যানেলগুলোর উপর কোনো ভরসা হয় না। তাছাড়া কি বলতে বিজ্ঞাপনে কি দেখাবে, তারপর ‘অমুক খতরেঁ মে হ্যায়’ – বলে মুখে রঙ মেখে, ল্যাজ তুলে, রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ুক আর কি! আমি অত রিস্ক নিতে পারব না।’
‘খবরের কাগজগুলো কি দোষ করল?’
‘আরে এ সব খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন বের হয়-
‘এখানে রকেট পাঠিয়ে আপনার ভাগ্যগ্রহের পজিশন ঠিক করা হয়। বিফলে মূল্য ফেরত।’
‘উটের প্রস্রাবে করোনা মুক্তি।’
এসবের মাঝখানে আমার কর্মখালির বিজ্ঞাপন যে কোথায় হারিয়ে যাবে, খুঁজে পাওয়া যাবে না।
‘সবাই তো এখন কর্মী ছাঁটাই করছে, তার মধ্যে তোর এত লোক লাগবে কিসের জন্য?
‘কেন, যা ভীড় হচ্ছে বাজারে! আর তারপরে আসছে পুজোর হিড়িক। সারারাত লাইন, ফুটপাতে ফুচকা, প্যান্ডেলে গুঁতোগুঁতি- দুদিন বাদেই কোটি কোটি নতুন ভাইরাস লাগবে সংক্রমণ করতে। আমার দলের পুরোনো লোকেরা ক্লান্ত, অবসন্ন।’
‘আর?’
‘ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্য কর্মীরাও ধুঁকছে। সিভিক ডাক্তার, সিভিক নার্স এসব লাগবে। সাতদিনের ট্রেনিং- হাফ মাইনে। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, সাফাই কর্মী দলে দলে লাগবে।’
‘পেয়ে যাবি। এই বিজ্ঞাপন দেখেই তোর দপ্তরের সামনে লাইন লেগে যাবে। চাকরির যা অবস্থা এখানে!’
‘আরে না, ব্যপারটা মোটেই অত সহজ নয়। পুজো নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তার উপর পড়ে পাওয়া পঞ্চাশ হাজার! কাজ করতে চায় না কেউ।’
‘দেখ লোক পাওয়া যায় কি না! না হলে অন্য রাজ্য থেকে নিতে হবে। ও, ভাল কথা, আমার জন্যেও কিছু লোক জোগাড় করে দিবি এই সাথে?’
‘কি রকম?’
‘এই যেমন ডোম, ডোমের অ্যাসিস্ট্যান্ট, যমদূত ইত্যাদি।’
‘হয়ে যাবে। টাকা আর ম্যাটারটা রেখে যাও।’
‘আমার জন্য একটা জাবদা নতুন খাতাও কিনে রাখিস। পুরোনো খাতায় কিন্তু কুলোবে না।’
এই বলে চিত্রগুপ্ত আবার চিন্তিত মনে পায়চারি করতে করতে চলে গেল।