লামার্ক: Jean Baptiste Lamarck
ডারউইন: Charles Darwin
ডি ভ্রিস: Hugo de Vries
আমিই যে ঠিক ছিলাম, পরিষ্কার প্রমাণ হচ্ছে, লামার্ক বললেন।
দুর্নীতিদের সেই নিকষ আঁধার গলি আজ দেখো ঝকঝকে ফোরলেন,
একেবারে থিওরি মেনে। প্রথমে ছিলো বেশ কিছু সৎ ও শিক্ষিত, তার সাথে কতিপয় অসৎ আর ধান্দাবাজ।
ক্রমে দেখা গেলো সৎ হলে জোটে মরণোত্তরে কিছু ফুলের খুচরো,
আখেরে হয় না কোনো কাজ,
ঘুষ দিতে আর নিতে জানলে তবেই এগোনো যায় , দুইকান কাটা হলে উন্নতি আটকায় কে!
বোঝা গেলো মানুষ সততা নয়, ভোট দেয় জাতপাত দেখে বা প্রবল ধমকে,
বরঞ্চ সৎ হলে নির্বাচনের শেষে হাতে শুধু পেনসিল থাকে। সেটাও ক্ষয়াটে আর ছোলা দুই দিকে,
সুতরাং ওইসব তোলা থাক বলিউডি হিরোদের গল্পকথায়। ক্রমে ক্রমে জনতাও গেলো সেটা শিখে,
নেতাদের বাড়ি গাড়ি দুই তিন দশগুনে গণতান্ত্রিক দেশ প্রশ্ন করেনা।
সৎ বিলুপ্ত হয়ে তাই বাড়লো শুধু অসৎ আর দুর্নীতি, আমার এই এই থিওরি তো চেনা।
এই বলে জিন ব্যাপটিস্ট লামার্ক তাকালেন সামনের দুজনের পানে, মুখে বিজয়ের হাসি ক্ষীণ..
কক্ষনো না। আপনার তত্ত্বে নয়, হয়েছে এটা ন্যাচারাল সিলেকশনে।
তেড়েফুঁড়ে বললেন ডারউইন।
প্রেক্ষাপটে তখন জাতপাতে সংরক্ষণ , ধনী আর রাজাদের ভোটে মাস্তানি,
সৎ হলে ভোটে জেতা দূর , বেচারার থাকবে না ভোটে দাঁড়াবার সংস্থানই,
ব্যবস্থা এমন করা প্রচারে জোটানো লোক টাকা না ছড়ালে মোটে সম্ভবই নয়,
সততায় টাকা নেই, কজন আর সৎপথে শুধু সাদা রোজগারে কোটিপতি হয়?
সুতরাং প্রতি ভোটে ন্যাচারাল সিলেকশন অসৎ ও বড়লোক করে করে করে,
এখন আর কেউ নেই সৎ ও গরীব লোক, বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহুদিন ধরে।
মোটেই আপনি নন মঁসিয়ে লামার্ক, আমারই থিওরি মেনে বসতি বানায় এই দুর্নীতিবিষ…
সরি চার্লস! মঁসিয়ে লামার্ক, আপনারা দুজনেই ভুল। মুখ খুললেন শেষে হুগো ডি ভ্রিস।
মোদ্দা কথাটা হলো মিউটেশন। একবার নেতা হলে ভাই ও ভাইপো নেতা, নেতা তার পুত্র ও কন্যা,
এ ব্যাপারটা বেশ খেয়াল করার মতো। নেতাদের পরিবারে কেউ আর নেতা ছাড়া কিছু হননা।
তার মানে ব্যাপারটা ন্যাচারাল সিলেকশন নয়, জিনে ঘটে যায় এক বদল অমোঘ,
বংশপরম্পরা নেতা হতে থাকে লোকে, জনতারও নেই তাতে কোনো অভিযোগ।
দুর্নীতি ঘোটালা ইত্যাদি ফেনোটাইপ জিনেরই প্রকাশ স্রেফ, তারই ঘটে যেই ভোটে জেতে,
এ থিওরি আমারই, গণতান্ত্রিক মিউটেশন। আপানারা দুজনেই কেউ নন এতে।
সে যাই হোক। একটা ব্যাপারে আমরা তিনজনই এক। বললেন লামার্ক মৃদু হেসে,
মাথা নাড়লেন চার্লস ডারউইন। একটু সময় নিয়ে ডিভ্রিসও মাথা নাড়লেন শেষে,
‘ঠিক! ঠিক! ভোটে জেতা প্রজাতিটি ভোটারদের থেকে সবরকমভাবে আজ ভিন্ন,
বহুকাল আগে কোনো পূর্বপুরুষ এক ছিলো। সে মিসিং লিংক মাঝপথে হয়ে গেছে ছিন্ন।’
তিনজনে হাঁটা লাগালেন একসাথে। বিষণ্ণ মাটি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে গণতন্ত্রের শব- চিহ্ন।