কিছু কিছু লোক আছে যারা সবসময় চোখের সামনে ঘোরাঘুরি করলেও চোখে পড়ে না। তারা আমাদের ছোটখাট সব ব্যাপার খেয়াল রাখলেও, বড় কোনও ঘটনা না ঘটলে আমরা তাদের খেয়াল করিনা। এমনি একজন উত্তমদা। আমাদের ক্লিনিকে কাজ করতেন। সকালের ক্লিনিকে ঢুকলে দরজার সামনে উত্তমদার হাসি মুখ। আমাকে দেখলে গলা থেকে ঝোলানো মাস্কটা তুলে ,মুখ ঢেকে বলত, ‘নমস্কার বাবু’। আমিও মাথা বাঁকিয়ে বুকে হাত দিয়ে প্রতি নমস্কার জানাতাম। তারপর উত্তমদার সঙ্গে সারাদিনে বেশ কয়েকবার দেখা হোত,কথা হতো না। সে তার নিজের কাজ করে চলত। আমি যখন বাড়ি ফিরতাম, উত্তমদা আসত, আলো, এসি নেভাতো, কিছু ফেলে যাচ্ছি কিনা দেখে নিত। আর রোজ বলতো, ‘কাল দেখা হবে বাবু ‘।
গতকাল দুপুরে উত্তমদা দেখা করতে এসেছিল। খুব খুশি হয়ে জানাল, বাড়ি যাচ্ছে। ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে। সোমবার ফিরবে। যাওয়ার আগে আমাকে সাবধানে থাকতেও বলে গেল। আজ সকালে গাড়িতে উঠতেই আমার ড্রাইভার কারু জানাল, উত্তমদা আর নেই। কাল রাত্রে ট্রেন থেকে নেমে বাস ধরবে বলে দাঁড়িয়েছিল। একটা বাস এসে মেরে বেরিয়ে গেছে। স্পট ডেথ। ব্যাপারটা ঠিকমতো হজম করতে না করতেই ওটি থেকে ফোন। পেশেন্ট রেডি হয়ে গেছে। আজকাল ব্যস্ততা জীবিত, মৃত কারও কথা ভাববার সময় দেয় না।
একটা প্রশ্ন আজ সারাদিন মাথায় ঘুরছে। কারও জন্য মনখারাপ করা, কাজে মন দিতে না পারা কি দুর্বলতার লক্ষণ? এটা কি একটা অসুস্থতা। নাকি কারও জন্য কিছু না ভেবেই নিজের কাজটা করে যাওয়াটা এক ধরনের অসুস্থতা। যত সময় বয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারি আমরা যত না বয়েসের ভারে নুয়ে পরি তার থেকেও বেশী নুয়ে পরি স্মৃতির ভারে।ভেবেছিলাম লেখার সঙ্গে উত্তমদার একটা ছবি দেব। কিন্তু ওর ছবি কারও কাছেই নেই। উত্তমদাদের ছবি আমরা তুলিনা।
ভাল থেকো উত্তমদা। প্রণাম।