কলকাতা পুলিশের নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেয়েছেন যে কলকাতার মধ্যেই আগামী দুই মাসের মধ্যে “violent demonstration” হতে চলেছে।
তা খবর তিনি পেতেই পারেন!
খবর পাওয়া তাঁর কাজের মধ্যেই পড়ে।
সেই খবর ‘সঠিক জায়গা’তে দেওয়াটাও তাঁর কাজ।
‘সঠিক জায়গা’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দেওয়াও কাজ।
নিজের পদাধিকার বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
কিন্তু তিনি,
অনেক কিছুই পারেন না বা করার সময় পান না।
যে খবর “public interest” এ হয় সে খবর পান না।
যে খবর “সরকারের অস্বস্তি”র কারণ হয় সে খবর পান।
অভয়ার মৃত্যুর পর সঠিক সময়ে এফ আই আর করার সময় পান না।
অথচ তথ্য প্রমাণ লোপাটের সময় পান।
অভয়ার মৃত্যুকে কেন আত্মহত্যা বলা হলো সেই প্রশ্ন প্রাক্তন (তখনও বর্তমান) প্রিন্সিপালকে করার সময় পান না।
অথচ মিটিং মিছিল করলে সমন ধরানোর সময় পান।
সন্ধ্যা ছটার পর ময়নাতদন্তের জন্য সঠিকভাবে অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করার সময় পান না।
অথচ অভয়ার মৃতদেহ তরিৎগতিতে সৎকার করার সময় পান।
চৌদ্দ তারিখ মাঝ রাতে আর জি কর হাসপাতালে দুর্বৃত্তদের হামলার খবর পান না।
অথচ সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করার সময় পান।
“থ্রেট সিন্ডিকেট” এর কোন খবর একদম পান না।
অথচ থানার মধ্যে ভুয়ো নথি তৈরীর সময় পান।
হাসপাতাল গুলোতে আর্থিক দুর্নীতির কোন খবর পান না।
অথচ ভুয়ো টেলিফোন কলের টেপের ভিত্তিতে মানুষকে গ্রেপ্তার করার সময় পান।
নিজেদের পেজে ভুল খবর প্রকাশ করে জনরোষে সেই খবর মুছে দিতে সময় পান।
অথচ একজন অপরাধীকে ফিংগারপ্রিন্ট এক্সপার্ট হিসেবে দেখাবার সময় আদত খবরটা পান না।
যে জনগণের টাকায় তাঁদের মাহিনা হয় সেই মানুষের অভিযোগ শোনার সময় পান না।
অথচ যে রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তাঁদের সহকর্মীর মৃত্যু হয় তাদের তাঁবেদারী করার সময় পান।
মানুষের আন্দোলনে ব্যারিকেড দেবার সময় পান।
অথচ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা আন্দোলনকারীদের আঙুল ভেঙে দেবার হুমকি দিলে প্রশ্ন করার সময় পান না।
সে ভালো। আপনার কাজ আপনি করবেন। সে ভাবেই আমরাও মনে রাখবো।
তা এই পুলিশ কমিশনার, কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলে আগামী দুই মাস পাঁচ জনের বেশী মানুষের জমায়েত/ মিছিল/ মিটিং/ র্যালির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছেন।
এবং জানিয়েছেন “carrying of lathi, any lethal or other dengerous weapon” পুলিশি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়বে।
ভালো। আমাদের প্রতিবাদ, আমাদের আন্দোলন অহিংস। আধ খানা লাঠিরও প্রয়োজন পড়বে না। লাঠির বা সাংঘাতিক অস্ত্রের দরকার আপনাদের যারা নির্দেশ দিচ্ছে, সেই রাজনৈতিক দলের পড়ে। এই নির্দেশ দেবার কারণ জানতে চাই।
চৌদ্দ তারিখ মাঝ রাতে আর জি কর হাসপাতালে যে রাজনৈতিক দলের দুর্বৃত্তদের আপনারা ছাড় দিয়ে রেখেছিলেন, তারাই আবার দুর্বৃত্তায়ন করবে। আন্দোলনরত জনগণের উপর তাদের দলীয় ক্ষোভের প্রকাশ পাবে, তাই হুমকি দিয়ে রাখলেন কী? জানতে চাই।
তা দেবী দুর্গার এবং তাঁর সাথে যাঁরা মর্তে আগমন করবেন, এই ক’টাদিনের মধ্যেই, তাঁদের হাতের অস্ত্রের উপরেও কি সমান নিষেধাজ্ঞা বহাল হবে? জানতে চাই।
দুর্গা পূজোতে মানুষ ঠাকুর দেখতে বেড়োলেও কি মাত্র পাঁচ জন করে একেকটা পূজো দেখতে যাবে? পূজোতে মন্ডপে মন্ডপে তাহলে ঢল নামানোতেও নিষেধাজ্ঞা থাকবে তো? জানতে চাই।
আদতে আপনারা ভয় পেয়েছেন। ভয়। ভয় পেয়েছেন মানুষের ক্ষোভকে। ভয় পেয়েছেন মানুষের আন্দোলনকে। ভয় পেয়েছেন জনরোষকে।
আসলে এতো বেশী ভয় দেখিয়ে ফেলেছেন, মানুষ আর ভয়কে ভয় পাচ্ছে না। চোখ রাঙালে চোখের দিকে চেয়ে প্রতিবাদ করা শিখে নিয়েছে মানুষ।
তবু বলি, ইয়ে ডর আচ্ছা লাগা। এই ডর র্যাহনা চাহিয়ে। ইয়ে ডর বহুত আচ্ছা লাগা।